নিখোঁজ হওয়ার চার দিন পর লাশ উদ্ধার, হিমঘরেও ঠাঁই হলো না ছোট্ট আয়েশার
Published: 7th, June 2025 GMT
তিন দিন আগে নিখোঁজ হয়েছিল শিশু আয়েশা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর লাশ পাওয়া যায় বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত টয়লেটের গর্তে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি আজ শনিবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু ঈদের দিন হওয়ায় ময়নাতদন্ত করার কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। আবার মরদেহ পচে গেছে বলে হিমঘরেও জায়গা দেয়নি কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত সেখানকার ডোমদের সহায়তায় মরদেহটি লাশকাটা ঘরে রাখা হয়েছে। নিহত আয়েশার চাচা মো.
আয়েশা সিদ্দিকা (৪) রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার দীঘলকান্দি গ্রামের জিয়ারুল ইসলামের মেয়ে। তিনি পেশায় বাসচালক।
গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নিজ বাড়িসংলগ্ন মসজিদের সামনে থেকে আয়েশা নিখোঁজ হয়। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে পাশের বাড়ির একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের গর্ত থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
লাশটি যেখানে পাওয়া গেছে, সেই জায়গার মালিকের নাম সাইদুল ইসলাম। তিনি বাইরে চাকরি করেন; মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসেন। বাড়ি সংস্কারের সময় নতুন একটি বাথরুম নির্মাণ করেন। এর পর থেকে পরিত্যক্ত ওই গর্তে ময়লা–আবর্জনা ফেলা হতো। সেখানেই পাওয়া যায় আয়েশার লাশ।
এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এক কিশোরসহ তিনজনকে আটক করে। এর মধ্যে ওই কিশোরের বাবা ও মা রয়েছেন। আজ দায়ের করা হত্যা মামলায় তাঁদের আসামি করা হয়েছে।
এদিকে আয়েশার লাশ উদ্ধারের পর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পুলিশের কাছ থেকে আটক তিনজনকে ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করার চেষ্টা করেন। এ সময় আরেক পক্ষ তাঁদের বাধা দেয়। এক পক্ষ আবার ওই কিশোরের বাড়িতেও হামলার চেষ্টা করে।
আজ সকালে মেয়েটির স্বজনেরা পুলিশের সঙ্গে লাশ নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে যান। দুপুরে আয়েশার চাচা লালনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আজ ঈদ বলে লাশের ময়নাতদন্ত করার কেউ নেই। মেডিকেল কলেজের হিমঘরে রাখা হবে, তাতেও আপত্তি। তারা জানিয়েছে, লাশ পচে গেছে। এ লাশ হিমঘরে রাখা যাবে না।
লালন বলেন, লাশ নিয়ে তাঁরা যাবেন কোথায়? শেষ পর্যন্ত ডোমের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। তিন হাজার টাকার বিনিময়ে লাশকাটা ঘরে রাখতে সম্মত হয়। দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা শিশু আয়েশা সিদ্দিকার লাশ রেখে বাড়িতে রওনা দেন। তখন ঈদের নামাজ পার হয়ে গেছে। তাঁদের এবার ঈদ হলো না।
আজ দুপুরে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাদী হয়েছেন মেয়ের বাবা। এ মামলায় এক কিশোর ও তার বাবা-মাকে আসামি করা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ মঘর
এছাড়াও পড়ুন:
আদাবরে কুপিয়ে হত্যা: তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিল সেনাবাহিনী
রাজধানীর আদাবরে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধে রিপন সরদার (৪২) খুনের ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, রিপন হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইমন ওরফে ভাইগ্না ইমন ওরফে দাঁতভাঙা ইমনকে তাঁর দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে দুটি সামুরাই উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ইমন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী জানায়, গতকাল ভোরের দিকে রাজধানীর আদাবর থানার বালুর মাঠ এলাকায় বাসায় ঢুকে রিপন নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কিশোর গ্যাং এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ। পরে আহত অবস্থায় রিপনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে তিনি মারা যান।
৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গতকাল সকালে বালুমাঠ এলাকায় একটি হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়। বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করে জানা যায় এলেক্স সবুজ, মনির ও ইমন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান নির্ণয় করে অভিযান চালিয়ে ইমন ও তাঁর দুই সহযোগীকে দুটি সামুরাইসহ গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান চালানোর কিছুক্ষণ আগে সবুজ ও মনির সেই জায়গা থেকে পালিয়ে যান। তাই তাঁদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। বাকিদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে আদাবরের ১০ নম্বরের বালুর মাঠ এলাকায় ‘বেলচা মনির’ ও ‘রাজু গ্রুপে’র মধ্যে এ মারামারি হয়। ‘বেলচা মনিরের’ লোকজন ‘রাজু গ্রুপের’ রিপনকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন সরদারের মৃত্যু হয়।
আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও বিরোধকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটির বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
আরও পড়ুনআদাবরে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মারামারিতে নিহত ১১৮ ঘণ্টা আগেতবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন সরদারের ছেলে ইমন সরদার গতকাল দাবি করেন, রিপন মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন না। রিপন পেশায় চা–দোকানি। বেলচা মনিরের লোকজনের সঙ্গে দুই দিন আগে তাঁর বাবার কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে তাঁর বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর মা আরজু বেগমও আহত হয়েছেন। তাঁদের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়।
পুলিশের ভাষ্য, নিহত রিপন সরদার মাদক কারবারি রাজুর চাচাতো ভাই। ‘রাজু গ্রুপ’ ও ‘বেলচা মনিরের’ নেতৃত্বে আদাবরের ১০ ও ১৭ নম্বর এলাকায় মাদক ব্যবসা হয়। ওই বিরোধের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। নিহত রিপনের বিরুদ্ধে ভোলায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।