ইরানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা
Published: 15th, June 2025 GMT
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান অস্থিতিশীল অবস্থায় তেহরানের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা। তবে এখন পর্যন্ত সেখানে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের ফেরাতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
রবিবার (১৫ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই তথ্য জানান।
মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রবিবার সকালে বলেন, “ইরানে আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগযোগ রাখা হচ্ছে। দেশটিতে আটকে রেখে বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখা হচ্ছে। তবে তাদের উদ্ধারে এখনো কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি।”
আরো পড়ুন:
কোচ কাবরেরার পদত্যাগ দাবি, অনিশ্চয়তায় ভবিষ্যৎ
ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানাল বাংলাদেশ
তিনি জানান, ইরানে প্রবাসী বাংলাদেশি খুব বেশি নেই। তবে বেশ কিছু শিক্ষার্থী রয়েছেন। এখন দেশটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সে কারণে এখনই ফেরত আনা সম্ভব নয়। বিমান যোগাযোগ চালু হলে, তাদেরকে ফেরত নিয়ে আসা সম্ভব হবে। তখন আবার অনেকেই স্বেচ্ছায় ফিরেও আসতে পারবে।
এদিকে, তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার ওয়ালিদ ইসলাম জানান, ইরানে প্রায় ৬৬ জন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে তেহরানে ৫ জন, কারাজে ১ জন, গোরগানে ৮ জন, কোমে ৫০ জন, ১ জন ইসফহানে এবং ১ জন মাত্র শিক্ষার্থী মাসাদে লেখাপড়া করছেন । তাদের সবার সঙ্গেই আমার যোগাযোগ হচ্ছে। তারা সবাই ভালো আছে।
তিনি জানান, সেখানে কোন বাংলাদেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছেন তিনি।
জানা গেছে, ইরানে বেশিরভাগ বাংলাদেশি বন্দর আব্বাসে থাকেন। বন্দর আব্বাস তেহরান থেকে ১২০০ কিলোমিটার দূরে। সেখানে আক্রমণের কোনো খবর এখনো পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের দূতাবাসের তালিকায় ইরানে ৬৭২ জন বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছে। তবে তালিকার বাইরে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন। প্রায় ১৪ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই অনিয়মিত।
এদিকে ইরানে ইসরায়েলের হামলার প্রেক্ষিতে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের এই সুস্পষ্ট শত্রুতাপূর্ণ কাজ জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিমালা এবং ইরানের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যই একটি গুরুতর হুমকি যার সুদূরপ্রসারী পরিণতি হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি স্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যের সমর্থনে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।
শুক্রবার ভোরে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল। ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের ছয় বিজ্ঞানীসহ ৭৮ জনের মৃত্যুর খবর বেরিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এসব হামলায় অন্তত ৩২০ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে ইরানের পাল্টা হামলায় তিনজন ইসরায়েলি মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ৬০ জনেরও বেশি। শনিবার রাতভর পাল্টাপাল্টি হামলায় উভয় দেশে হতাহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঢাকা/হাসান/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল র
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।