বিশ্বে ইসলাম ধর্মের অনুসারী সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে
Published: 11th, June 2025 GMT
সারা বিশ্বে গত এক দশকে ইসলাম ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা অন্য সব ধর্মের সম্মিলিত বৃদ্ধির চেয়েও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ইসলাম এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম। পিউ রিসার্চ সেন্টারের নতুন এক গবষেণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত—এই এক দশকের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়েছে।
গত সোমবার পিউ রিসার্চের ‘গ্লোবাল রিলিজিয়াস ল্যান্ডস্কেপ’ শীর্ষক এই গবেষণায় বলা হয়েছে, ইসলাম ধর্মে এই প্রবৃদ্ধি মূলত প্রাকৃতিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফল। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে ধর্মান্তরের ভূমিকা খুবই সামান্য।
গবেষণায় বলা হয়েছে, মুসলিমদের সন্তানের সংখ্যা অন্য সব বড় ধর্মের অনুসারীদের তুলনায় বেশি এবং মুসলিমরা তুলনামূলকভাবে কম বয়সী।
গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, খ্রিষ্টধর্ম এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্ম। বিশ্বের মোট প্রায় ২৩০ কোটি মানুষ এই ধর্মের অনুসারী। তবে ইসলাম ও খ্রিষ্টধর্মের মধ্যে ব্যবধান দিন দিন কমছে।২০১৫ থেকে ২০২০ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, গড়ে একজন মুসলিম নারী তাঁর জীবনে ২.
গবেষণায় ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের ধর্মীয় অনুপাতে কী পরিবর্তন এসেছে, তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, খ্রিষ্টধর্ম এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্ম। বিশ্বের মোট প্রায় ২৩০ কোটি মানুষ এই ধর্মের অনুসারী। তবে ইসলাম ও খ্রিষ্টধর্মের মধ্যে ব্যবধান দিন দিন কমছে।
গবেষণার তথ্যমতে, ২০১০ সালের পর থেকে বিশ্বে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা প্রায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে।
আঞ্চলিক পরিবর্তন
বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মূলত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেই।
ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে বড় প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে কাজাখস্তান, বেনিন ও লেবাননে। অন্যদিকে ওমান ও তানজানিয়ায় মুসলিমদের অনুপাত কমে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয়ভাবে কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক নেই—এমন মানুষের সংখ্যা ২০১০ সালের তুলনায় ৯৭ শতাংশ বেড়েছে।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ধর্মহীন মানুষ বাস করেন চীনে। সেখানে প্রায় ১৩০ কোটি মানুষ কোনো ধর্মের সঙ্গে যুক্ত নন। আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে, তাঁরা কোনো ধর্মের অনুসারী নন।
পিউ রিসার্চের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এখনো ৬০ শতাংশ দেশ ও অঞ্চলে খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীর সংখ্যা ৪০টি দেশে অন্তত ৫ শতাংশ করে কমেছে এবং মাত্র একটি দেশে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যখন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছেন, সেখানে তিনজন খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করেছেন।পিউ গবেষণা সংস্থা এই কমার একটি কারণ হিসেবে দেখিয়েছে, অনেক মানুষ খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করছেন। তাঁরা যেই ধর্মে বড় হয়েছেন, পরবর্তী সময়ে সেই ধর্ম পরিবর্তন করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এমন প্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যা গণনা করেই পিউ এই বিশ্লেষণ করেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যখন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছেন, সেখানে তিনজন খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করেছেন।
অন্যদিকে কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন মানুষের ক্ষেত্রে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। প্রতি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যেখানে ধর্মহীনতা ছেড়ে গেছেন, সেখানে তিনজন ব্যক্তি নতুন করে ধর্মহীন হয়েছেন।
গবেষণায় দেখা যায়, বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মেও ধর্ম গ্রহণের চেয়ে ধর্ম ত্যাগের হার বেশি ছিল।
ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যেখানে যাঁরা ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তাঁদের সংখ্যা ধর্মত্যাগী ব্যক্তিদের চেয়ে বেশি।
ইসলামের প্রবৃদ্ধি
ইসলাম এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। প্রায় ২০০ কোটি মানুষ এই ধর্মের অনুসারী, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ।
২০১০ সাল থেকে ইসলাম ধর্মে প্রায় ৩৫ কোটি নতুন মানুষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সংখ্যা খ্রিষ্টধর্মের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি এবং অন্যান্য সব ধর্মের সম্মিলিত বৃদ্ধির চেয়েও বেশি।
ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যেখানে যাঁরা ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তাঁদের সংখ্যা ধর্মত্যাগী ব্যক্তিদের চেয়ে বেশি।বিশ্বে কোনো ধর্মের বিশ্বাসী নন (ধর্মহীন), এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটিতে পৌঁছেছে, যা ২০১০ সাল থেকে ২৭ কোটি বেড়েছে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বে ধর্মহীন মানুষের সংখ্যাও অন্যান্য ধর্মের তুলনায় বেশি হারে বেড়েছে।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম। এই ধর্মের অনুসারী ১২০ কোটি মানুষ। ২০১০ সাল থেকে এক দশকে এই ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৬০ লাখ বেড়েছে। তবে এই ধর্মের অনুপাত বিশ্ব জনসংখ্যায় অপরিবর্তিত আছে।
শিখ, বাহাইসহ অন্যান্য ধর্মে মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ কোটি, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ দশমিক ২ শতাংশ।
বৌদ্ধধর্ম একমাত্র প্রধান ধর্ম, যার অনুসারীর সংখ্যা ২০১০ সালের তুলনায় ২০২০ সালে কমে গেছে। এই সময়ের মধ্যে অনুসারী কমেছে ১ কোটি ৮৬ লাখ।গত এক দশকে ইহুদি ধর্মের অনুসারী প্রায় ১০ লাখ বেড়েছে। এই ধর্মের অনুসারী বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ০ দশমিক ২ শতাংশেই রয়েছে।
বৌদ্ধধর্ম একমাত্র প্রধান ধর্ম, যার অনুসারীর সংখ্যা ২০১০ সালের তুলনায় ২০২০ সালে কমে গেছে। এই সময়ের মধ্যে অনুসারী কমেছে ১ কোটি ৮৬ লাখ। এই ধর্মের অনুসারীর হার ৫ শতাংশ থেকে কমে ৪ শতাংশ হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র অন স র র স খ য প র প তবয স ক খ র ষ টধর ম র ২০২০ স ল র ২০১০ স ল র ২০১০ থ ক র সবচ য জনস খ য একম ত র এক দশক ম এখন
এছাড়াও পড়ুন:
মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সিরাত বা জীবনী শুধু ইসলামের ইতিহাসের একটি অধ্যায় নয়, বরং এটি একটি স্বতন্ত্র জ্ঞানশাখা, যার কেন্দ্রে রয়েছেন তিনি এবং তাঁর যুগের ঘটনাবলি, মূল্যবোধ, নীতি, মুজিজা এবং সম্পর্ক।
নবীজির সিরাত প্রতিষ্ঠিত কোরআন, হাদিস এবং সাহাবিদের জীবনাচরণের আলোকে। তবে এই জীবনী নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ভ্রান্ত ব্যাখ্যা এবং তথ্য বিকৃতির ঘটনা ঘটেছে, যা ইসলামের প্রকৃত চিত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
প্রামাণিক উৎসমহানবী (সা.)–এর জীবন সম্পর্কে অধ্যয়নের সবচেয়ে প্রামাণিক উৎস হলো কোরআন মাজিদ। কোরআনে তাঁর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়, তাঁর রিসালাত, হিজরত, যুদ্ধ এবং তাঁর মানবিক গুণাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সুরা মুহাম্মদে তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে (আয়াত: ২)।
সুরা আলে ইমরানেও এসেছে (আয়াত: ১৪৪), সুরা আহজাবে তাঁকে ‘খাতামুন নাবিয়্যিন’ বা নবীদের সিলমোহর (মানে শেষ নবী) বলা হয়ে (আয়াত: ৪০) এবং সুরা ফাতহে তাঁকে বলা হয়েছে ‘আল্লাহর রাসুল’ (আয়াত: ২৯)।
মহানবীর সিরাত নিয়ে কিছু ব্যাখ্যা ও রচনা ঐতিহাসিক সত্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে, যা ইসলামের প্রকৃত চিত্রকে বিকৃত করেছে। এই বিকৃতিগুলো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হয়েছে, কখনো অতিরঞ্জিত বর্ণনা বা ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।এ ছাড়া চরিত্র, কাজ, অবস্থান সম্পর্কে বহু আয়াত আছে কোরআনে।
হাদিস গ্রন্থগুলোও সিরাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ইমাম মালিকের মুয়াত্তা, সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে ইবনে মাজা, সুনানে তিরমিজি এবং সুনানে নাসাইতে তাঁর বাণী, কাজ ও সম্মতির বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে এবং সিরাতের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।
এই গ্রন্থগুলোর সনদ (বর্ণনা পরম্পরা ও বিষয়বস্তু যাচাইয়ের জন্য মুহাদ্দিসগণ কঠোর মানদণ্ড প্রয়োগ করেছেন, যা ‘জার্হ ও তাদিল’ নামে পরিচিত।
এ ছাড়া ইবনে ইসহাকের সিরাতু রাসুলিল্লাহ সিরাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলোর একটি, ইবনে হিশাম, যার একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ প্রকাশ করেছেন এবং আস-সুহাইলি তা নিয়ে আর-রওদুল উনুফ নামে একটি ব্যাখ্যা রচনা করেছেন।
এ ছাড়া ইবনে শিহাব জুহরি ও মুসা ইবনে উকবার মাগাজি মহানবী (সা.) রাসুলুল্লাহর নির্ভরযোগ্য জীবনীগ্রন্থ। কাজি ইয়াজের আশ-শিফা বি তা’রিফ হুকুকিল মুস্তফা তাঁর গুণাবলি ও অধিকারের ওপর বিশদ আলোচনা করেছে, যা পূর্ব ও পশ্চিমের পণ্ডিতদের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত।
আরও পড়ুনমহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর জীবনী রচনার হাজার বছর১১ নভেম্বর ২০২০ভ্রান্ত ব্যাখ্যা ও তথ্য বিকৃতিমহানবীর সিরাত নিয়ে কিছু ব্যাখ্যা ও রচনা ঐতিহাসিক সত্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে, যা ইসলামের প্রকৃত চিত্রকে বিকৃত করেছে। এই বিকৃতিগুলো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হয়েছে, কখনো অতিরঞ্জিত বর্ণনা বা ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
মহানবীর মৃত্যুর পূর্বে তাঁর অসুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পায় হজ্জাতুল বিদা বা বিদায় হজের সময়। তিনি আরাফাতে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমার কাছ থেকে তোমাদের হজের রীতি গ্রহণ করো। কারণ, এ বছরের পর আমি হয়তো আর হজ করতে পারব না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,২৯৭)
সুরা নাসর অবতীর্ণ হলে তিনি বলেন, ‘এটি আমার মৃত্যুর ঘোষণা।’ (ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫/২০৮, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৮৮)
আমি এখনো খায়বারে খাওয়া বিষাক্ত খাবারের যন্ত্রণা অনুভব করছি, এখন এর সময় এসেছে যে আমার শিরা ছিঁড়ে যাবে।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৪২৮রাসুল (সা.) মসজিদে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর একজন বান্দাকে দুনিয়া ও আল্লাহর নৈকট্যের মধ্যে পছন্দ করতে বলেছেন, আর সেই বান্দা আল্লাহর নৈকট্য পছন্দ করেছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫০৪)
