সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের প্রস্তুতির জন্য করণীয়
Published: 6th, June 2025 GMT
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ দ্বিতীয় পর্বে থাকছে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় ১৫ নম্বরের একটি প্রশ্ন আসে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন থেকে। সামগ্রিকভাবে বেশি নম্বর তোলার জন্য এই ১৫ নম্বর বেশ গুরুত্ব বহন করে। আইনটি সহজ ও অপেক্ষাকৃত ছোট হওয়ায় এতে পূর্ণ নম্বর আদায় করাও সম্ভব।
লিখিত পরীক্ষা বলে কথা। এতে ১৫ নম্বরের প্রশ্ন মানে একটি প্রশ্নই আসবে এমন নয়। একটি প্রশ্নের হ্যান্ডেলে দুই থেকে চারটি প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে গত কয়েক বছরে একটি প্রশ্নের হ্যান্ডেলে তিনটি প্রশ্ন আসতে দেখা গেছে। যদিও এবারের এমসিকিউ পরীক্ষার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, একক প্রশ্নও হতে পারে।
যেভাবে পড়তে হবে
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন থেকে সাধারণত সমস্যামূলক, রচনামূলক ও সরল প্রশ্ন আসে। যেমন ৪, ৫, ৮, ৯, ১০ ও ১১ ধারা। এসব ধারা থেকে সমস্যামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। ৮ ও ৯ ধারা থেকে বেশি প্রশ্ন হয়। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের আওতায় কীভাবে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার পাওয়া যাবে, স্থাবর সম্পত্তি দখল পুনরুদ্ধারের জন্য কী কী বিধান আছে, ৮ ও ৯ ধারার পার্থক্য, যেসব কারণে এই দুই ধারায় মোকদ্দমা করা যায়, এসব প্রশ্নের উত্তর ভালো করে জানা থাকতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি ধারা, ধারা–সংশ্লিষ্ট ব্যাখ্যা, উদাহরণ ও ব্যতিক্রমগুলো পড়তে হবে।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১২, ২১, ২১ক, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭ক এবং ২৮ ধারা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এসব ধারা থেকে সরল প্রশ্ন কিংবা মুসাবিদাও আসতে পারে। তবে প্রশ্নের ধরন যদি খুব বেশি কঠিন হয়, তবে এসব ধারা থেকে সমস্যামূলক প্রশ্ন আসবে। গত বছরগুলোয় সমস্যামূলক ও রচনামূলক—দুই ধরনের প্রশ্নই এসেছে। ফলে ধারাভিত্তিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিগত বছরের প্রশ্নের উত্তরগুলো পড়তে হবে। দেওয়ানি আদালতে দলিল বাতিলের মোকদ্দমা বেশি হয়। মাঝেমধ্যে দলিল সংশোধনীর মোকদ্দমাও হয়ে থাকে। এসব মামলা করা হয় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন অনুসারে। ধারা ৩১ থেকে ৩৯ পর্যন্ত পড়লেই এসব বিষয় আয়ত্ত করা সম্ভব। পরীক্ষায় সচারচর এসব ধারা থেকে প্রশ্ন আসে। মাঝেমধ্যে শর্ট নোট আকারেও প্রশ্ন হয়। দলিল বাতিল মোকদ্দমার অংশ থেকে একটি মুসাবিদা অনুশীলন করে রাখতে পারেন। অনেক সময় পরীক্ষায় মুসাবিদা আসতে পারে।
