‘ওদের তিনজনকে কারেন্ট টেনে নিয়ে গেছে’
Published: 4th, June 2025 GMT
‘আমরা যখন ভুট্টা খেতে যাই, তখন দেখি একটা তার পড়ে আছে। তখন কারেন্ট ছিল না। আমি ১০ থেকে ১৫ হাত দূরে ভুট্টা তুলছিলাম। কিছুক্ষণ পর শুনি, তারের সঙ্গে লেগে থাকা ভুট্টাগাছের পাতাগুলো পটপট শব্দ করে ফুটতেছে। এ সময় তারের কাছে আমার ভাই জামিদুল ছিল। হঠাৎ করে কারেন্ট (বিদ্যুৎ) এসে ওকে টেনে নিয়ে যায়। রব্বানী আর শাহীনও পড়ে গেল। ওদের তিনজনকেই কারেন্ট টেনে নিয়ে গেছে। আমরা সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করি। আমার একটা পা কাদাপানির মধ্যে ঢুকে ঝিনঝিন করছিল। পরে কোনোমতে সেখান থেকে দূরে পড়ে যাই। পরে যখন কারেন্ট বন্ধ করে, তার আগেই ছোট ভাইটা ওখানেই মারা গেছে।’
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন আহত শ্রমিক জয় ইসলাম (৩০)। পঞ্চগড়ে খেতের ভুট্টা তুলতে গিয়ে পড়ে থাকা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে তিনি এমন বর্ণনা দিচ্ছিলেন।
আরও পড়ুনফসলের খেতে পড়ে ছিল বিদ্যুতের তার, ভুট্টা তুলতে গিয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যু৫ ঘণ্টা আগেএর আগে আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের ফকিরের হাট বেংহারীপাড়া এলাকায় খেতের ভুট্টা তুলতে গিয়ে পড়ে থাকা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিনজন শ্রমিক মারা যান। নিহতরা হলেন জামিদুল ইসলাম (২২), গোলাম রব্বানী (৩৫) ও শাহীন আলম (৪০)। তাঁদের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের ফকিরের হাট বেংহারীপাড়া এলাকায়। নিহত জামিদুল ইসলাম পঞ্চগড়ের মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র। একই ঘটনায় আহত হন জামিদুলের ছোট ভাই জয় ইসলাম।
দুপুরে নিহত জামিদুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড়। বাড়ির উঠানে বসে আহাজারি করছেন জামিদুলের বড় বোন মেনোয়ারা বেগম। কিছুটা দূরে বসে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে জামিদুলের বাবা সপিজুল ইসলাম বলছিলেন, ‘তুই মোক থুয়ে চলে গেলো রে বাবা, মোর এলা কী হবে। মুই কী নিয়ে বাঁচিম (বাঁচব)।’
বড় বোন মনোয়ারা বেগম বলছিলেন, ‘এক বছর বয়সের এই ভাইটাকে (জামিদুল) রেখে আমার মা মারা গেছিল। আমি ওকে বড় করেছি। আমাদের ভাই–বোনগুলোর মধ্যে সে–ই লেখাপড়া করছে। মানুষের কাজ করে নিজের পড়ালেখার খরচ নিজে জোগাড় করে। আমার স্বামীকে না জানিয়ে ওকে আমি একটা মোবাইল কিনে দিছি, আমার ভাইয়ের মনের আশা পূরণ করেছি। আজকে সেই ভাইটা আমার চলে গেল, আমাদের সব আশা শেষ হয়ে গেল।’
জানা যায়, ফকিরের হাট-বেংহারীপাড়া এলাকায় রবিউল ইসলাম নামের এক কৃষকের ভুট্টাখেতের ফসল তুলে দিতে চুক্তি নিয়েছিলেন ১৪ জন শ্রমিক। ওই ভুট্টাখেতের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের সঞ্চালন তার গেছে। সকালে শ্রমিকেরা ভুট্টাখেতে ভুট্টা তুলতে গিয়ে দেখেন, একটি বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে আছে। তবে তখন বিদ্যুৎ ছিল না। শ্রমিকেরা ভুট্টা তোলার কাজ শুরু করার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে আসে। এতে চারজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে অন্য শ্রমিকদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থলেই জামিদুল ইসলাম মারা যান। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই গোলাম রাব্বানী ও শাহীন আলমও মারা যান। দুপুরে নিহত তিনজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পঞ্চগড় সদর থানার পুলিশ।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের ফকিরের হাট বেংহারী পাড়া এলাকায় এই ভুট্টা খেতে বিদ্যুতায়িত মারা গেছেন তিনজন শ্রমিক.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ম দ ল ইসল ম এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
বার্ন ইনস্টিটিউটে লাইফ সাপোর্টে ১ জন, আইসিইউতে ৩ জন
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধদের মধ্যে ৩৩ জন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে তিনজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) এবং একজন লাইফ সাপোর্টে আছেন।
সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন।
তিনি জানিয়েছেন, বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন মাইলস্টোনে দগ্ধ ৩৩ জনের মধ্যে ২৭ জনই শিশু। তাদের মধ্যে তিনজন সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। ওই তিনজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। একটু কম গুরুতর ৯ জন সিভিআর ক্যাটাগরিতে আছে।
ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন আরো জানান, আজ সোমবার আরো তিনজনকে রিলিজ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে, আবহাওয়া খারাপ থাকায় তাদের ড্রেসিং দরকার মনে করে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। চলতি সপ্তাহে আরো কয়েকজনকে পর্যায়ক্রমে ছাড়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
মাইলস্টোনে দগ্ধদের মধ্যে এখন পর্যন্ত জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৮ জন। মোট মৃত্যুর সংখ্যা জানাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।