ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদেও ফিলিস্তিনের গাজায় থেমে নেই ইসরায়েলি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ। ঈদের দিন সকাল থেকে দুই দিনে শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ত্রাণ নিতে যাওয়া ক্ষুধার্ত মানুষও রয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মতো চাঁদ দেখা সাপেক্ষে শুক্রবার কোরবানির ঈদ উদ্যাপিত হয় অবরুদ্ধ গাজায়। এ নিয়ে টানা চতুর্থ ঈদ ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যে কাটিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

হাসপাতাল সূত্রগুলো জানায়, ঈদের দিন ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় ৪২ জন নিহত হন। এর মধ্যে উত্তর গাজার জাবালিয়ায় এক হামলায় নিহত হয়েছেন ১১ জন। এ ছাড়া গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে সাত ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান।

ঈদের পরদিন শনিবার সকাল থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ৬৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজা নগরীর সাবরা এলাকায় এক হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৬ জন। গাজার জরুরি পরিষেবা বিভাগ ‘সিভিল ডিফেন্স’ এ তথ্য দিয়েছে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় সাড়ে ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

জরুরি পরিষেবা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, সাবরা এলাকায় এক হামলায় নিহত ১৬ জনের মধ্যে ছয় শিশু রয়েছে। এ ঘটনায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় ৮৫ জন বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ওই ভবনে আঘাত হানলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানান জরুরি পরিষেবা বিভাগের মুখপাত্র। এ ঘটনাকে ‘পুরোপুরি হত্যাযজ্ঞ’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একেবারে সীমিত সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে জরুরি পরিষেবা বিভাগ।

ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র যেন ‘মৃত্যুফাঁদ’

এদিকে শনিবার সকালে ত্রাণের জন্য জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর আবারও গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। রাফাহ এলাকার একটি ত্রাণকেন্দ্রের কাছে সংঘটিত এ ঘটনায় আটজন নিহত হয়েছেন। নাসের হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আগের দিনও ওই এলাকায় ত্রাণকেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে সাত ফিলিস্তিনি নিহত হন।

অবশ্য জরুরি পরিষেবা বিভাগের বরাত দিয়ে গতকাল সকালে ত্রাণকেন্দ্রের কাছে ছয়জন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি পরিচালিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ)’ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে আল-আলম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মে মাসের শেষ দিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে তিনটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করে বিতর্কিত জিএইচএফ। এর পর থেকে ত্রাণকেন্দ্রের প্রায় এক কিলোমিটার দূরে আল-আলম এলাকায় ত্রাণের আশায় নিয়মিত জড়ো হন ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা।

সকালে ঘটনাস্থলে থাকা সামির আবু হাদিদ এএফপিকে বলেন, কয়েক হাজার মানুষ সেখানকার একটি মোড়ে জড়ো হন। যখনই তাঁরা ত্রাণকেন্দ্রের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেন, তখন সাঁজোয়া যান থেকে গুলিবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা।

আল-আলম ত্রাণকেন্দ্রের কাছে গুলির বিষয়ে জানতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে এএফপি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।

গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তরের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত ২৭ মে থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল পরিচালিত ফাউন্ডেশনটির ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে গুলিতে এ নিয়ে ১১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রাণহানির কারণে কয়েক দফা ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

আরও পড়ুনগাজায় ঈদ কেবলই স্মৃতি০৬ জুন ২০২৫

ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের পরিচালক আমজাদ শাবা আল-জাজিরাকে বলেন, সম্প্রতি গঠিত জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলো এক ধরনের ‘ফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা।

আমজাদ শাবা বলেন, উত্তর গাজার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করে দক্ষিণে নিয়ে আসার ইসরায়েলি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে এ বিতর্কিত ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ জন্য উত্তর গাজায় কোনো ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়নি, যাতে সেখানকার বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে ত্রাণের জন্য দক্ষিণে আসেন।

জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দাতব্য সংস্থাগুলোর পরিবর্তে জিএইচএফের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। এদিকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজার শতভাগ মানুষ মারাত্মক পর্যায়ের খাদ্য অনিরাপত্তার মুখে রয়েছেন। চরম অপুষ্টির কারণে ৭০ হাজার শিশুর জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন।

এদিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস এলাকা থেকে একজন থাই জিম্মির মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর তাঁকে গাজায় ধরে নিয়ে যায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা।

আরও পড়ুনগাজায় হামাসবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেওয়ার কথা স্বীকার করলেন নেতানিয়াহু০৬ জুন ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র ণ ব তরণ ক ন দ র জ এইচএফ ইসর য় ল পর ষ ব এল ক য় এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

এককালের প্রেম যখন উপেক্ষিত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পুরনো বন্ধু কিম জং উনের সাথে সাম্প্রতিক এশিয়া সফরে হঠাৎ করেই আলোচনার আশা করেছিলেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এ ব্যাপারে কোনো সাড়া দেননি। 

ট্রাম্প তার এশিয়া সফরের সময় কিমকে বারবার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছিলেন,  তিনি বৈঠকের জন্য শতভাগ উন্মুক্ত। এমনকি ট্রাম্প কয়েক দশক ধরে মার্কিন নীতির বিপক্ষে গিয়ে স্বীকার করেছেন যে উত্তর কোরিয়া ‘এক ধরণের পারমাণবিক শক্তিধর।’

কিন্তু পিয়ংইয়ং আমন্ত্রণে চুপ ছিল। এর পরিবর্তে তারা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে এবং রাশিয়া ও বেলারুশে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়েছে, যাদের সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়া সেন্টারের একজন ভিজিটিং স্কলার সিওং-হিওন লি বলেন, “নিষ্ঠুর বাস্তবতা হল যে কিম জং উনের অংশগ্রহণের কোনো উৎসাহ ছিল না। ওয়াশিংটনের বিশ্বাস করা যে তিনি আসবেন, এটি একটি মৌলিক ভুল হিসাব ছিল।”

লি জানান, ট্রাম্পের বারবার প্রস্তাব উত্তর কোরিয়ার নেতার জন্য একটি ‘বিজয়’ হিসেবে দেখা যায়, যা তাকে এবং তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে বিশাল মাত্রার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদান করে।

তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিমকে একটি বিশাল, অপ্রাপ্ত ছাড় দিয়েছেন।”

২০১৯ সালে শেষবারের মতো ডিমিলিটারাইজড জোনের (ডিএমজেড) পানমুনজমে দেখা করেছিলেন ট্রাম্প ও কিম জং উন। ট্রাম্পের নেতৃত্বে পিয়ংইয়ংয়ের সাথে সেই বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়।

তারপর থেকে উত্তর কোরিয়া নিজেকে একটি‘অপরিবর্তনীয়’ পারমাণবিক রাষ্ট্র ঘোষণা করেছে এবং রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মস্কোকে সমর্থন করার জন্য সেনা পাঠিয়েছে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর সাবেক বিশ্লেষক সু কিম এএফপিকে বলেছেন, কিম এখন ‘বেশ স্বাচ্ছ্যন্দের জায়গায়’ আছেন।

তিনি বলেন, “রাশিয়ার সমর্থন সম্ভবত আজকাল উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত হাতকে শক্তিশালী এবং দৃঢ় করার সবচেয়ে নির্ধারক কারণগুলোর মধ্যে একটি। তিনিই (উন) সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধরে রেখেছেন, যার ফলে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানানো তার পক্ষে সহজ হয়ে যায়।”

দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাড়ি ফিরে চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠকের সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি কিমের সাথে দেখা করার জন্য খুব ‘ব্যস্ত’ ছিলেন।

দৃশ্যটি ২০১৯ সালের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল, যখন ভিয়েতনামের হ্যানয়ে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার আলোচনা নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়েছিল - কিমকে কোনো চুক্তি ছাড়াই পিয়ংইয়ং ফিরে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ ট্রেন যাত্রা সহ্য করতে হয়েছিল।

অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক ভ্লাদিমির টিখোনভ এএফপিকে বলেছেন, “অভিজ্ঞতা পিয়ংইয়ংকে বেদনাদায়ক করে তুলেছে। তারা খুব তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে যেতে চায় না।” 

তিনি জানান, পিয়ংইয়ং ট্রাম্পের কাছ থেকে আরো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করছে, যার মধ্যে রয়েছে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তাঞ্জানিয়ায় নির্বাচনী বিক্ষোভে নিহত ৭০০
  • এককালের প্রেম যখন উপেক্ষিত
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী