কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে স্রোতের টানে ভেসে গিয়ে এবার বাবা-ছেলের মৃত্যু
Published: 9th, June 2025 GMT
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গোসলের একপর্যায়ে স্রোতের টানে ভেসে গিয়ে বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার বেলা দুইটার দিকে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটেছে। মৃত দুজন হলেন রাজশাহীর শাহিনুর রহমান (৫৮) ও তাঁর ছেলে সিফাত রহমান (২০)।
এর আগে গতকাল রোববার বিকেলে লাবণী পয়েন্টে গোসলে নেমে চট্টগ্রামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। শনিবার সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে মাছ ধরতে গিয়ে এক পর্যটক ও স্থানীয় এক বাসিন্দা ভেসে যান। পরে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করেন লাইফগার্ডের কর্মীরা।
আরও পড়ুনকক্সবাজারে সৈকতে ভেসে যাচ্ছিলেন বন্ধু, বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারালেন যুবক ১ ঘণ্টা আগেএদিকে পুলিশ ও লাইফগার্ডের কর্মীরা জানান, গত দুই দিনে সমুদ্রের বিভিন্ন পয়েন্টে গোসলে নেমে তিন পর্যটকসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
কলাতলী সৈকতে পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থা ‘সি সেফ লাইফগার্ড স্টেশন’–এর লাইফগার্ড মোহাম্মদ শুক্কুর জানান, কয়েক দিন ধরে বঙ্গোপসাগর উত্তাল। বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে সাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে একাধিক গর্তের (গুপ্তখাল) সৃষ্টি হয়েছে। সমুদ্রের পানিতে উল্টো স্রোতের টানও বেশি দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় গুপ্তখাল সৃষ্টি হওয়াটা বেশ ঝুঁকির। সৈকতে গোসলে নামতে নিষেধ করে লাইফগার্ড আওতাভুক্ত এলাকায় একাধিক নিশানা টাঙানো হয়েছে। কিন্তু লাইফগার্ডের আওতার বাইরে আজ দুপুরে বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
লাইফগার্ডের কর্মীরা জানান, আজ বেলা পৌনে দুইটার দিকে বাবা-ছেলে দুজন হোটেল সায়মান বিচ রিসোর্টের সামনে সৈকতে গোসলে নামেন। সেখানে লাল নিশানা টাঙানো ছিল। কিছুক্ষণ পর ঢেউয়ের ধাক্কায় বাবা-ছেলে ভেসে যেতে থাকেন। এ সময় সাঁতার কেটেও তাঁরা তীরের দিকে ফিরতে পারেননি। একপর্যায়ে তাঁরা স্রোতের টানে গুপ্তখালে আটকা পড়েন। ওই সময় লাইফগার্ডের কর্মীরা দ্রুতগতির জলযান ‘জেটস্কি’ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। সেখান থেকে তাঁদের মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
লাইফগার্ডের কর্মী আবদুল শুক্কুর বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর বাবা-ছেলে রক্তবমি করেন। সম্ভবত ঢেউয়ের ধাক্কায় তাঁরা আঘাত পেয়েছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সব জ র স
এছাড়াও পড়ুন:
‘ওস্তাদ, টান দিয়েন না’, সহযোগীর আকুতির পরও থামেনি বাস, চাপায় প্রাণ গেল অটোরিকশাচালকের
‘ওস্তাদ, টান দিয়েন না, বাইজা গেছে’—চোখের সামনে অটোরিকশাচালককে চাপা পড়তে দেখে বাস থামানোর জন্য এই আকুতি জানান বাসের চালকের সহকারী। কিন্তু তাঁর আকুতি উপেক্ষা করে চালক বাস সামনে এগিয়ে নিয়ে গেলে মুহূর্তেই পিষ্ট হয়ে মারা যান অটোরিকশাচালক শিপন হোসেন। ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন বাসটি আটক করলেও চালক কৌশলে পালিয়ে যান।
নিহত অটোরিকশাচালকের নাম শিপন হোসেন (৩৪)। তিনি রাজধানীর জুরাইন এলাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।
আজ শনিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা হিজলতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভাঙ্গাগামী একটি বাসের চাপায় ঘটনাস্থলে ওই অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনাকবলিত অটোরিকশার যাত্রী রাজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন বলেন, ‘আমাদের অটোরিকশাটি হিজলতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকার সার্ভিস লেন দিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ওই সড়কে বাসটি যাওয়ার চেষ্টা করলে অটোরিকশার চাকার সঙ্গে আটকে যায়। এ সময় অটোরিকশাচালক আকুতি করে বাসটি থামাতে বলে। কিন্তু বাসচালক (২৪) অটোরিকশাচালকের আকুতি উপেক্ষা করে বাস টান দেওয়ায় অটোরিকশাটি দুই ভাগ হয়ে যায়। এ সময় অটোরিকশাচালক বাসে উঠে চালককে বাস থামাতে বলেন। তাতেও কাজ হয়নি। একপর্যায়ে বাস থেকে নামার সময় অটোরিকশাচালক সার্ভিস লেনের বিভাজকের ওপর পা রাখলে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে বাসের পেছনের দিকের চাকার নিচে পড়ে যান। এ সময় বাসটি অটোরিকশাচালকের পা ও বুকের ওপর দিয়ে চলে যায়।’
অটোরিকশার যাত্রী রাজ হোসেন আরও বলেন, ‘বাসচালক যদি শুরুতেই বাসটি থামিয়ে একটু পেছনে যেতেন, তাহলে আর এ দুর্ঘটনা ঘটত না। সে ধৈর্যহীন হয়ে বাসটি টান দেওয়ায় এমন মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটল।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও হিজলতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা মো. সাব্বির বলেন, ‘অটোরিকশাচালককে বাসের চাকায় চাপা পড়তে দেখে আমরা বাসটিকে থামানোর জন্য বলি। বাসের সহকারীও বলছিলেন “ওস্তাদ, টান দিয়েন না, টান দিয়েন না, বাইজা গেছে।” এরপরও ওই চালক থামেননি। একপর্যায়ে সে ওই অটোরিকশাচালকের শরীরের ওপর দিয়ে চলে যায়। এলাকাবাসী অটোরিকশাচালককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’
ঘটনাস্থলে থাকা মোটরসাইকেল চালক শাহীন আলম বলেন, ‘আমি মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে হিজলতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখতে পাই, বাসের পেছনের চাকার দিকে এক ব্যক্তি চাপা পড়েছে। এ সময় বাসচালকের সহকারী, কয়েকজন যাত্রী, আমি ও অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শী বাসটি থামাতে বলি। তবে চালক কারও কথা না শুনে বাসটি টান দেন। এ সময় আমিসহ আরও এক বাইকচালক বাসটিকে ধাওয়া করি। একপর্যায়ে নাজিরেরবাগ ঝিলমিল এলাকায় উড়ালসড়কের ওপর বাসটির সামনে মোটরসাইকেল রেখে পথরোধ করি। এ সময় বাসের চালক ও সহকারী বাস থেকে নেমে দৌড়ে কৌশলে পালিয়ে যান।’
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক পীযূষ রায়। তিনি বলেন, বাসটি আটক করা হয়েছে। বাসের চালক ও সহকারী কৌশলে পালিয়ে গেছেন। তাঁদের আটকের চেষ্টা চলছে।