সাগরকন্যা কুয়াকাটায় পর্যটকের আনাগোনা কম, হতাশ ব্যবসায়ীরা
Published: 8th, June 2025 GMT
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য সবার কাছে পরিচিত নাম ‘সাগরকন্যা কুয়াকাটা’। সুযোগ পেলেই দূরদূরান্ত থেকে কুয়াকাটায় ছুটে আসেন ভ্রমণবিলাসী মানুষ। এবারও ঈদুল আজহার ১০ দিনের টানা ছুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছেন। তবে অন্যবারের তুলনায় সংখ্যায় তা কম।
পর্যটকদের আনাগোনা সেভাবে না থাকায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকত বলতে গেলে ফাঁকাই দেখা যায়। আজ রোববার বিকেল সাড়ে চারটার সময় শুধু সৈকতের জিরো পয়েন্ট–সংলগ্ন এলাকায় বেশ কিছু পর্যটককে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। জিরো পয়েন্টের সামনে থেকে সমুদ্রের নোনাপানিতে নেমে কেউ কেউ গোসলও করছিলেন। শামুক-ঝিনুকের দোকান, ডাব বিক্রেতা, চা-পানের দোকান, খাবার হোটেল—কোথাও ভিড় নেই। বিশেষ দিনেও কুয়াকাটার মতো আকর্ষণীয় একটি পর্যটনকেন্দ্র সাধারণত এমন ‘নীরব’ থাকে না বলে জানালেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
সৈকত এলাকায় চটপটি বিক্রি করেন আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, ঈদের দিন বিকেলেও মানুষজন আসেন কুয়াকাটায়। কাছাকাছি এলাকা থেকে ঘুরতে আসা সেসব মানুষ ঘুরেফিরে রাতে যাঁর যাঁর গন্তব্যে চলে গেছেন। আজ ঈদের দ্বিতীয় দিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছেন। তবে গতবারের তুলনায় অনেক কম।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্নভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। প্রত্যাশা অনুযায়ী পর্যটক না আসায় হতাশা প্রকাশ করলেন কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোতালেব শরীফ। পর্যটক না থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আসলে দেশের অবস্থা, আর্থিক সংকট, কুয়াকাটা পর্যটনের নানাবিধ সমস্যায় পর্যটক কম আসবে বলে মনে হচ্ছে।
কুয়াকাটা সৈকতসংলগ্ন এলাকার দোকানগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা কম। আজ রোববার বিকেলে সৈকতমুখী সড়কের পাশে ঝিনুকের দোকানে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস