রোহিঙ্গা সংকট সমাধান এবং পাচার হওয়া অর্থ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জোনাথন পাওয়েলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব বিষয়ে সহযোগিতা চান। লন্ডনের একটি হোটেলে এই বৈঠক হয়েছে। এ সময় দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে। খবর বাসসের।
অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আগামী জাতিসংঘ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের সক্রিয় সমর্থন কামনা করেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসনে যুক্তরাজ্যের প্রতি আরও জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, পূর্ববর্তী সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে বিদেশে পাচার হয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এই অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

জোনাথন পাওয়েল অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে ইতিবাচক অগ্রগতি এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসার বিষয়েও আলোচনা হয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড.

খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ।

কমনওয়েলথ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক

কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি আয়র্কর বোচওয়ে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক সংস্কারে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে আগ্রহী সংস্থাটি। গত মঙ্গলবার লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বোচওয়ে বলেন, বাংলাদেশ চাইলে সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করা আগামী পাঁচ বছরের জন্য কমনওয়েলথের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার। তিনি জানান, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সংগ্রামে সহায়তা করাও সংগঠনের অগ্রাধিকারভিত্তিক লক্ষ্য। 

ঘানার এই নাগরিক বলেন, কমনওয়েলথ ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন মানুষের প্ল্যাটফর্ম। বর্তমানে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৮৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আগামীতে তা কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়নে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা কমনওয়েলথ মহাসচিবকে ক্রীড়া খাতে তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর আহ্বান জানান। কমনওয়েলথ মহাসচিব জানান, চলতি মাসে ঢাকায় একটি যুব প্রোগ্রাম হবে। কমনওয়েলথে ১.৫ বিলিয়ন তরুণ। তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর জ য র সহয গ ত উপদ ষ ট র জন য ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

এ বছর ২৭ বাংলাদেশি পেলেন কমনওয়েলথ বৃত্তি

ব্রিটিশ কাউন্সিল ও ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের যৌথ উদ্যোগে ২০২৫ সালের কমনওয়েলথ বৃত্তি পাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রি–ডিপারচার ব্রিফিং ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়।

এ বছর ২৭ মেধাবী বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে সম্মানজনক এ বৃত্তি অর্জন করেছেন। বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৭ নারী শিক্ষার্থী রয়েছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁদের নির্বাচিত বিষয়ের মধ্যে রয়েছে গ্লোবাল মেন্টাল হেলথ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মানবাধিকার, পরিবেশগত অর্থনীতি ও টেকসই উন্নয়নসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য যাত্রা শুরু করা কমনওয়েলথ স্কলারদের এই সাফল্য উদ্‌যাপন করতে পেরে আমি আনন্দিত। শিক্ষাগত উন্নয়নের প্রতি তাঁদের একাগ্রতার মাধ্যমেই বোঝা যায়, তাঁরা বাংলাদেশে ফিরে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন; পাশাপাশি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের অংশীদারত্বকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে ভূমিকা রাখবেন। এ বছর বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি আমাকে বিশেষভাবে আনন্দিত করেছে। নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রগতির এক অনন্য উদাহরণ।’

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন ফোর্বস। তিনি বলেন, ‘কমনওয়েলথ স্কলারশিপ প্রোগ্রামে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক সফলতা দেখে আমরা সত্যিই গর্বিত। এ বৃত্তি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছে। তাঁরা দেশে ফিরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অবদান রাখেন, তা যুক্তরাজ্যের বিশ্বমানের শিক্ষার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের প্রমাণ। তাই এ বছর বৃত্তি পাওয়া সব শিক্ষার্থীকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন। নিজের দেশ ও দেশের বাইরের বৃহত্তর পরিসরে আমি তাঁদের সাফল্য কামনা করি।’

আরও পড়ুনআমেরিকার ফুলব্রাইট বৃত্তি: আবেদনের সময় বৃদ্ধি, প্রয়োজন টোয়েফলে ৮০ কিংবা আইইএলটিএসে ৭১২ ঘণ্টা আগে

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ কমনওয়েলথ স্কলার্স অ্যান্ড ফেলোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসিএসএফ) সভাপতি বোরহান উদ্দিন খান স্কলারদের অভিনন্দন জানান।

কমনওয়েলথ বৃত্তি যুক্তরাজ্যের অন্যতম আন্তর্জাতিক বৃত্তি কর্মসূচি। এ বৃত্তি বৈশ্বিক উন্নয়ন, একাডেমিক সাফল্য ও আন্তসাংস্কৃতিক সহযোগিতার প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অন্যতম মাধ্যম। ১৯৬০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৬০০–এর বেশি বাংলাদেশি এ বৃত্তি পেয়েছেন। তাঁদের অনেকেই বর্তমানে সরকার, শিক্ষা, সিভিল সোসাইটি ও বেসরকারি খাতে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

অনুষ্ঠানটিতে স্কলারদের যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা ও পড়াশোনার সময়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস–সম্পর্কিত বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়। বিদেশে থাকার জন্য অত্যাবশ্যক হলো সেখানকার কমিউনিটির সঙ্গে পারস্পরিক যোগাযোগ ও পরিচিতি গড়ে তোলা। তাই অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কেও নানা পরামর্শ প্রদান করা হয়। বিজ্ঞপ্তি

আরও পড়ুনএমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা নিয়ে নির্দেশনা মাউশির, কে কত টাকা পাবেন৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এ বছর ২৭ বাংলাদেশি পেলেন কমনওয়েলথ বৃত্তি