‘এক বদলির জন্য এক কোটি টাকার অফার এসেছিল’
Published: 4th, June 2025 GMT
শিক্ষা ব্যবস্থা স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে নিজের জিরো টলারেন্স নীতিতে অবস্থানের কথা উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার জানিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে তাকে একটি বদলির জন্য এক কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
আজ বুধবার আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় শিক্ষার দুর্নীতি চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে এ কথা জানান শিক্ষা উপদেষ্টা।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘একটি বড় পদের পদায়নের জন্য আমার কাছে তদবির এসেছিল। তার জন্য প্রথিতযশা একজন কম্পিটিড ইন্সটেকলেকচুয়াল (বুদ্ধিজীবী) তদবির করেছিলেন। পরে তার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখি তিনি ওই পদের জন্য যোগ্য নন। তখন আমরা তাকে প্রত্যাখ্যান করি। পরবর্তীতে তিনি অন্য মাধ্যমে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন এবং আমাকে একটা অ্যামাউন্ট অফার করেন। টাকাও আমি বলে দেই, এক কোটি টাকা অফার করেছিলেন। তিনি যাকে দিয়ে বলেছিলেন, তিনি আমার পরিচিত। যিনিও একটি প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন। আমি আর বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না। আমি বুঝাতে চাচ্ছি আমার সহকর্মী যারা আছেন, তারা নৈতিক অবস্থানে স্থির থাকবেন। আমি পদে থাকা অবস্থায় কোন দুর্নীতি সহ্য করব না।’
ড.
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ: পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জন্য যোগ্য উপাচার্যদের খুঁজে নেওয়া হবে বলেও জানান শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। তিনি বলেন, উপাচার্য নিয়োগে নানা অসঙ্গতির কারণে আমরা উপাচার্য নিয়োগের জন্য একটি বোর্ড তৈরি করেছি। আমরা উপাচার্য নির্বাচনের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেব। এতে আগ্রহীরা আবেদন করবেন। এরপর যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যোগ্যদের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে।
আগামী জুলাই থেকে কলেজ পর্যায়ে অনলাইনে শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে বলেও জানান শিক্ষা উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের হাতে সামান্য ভুল নিয়েও বই তুলে দিতে আমার মন সায় দিচ্ছে না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যতটা সম্ভব নির্ভুল বই দেব। এজন্য আমরা কাজ করছি। সময়স্বল্পতার কারণে ২০২৬ সালের বই চলমান বছরের কারিকুলা অনুযায়ী ছাপানো হবে এবং এতে যেসব সাধারণ ভুলভ্রান্তিগুলো ছিল সেগুলো ঠিক করে আগামীবছরের শুরুতেই যাতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই হাতে পায় তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই যত কষ্টই হোক বইগুলো যত্ন এবং দায়িত্বের সঙ্গে নির্ভুল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আশাবাদী এনসিটিবি এ গুরুদায়িত্ব পালন করতে পারবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘২০২৫ সালে সম্পন্ন হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তাসহ সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বড়ধরনের নকলের অভিযোগ শোনা যায়নি। ২০২৫ সালের এইচ এস সি পরীক্ষা একইভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করি এবং এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমার পুরো জীবনটাই আমি ব্যয় করেছি নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে। এ লক্ষ্য থেকে শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের গুরুদায়িত্ব আমি গ্রহণ করেছি।’
মতবিনিময়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দকার এহসানুল কবিরসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ক ষ উপদ ষ ট উপ চ র য ন য় গ উপদ ষ ট র জন য অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
মসজিদে আকসা ভ্রমণে নবীজি (সা.)
