শতাধিক সংস্কার প্রস্তাব চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে: আইন উপদেষ্টা
Published: 4th, June 2025 GMT
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আইন সংস্কারের মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে শতাধিক বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার প্রস্তাব চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স–২০২৫’–এর প্রাথমিক খসড়া নিয়ে মতবিনিময় সভা শেষে আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘অনেকে বলেন, আমরা সংস্কার করছি না। আবার কেউ বলেন, আমরা অনেক সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি, কিছুই হচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে সংস্কারের কাজ চলছে। আমরা সিপিসি (কোড অব সিভিল প্রসিডিউর), সাইবার সুরক্ষা আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করেছি। পাওয়ার অব অ্যাটর্নির বিধান পরিবর্তন করেছি। জুডিশিয়াল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালাও পরিবর্তনের পথে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, লিগ্যাল সার্ভিস অ্যাক্ট এবং ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) দ্রুত সময়ের মধ্যেই সংশোধনের পরিকল্পনা রয়েছে। গুম–সংক্রান্ত আইনের ওপর দুটি মতবিনিময় সভা হয়েছে। এসব আইনের সংশোধন এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
পুলিশ বাহিনীতে জবাবদিহি বাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন পরিবর্তনের কাজ করছে বলেও জানান আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, পুলিশের তদন্ত আর পুলিশ নিজে না করে, সেটি যেন একটি স্বতন্ত্র সংস্থা করে—সে লক্ষ্যে একটি পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কিছু আইনি সংস্কার ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া বড় ধরনের কোনো সাংবিধানিক সংস্কার সরকার করবে না জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘যেসব সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন, বিশেষ করে সংবিধান পরিবর্তন, সেসব বিষয়ে আমরা অপেক্ষা করছি। জুলাই চার্টার (জুলাই সনদ) জুলাই মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।’
এ সময় আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সমাজে সংস্কারের যে প্রত্যাশা ও চাপ রয়েছে, তা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমা যথেষ্ট নয়। আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে; কিন্তু আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো সুশাসন প্রতিষ্ঠা। আমরা চাই, শাসকেরা যেন কারও জীবন বিপন্ন না করে; মানুষ যেন মামলার জটে পড়ে সর্বস্বান্ত না হন এবং নাগরিকেরা যেন তাঁদের স্বাধীনতা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন।’
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যকে পাশ কাটিয়ে সংবিধান পরিবর্তনের কোনো চেষ্টা বর্তমান সরকার করবে না। শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার আগেই ইন্টারপোলকে অনুরোধ করেছে। বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভালো কোনো অগ্রগতি হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন চায় বাসদ
ডিসেম্বরের আগেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে বলে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ জানিয়েছেন।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বজলুর রশীদ ফিরোজ। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন একটি আরেকটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুন কেন, এমন প্রশ্ন তুলে বাসদের এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলেছে, জুলাই মাসের মধ্যেই তারা প্রস্তুত। আমরা বলেছি, ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা করতে হবে এবং নির্বাচনের তারিখ দিয়ে সংস্কার প্রস্তাবকে এগিয়ে নিতে হবে এবং বিচারকে দৃশ্যমান করতে হবে।’
বৈঠকের আলোচনা নিয়ে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘আমরা বলেছি যে প্রধান উপদেষ্টা জাপান গিয়ে যে বক্তব্য রেখেছে, সেটা একটি পার্টিকে ব্লেম করা হয়েছে। বন্দর ও মানবিক করিডর দেওয়ার যে চক্রান্ত, সেগুলো বন্ধ করতে হবে। এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নয়। আমরা বলেছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের বক্তব্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিরপেক্ষ সেটা প্রমাণ করতে হবে।’
এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো জাতির সামনে স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে বাসদ। বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছেন, ‘তিন মাস ধরে আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, সেই তিন মাসের আলোচনার সারসংক্ষেপ কী? কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে। আমাদের কাছে পরিষ্কার করতে হবে, সেগুলো বাস্তবায়নের কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ চায় বাংলাদেশ জাসদ
বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘সংস্কারের আলোচনাকে যদি আমাদের অর্থবহ করতে হয়, তাহলে সর্বাগ্রে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে, সম্ভব হলে ডিসেম্বরের আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা যায়।’
এ ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদকে তার নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ জাসদের এই নেতা বলেন, ‘প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে মাঠপর্যায়ে যারা নির্বাচনের ডিউটি করবে, তাদেরও নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। যদি সংস্কারের আলোচনা করতে হয়, তাহলে সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে এবং বিদেশের সঙ্গে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ চুক্তি করা যাবে না। এগুলো যদি আমরা নিশ্চয়তা পাই, তাহলে সংস্কারের আলোচনা সফল হতে পারে।’