নিস্তব্ধ পাহাড়ের পাদদেশে মুখরিত টাঙ্গুয়ার হাওর
Published: 8th, June 2025 GMT
একদিকে ঢল, বন্যা, ফসলহানি, বাঁধ ভাঙার কষ্ট। অন্যদিকে অবারিত জলরাশি, শস্যের মাঠ আর অতুল্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের সম্ভার। নিজের কষ্ট আড়াল করে সেই সৌন্দর্যে অতিথিদের ক্লান্তি ভুলায় তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার অধ্যুষিত প্রাকৃতিক লীলাভূমি। ঈদ-পার্বণের ছুটিতে এই হাওরের পাড়ে ছুটে যান পর্যটকরা। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
ঈদুল আজহার ছুটিতে এরইমধ্যে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকা। ঈদের দিন সন্ধ্যার পর থেকে আশেপাশের পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে হাওর এলাকায়। রোববার সকাল থেকেই সেখানে ভিড় বাড়তে থাকে। পর্যটকরা সকাল থেকেই হাউজবোট ও কান্ট্রি বোট চড়ে টাঙ্গুয়ার হাওরের দিকে রওয়ানা হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নীল জল দ্যা প্রিমিয়াম হাউজ বোটের মালিক আবিকুল ইসলাম।
এই বোট মালিক আরো জানান, প্রতিটি হাউজবোট একদিন-এক রাতের জন্য ৮০ থেকে এক লাখ টাকায় বুকিং হয়। আর কাট্রি বোটগুলো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়।
হাউজবোটগুলো অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন নৌকা। আর কান্ট্রিবোট বলতে দেশীয় সাধারণ ইঞ্জিন চালিত নৌকাগুলোকে বোঝায়।
টাঙ্গুয়ার হাওরসহ অনেকগুলো দর্শনীয় স্থানের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে তাহিরপুর উপজেলায়। সারা বছরেই এই উপজেলার পর্যটন স্পটগুলো দেশ-বিদেশের সৌন্দর্য পিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকে।
তবে ঈদের ছুটিতে প্রকৃতিপ্রেমীদের মিলন মেলায় পরিণত হয় টাঙ্গুয়ার হাওর, লাকমা ছড়া, নিলাদ্রি লেক, বারিক্ক্যার টিলা ও যাদুকাটা নদী। এখানে ঈদ উৎসব ছাড়াও ছুটির দিনে আসেন সহস্রাধিক পর্যটক। এই ঈদেও পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানায়, ঈদের ছুটি কাটাতে পর্যটকদের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য এ উপজেলায় রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর, ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প নীলাদ্রী লেক, বারিক্ক্যা টিলা, লাকমাছড়া, রূপের নদী যাদুকাটা ও জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান। এ ছাড়াও রয়েছে ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে ট্যাকেরঘাট পাহাড়ি ছড়া, রাজাই ঝর্ণা, লালঘাট ছড়া, লালঘাট ঝর্ণা।
তারা বলেন, পর্যটকরা সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে নৌকায় উঠে দুপুর ২টার মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওরে পৌঁছাতে পারেন। সেখানে হাওরের সচ্ছ পানিতে গোসল করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া দুপুরের খাবারের বন্দোবস্ত রয়েছে হাওরেই। বিকেলে নৌকা নিয়ে ট্যাকেরঘাট নীলাদ্রি লেকে ঘোরার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া নিরাপদ রাত্রিযাপন করতে পারবেন হাওরেই।
নীলাদ্রী লেক থেকে পায়ে হেঁটেই সীমান্তের ছোট ছোট পাহাড়ে উঠে সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় মেঘালয়ের। এ ছাড়াও হাতে সময় থাকলে নীলাদ্রীর পাড়ে থাকা মোটরসাইকেলে করে বারিক্ক্যাা টিলা, রূপের নদী যাদুকাটা ও শিমুল বাগানসহ সবকটি পর্যটনস্পট ঘুরা যায় সহজেই।
তাহিরপুর ইউএনও আবুল হাসেন বলেন, তাহিরপুরে সারা বছরেই পর্যটক আসেন। আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। পর্যটকদের উপস্থিতি আরও বাড়বে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ ট ঙ গ য় র হ ওর ট ঙ গ য় র হ ওর স ন দর য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।
সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাটআজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।
গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