চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিশ্বনাথপুর গ্রামের আমচাষি মিজানুর রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় ২০০ মণ ফল নিয়ে যান দেশের অন্যতম বড় আম বাজার কানসাটে। প্রথম ২ ঘণ্টায় কোনো ক্রেতা পাননি। এরপর এক ব্যাপারী এলেও আগের মতো ৫২ কেজিতে মণ ধরে আম নিতে চান। দামও বলেন এক দিন আগের চেয়ে মণে ৫০০ টাকা কম। ওই ব্যাপারীকে বুধবার রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আমের ওজন ও কমিশন নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তের কথা বলতেই রাগ দেখিয়ে চলে যান। 
এ নিয়ে মিজান সমকালকে বলেন, ভরা মৌসুমে একটি পক্ষ জেলার আমশিল্পকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে। আম এখন চাষির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর চেয়ে ১০ বছর আগে যেভাবে ৪৫ কেজিতে মণ ধরে আম বিক্রি হতো, সেটা চালু হলেই ভালো হয়। 
দিনাজপুরের একটি বাগান থেকে দুই ভ্যান আম নিয়ে কানসাটে আসা চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, একদিকে আমের ওজন নির্ধারণ নিয়ে চলছে ইঁদুর-বিড়াল খেলা। অন্যদিকে বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কম। এতে বাধ্য হয়ে যেনতেনভাবে আম বিক্রি করতে হচ্ছে চাষিকে। 
৪০-এর বদলে ৫২ কেজিতে মণ ধরা এবং পরে আড়তদারদের কমিশন নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের বাজারে এ অস্থিরতা চলছে মাসের শুরু থেকেই। এ নিয়ে ৫ জুন আড়তদার, চাষি, ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বসেন। সেখানে ৪০ কেজিতে আমের মণ ধরে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। তবে তিন দিন পরই আড়তদাররা কেজিতে ৩ টাকা কমিশন দাবি করলে তৈরি হয় অচলাবস্থা। এ নিয়ে গত বুধবার সারাদিন বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে কেজিতে দেড় টাকা কমিশন নির্ধারণ হয়।
নতুন নিয়মে আম বিক্রি শুরুর কথা গতকাল থেকেই। তবে কানসাটসহ জেলার কোনো বাজারেই ব্যবসায়ীদের তা পুরোপুরি মানতে দেখা যায়নি। অথচ রাজশাহীর বানেশ্বর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও রহনপুর এবং নওগাঁর সাপাহারের আম আড়তদার সমিতির নেতা, আমচাষি, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসককের উপস্থিতিতে ওই সিদ্ধান্ত হয়। পরে মাইকে তা প্রচার করা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার বাজারে দেখা যায় উল্টো চিত্র। 
গতকালও ভোলাহাট বাজারে ৫২ কেজিতে এবং গোমস্তাপুরের রহনপুর বাজারে ৫০-৫২ কেজিতে মণ ধরে আম কেনাবেচা হয়। কানসাট আমবাজারেও ৫২ কেজিতে মণ ধরে কেনেন আড়তদাররা। ৪০ কেজিতে মণ ধরলে নেওয়া হয় ৬০ টাকা কমিশন। 
গোমস্তাপুর উপজেলার আম ব্যবসায়ী ও চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব বলেন, দীর্ঘদিনের নিয়ম বাদ দিয়ে নতুনভাবে আম কেনাবেচায় কিছুটা সময় প্রয়োজন। চাষি-আড়তদার সবাইকে উদার মনে করে ব্যবসা করতে হবে।
গোমস্তাপুর উপজেলা আম আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন দাবি করেন, আড়তঘরের ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতনসহ যে খরচ রয়েছে, তা এই নিয়মে ওঠানো কঠিন। শিবগঞ্জের ইউএনও আজাহার আলী বলেন, ৪০ কেজিতে মণ এবং কেজিপ্রতি দেড় টাকা কমিশনের বাইরে যাওয়া যাবে না। এ সিদ্ধান্ত সব জেলায় কার্যকর করা হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ইনব বগঞ জ ৫২ ক জ ত ব যবস য় বগঞ জ র আড়তদ র

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে পাঙাশের বৃহত্তম আড়ত দ্বীপনগর, পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি অনেক মাছ

রাজধানীর গাবতলী–মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের পাশে বিজিবি মার্কেটে গড়ে ওঠা দ্বীপনগর মাছের আড়ত প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বেশ জমজমাট থাকে। এই তিন ঘণ্টায় বিক্রি হয় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মাছ। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে এসব নানা জাতের দেশি-বিদেশি মাছ।

এ আড়তে গরিবের মাছখ্যাত পাঙাশ থেকে শুরু করে রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, কই, শিং, টাকি, মাগুর, পুঁটি, বাইম, চিংড়িসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি ও চাষের মাছ পাওয়া যায়। নদীর পাশাপাশি সাগরের বাইলা, চাপিলা, সুরমা, পোয়া, রিঠা, লইট্টা, টুনা প্রভৃতি মাছ পাওয়া যায়। ওমান, চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা মাছ সরাসরি এখানে আসে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৬ সালে প্রথমে বিজিবি মার্কেটে মাছ বিক্রি শুরু হয়। তবে ২০০৯ সালে এ বাজারে দ্বীপনগর আড়তের যাত্রা শুরু হলেও বাজার জমে ওঠে ২০১৫ সালের পর থেকে। পরে পাঁচটি হিমাগার ও একটি বরফকল নিয়ে এটি এখন একটি পূর্ণাঙ্গ মৎস্য আড়তে পরিণত হয়, যেখানে ছোট–বড় প্রায় ৪০০ পাইকারি দোকান রয়েছে।

