বাগেরহাটে ব্যবসায়ীর ২৩৫ বিঘার ঘের ও খামার বাড়ি দখলের অভিযোগ
Published: 12th, June 2025 GMT
দুই চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২৩৫ বিঘা জমির ঘের ও খামারবাড়ি দখলের অভিযোগ করেছেন বাগেরহাটে মো. মহিবুল্লাহ মিন্টু নামে এক ব্যবসায়ী। প্রতিবাদ করায় তাকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
তার ভাষ্য, খামার উদ্ধারে কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। যে কারণে তিনি আদালতে মামলা করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন মহিবুল্লাহ। তিনি বাগেরহাটের কাশিমপুর বাজার গ্রামের বাসিন্দা।
আরো পড়ুন:
‘মারধরের’ ১২ দিন পর সাবেক প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাইয়ের মৃত্যু
রূপগঞ্জে গুলিবিদ্ধ সেই ব্যবসায়ীর মৃত্যু
লিখিত বক্তব্যে মহিবুল্লাহ জানান, তিনি মৎস্য ব্যবসায়ী। তার বাবা তরফদার মকবুল হোসেন বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছিলেন। ডেমা ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া ও চকপঞ্চমালা মৌজায় তার পৈত্রিক ও ক্রয়কৃত ১৩৫ বিঘা এবং লীজকৃত আরও ১০০ বিঘা মোট ২৩৫ বিঘা জমি রয়েছে।
এই জমিতে গত ৩৯ বছর ধরে মাল্টা, আম, কলা, নারকেল ও সুপারিসহ বিভিন্ন ফলের বাগান এবং ঘের করে মৎস্য চাষ করছেন তিনি। খামার বাড়িতে ২ হাজার সুপারি গাছ, ৪০০ মাল্টা গাছ, ৩০০ আম গাছ, দুই শতাধিক কলা ও নারকেল গাছ রয়েছে। আছে পাকা ঘর, ডিপ টিউবওয়েল, গরু ও মুরগির ফার্ম। সেখানে তার নামে দুইটি বৈদ্যুতিক মিটারও রয়েছে।
তিনি জানান, ব্যবসায়িক ও পারিবাবিক কারণে তিনি ঢাকায় থাকেন। এ কারণে ম্যানেজার ও কর্মচারীর মাধ্যমে মৎস্য খামার ও ফলের বাগান পরিচালনা করেন।
মহিবুল্লাহ’র অভিযোগ, মৎস্য ঘের ও ফলবাগানের কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে গত ১ জানুয়ারি সব দখল করে নেন তার আপন চাচাতো ভাই নাজমুল তরফদার ও সোহেল তরফদার। দখলকারী নাজমুল তরফদার ডেমা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি, তার ছোট ভাই রাজিব তরফদার ডেমা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং তাদের ছোট ভাই সোহেল যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা।
মহিবুল্লাহ জানান, বর্তমানে প্রকল্পের কাছে গেলে তার কর্মচারী ও তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হমকি দিচ্ছে নাজমুল, রাজিব ও সোহেলসহ তাদের লোকজন। স্থানীয়ভাবে অনেক চেষ্টা করেও দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারেননি তিনি। ফলে গত ৪ জুন বাগেরহাট সদর সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে এবং তার পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মহিবুল্লাহ।
তিনি পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ডেমা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নাজমুল তরফদারকে ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ ল তরফদ র ব গ রহ ট ব যবস য় কর ছ ন মৎস য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে।
এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র্যান্ডেল।
এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব।
১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।
রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”
গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”
ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”
ঢাকা/তারিকুল/এস