তাঁর অসুস্থতার সময় তিনি আয়েশা (রা.)-এর ঘরে থাকতে পছন্দ করেন। আয়েশা বলেন, ‘তিনি জান্নাতুল বাকি (কবরস্থান) থেকে ফিরে এসে আমাকে মাথাব্যথায় কাতর দেখে বললেন, “বরং আমি বলি, হায় আমার মাথা”!’ (মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক, সিরাতু রাসুলিল্লাহ, পৃ. ৬৭৮, দারুল মা’রিফা, বৈরুত, ১৯৭৮)
তিনি তীব্র জ্বরে ভুগছিলেন এবং বলেন, ‘আমি এখনো খায়বারে খাওয়া বিষাক্ত খাবারের যন্ত্রণা অনুভব করছি, এখন এর সময় এসেছে যে আমার শ ছিঁড়ে যাবে’ (সহিহ আল-বুখারি, হাদিস: ৪৪২৮)। তিনি নির্দেশ দেন সাতটি মশকের পানি তাঁর ওপর ঢালার জন্য, যা তাঁর জ্বর কমাতে সাহায্য করে। (ইবনে হিশাম, সিরাতুন নবী, ২/৬৪২, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৯৮)
১১ হিজরির ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার (৭ জুন, ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি আয়েশা (রা.)–এর ঘর থেকে মসজিদে উঁকি দিয়ে মুসল্লিদের দিকে তাকিয়ে হাসেন এবং বলেন, ‘হে আল্লাহ, আমাকে মৃত্যুর যন্ত্রণায় সাহায্য করো।’ (আবু বকর আল-বাইহাকি, দালাইলুন নুবুওয়া, ৭/২৪৪, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৮৫)
তাঁর মৃত্যুর পর আবু বকর (রা.) ঘোষণা দেন, ‘যে মুহাম্মদের ইবাদত করত, সে জানুক, মুহাম্মদ মারা গেছেন। আর যে আল্লাহর ইবাদত করে, সে জানুক আল্লাহ চিরজীবী, তিনি মরেন না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৪১)
আরও পড়ুননবীজি (সা.)–র কোন জীবনী পড়বেন২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫খিলাফতের প্রতিষ্ঠা: সাকিফা বনু সায়েদামহানবী (সা.)–এর মৃত্যুর পর ‘সাকিফা বনু সায়েদা’য় সাহাবিরা খিলাফত নির্বাচনের জন্য সমবেত হন। আনসাররা সাদ ইবন উবাদার নেতৃত্বে দাবি করেন যে তারা ইসলামের প্রথম দিন থেকে রাসুলকে সমর্থন করেছেন, তাই তাদের মধ্য থেকে আমির নির্বাচিত হওয়া উচিত।
আবু বকর (রা.) মুহাজিরদের পক্ষে বলেন, ‘কুরাইশরা ইসলামে প্রথম ইমান এনেছে এবং তারা আরবের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত গোত্র। আমি তোমাদের জন্য উমর বা আবু উবাইদাহর মধ্যে একজনকে প্রস্তাব করছি।’ (ইবনে হিশাম, সিরাতুন নবী, ২/৫৬, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৯৮)
আনসাররা প্রস্তাব করেন, ‘একজন আমির মুহাজিরদের থেকে এবং একজন আনসারদের থেকে হবে।’ তবে এই প্রস্তাব ঐক্য রক্ষার জন্য প্রত্যাখ্যাত হয়। উমর ইবনে খাত্তাব আবু বকরের হাত ধরে বায়আত করেন এবং আনসাররাও তাঁকে সমর্থন দেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৮৩০)
আমি তোমাদের নেতা নির্বাচিত হয়েছি, কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট নই। যদি ভালো করি, আমাকে সাহায্য করো; আর যদি ভুল করি, আমাকে সংশোধন করো।হজরত আবু বকর (রা.)পরদিন মসজিদে সাধারণ বায়আত অনুষ্ঠিত হয়। আবু বকর (রা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের নেতা নির্বাচিত হয়েছি, কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট নই। আমি যদি ভালো করি, আমাকে সাহায্য করো; আর যদি ভুল করি, আমাকে সংশোধন করো।’ (ইবনে হিশাম, সিরাতুন নবী, ২/৬৫৮, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৯৮)
কয়েকজন সাহাবি, যেমন আলী (রা.) এবং জুবাইর ইবন আওয়াম, ফাতিমা (রা.)-এর ঘরে মহানবীর দাফনের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, তাই সাকিফায় উপস্থিত ছিলেন না। কেউ কেউ মনে করেন, খিলাফতের জন্য আলী (রা.) বা আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব উপযুক্ত ছিলেন।
