আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আইন সংস্কারের মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে শতাধিক বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার প্রস্তাব চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স–২০২৫’–এর প্রাথমিক খসড়া নিয়ে মতবিনিময় সভা শেষে আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘অনেকে বলেন, আমরা সংস্কার করছি না। আবার কেউ বলেন, আমরা অনেক সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি, কিছুই হচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে সংস্কারের কাজ চলছে। আমরা সিপিসি (কোড অব সিভিল প্রসিডিউর), সাইবার সুরক্ষা আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করেছি। পাওয়ার অব অ্যাটর্নির বিধান পরিবর্তন করেছি। জুডিশিয়াল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালাও পরিবর্তনের পথে।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, লিগ্যাল সার্ভিস অ্যাক্ট এবং ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) দ্রুত সময়ের মধ্যেই সংশোধনের পরিকল্পনা রয়েছে। গুম–সংক্রান্ত আইনের ওপর দুটি মতবিনিময় সভা হয়েছে। এসব আইনের সংশোধন এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

পুলিশ বাহিনীতে জবাবদিহি বাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন পরিবর্তনের কাজ করছে বলেও জানান আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, পুলিশের তদন্ত আর পুলিশ নিজে না করে, সেটি যেন একটি স্বতন্ত্র সংস্থা করে—সে লক্ষ্যে একটি পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কিছু আইনি সংস্কার ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

তবে রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া বড় ধরনের কোনো সাংবিধানিক সংস্কার সরকার করবে না জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘যেসব সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন, বিশেষ করে সংবিধান পরিবর্তন, সেসব বিষয়ে আমরা অপেক্ষা করছি। জুলাই চার্টার (জুলাই সনদ) জুলাই মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।’

এ সময় আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সমাজে সংস্কারের যে প্রত্যাশা ও চাপ রয়েছে, তা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমা যথেষ্ট নয়। আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে; কিন্তু আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো সুশাসন প্রতিষ্ঠা। আমরা চাই, শাসকেরা যেন কারও জীবন বিপন্ন না করে; মানুষ যেন মামলার জটে পড়ে সর্বস্বান্ত না হন এবং নাগরিকেরা যেন তাঁদের স্বাধীনতা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন।’

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যকে পাশ কাটিয়ে সংবিধান পরিবর্তনের কোনো চেষ্টা বর্তমান সরকার করবে না। শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার আগেই ইন্টারপোলকে অনুরোধ করেছে। বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভালো কোনো অগ্রগতি হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন দেশের ১৮ কোটি মানুষের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘এই সনদ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জারি করা হোক এবং প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করা হোক। তবে এই গণভোট অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে হবে, নির্বাচনের পরে নয়।’

আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তৃতীয় ধাপে তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রফিকুল ইসলাম খান। এ সময় উপস্থিত ছিলে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।

জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই আবারও রাস্তায় নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেন রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর সে সময়কার দলগুলোর ঐকমত্য থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতায় থাকা দলগুলো সেটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) যথাসময়ে বাস্তবায়ন করেনি। পরে আন্দোলনের মাধ্যমেই তা সংবিধানে যুক্ত হয়।

জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়েছিল বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের মাধ্যমে। আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এ রায় দেওয়ানো হয়েছিল। তাই বিচার বিভাগকে আবার বিতর্কের মুখে না ফেলে সংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে জামায়াত।

জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ঐকমত্য কমিশন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে চারটি বিকল্প নিয়ে কাজ করেছে, যার মধ্যে কমিশন সংবিধানিক আদেশের প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। এই আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের ২২টি আর্টিকেল বাস্তবায়িত হতে পারে। এটি আইনিভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি।

এক প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করার এখতিয়ার সংসদের নেই, এবং এ ধরনের পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই গণভোটের প্রয়োজন হয়।

জামায়াতে ইসলামী জনগণের অভিপ্রায়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে জামায়াতের এ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন।

জুলাই সনদের যে আদর্শ ও চেতনা, তা বাস্তবায়ন হওয়া উচিত এবং যারা এই আদর্শের পথে হাঁটবে না, জনগণ তাদের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করেন হামিদুর রহমান আযাদ। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ এটি প্রমাণ করে যে এ দেশের তরুণসমাজ ও জনগণ নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা চায় এবং জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধাদের পক্ষেই রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন ১৮ কোটি মানুষের দাবি: জামায়াত
  • সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের সুপারিশ, একমত নয় দলগুলো
  • ‘সংবিধান আদেশ’ জারির সুপারিশ করতে পারে কমিশন: আলী রীয়াজ
  • জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
  • কমিটি গঠন, প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত 
  • বর্ধিত মেয়াদের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ
  • বিএনপি নির্বাচনমুখী কর্মসূচিতে যাবে
  • দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে হবে
  • জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ফের এক মাস বাড়ল