Samakal:
2025-07-31@22:02:08 GMT

বেপরোয়া বখাটে ও অসহায় বাবা

Published: 15th, June 2025 GMT

বেপরোয়া বখাটে ও অসহায় বাবা

গতকাল ছিল বাবা দিবস। নিউজ ফিড থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেবলই বাবাকে নিয়ে আবেগ জড়ানো কথামালা। মায়ের পরে বাবাই একমাত্র শব্দ, যার প্রতি মানুষের আজন্ম দুর্বলতা কিংবা দায়বদ্ধতা! বলা যায়, গর্বের সঙ্গেই আমরা বাবাকে লালন করি হৃদয়ের একান্ত গহিনে। আমাদের মনে সেই এইটুকুন বয়সে স্বপ্নের বীজ বপন করে দেন বাবা। যে বীজ চারাগাছ হয়ে আকাশমুখী হতে থাকে। আমরাও বাবার দেখানো স্বপ্ন ধরতে শুঁয়াপোকা থেকে প্রতিনিয়ত বর্ণিল প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হই! তবে কতটা রূপান্তর ঘটে আমাদের, সে হিসেব মেলাতে যান না বাবা। তারা কেবল জানেন নিজের সর্বস্ব সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য বিলিয়ে দিতে। 

এমনটাই চোখে পড়েছে রোববার সমকালে প্রকাশিত খবরে। বাবা দিবসেই প্রকাশিত খবরে আমরা দেখেছি, বগুড়ায় অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়েকে বিয়ের হাত থেকে বাঁচাতে প্রতিবাদ করেছেন বাবা। এই প্রতিবাদই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে রিকশাচালক বাবা শাকিল হোসেনের। মেয়েকে বিয়ে না দেওয়ায় বাবাকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। শাকিলের বোন রেশমি আক্তার আশা বলেন, ‘আমার ভাতিজি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। জিতু কিছুদিন পরপর তাকে বিয়ে করতে চায় এবং উত্ত্যক্ত করে। আমার ভাই ১৪ বছরের মেয়েকে বিয়ে দিতে নারাজ। এ নিয়ে আমার ভাই ও জিতুর মধ্যে কয়েক দিন আগে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। ক্ষুব্ধ হয়ে জিতু ও তার লোকজন শনিবার বিকেলে ভাইকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’ 
এমন ভয়ানক হত্যাকাণ্ডের পরও ভুক্তভোগী মামলা করতে ভয় পাচ্ছিলেন। এক দিন পর নিহত রিকশাচালক শাকিল হোসেনের স্ত্রী মালেকা বেগম বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিতু ইসলামকে প্রধান করে ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আরও ৮-১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। পরে পুলিশ জিতু ইসলাম, তার দুই সহযোগী শফিকুল হাসান ও মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে– এ কথা বলতেই হবে। যদিও মামলা করার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তার পরও পুলিশের আন্তরিকতা উল্লেখযোগ্য। মামলার পর পুলিশ তৎপর হয়ে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। 

অবাক করার বিষয়, এ ঘটনার প্রায় দুই মাস আগে, গত ১৮ এপ্রিল রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা আকরাম আলীকে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়েছিল। সে হত্যার ঘটনায়ও মূল আসামি নান্টুসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছিল র‍্যাব-৫। তার কিছুদিন আগে, ১১ মার্চ ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় এসএসসি পরীক্ষার্থীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা ও চাচাকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটেছে। 

আমরা বেপরোয়া ও নিষ্ঠুর হয়ে উঠছি দিন দিন– এ ঘটনাগুলো তারই প্রমাণ। একসময় বখাটেরা ভয়ে থাকত। ভয়ভীতি দেখিয়েই ক্ষান্ত হতো। তার পর মারধর; এখন পথের বাধা সরিয়ে দিতে অভিভাবকের প্রাণ নিয়েই তারা রণে ভঙ্গ দিচ্ছে! 
এসব ঘটনা কল্পনাকেও যেন হার মানায়। এমন সামাজিক অপরাধ এবং বেপরোয়া মনোভাব কোনোক্রমে বাড়তে দেওয়া যায় না। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যতই ক্ষমতাবান হোক; সবাইকে ধরে আইনের আওতায় আনা জরুরি। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এমন অঘটন ঠেকানো কঠিন হবে। দিন দিন তা মহামারি আকার ধারণ করার আশঙ্কাও রয়েছে!