তবে মহানবী কাউকে স্পষ্টভাবে খলিফা মনোনয়ন করেননি। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে কাগজ দাও, আমি তোমাদের জন্য এমন কিছু লিখে দেব, যার পর তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না।’ কিন্তু উমর বলেন, ‘নবীজি এখন প্রবল যন্ত্রণায় ভুগছেন, (তাকে বিরক্ত করব না) আমাদের জন্য কোরআনই যথেষ্ট।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৪)।
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মহানবীর ভূমিকা‘আবু বকর (রা.) ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন’ বলে হালা ওয়ার্দি যে দাবি করেছেন, তা ঐতিহাসিক তথ্যের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।
মহানবী (সা.) নিজেই ইসলামি রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি মদিনায় একটি জাতি গঠন করেন, যারা কোরআনের নির্দেশনা অনুসরণ করে ঐক্যবদ্ধ হয়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধরো এবং বিচ্ছিন্ন হোয়ো না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩)
তিনি মদিনা সনদ প্রণয়ন করেন, যা মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে। (ইবনে হিশাম, সিরাতুন নবী, ১/৫০১, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৯৮)
তিনি বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে চুক্তি, যুদ্ধে নেতৃত্ব এবং রাষ্ট্রদূত প্রেরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কাঠামো গড়ে তোলেন। যেমন রোমের সম্রাট হেরাক্লিয়াস, পারস্যের কিসরা এবং মিসরের মুকাউকিসের কাছে পত্র প্রেরণ করেন, যা তাঁর রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। (ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪/২৬৯, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৮৮)
তিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় ন্যায়বিচার ও শুরার নীতি প্রয়োগ করেন। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচারের সঙ্গে রায় দাও।’ (সুরা সাদ, আয়াত: ২৬)
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যদি ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ চুরি করত, আমি তার হাত কেটে দিতাম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৭৮৭)।
তিনি শুরার বাস্তবায়ন করেন, কেননা কোরআন বলেছে, ‘তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯)
তিনি বলেন, ‘আমি একজন মানুষ। ধর্মীয় বিষয়ে আমার নির্দেশ গ্রহণ করো, কিন্তু পার্থিব বিষয়ে তোমরা আমার চেয়ে বেশি জানো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৩৬৩)
হালা ওয়ার্দির গ্রন্থের মতো অনেক গ্রন্থ বাজারে পাওয়া যায়, যা ঐতিহাসিক তথ্যের অপব্যাখ্যা করে এবং তাঁর মৃত্যু ও খিলাফত নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করে।শেষ কথামহানবীর ‘সিরাত’ ইসলামের ইতিহাস ও মূল্যবোধের একটি জীবন্ত দলিল। কোরআন, হাদিস এবং প্রামাণিক সিরাত গ্রন্থগুলো তাঁর জীবনের সঠিক চিত্র তুলে ধরেছে। তবে হালা ওয়ার্দির গ্রন্থের মতো অনেক গ্রন্থ বাজারে পাওয়া যায়, যা ঐতিহাসিক তথ্যের অপব্যাখ্যা করে এবং তাঁর মৃত্যু ও খিলাফত নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করে।
মহানবী (সা.) ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, যিনি ন্যায়বিচার, শুরা এবং ঐক্যের ভিত্তিতে এটি গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর মৃত্যু ও খিলাফত নির্বাচনের ঘটনাগুলো তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেছে। এই সিরাত আমাদের শিক্ষা দেয় যে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকা এবং ঐক্যের মাধ্যমে সমাজ গঠন করা সম্ভব।
সূত্র: আল-মালুম আন আল-জাদওয়াল আত-তারিখি লি-সিরাতির রাসুল
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর জন্মকালের অলৌকিক ঘটনাবলি১৯ ঘণ্টা আগে