সুরা বনি ইসরাইল, পবিত্র কোরআনের ১৭তম সুরা, মক্কায় অবতীর্ণ। এর আয়াত সংখ্যা ১১১। ‘ইসরা’ অর্থ রাত্রিকালীন ভ্রমণ, যা নবীজি (সা.)-এর মিরাজের ঘটনাকে নির্দেশ করে। এ ছাড়া বনি ইসরাইলের বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ থাকায় এটি ‘সুরা বনি ইসরাইল’ নামেও পরিচিত। এই সুরায় মিরাজের অলৌকিক ভ্রমণ, সামাজিক সম্প্রীতির জন্য ১৪টি শিষ্টাচার এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
পবিত্র তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায়, যার চারপাশ আমি বরকতময় করেছি, যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাই।(সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ১)মিরাজ: ঊর্ধ্বজগতের অলৌকিক ভ্রমণ
মহানবী (সা.)-এর মিরাজের ঘটনা নবুওয়াতের ১১তম বছরের ২৭ রজব রাতে সংঘটিত হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল ৫১ বছর। জিবরাইল (আ.) তাঁকে নিয়ে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় যান। পথে জমজমের পানি দিয়ে তাঁর বুক পবিত্র করা হয়। বোরাক নামক বিশেষ বাহনে মসজিদুল আকসায় পৌঁছে তিনি সব নবী-রাসুলের ইমামতিতে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। এরপর তিনি সপ্তম আসমান অতিক্রম করে সাতজন নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত ভ্রমণের পর রফরফ বাহনে তিনি একাকী আরশে আজিমে পৌঁছে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করেন।
তাঁর বয়স ছিল ৫১ বছর। জিবরাইল (আ.) তাঁকে নিয়ে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় যান।আরও পড়ুনস্বজাতিকে বাঁচাতে চাইল যে কাঠমিস্ত্রি১৬ এপ্রিল ২০২৫এই ভ্রমণে তিনি জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন করেন এবং উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে ফিরে আসেন। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘পবিত্র তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায়, যার চারপাশ আমি বরকতময় করেছি, যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ১)
সামাজিক সম্প্রীতির ১৪ শিষ্টাচার
সুরার ২৩ থেকে ৩৯ আয়াতে সামাজিক সম্প্রীতি ও নৈতিকতার জন্য ১৪টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ১. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত না করা। ২. পিতামাতার সঙ্গে সদাচার করা। ৩. আত্মীয়দের অধিকার আদায় করা। ৪. মিসকিন ও পথচারীদের অধিকার দেওয়া। ৫. অপচয় থেকে বিরত থাকা। ৬. কৃপণতা না করা। ৭. সন্তান হত্যা না করা। ৮. ব্যভিচারের নিকটবর্তী না হওয়া। ৯. অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা না করা। ১০. এতিমের সম্পদের প্রতি হাত না বাড়ানো। ১১. ওয়াদা পালন করা। ১২. সঠিকভাবে ওজন ও পরিমাপ করা। ১৩. অজ্ঞাত বিষয়ে কথা না বলা। ১৪. পৃথিবীতে দম্ভভরে চলাফেরা না করা।
এই নির্দেশনাগুলো মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার
সুরায় পিতামাতার প্রতি সদাচারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে: ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করতে এবং পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন বা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে পৌঁছালে তাদের প্রতি ‘উফ’ বলো না, তাদের ধমক দিয়ো না এবং তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩)
এই ভ্রমণে তিনি জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন করেন এবং উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে ফিরে আসেন।এই আয়াতে পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা ও দয়ার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে, যা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার অন্যতম।
আরও পড়ুনঅলৌকিক উট১৩ এপ্রিল ২০২৫আল্লাহর সুন্দর সব নাম
সুরায় আল্লাহর সুন্দর নামের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে: ‘তাঁকে আল্লাহ নামে ডাকো বা রহমান নামে ডাকো, তাঁর সব নামই সুন্দর।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ১১০)
এ ছাড়া আল্লাহর একত্ববাদ নিশ্চিত করে বলা হয়েছে যে তিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি।
সুরা বনি ইসরাইল মিরাজের অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহর নিদর্শন ও মহানবী (সা.)-এর মর্যাদা তুলে ধরে। এটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপহার উম্মতের জন্য বয়ে আনে। একই সঙ্গে সামাজিক সম্প্রীতির জন্য ১৪টি শিষ্টাচার এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়ে এটি মানবজীবনের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে। এই সুরা আমাদের আল্লাহর একত্ববাদে অবিচল থাকতে এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করে।
আরও পড়ুনজিভের জড়তা কাটাতে মুসা (আ.) যে প্রার্থনা করেছিলেন০৮ এপ্রিল ২০২৫