এ ছাড়া ঘোষণামূলক ডিক্রি কাকে বলে? কোন কোন মামলায় এবং কোন কোন পরিস্থিতিতে ঘোষণামূলক ডিক্রি দেওয়া যেতে পারে? এর ব্যতিক্রম কী কী, ঘোষণামূলক মামলায় রায় ডিক্রি পেতে হলে বাদীর করণীয় কী কী, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা কেন, কখন ও কীভাবে জারি করা হয়, স্থাবর সম্পত্তি–সংক্রান্ত চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার ডিক্রির জন্য কী কী বিষয় প্রমাণ করতে হবে, এসব প্রশ্নের উত্তর বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকেও এবার প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রশ্নের ধরন ও লেখার নিয়ম
যেমন প্রশ্ন তেমন উত্তর। উত্তর লেখার আগে প্রশ্নের ধরন, প্রশ্নের জন্য বরাদ্দকৃত নম্বর দেখে উত্তর লেখার কৌশল ঠিক করতে হবে। ছোট নম্বরের জন্য বেশি লেখার দরকার নেই। আবার বেশি নম্বর হলেই বড় করে উত্তর লেখার প্রয়োজন নেই। আইনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে যথাযথভাবে উত্তর লিখতে পারলেই বেশি নম্বর তোলা সম্ভব।
আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষা ২০০০ ও ২০০৪ সালে একটি প্রশ্ন আসে—পরশের দখলে এক খণ্ড পৈতৃক জমি ছিল। তিনি তাঁর প্রতিবেশী দ্বারা জমিটি হতে বেদখল হয়। প্রতিবেশী দাবি করেন, তিনি পরশের পিতার কাছ থেকে জমিটি কিনেছেন। পরশের ভাষ্যমতে, কবলা দলিলটি ভুয়া। কোনো ধরনের মামলা পরশকে দাখিল করতে হবে পরামর্শ দিন এবং যথাযথ আইন উল্লেখ করে একটি মুসাবিদা করুন।
উপরোক্ত প্রশ্নে প্রশ্নকারক পরীক্ষার্থীদের দুটি বিষয় লিখতে বলেছেন। এক.
এ ক্ষেত্রে আইনগত পরামর্শে লিখতে পারেন এভাবে—প্রশ্নের উল্লিখিত সমস্যায় দেখা যাচ্ছে, পরশ একটি জমির ওয়ারিশসূত্রে মালিক। তিনি প্রতিবেশী কর্তৃক বেদখল। প্রতিবেশীর দাবি, ওই জমিটি পরশের পিতার কাছ থেকে কিনেছেন, যা পরশ জাল দলিল বলে দাবি করেন। এ পর্যায়ে পরশের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৪২ ধারা অনুসারে স্বত্ব সাব্যস্ত খাস দখলের মামলা দায়ের করা। এ ছাড়া পরশের জন্য স্বত্ব প্রমাণেরও কোনো অসুবিধা হবে না। কারণ, ওই সম্পত্তি তিনি পৈতৃক সূত্রে মালিক ও দখলদার অবস্থায় বেদখল হয়েছেন। যেহেতু তিনি ইতিমধ্যেই বেদখল হয়েছেন, সেহেতু এখানে জাল দলিল বাতিলের মামলা করে কোনো লাভ হবে না।
মুসাবিদা অংশে ৮ ও ৪২ ধারা উল্লেখ করে তার দখল, বেদখল, দখলের বিবরণ ও ওয়ারিশ হিসেবে সম্পত্তি লাভের বিবরণ উল্লেখ করে আরজি লিখতে হবে। তায়দাদ মূল্য ও এড ভোলেরাম কোর্ট ফির কথাও আরজিতে উল্লেখ করতে হবে। সবশেষ সম্পত্তির তফসিল ও পরশের সত্যপাঠ দিয়ে আরজির মুসাবিদা শেষ করতে হবে। যেকোনো একটি বই থেকে মুসাবিদার ফরমেট দেখে নিতে হবে। বারবার সেই ফরমেট অনুশীলন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, লিখিত পরীক্ষায় মুসাবিদা অংশে ফরমেট সঠিক হলেই নম্বর পাওয়া যাবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ প রস ত ত র পর ক ষ য় এসব ধ র আইনজ ব র জন য দল ল ব পরশ র র ধরন ব দখল
এছাড়াও পড়ুন:
এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।
এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।
এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।
পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।
সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।