ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টাকে ব্যঙ্গ করছেন পুতিন
Published: 13th, June 2025 GMT
পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোসওয়াফ সিকোরস্কি বলেছেন, ইউক্রেনে চলমান রাশিয়ার হামলা পরিষ্কারভাবে দেখাচ্ছে যে, ‘রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টাকে উপহাস করছেন।’ তিনি আরও বলেন, ইউরোপ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়িয়ে তার প্রস্তুতি জোরদার করছে। ইতালির রোমে ইউক্রেন বিষয়ে এক বৈঠকে যোগ দিতে এসে এসব মন্তব্য করেন সিকোরস্কি।
বৈঠকের বিষয়ে সিকোরস্কি বলেন, ইউরোপীয় নেতাদের এখন ইউক্রেনকে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সাহায্য করার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা ছায়া নৌবহর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাল্টিকের মতো অগভীর ও আবদ্ধ সমুদ্রের জন্য এটি একটি বাস্তব হুমকি।’ অভিযোগ রয়েছে, ‘বিভিন্ন কম পরিচিত দেশের পতাকা বা কোনো পতাকা ছাড়াই বিপুল পরিমাণ তেল বহন করে’ রাশিয়ার ছায়া নৌবহর।
এদিকে বৃহস্পতিবার ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ দূত লি হুইকে অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছে চীন। তাঁর জায়গায় পোল্যান্ডে চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত সান লিনজিয়াংকে ইউরেশীয়-বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে ইউরোপজুড়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন লি। তবে খুব একটা সফল হননি তিনি। লি নিজেই স্বীকার করেছিলেন, কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যবধান’ রয়ে গেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সান ‘এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে চীনের ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও গভীর করার চেষ্টা করবেন।’
রুশ-ইউক্রেন সংঘাতে চীন নিজেকে নিরপেক্ষ দাবি করলেও পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, বেইজিং মস্কোকে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছে। অন্যদিকে ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ জিইয়ে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের দায়ী করে আসছে চীন।
এরই মধ্যে গতকাল ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সফরে গেছেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস। জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এই তথ্য জানালেও সফরের বিস্তারিত প্রকাশ করেননি তিনি। এ সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন রাশিয়া ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে হামলা জোরদার করেছে। শহরটিতে সর্বশেষ রুশ হামলায় তিনজন নিহত ও ৬০ জন আহত হন।
জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে ফ্রিডরিখ মার্জের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি পিস্টোরিয়াসের প্রথম ইউক্রেন সফর। এর আগে মঙ্গলবার মার্জ রাশিয়ার এসব হামলাকে ‘নাগরিকদের ওপর সন্ত্রাস’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ছিল একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। গত সপ্তাহে রুশ সামরিক বিমানঘাঁটি ও অবকাঠামোয় ইউক্রেনের অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট হামলার বিপরীতে এটি কোনোভাবেই উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া নয়।’
আগামী সপ্তাহেই কানাডায় অনুষ্ঠিত হবে জি-সেভেন সম্মেলন। এর পর চলতি মাসের শেষ দিকে বসবে ন্যাটোর বৈঠক। রাশিয়ার সাম্প্রতিক জোরদার হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এসব আলোচনায় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি রুশবিরোধী আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর এএফপি, দ্য গার্ডিয়ানের।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অর্ধশত বছরের চামড়ার মোকাম রাজারহাট
কখনও হর্ন বাজিয়ে, আবার কখনও শোঁ শোঁ শব্দ তুলে ছুটে চলছে যানবাহন। সেদিকে তাকানোর সময় নেই কারও। কেউ চামড়া পরিষ্কার করছেন, কেউবা লবণ মাখাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ লবণজাত করা চামড়া স্তূপ করছেন। যত সময় বাড়ছে, ততই বাড়ছে মানুষের আনাগোনা। সঙ্গে বাড়ছে হাটের কর্মচাঞ্চল্য। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটের দৃশ্য এটি।
