ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান অস্থিতিশীল অবস্থায় তেহরানের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা। তবে এখন পর্যন্ত সেখানে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের ফেরাতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

রবিবার (১৫ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই তথ্য জানান।

মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রবিবার সকালে বলেন, “ইরানে আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগযোগ রাখা হচ্ছে। দেশটিতে আটকে রেখে বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখা হচ্ছে। তবে তাদের উদ্ধারে এখনো কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি।”

আরো পড়ুন:

কোচ কাবরেরার পদত্যাগ দাবি, অনিশ্চয়তায় ভবিষ্যৎ

ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানাল বাংলাদেশ

তিনি জানান, ইরানে প্রবাসী বাংলাদেশি খুব বেশি নেই। তবে বেশ কিছু শিক্ষার্থী রয়েছেন। এখন দেশটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সে কারণে এখনই ফেরত আনা সম্ভব নয়। বিমান যোগাযোগ চালু হলে, তাদেরকে ফেরত নিয়ে আসা সম্ভব হবে। তখন আবার অনেকেই স্বেচ্ছায় ফিরেও আসতে পারবে।

এদিকে, তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার ওয়ালিদ ইসলাম জানান, ইরানে প্রায় ৬৬ জন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে তেহরানে ৫ জন, কারাজে ১ জন, গোরগানে ৮ জন,  কোমে ৫০ জন, ১ জন ইসফহানে এবং ১ জন মাত্র শিক্ষার্থী মাসাদে লেখাপড়া করছেন । তাদের সবার সঙ্গেই আমার যোগাযোগ হচ্ছে। তারা সবাই ভালো আছে।

তিনি জানান, সেখানে কোন বাংলাদেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছেন তিনি।

জানা গেছে, ইরানে বেশিরভাগ বাংলাদেশি বন্দর আব্বাসে থাকেন। বন্দর আব্বাস তেহরান থেকে ১২০০ কিলোমিটার দূরে। সেখানে আক্রমণের কোনো খবর এখনো পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের দূতাবাসের তালিকায় ইরানে ৬৭২ জন বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছে। তবে তালিকার বাইরে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন। প্রায় ১৪ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই অনিয়মিত।

এদিকে ইরানে ইসরায়েলের হামলার প্রেক্ষিতে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের এই সুস্পষ্ট শত্রুতাপূর্ণ কাজ জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিমালা এবং ইরানের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যই একটি গুরুতর হুমকি যার সুদূরপ্রসারী পরিণতি হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি স্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যের সমর্থনে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।

শুক্রবার ভোরে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল। ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের ছয় বিজ্ঞানীসহ ৭৮ জনের মৃত্যুর খবর বেরিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এসব হামলায় অন্তত ৩২০ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে ইরানের পাল্টা হামলায় তিনজন ইসরায়েলি মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ৬০ জনেরও বেশি। শনিবার রাতভর পাল্টাপাল্টি হামলায় উভয় দেশে হতাহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