বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ দ্বিতীয় পর্বে থাকছে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।

আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় ১৫ নম্বরের একটি প্রশ্ন আসে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন থেকে। সামগ্রিকভাবে বেশি নম্বর তোলার জন্য এই ১৫ নম্বর বেশ গুরুত্ব বহন করে। আইনটি সহজ ও অপেক্ষাকৃত ছোট হওয়ায় এতে পূর্ণ নম্বর আদায় করাও সম্ভব।

লিখিত পরীক্ষা বলে কথা। এতে ১৫ নম্বরের প্রশ্ন মানে একটি প্রশ্নই আসবে এমন নয়। একটি প্রশ্নের হ্যান্ডেলে দুই থেকে চারটি প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে গত কয়েক বছরে একটি প্রশ্নের হ্যান্ডেলে তিনটি প্রশ্ন আসতে দেখা গেছে। যদিও এবারের এমসিকিউ পরীক্ষার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, একক প্রশ্নও হতে পারে।

যেভাবে পড়তে হবে
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন থেকে সাধারণত সমস্যামূলক, রচনামূলক ও সরল প্রশ্ন আসে। যেমন ৪, ৫, ৮, ৯, ১০ ও ১১ ধারা। এসব ধারা থেকে সমস্যামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। ৮ ও ৯ ধারা থেকে বেশি প্রশ্ন হয়। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের আওতায় কীভাবে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার পাওয়া যাবে, স্থাবর সম্পত্তি দখল পুনরুদ্ধারের জন্য কী কী বিধান আছে, ৮ ও ৯ ধারার পার্থক্য, যেসব কারণে এই দুই ধারায় মোকদ্দমা করা যায়, এসব প্রশ্নের উত্তর ভালো করে জানা থাকতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি ধারা, ধারা–সংশ্লিষ্ট ব্যাখ্যা, উদাহরণ ও ব্যতিক্রমগুলো পড়তে হবে।

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১২, ২১, ২১ক, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭ক এবং ২৮ ধারা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এসব ধারা থেকে সরল প্রশ্ন কিংবা মুসাবিদাও আসতে পারে। তবে প্রশ্নের ধরন যদি খুব বেশি কঠিন হয়, তবে এসব ধারা থেকে সমস্যামূলক প্রশ্ন আসবে। গত বছরগুলোয় সমস্যামূলক ও রচনামূলক—দুই ধরনের প্রশ্নই এসেছে। ফলে ধারাভিত্তিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিগত বছরের প্রশ্নের উত্তরগুলো পড়তে হবে। দেওয়ানি আদালতে দলিল বাতিলের মোকদ্দমা বেশি হয়। মাঝেমধ্যে দলিল সংশোধনীর মোকদ্দমাও হয়ে থাকে। এসব মামলা করা হয় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন অনুসারে। ধারা ৩১ থেকে ৩৯ পর্যন্ত পড়লেই এসব বিষয় আয়ত্ত করা সম্ভব। পরীক্ষায় সচারচর এসব ধারা থেকে প্রশ্ন আসে। মাঝেমধ্যে শর্ট নোট আকারেও প্রশ্ন হয়। দলিল বাতিল মোকদ্দমার অংশ থেকে একটি মুসাবিদা অনুশীলন করে রাখতে পারেন। অনেক সময় পরীক্ষায় মুসাবিদা আসতে পারে।

এ ছাড়া ঘোষণামূলক ডিক্রি কাকে বলে? কোন কোন মামলায় এবং কোন কোন পরিস্থিতিতে ঘোষণামূলক ডিক্রি দেওয়া যেতে পারে? এর ব্যতিক্রম কী কী, ঘোষণামূলক মামলায় রায় ডিক্রি পেতে হলে বাদীর করণীয় কী কী, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা কেন, কখন ও কীভাবে জারি করা হয়, স্থাবর সম্পত্তি–সংক্রান্ত চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার ডিক্রির জন্য কী কী বিষয় প্রমাণ করতে হবে, এসব প্রশ্নের উত্তর বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকেও এবার প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রশ্নের ধরন ও লেখার নিয়ম
যেমন প্রশ্ন তেমন উত্তর। উত্তর লেখার আগে প্রশ্নের ধরন, প্রশ্নের জন্য বরাদ্দকৃত নম্বর দেখে উত্তর লেখার কৌশল ঠিক করতে হবে। ছোট নম্বরের জন্য বেশি লেখার দরকার নেই। আবার বেশি নম্বর হলেই বড় করে উত্তর লেখার প্রয়োজন নেই। আইনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে যথাযথভাবে উত্তর লিখতে পারলেই বেশি নম্বর তোলা সম্ভব।

আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষা ২০০০ ও ২০০৪ সালে একটি প্রশ্ন আসে—পরশের দখলে এক খণ্ড পৈতৃক জমি ছিল। তিনি তাঁর প্রতিবেশী দ্বারা জমিটি হতে বেদখল হয়। প্রতিবেশী দাবি করেন, তিনি পরশের পিতার কাছ থেকে জমিটি কিনেছেন। পরশের ভাষ্যমতে, কবলা দলিলটি ভুয়া। কোনো ধরনের মামলা পরশকে দাখিল করতে হবে পরামর্শ দিন এবং যথাযথ আইন উল্লেখ করে একটি মুসাবিদা করুন।

উপরোক্ত প্রশ্নে প্রশ্নকারক পরীক্ষার্থীদের দুটি বিষয় লিখতে বলেছেন। এক.