যশোর শহর থেকে পূর্ব দিকে যশোর-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে ছয় কিলোমিটার গেলেই দেখা মিলবে হাটটির। একেবারেই মহাসড়কঘেঁষে গড়ে ওঠা হাট বসে শনি ও মঙ্গলবার। তবে কোরবানির মৌসুমে সাপ্তাহিক এ দুই হাটবার পায় নতুন চেহারা।
১৯৭০-এর দশকে সেই যে হাটটির সূচনা সময় থেকে এখানে চামড়া বিক্রি শুরু হয়েছিল, সেই ধারা এখনও টিকে আছে। মহাসড়কের পাশেই গড়ে ওঠা এই হাটটির যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো। শুধু খুলনা বিভাগের ১০ জেলাতেই নয়, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের কয়েকটি জেলার চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছেও পরিচিত হাট এটি।
গত বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, পিকআপ ভ্যান, ছোট ট্রাক ও ভ্যানে চামড়াবোঝাই করে লোকজন হাটে আসছেন। দরদাম করছেন স্থানীয় আড়তের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। কাঙ্ক্ষিত দাম না মেলাতে অন্য মোকামেও যেতে দেখা যায় হাটটিতে চামড়া আনা ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। কাঙ্ক্ষিত দাম মিললেই স্থানীয় আড়তদারদের কর্মচারীরা ভ্যান বা ট্রাক থেকে নামিয়ে নিচ্ছেন চামড়া।
স্থানীয়রা জানান, হাটবারে চামড়া ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বাড়ে দ্বিগুণ। চামড়া ওঠে আশানুরূপ। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে হাট জমে ওঠে। বেচাবিক্রি চলে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। দূরদূরান্তের অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় হাটবারের আগের দিন রাতে উপস্থিত হন। হাটের ফাঁকা জায়গায় গাড়িগুলো রেখে রাত্রিযাপন করেন পাশের মুড়লি বা মনিহার এলাকার হোটেলে। কেউ কেউ আবার চামড়া আনা গাড়িতেই রাত পার করেন। এর পর কাকডাকা ভোর থেকেই নিজ নিজ চামড়া গাড়ি থেকে নামিয়ে স্তূপ করেন হাটের ফাঁকা জায়গায়। অনেক সময় হাটের জায়গা ছাপিয়ে ব্যবসায়ীরা যশোর-খুলনা মহাসড়কের ফুটপাতেও বেচাকেনা করেন। হাটটিতে শুরু থেকেই ব্যবসা করে আসছেন হাজি আব্দুল মালেক। বাজারে যে কয়েকজন আড়তদার রয়েছেন, তাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ তিনি। সবাই হাজি সাহেব বলেই ডাকেন। হাটটির গোড়াপত্তন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই অঞ্চলে চামড়ার হাট ছিল মনিরামপুর ও খুলনার পাটকেলঘাটাতে। বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা সবাই মনিরামপুরে ব্যবসা করত। স্বাধীনতার পরের বছরই মনিরামপুরে চামড়ার হাটে খাজনা বাড়ানো হয়। তখনই ক্ষুব্ধ হয়ে যশোর সদরের রামনগরের মনোয়ার, ঝিনাইদহের কওসার মিয়া, বাশার মিয়াসহ কয়েকজন প্রথমে যশোর-খুলনা, যশোর-চুকনগর সড়কের রাজারহাট মোড়ে চামড়ার হাট বসান। যেহেতু পাশেই ভৈরব নদ এবং সড়কপথে পরিবহন ব্যবস্থা ভালো, তাই খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া এবং বরিশাল বিভাগের ব্যবসায়ীরা এই হাটে চামড়া নিয়ে আসতে শুরু করেন। মোড়টিতে জায়গা সংকটে ১৯৭৫ সালের দিকে রাজারহাটের বর্তমান স্থানে হাটটি স্থানান্তর করা হয়। তখন হাটটিতে স্থানীয় দেড় হাজার ব্যবসায়ী চামড়া কেনাবেচা করতেন। প্রথম হাটটি ১৫ হাজার টাকায় ইজারা দেন যশোরের স্বনামধন্য অ্যাডভোকেট আকরাম হোসেন।
রাজারহাটের আড়তদার হাসিব চৌধুরী বলেন, তিনি দেড় দশক ধরে চামড়ার ব্যবসা করেন। এখানকার চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন স্থানের আড়তদার ও ট্যানারির মালিকের কাছে বিক্রি করবেন। আড়তদার ও ট্যানারির মালিকরা বকেয়া টাকা সময়মতো দেন না। নানা অজুহাতে দিনের পর দিন টাকা ফেলে রাখেন। একটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ১০ থেকে ১৫ কেজি লবণ লাগে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাদার আমল থেকে বাজারে চামড়ার ব্যবসা দেখে আসছি। বাইরের ব্যবসায়ী আসা কমলেও স্থানীয় আড়তদার বেড়েছে।’
ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ-পরবর্তী প্রথম হাটবার ছিল গত মঙ্গলবার। ওই দিন হাটে তেমন চামড়ার সরবরাহ হয়নি। সরকার নির্ধারিত দামেও চামড়ার বেচাবিক্রি হয়নি। তবে শনিবারের হাটে কেনাবেচা জমজমাট হবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।