আশিক মুস্তাফা: শিশুসাহিত্যিক ও জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, সমকাল
muashique@gmail.

com  

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সকালের সবচেয়ে বরকতময় সময় ব্যবহারের ৭ কৌশল

সকাল মানুষের জীবনের একটি মূল্যবান সময়, যা দিনের বাকি অংশের জন্য সুর নির্ধারণ করে। সকাল আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার, শরীর ও মনকে প্রস্তুত করার এবং দিনের লক্ষ্য অর্জনের একটি সুবর্ণ সুযোগ।

সামাজিক মাধ্যম, কাজের চাপ এবং পারিবারিক দায়িত্ব আমাদের অনেক সময় কেড়ে নেয়, তাই সকালকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে আমরা জীবনকে আরও উৎপাদনশীল করতে পারি।

১. আল্লাহর সঙ্গে দিনের শুরু

ফজরের নামাজের ১৫-২০ মিনিট আগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া এবং দোয়া করা জীবনকে আমূল বদলে দিতে পারে। এই সময়টি শান্ত ও পবিত্র, যখন আল্লাহর সঙ্গে কোনো বাধা থাকে না।

কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি রাতে, যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আমাদের রব নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?”’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫)।

তাহাজ্জুদের সময় আপনার হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করুন। এতে মানসিক শান্তি বাড়বে এবং দিনের জন্য ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। যদি আপনি নতুন হন, সপ্তাহে এক দিন থেকে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে এটি অভ্যাসে পরিণত করুন।

ফজরের আগে অবশিষ্ট সময়ে কোরআন তিলাওয়াত করুন, কারণ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ভোরে কোরআন পড়া (ফেরেশতাদের) দ্বারা প্রত্যক্ষ করা হয়।’ (সুরা ইসরা. আয়াত: ৭৮)।

আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫২. ফজরের পর ঘুম থেকে দূরে থাকুন

ফজরের নামাজের পর ঘুমিয়ে পড়া অনেকের অভ্যাস, কিন্তু এটি সকালের বরকতময় সময় নষ্ট করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১)।

এই সময়ে বড় বড় কাজ সহজে সম্পন্ন করা যায়, কারণ এতে আল্লাহর বিশেষ বরকত রয়েছে।

আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন। মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১

ফজরের পর ঘুমের প্রলোভন এড়াতে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। এই সময়ে পড়াশোনা, কোরআন মুখস্থ করা বা কোনো ব্যক্তিগত প্রকল্পে কাজ করা যায়। এটি দিনের বাকি সময়ে অবসরের জন্য সময় বাঁচায় এবং আগামী দিনে আরও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করে।

বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।

৩. করণীয় তালিকা তৈরি করুন

একটি করণীয় তালিকা তৈরি করা দিনের পরিকল্পনাকে সুসংগঠিত করে। আমরা প্রায়ই মনে মনে কাজের পরিকল্পনা করি, কিন্তু মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা সীমিত। একটি ডায়েরি বা ফোনের নোট অ্যাপে কাজের তালিকা লিখে রাখলে সময় ও শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। সম্পন্ন হওয়া কাজগুলো তালিকা থেকে কেটে দেওয়ার একটা আলাদা আনন্দ আছে।

এই তালিকায় দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যও অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমন কোরআনের একটি নির্দিষ্ট অংশ মুখস্থ করা বা একটি নতুন দক্ষতা শেখার পরিকল্পনা। এটি আপনাকে দিনের শুরুতে ফোকাসড রাখবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।

আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।৪. সকালে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন

সকালের মূল্যবান সময় সামাজিক মাধ্যমে বা ফোনে অযথা স্ক্রল করে নষ্ট করা উচিত নয়। অনেকে সকালে ফোন হাতে নিয়ে ‘শুধু একটু দেখে নিই’ ভেবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হারিয়ে ফেলেন। এটি মানসিক চাপ বাড়ায় এবং সকালের শান্তি নষ্ট করে।

নিয়ম করুন, সকালের নাশতা বা কিছু কাজ শুরু না করা পর্যন্ত ফোন বা সামাজিক মাধ্যমে যাবেন না। সকালে খবর পড়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, এটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে। যখন ফোন ব্যবহার করবেন, তখন ইতিবাচক ও প্রেরণাদায়ক কনটেন্ট দেখুন, যা আপনার দিনকে উজ্জ্বল করবে।

৫. শরীরচর্চা করুন

শরীরচর্চার উপকারিতা আমরা সবাই জানি। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন অনেকে বাড়ি থেকে কাজ করছেন, শরীরচর্চা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। বাড়িতে কাজ করার ফলে ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথা, পেশির সমস্যা বাড়ছে।

সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।

ইউটিউবে হাজারো ধরনের ব্যায়ামের ভিডিও পাওয়া যায়, যা বাড়িতে সামান্য জায়গায় করা যায়। যদি বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকে, তবে সকালে ৩০ মিনিট হাঁটুন। লক্ষ্য হলো শরীরকে সচল রাখা এবং শক্তি বৃদ্ধি করা।

আরও পড়ুনসুস্থ জীবন যাপনে মহানবী (সা.)-এর ৯ অভ্যাস২৪ জুলাই ২০২৫সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।৬. পুষ্টিকর নাশতা গ্রহণ

ব্যস্ততার কারণে অনেকে সকালের নাশতা বাদ দেন, কিন্তু গবেষণা বলছে, পুষ্টিকর নাশতা দিনভর মনোযোগ বাড়ায়, অপ্রয়োজনীয় চিনির লোভ কমায় এবং শক্তি জোগায়। নাশতায় উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন ওটস বা মাল্টিগ্রেইন রুটি, স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন অ্যাভোকাডো বা বাদাম, গ্রিক ইয়োগার্ট এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করুন।

সময় কম থাকলে একটি স্মুদি তৈরি করুন—পালংশাক, আপেল এবং হিমায়িত কলা ব্লেন্ড করে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর নাশতা তৈরি করা যায়। এটি দিনের শুরুতে সবুজ শাকসবজি গ্রহণের একটি সহজ উপায়।

৭. নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন

বাড়ি থেকে কাজ করার সময় অনেকে ক্যাজুয়াল পোশাকে থাকেন। বরং সকালে সুন্দর পোশাক পরুন, যা আপনার মেজাজ উজ্জ্বল করবে। একটু পছন্দের সুগন্ধি ব্যবহার করলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১

নবীজি (সা) বলেছেন, ‘আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা শুধু বাহ্যিক নয়, বরং এটি আপনার মানসিক প্রস্তুতি ও দিনের জন্য উৎসাহ বাড়ায়।

সকাল আমাদের দিনের ভিত্তি। ইসলাম আমাদের শেখায় যে সকাল আল্লাহর বরকত নিয়ে আসে। তাহাজ্জুদ, ফজরের পর জাগ্রত থাকা, করণীয় তালিকা তৈরি, স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা, শরীরচর্চা, পুষ্টিকর নাশতা এবং নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন—এই সাতটি অভ্যাস আমাদের সকালকে উৎপাদনশীল করবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সূত্র: দ্য মুসলিম ভাইব ডট কম

আরও পড়ুনরহমতের দুয়ারে হাজিরা১৫ জুন ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