কোন ধরনের মামলা পরশকে করতে হবে সে বিষয় পরামর্শ, দুই. সেই পরামর্শের আলোকে একটি আরজি মুসাবিদা।

এ ক্ষেত্রে আইনগত পরামর্শে লিখতে পারেন এভাবে—প্রশ্নের উল্লিখিত সমস্যায় দেখা যাচ্ছে, পরশ একটি জমির ওয়ারিশসূত্রে মালিক। তিনি প্রতিবেশী কর্তৃক বেদখল। প্রতিবেশীর দাবি, ওই জমিটি পরশের পিতার কাছ থেকে কিনেছেন, যা পরশ জাল দলিল বলে দাবি করেন। এ পর্যায়ে পরশের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৪২ ধারা অনুসারে স্বত্ব সাব্যস্ত খাস দখলের মামলা দায়ের করা। এ ছাড়া পরশের জন্য স্বত্ব প্রমাণেরও কোনো অসুবিধা হবে না। কারণ, ওই সম্পত্তি তিনি পৈতৃক সূত্রে মালিক ও দখলদার অবস্থায় বেদখল হয়েছেন। যেহেতু তিনি ইতিমধ্যেই বেদখল হয়েছেন, সেহেতু এখানে জাল দলিল বাতিলের মামলা করে কোনো লাভ হবে না।

মুসাবিদা অংশে ৮ ও ৪২ ধারা উল্লেখ করে তার দখল, বেদখল, দখলের বিবরণ ও ওয়ারিশ হিসেবে সম্পত্তি লাভের বিবরণ উল্লেখ করে আরজি লিখতে হবে। তায়দাদ মূল্য ও এড ভোলেরাম কোর্ট ফির কথাও আরজিতে উল্লেখ করতে হবে। সবশেষ সম্পত্তির তফসিল ও পরশের সত্যপাঠ দিয়ে আরজির মুসাবিদা শেষ করতে হবে। যেকোনো একটি বই থেকে মুসাবিদার ফরমেট দেখে নিতে হবে। বারবার সেই ফরমেট অনুশীলন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, লিখিত পরীক্ষায় মুসাবিদা অংশে ফরমেট সঠিক হলেই নম্বর পাওয়া যাবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ প রস ত ত র পর ক ষ য় এসব ধ র আইনজ ব র জন য দল ল ব পরশ র র ধরন ব দখল

এছাড়াও পড়ুন:

এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশের বৈধতা নিয়ে রিটের শুনানি মুলতবি

এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি পৃথক বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য জারি করা অধ্যাদেশটির বৈধতা নিয়ে রিটের শুনানি এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই সময় পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামের নতুন দুটি বিভাগ প্রতিষ্ঠায় গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জুয়েল আজাদ ১৭ মে রিটটি করেন। আজ রিটটি শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ৭৯ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী জুয়েল আজাদ শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান চৌধুরী ও আখতার হোসেন মো. আব্দুল ওয়াহাব।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হলে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। আগামী সপ্তাহে রিটটি শুনানির জন্য আসবে।

‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ শিরোনামের ওই অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রয়োগ ও কর আদায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। রাজস্ব সংগ্রহের মূল কাজ করবে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

আরও পড়ুনএনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ প্রতিষ্ঠার অধ্যাদেশের বৈধতা নিয়ে রিট১৭ মে ২০২৫

রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, সংবিধানের ২৬, ৩১ ও ২৯(১) অনুচ্ছেদের আলোকে ওই অধ্যাদেশটি কেন সাংঘর্ষিক এবং আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। রুল হলে তা বিচারাধীন অবস্থায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি সংস্কার বিষয়ে অংশীজনদের (দলগত) প্রস্তাব প্রকাশ করতে বিবাদীদের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রুল বিচারাধীন অবস্থায় ওই অধ্যাদেশের কার্যক্রমও স্থগিত চাওয়া হয়েছে রিটে। আইনসচিব ও অর্থসচিবকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুরাইয়া মতিনের মৃত্যুতে ফতুল্লা প্রেসক্লাবের শোক
  • ‎আবু সাঈদ হত্যা: ৬ আগস্ট অভিযোগ গঠনের আদেশ 
  • আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ৬ আগস্ট
  • শিক্ষকের মুক্তি চেয়ে শিক্ষার্থীদের আদালত চত্বরে অবস্থান, সড়ক অব
  • কিশোরগঞ্জে আইনজীবীর বাড়িতে ডাকাতি, ২৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট
  • আবু সাঈদ হত্যা: ‘ঘটনাস্থলে ছিলেন না’ দাবি করে দুই আসামির অব্যাহতির আবেদন
  • দুদকের মামলায় রাজশাহীর সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার কারাগারে
  • বরগুনায় বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের মামলা প্রত্যাহারের আবেদন আদালতে নাকচ
  • লাল চাঁদ হত্যাকাণ্ড: তদন্তে বিচারিক কমিশন গঠন চেয়ে রিট কার্যতালিকা থেকে বাদ
  • এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশের বৈধতা নিয়ে রিটের শুনানি মুলতবি