আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানো, ব্যবসাবান্ধব হওয়া এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও এসব লক্ষ্য অর্জিত হওয়া দুরূহ হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। গতকাল সংগঠনটির পক্ষ থেকে আজ মঙ্গলবার প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পাঠানো এক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এমন অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, বাজেটে রাজস্ব আহরণকে প্রধান লক্ষ্য করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট কর ও ব্যক্তি পর্যায়ের করের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো হয়েছে অতিমাত্রায়। পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে সরকারের রাজস্ব আয় কম; কিন্তু এই রাজস্ব আদায় বাড়াতে বাজেটে কার্যকর কোনো দিকনির্দেশনা নেই। বিদ্যমান করদাতাদের ওপরই করের চাপ বাড়ানো হয়েছে।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে টার্নওভার বা লেনদেন কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে, যা দেশের ছোট–বড় শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাই বিসিআইয়ের পক্ষ থেকে লেনদেন কর বাড়ানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি সংগঠনটি বলছে, প্রস্তাবিত বাজেটে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রির উপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা উদীয়মান এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য একটি গুরুতর আঘাত। তাই এ খাতে ভ্যাটের হার আগের মতো ৫ শতাংশে রাখার প্রস্তাব করেছে বিসিআই।
বিসিআই বলছে, উৎপাদন খাতের বড় শিল্পের ক্ষেত্রে কাঁচামালের ভ্যাট বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে পণ্য উৎপাদনে খরচ বাড়বে। উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কীভাবে কমানো হবে, আমরা জানি না। সংগঠনটি বলছে, এবারের বাজেটে সবকিছু করা হয়েছে আইএমএফের শর্ত মেনে। আইএমএফের সব শর্ত পূরণ করা হলে তাতে শিল্প ক্ষতির মুখে পড়বে। এমনিতেই ব্যবসা–বাণিজ্যের খরচ অনেক বেশি। জ্বালানির উচ্চ মূল্য, ব্যাংকঋণের চড়া সুদ, গ্যাস–সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত জ্বালানি খাত। এসব সংকটের মধ্যেও যেসব শিল্প মোটামুটি প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে, সেখানেও শুল্ক ও কর বাড়ানো হয়েছে।
পোশাকশিল্পসহ রপ্তানিমুখী শিল্পের নগদ প্রণোদনা আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা হচ্ছে। তাতে রপ্তানি খাত প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে বলে মনে করছে বিসিআই। সংগঠনটি বলছে, তুলা থেকে তৈরি সুতা ও কৃত্রিম তন্তুর সুতার ভ্যাট উৎপাদন পর্যায়ে কেজিতে তিন টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ টাকা করা হয়েছে। বর্তমানে জ্বালানি–সংকটের মধ্যে দেশি সুতার কলের ভ্যাট বাড়ানো হলে এসব শিল্প ক্ষতির মুখে পড়বে। তাতে সুতায় আমদানি–নির্ভরতা বাড়তে পারে। একইভাবে ইস্পাত ও সিমেন্টের কাঁচামালের ওপর শুল্ক–কর বৃদ্ধির প্রভাবে আবাসন ও নির্মাণশিল্প খাতে খরচ বেড়ে যেতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত ব জ ট স গঠনট ব স আই লক ষ য
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্যবিহীন সমাজ গঠনে বাজেটে নেওয়া পদক্ষেপ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়: সিপিডি
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের মূল দর্শন ‘বৈষম্যবিহীন সমাজ’ গঠনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে বাস্তবে নেওয়া পদক্ষেপগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লাগ (সিপিডি)।
বাজেটের আকার ছোট করা হলেও রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায় যে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে, তা অর্জন করা কঠিন হবে। রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাকে বড়-ই বলা যায়। আর কালো টাকা সাদা করার সুযোগ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলেও মনে করছে সংগঠনটি।
সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন। পরে বিকেলে সংগঠনটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায়। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম উপস্থিত ছিলেন।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে বাজেটে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু ভালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে বাজেটে পুরো একটি কাঠামোগত পরিবর্তন সেটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। একই কাঠামোর মধ্যে এখানে একটু বেশি, ওখানে একটু কম করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাজেটের যে মূল দর্শন, বৈষম্যবিহীন সমাজের কথা বলা হয়েছে, উদ্দেশ্যের সঙ্গে বাস্তবে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, সবক্ষেত্রে সেটি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘বাজেটের আকার সামান্য ছোট করা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও কিছুটা কাটছাট করা হয়েছে। চলমান অর্থনৈতিক সংকট উচ্চমূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগে স্থবিরতা, কর্মসংস্থানে সমস্যা সর্বোপরি রাজস্ব আহরণের সমস্যা অর্থাৎ কম রাজস্ব আহরণ। এই প্রেক্ষাপটগুলো বিবেচনায় নিয়েই অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করেছেন বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এটিকে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। ৮ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা, এটি একটি বড় লক্ষ্যমাত্রাই বলা যায়। সেদিক থেকে খুব ছোট যে বলা যাবে, তা নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্যে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এটি উদ্বেগজনক। সামাজিক কর্মসূচির আওতায় ১৪০ টি কর্মসূচি সমান্তরালে চলতো। এখন সেটি কমিয়ে ৯৫টি করা হয়েছে। সেখানে অর্থ বরাদ্দ কম করা হয়েছে। এটিও ভালো লক্ষ্যণ নয়।’
ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, ‘করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে, এটি একটি ভালো দিক। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় এটি খুব ভালো হয়েছে তা নয়। তবে এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। জুলাই যোদ্ধাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে, এটিকে আমরা ভালো পদক্ষেপ মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘নিম্ন মধ্যবিত্তের ক্ষেত্রে কর দেওয়ার প্রবৃদ্ধি তাদেরকেই বেশি কর দিতে হবে, আবার যারা উচ্চবিত্ত রয়েছে তাদের কর দেওয়ার হার বেশি হবে না। এখানে আমরা একটি বৈষম্য দেখছি। অঞ্চলভিত্তিক নূন্যতম কর ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে, এটিকে আমরা বৈষম্য হিসাবে দেখছি ‘
তিনি আরও বলেন, ‘কালো টাকার বিষয়টি এবারও রয়ে গেছে। যদিও এখানে হার বাড়ানো হয়েছে। কালো টাকার সুযোগ দিয়ে যারা নৈতিকভাবে আয় করে তাদের প্রতি আঘাত দেওয়া। এটা একবার দুইবার সুযোগ দিয়ে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’