ইরানে বাংলাদেশিদের জন্য জরুরি যোগাযোগ হটলাইন চালু
Published: 16th, June 2025 GMT
ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিক এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত তাঁদের স্বজনদের জন্য জরুরি যোগাযোগের হটলাইন চালু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্য দিয়ে চলমান পরিস্থিতিতে কোনো জরুরি প্রয়োজন হলে তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নাগরিক ও তাঁদের পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এসব হটলাইন কার্যকর রয়েছে। প্রবাসীদের নিরাপত্তা এবং তথ্য প্রদানে বাংলাদেশ সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরানের হটলাইন নম্বরগুলো হলো (হোয়াটসঅ্যাপসহ): +৯৮৯৯০৮৫৭৭৭৩৬৮, +৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঢাকাস্থ কার্যালয়ের হটলাইন নম্বর: +৮৮০১৭১২০১২৮৪৭
সঠিক তথ্যের জন্য দূতাবাস ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্য কোনো অবৈধ বা অসমর্থিত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নদীর কোলে শিক্ষার সংগ্রাম: চরের শিশুদের গল্প
সকাল ৬টা। চর বাটিকামারীর ১০ বছরের আসিয়া নৌকায় চড়ে স্কুলের পথে রওনা দেয়। সঙ্গে তার ছোট ভাই মিলনও। বইখাতা বাঁশের তৈরি ছোট ব্যাগে গুঁজে নেওয়া। মায়ের মুখে একটাই কথা—‘পড়তে গেলে অনেক কষ্ট করতেই হয় মা।’
গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র বিধৌত চর বাটিকামারি যেন এক স্বপ্ন ও সংগ্রামের আখড়া। এখানে শিক্ষার মানে শুধু ক্লাসে যাওয়া নয়, প্রতিদিন জল-জোয়ার, কাঁদা, বালু ও ভয়কে অতিক্রম করে টিকে থাকার লড়াই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরের জীবন যেমন হুমকির মুখে, তেমনি হুমকির মুখে এখানকার শিশুদের ভবিষ্যৎ।
নদীভাঙন ও বন্যার করাল থাবা: ব্রহ্মপুত্রের পাড়ঘেঁষা এই চরে নদীভাঙন নতুন কিছু নয়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ ভাঙন হয়েছে আরও হঠাৎ ও ভয়াবহ। সম্প্রতি চর বাটিকামারির একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পূর্ণ ভেঙে নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন শিক্ষার্থীরা পড়ে অস্থায়ী টিন ও বাঁশের ঘরে, যা বর্ষাকালে টিকিয়ে রাখা কঠিন।
স্থানীয় বাসিন্দা রওশন আরা বেগম বলেন, “আগে একটা স্কুল ছিলো। এখন বাচ্চারা খোলা আকাশের নিচে পড়ে। কখনও বাঁশের চালায়, কখনও গাছের ছায়ায়। একটু বেশি বৃষ্টি হলে স্কুল বন্ধ।”
যাতায়াতই বড় চ্যালেঞ্জ: চরের ভেতরে নেই পাকা রাস্তা। বর্ষাকালে প্রায় পুরো এলাকা পানির নিচে চলে যায়। তখন একমাত্র ভরসা নৌকা। কিন্তু নৌকা চালানো সহজ নয়। ছোট ছোট শিশুদের দুই থেকে তিন ঘণ্টা নৌকা করে স্কুলে যেতে হয়।
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাব্বি বলে, “সকালে নৌকা না পেলে স্কুল মিস হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে পানি এত বেশি হয়, নৌকা উল্টে যাওয়ার ভয় থাকে। তবু যাই, না গেলে তো পরীক্ষা দেওয়া যাবে না।”
ফ্রেন্ডশিপ নামের এনজিওর এক্সিকিউটিভ ফিল্ড অপারেশন (গাইবান্ধা) মো. মোসাদ্দিকুর রহমান বলেন, “চরের শিক্ষার্থীরা অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও শেখার আগ্রহ ধরে রেখেছে। আমাদের স্কুল প্রজেক্টের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে।”
পরীক্ষা দিতে গিয়ে বিপদ : এসএসসি পরীক্ষার্থী রুনার গল্পটা হৃদয়বিদারক। গত বছর বন্যার সময় সে পরীক্ষা দিতে গাইবান্ধা শহরের একটি কেন্দ্রে যাওয়ার পথে হঠাৎ ঝড় ওঠে। নৌকা উল্টে যায়। কোনোরকমে তীরে উঠতে পারলেও সে দিনের পরীক্ষা দিতে পারেনি। “আম্মু কান্না করছিল, আমি খালি বলছিলাম—‘পরীক্ষা না দিলে এবার আর পড়ালেখা করতে পারবো না’।”
এমন হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা চরের অনেক শিক্ষার্থীর। প্রতিটি পরীক্ষা যেন তাদের কাছে একেকটা যুদ্ধ।
শিক্ষকদের সীমাবদ্ধতা ও মানবিকতা: স্থানীয় এক শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা নিজেরাও চরবাসী। আমরাও কষ্ট করে আসি, কিন্তু ক্লাস চালিয়ে যাই। কারণ আমরা জানি, এই শিক্ষাই ওদের একমাত্র আশার আলো।”
তবে অবকাঠামোগত সমস্যা, শিক্ষক স্বল্পতা ও উপকরণের অভাব শিক্ষকদের কাজ কঠিন করে তুলেছে। কোনো কোনো স্কুলে নেই বিজ্ঞান ল্যাব, নেই গ্রন্থাগার, এমনকি পর্যাপ্ত বেঞ্চও নেই।
প্রশ্ন সরকারি উদ্যোগ নিয়ে: চরের মানুষ বারবার প্রশ্ন করেন—সরকার কি তাদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে সচেষ্ট? স্থানীয় চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম বলেন, “আমরা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। স্থায়ী স্কুল ভবন, শিক্ষকের আবাসন, নৌকা বা শাটল সার্ভিসের আবেদন করেছি। এখনো সাড়া মেলেনি।”
তবু সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে আসিয়া, রাব্বি, রুনারা স্বপ্ন দেখে। কেউ শিক্ষক হতে চায়, কেউ ডাক্তার। নবম শ্রেণির তানজিনা আক্তার বলে—“আমি চাই চরেও একটা ভালো স্কুল হোক, যেন ছোট ভাই-বোনেরা আমার মতো কষ্ট না পায়।”
এই শিশুদের চোখের জল, নদীর ঢেউয়ের গর্জন আর টিনের চালের নিচে বই পড়ে যাওয়ার কষ্ট—সব মিলে বলে দেয়, চরবাসীর শিক্ষার গল্পটা শুধুই টিকে থাকার লড়াই নয়, বরং মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার এক অসাধারণ সংগ্রাম।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ যখন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে, তখন দেশের ভেতরেই লাখো শিশু লড়ছে একটাই অধিকার রক্ষায়— শিক্ষার অধিকার। এখন সময়, কেবল প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার।
ঢাকা/ইভা