নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় দুই দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়ে এক তরুণ নিহত হয়েছেন এবং সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বেলাব ইউনিয়নের মাটিয়ালপাড়া ও চর বেলাব গ্রামের মধ্যবর্তী সেতু এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বেলা আড়াইটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলছিল। নিহত তরুণের নাম মো.

সাইফুল মিয়া (২৬)। তিনি বেলাব ইউনিয়নের চর বেলাব গ্রামের মো. জীবন মিয়ার ছেলে।

স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল বুধবার বিকেলে মাটিয়ালপাড়া ও চর বেলাব গ্রামের দুই দল তরুণের মধ্যে প্রীতি ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলার মাঠে প্রতিপক্ষের আঘাতে মাটিয়ালপাড়ার এক তরুণ আহত হন। এ নিয়ে মাঠের মধ্যে দুই পক্ষ উত্তেজিত হয়ে কথা–কাটাকাটিতে জড়ায়। খেলা শেষে ফেরার পথে সন্ধ্যায় চর বেলাব গ্রামের এক তরুণের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয় অপর পক্ষের কয়েকজন খেলোয়াড়কে বহনকারী একটি বিভাটেক রিকশা। তখন তাঁরা বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। পরে রাতে চর বেলাব গ্রামের কয়েকজন এ বিষয়ে কথা বলতে মাটিয়ালপাড়ায় গেলে তাঁদের মারধর করা হয়।

এলাকায় ফিরে ঘটনা জানালে চর বেলাব গ্রামের শত শত মানুষ আজ সকালে লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে মাটিয়ালপাড়ায় রওনা হন। খবর পেয়ে প্রতিপক্ষের শত শত ব্যক্তি লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে এগিয়ে আসেন। দুই গ্রামের মধ্যবর্তী সেতুসংলগ্ন স্থানে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় দুই পক্ষের ছোড়া ইটপাটকেলে কয়েকজন আহত হন।

খবর পেয়ে থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে রাবার বুলেটবিদ্ধ কয়েকজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে সাইফুল নামের এক তরুণ মারা যান।

বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মনজুর-ই-মুশফিকা ফেরদৌস জানান, সাইফুলকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাঁর চোখসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রাবার বুলেটের আঘাত ছিল। এ ছাড়া একই ঘটনায় পুলিশ সদস্যসহ আহত অন্তত ১০ জনকে তাঁরা চিকিৎসা দিয়েছেন।

বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছি। রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি।’ তিনি বলেন, পুলিশ বারবার অনুরোধ করেছে, সংঘর্ষে জড়াবেন না, অভিযোগ নিয়ে থানায় আসুন। কিন্তু তাঁরা আহ্বানে সাড়া না দিয়ে দেশি অস্ত্র ও ইটপাটকেল ছুড়ে অনেককে আহত করেছেন। তিনি নিজেসহ ১১ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চর ব ল ব গ র ম র তর ণ র স ঘর ষ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস সংকট

রাজধানী ঢাকার একটি ঘনবসতিপূর্ণ শনির আখড়ায় গ্যাস সংকট এখন নিয়মিত ভোগান্তির নাম। ভোর থেকে দুপুর—কখনো কখনো পুরো দিন গ্যাসের দেখা মেলে না। এর ফলে রান্না, দৈনন্দিন জীবনযাপন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

আমরা যারা সকালবেলা অফিস, স্কুল বা কলেজে যাবার আগে তড়িঘড়ি করে রান্না সেরে বের হওয়ার চেষ্টা করি, তাদের জন্য গ্যাস না থাকা মানেই বিশৃঙ্খল একটি দিন। একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন দাম, অন্যদিকে গ্যাস না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় রান্না করতে গিয়ে বেড়ে যাচ্ছে বাড়তি খরচ। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন গৃহিণী ও কর্মজীবী নারীরা।

সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হলো, আমরা নিয়মিত মাসিক বিল পরিশোধ করেও সে অনুযায়ী সেবা পাচ্ছি না। কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই দিনের পর দিন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। কবে আসবে, কখন বন্ধ থাকবে—এমন কোনো সময়সূচিও জানানো হয় না। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেও পাওয়া যায় না সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা বা সমাধানের আশ্বাস।

গ্যাস না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার ব্যবহারে ঝুঁকছেন। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি ও অতিরিক্ত ব্যয় বহনের কারণে এটি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য কোনো টেকসই সমাধান নয়। বারবার সিলিন্ডার ভরানো এবং নিয়মিত হারে খরচ চালানো এই শ্রেণির জন্য প্রায় অসম্ভব। এ অবস্থায়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ জোরদার করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি থাকলে তা আগেভাগে জানিয়ে সময়সূচি প্রকাশ করতে হবে, যাতে মানুষ প্রস্তুতি নিতে পারে। মাসিক বিলের বিপরীতে ন্যায্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি এলাকার জন্য সমস্যা নিরসনে হটলাইন চালু করতে হবে, যেখানে তাৎক্ষণিক অভিযোগ জানানো সম্ভব হবে।

নুসরাত অপর্ণা

শনিরআখড়া, ঢাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