আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নির্মাণ খাতের ওপর করের চাপ বেড়েছে। নির্মাণের মূল উপকরণ  রড ও সিমেন্ট উৎপাদনে শুল্ক-কর বাড়ানো হয়েছে। নির্মাণ কোম্পানির সেবার ওপর ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে। তারকাঁটা, নাট, বোল্টসহ বিভিন্ন খুচরা উপকরণেও বাড়ানো হয়েছে ভ্যাট। এসবের প্রভাবে ভবন এবং অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণে ব্যয় বাড়বে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। 

নির্মাণ খাতে আরও কিছু পদক্ষেপ রয়েছে, যার প্রভাব ক্ষেত্রভেদে ভিন্ন হবে। জমি বিক্রেতার হাতে যাতে কালো টাকা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য প্রকৃত বিক্রয়মূল্যে সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের লক্ষ্যে জমি হস্তান্তর থেকে মূলধনি মুনাফার ওপর  উৎসে কর কমানো হয়েছে। জমির রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) খরচ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সমবায়ভিত্তিক আবাসনে সদস্যদের মধ্যে জমি হস্তান্তরে কর অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে করদাতা বাড়াতে সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকায় জমি ও ফ্ল্যাট কেনাবেচা বা হস্তান্তরের সময় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখানোর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে নির্মাণ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া জানান, রড ও সিমেন্টের কাঁচামালের কর বাড়লে এসব পণ্যের মূল্য বাড়বে। আবার জমির মৌজা মূল্য বাড়ালেও ব্যয় বাড়বে। এতে ক্রেতা কমবে, সংকটে পড়বে নির্মাণ খাত। তিনি সমকালকে বলেন, জমির নিবন্ধন খরচ কমানোর উদ্যোগ ভালো। তবে জমির মৌজা মূল্য বাড়ালে প্রকৃত খরচ অনেক বেড়ে যাবে। 
আবাসনে কালো টাকা বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বৈধ আয়ের যে অংশ করদেওয়া হয়নি, সে অংশ বিনিয়োগের সুযোগ রাখার কথা বলি। আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো, সুযোগ থাকার পরও এমন অর্থ আবাসনে খুব বেশি বিনিয়োগ হয় না।’

রড-সিমেন্টের ওপর বাড়তি কর
নির্মাণ খাতের অত্যাবশ্যকীয়  কাঁচামাল রডের উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট কর ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর ওপর আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। আমদানি করা অথবা স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত পুনর্ব্যবহারযোগ্য লোহার খণ্ড বা স্ক্র্যাপ থেকে রড উৎপাদনে প্রতি টনে ভ্যাট ছিল ১ হাজার ৪০০ টাকা। এটি বাড়িয়ে ১ হাজার ৭০০ টাকা করা হয়েছে। আমদানি করা অথবা স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত  গলনযোগ্য স্ক্র্যাপ থেকে ধাতব ব্লক বা বিলেট উৎপাদনে ভ্যাট ১ হাজার ২০০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। সব ধরনের বিলেট থেকে রড উৎপাদনে ভ্যাট ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা, যা বাড়িয়ে ১ হাজার ৬০০ টাকা করা হয়েছে। স্ক্র্যাপ থেকে বিলেট উৎপাদনে ভ্যাট ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা, যা বাড়িয়ে ২ হাজার ৭০০ টাকা করা হয়েছে। 
সিমেন্টের কাঁচামাল  ক্লিঙ্কার আমদানিতে প্রতি টনে আমদানি  শুল্ক ছিল প্রতি টনে ৭০০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকা। এখন প্রতি টনের মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে, যা আগের চেয়ে খরচ বাড়াবে। সিমেন্ট শিট উৎপাদনে ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

জমি ও ফ্ল্যাট কেনাবেচা
অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বিনিয়োগে গুলশানে ২ হাজার ৪০০ বর্গফুট আকারের ফ্ল্যাট কিনলে যেখানে আগের কর ছিল ১৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে হচ্ছে ৪৮ লাখ টাকা। বাড়তি করের হার ২৫৯ শতাংশ। একইভাবে ভবন নির্মাণে কর বেড়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ পর্যন্ত। জমি বা ভবন হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের চেয়ে যদি অতিরিক্ত অর্থ লেনদেন হয়, তবে তা ব্যাংকিং মাধ্যমে প্রদর্শন করতে হবে। অন্যথায় তা কালো টাকা বিবেচিত হবে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আগে কেউ মৌজা মূল্যের কারণে দলিল কম মূল্যে করে থাকলে তিনি অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংকে থাকার প্রমাণ দিয়ে তাতে প্রযোজ্য হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ পাবেন।

ফ্ল্যাট, জমি, দোকান বা ভবন কেনাবেচার সময় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। আগে ১০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে এই শর্ত থাকলেও এবার যে কোনো মূল্যের সম্পত্তির ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য হবে। এই পদক্ষেপের কারণে করজাল সম্প্রসারিত হবে এবং রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগরের থানাভিত্তিক মৌজাগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করে কর নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন থানা ও পৌর এলাকায় জমির ওপর বিভিন্ন শ্রেণিভুক্ত করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন– গুলশান, বনানী, মতিঝিল ও তেজগাঁও এলাকায় প্রতি শতাংশ জমিতে ৯ লাখ টাকা পর্যন্ত কর ধার্য করা হয়েছে। মোহাম্মদপুর, উত্তরা, খিলগাঁও, লালবাগ প্রভৃতি এলাকায় তা কমিয়ে ৩-৪ লাখ টাকার মধ্যে রাখা হয়েছে। জেলা শহর বা পৌরসভাগুলোর জন্য করহার নির্ধারিত হয়েছে ১ লাখ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে করে প্রতি ডেসিমেলে প্রায় ১২ হাজার ১২১ টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় হবে করদাতাদের। একই সঙ্গে ‘কাঠা’ শব্দের সংজ্ঞাও আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারণ করে ১ কাঠাকে ১.

৬৫ ডেসিমেল ধরা হয়েছে। শিল্প এলাকার জন্য পৃথক শ্রেণিভুক্ত করহারও নির্ধারণ করা হয়েছে।
যাদের একাধিক ফ্ল্যাট বা আবাসন রয়েছে, তাদের জন্য নতুন বাজেটে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত কর আরোপের প্রস্তাব এসেছে। তবে এই কর আরোপে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ছাড়ের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র প রস ত ব ত অর থ এল ক য় আমদ ন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