আড়তদার ও বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, দ্বীপনগর আড়তে জ্যান্ত মাছের পাইকারদের বিনা মূল্যে পানি সরবরাহ করায় তাঁদের প্রত্যেকের প্রায় ৫০০ টাকা করে সাশ্রয় হয়। তার ওপর যাতায়াতের সুবিধা ভালো, ওজনে কেউ মাছ কম দেয় না, চুরিও হয় না এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো, এখানে চাঁদাবাজিমুক্ত পরিবেশে বেচাকেনা করা যায়। এসব কারণে এটি এরই মধ্যে ঢাকার অন্যতম বৃহৎ ও জনপ্রিয় আড়তে পরিণত হয়েছে। ফলে এখানে দিন দিন পাইকার বাড়ছে এবং মোকামও আশপাশে বিস্তৃত হচ্ছে।

দ্বীপনগর আড়তের ‘অটুট বন্ধন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি মো. ইনসার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে দৈনিক প্রায় ৪০ হাজার কেজি পাঙাশ বিক্রি হয়, যা কারওয়ান বাজারেও হয় না। সব ধরনের মাছ মিলিয়ে দৈনিক দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়।’

* দ্বীপনগর আড়তে পাঙাশ, রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, কই, শিং, টাকি, মাগুর, পুঁটি, বাইম, চিংড়িসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি ও চাষের মাছ পাওয়া যায়।
* নদী ও সাগরের বাইলা, চাপিলা, সুরমা, পোয়া, রিঠা, লইট্টা, টুনা প্রভৃতি মাছও বিক্রি হয়।
* প্রতিবেশী ভারত থেকে শুরু করে ওমান, সুদান, জর্ডান, চীন ও জাপান থেকে আমদানি করা মাছ এখানে বিক্রি হয়।

আড়তদার ও পাইকারদের দাবি, এটি দেশে পাঙাশ মাছের সবচেয়ে বড় আড়ত। এখানে দিনে ৩৫ থেকে ৪০ ট্রাক পাঙাশ মাছ আসে। এসব ট্রাকে ৩০ থেকে ৪০টি করে পাঙাশের ড্রাম থাকে। এর একেকটিতে ৪০ কেজি মাছ থাকে। গড়ে ৩৫টি ট্রাকে ৩৫টি করে ড্রাম এবং প্রতি ড্রামে ৪০ কেজি ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, এখানে দৈনিক ৪৯ হাজার কেজি পাঙাশ মাছ বিক্রি হয়, যার দাম ৬৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

বিশেষ করে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, শ্যামলী, গাবতলী, সাভার, উত্তরা এবং আবদুল্লাহপুর এলাকার পাইকারেরা দ্বীপনগর আড়তে মাছ কিনতে আসেন। অটুট বন্ধন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মনির হোসেন বলেন, কম দামে পাওয়া যায় বলে পাইকারেরা এখানে মাছ কিনতে আসেন। তাঁর নিজস্ব বরফকল রয়েছে। ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বরফের পাটা বিক্রি করেন। তাই বাইরে থেকে বরফ আনতে হয় না।

সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফোটার আগেই বিভিন্ন এলাকার পাইকারেরা মাছ কিনতে দ্বীপনগর আড়তে চলে আসেন। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত নিলামের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে ওঠে পুরো আড়ত। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা তাজা ও হিমায়িত মাছের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আনা মাছের বেচাবিক্রি শেষ হয়ে যায়। ৯টার পরপরই সব ব্যস্ততা শেষে ধোয়ামোছার কাজ শুরু হয়ে যায়।

সাভার নবীনগর থেকে আসা পাইকার ফরিদুল ইসলাম জানান, তিনি এখান থেকে দৈনিক ১৫০–২০০ কেজি সাগরের মাছ নিয়ে এলাকার বাজারে বিক্রি করেন।

আড়তদারেরা জানান, দেশের সিলেট, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নওগাঁ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, টেকেরহাট, খুলনা, রাজশাহী, মোংলা, সাতক্ষীরাসহ সব অঞ্চল থেকেই মিঠাপানি এবং নদী ও সাগরের মাছ আসে দ্বীপনগর আড়তে। ওমান, সুদান, জর্ডান, জাপান, চীন এবং ভারত থেকেও সামুদ্রিক মাছ আনা হয়।

মেসার্স ঢাকা গাবতলী ফিশ আড়তের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দৈনিক ৫ টনের মতো মাছ বিক্রি হয়, যার দাম ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার মতো।’ তাঁদের হিমাগারে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২ মাস পর্যন্ত মাছ ঠিক থাকে। প্রয়োজনে তাপমাত্রা আরও কমানো যায় বলে জানান তিনি। তবে আড়তদারদের হিসাবে এসব হিমাগার থেকে দৈনিক ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়।

৫৫০ টাকা করে বাইম মাছ কেনার পর আদাবর বাজারের একজন পাইকার প্রথম আলোকে জানান, তিনি এই মাছ বিক্রি করবেন ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। পোয়া মাছ কিনেছেন ৩৩০ টাকা কেজি দরে, বেচবেন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। ওই পাইকার আরও জানান, আগে কারওয়ান বাজার থেকে মাছ কিনলেও এখন সুবিধা থাকায় দ্বীপনগরে আসেন। প্রতিদিন পাঙাশ, তেলাপিয়া, রুই মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫০ থেকে ৭০ কেজি মাছ কেনেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • মেঘনার পাড়ে ‘আড়াই ঘণ্টার হাট’, দৈনিক বেচাকেনা ২৫-২৬ লাখ টাকার টাটকা মাছ
  • দেশে পাঙাশের বৃহত্তম আড়ত দ্বীপনগর, পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি অনেক মাছ