ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থানরত ৪০০ বাংলাদেশিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, তেহরানে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। তারা নিরাপদ স্থানে যেতে চান। তাদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের নিরাপদে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।

আরো পড়ুন:

আলজাজিরার বিশ্লেষণ: ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের বৈশ্বিক প্রভাব

ইরান থেকে ৬ শতাধিক বিদেশি আজারবাইজানে চলে গেছে

তিনি বলেন, তেহরানে অবস্থানরত বাংলাদেশের নাগরিক ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা হুমকির মধ্যে আছেন। তেহরান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতের বাসভবন ইতোমধ্যেই স্থানান্তর করা হয়েছে। কূটনীতিকসহ দূতাবাসের কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের প্রায় ৪০ জনকে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হবে।

শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইরানের বিভিন্ন স্থানে সামরিক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানে প্রতিদিনই হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। ইরানও ইসরায়েলে পাল্টা হামলা করছে।

ঢাকা/হাসান/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র পদ স থ ন ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটছে মানুষের

ফরিদপুরের সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার কয়েকটি এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। গত তিন সপ্তাহ ধরে পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটছে এখানকার চরাঞ্চলের মানুষের। নদীতীরসংলগ্ন বেশ কয়েকটি রাস্তা ইতোমধ্যে ভেঙে গেছে। কিছু এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে।
ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নজর দিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পাউবো বলছে, প্রতি বছর জুন ও জুলাইয়ে নদীতে পানি বাড়ার ফলে ভাঙন দেখা যায়। গত কয়েক সপ্তাহে ভাঙনের শিকার হয়েছে সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার শয়তানখালি ঘাট, খোকারাম সরকারের ডাঙ্গী, গোপালপুর ঘাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকা।
গত সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে সদরপুরের আকোটেরচর ইউনিয়নের মুন্সীরচর, পিয়াজখালীরচর, আকোট, আকোটেরচর, ছলেনামা ও খোকারামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের শতাধিক ঘর। নদী ভাঙতে ভাঙতে এই ঘরগুলোর মাত্র কয়েক গজ দূরে এখন পদ্মা। এ ছাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর, নুরুদ্দিন সরদারকান্দি, কাচিকাটা গ্রাম, নন্দলালপুর, ফকিরকান্দি, তালপট্টিরচর, কাড়ালকান্দি, জঙ্গিকান্দি, জামাল শিকদারকান্দি এবং চরমানাইর ইউনিয়ন ও চরনাসিরপুর ইউনিয়নের শিমুলতলী ঘাট, কাজীরসুরা, দুর্বারটেক, মফিজদ্দিনেরকান্দি, হাফেজকান্দি, রাড় চরগজারিয়া ও গিয়াস উদ্দীন মুন্সীরকান্দি গ্রাম ভাঙছে। কমপক্ষে ৬০টির বেশি ঘর অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এসব ভাঙন এলাকায় কেউ কেউ এখনও নদীর তীরে ঝুঁকি নিয়ে আছেন। বসতঘর ভেঙে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। তারা বাড়ির চাল খুলে অন্য জায়গায় সরিয়ে রাখলেও খুঁটি ও বেড়া সরাচ্ছেন না। তাদের আশা, যদি ভাঙন থেমে যায়।
চরভদ্রাসনের চরহরিরামপুর ইউনিয়নের সবুল্লা শিকদারেরডাঙ্গী গ্রাম, সদর ইউনিয়নের টিলারচর ও এমপিডাঙ্গী গ্রাম, চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চরকালকিনিপুর, চরমির্জাপুর, চরতাহেরপুর, চরকল্যাণপুর, দিয়ারা গোপালপুর গ্রামেও ভাঙন চলছে। নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের কাচিকাটা গ্রামের আইয়ুব শেখ বলেন, ‘নদীর পাশেই আমার ঘর ছিল। হঠাৎ দেখি ফাটল। রাতে ভাঙন বেশি হয়, তাই ঘর ডুবে যাওয়ার ভয়ে আমি সরিয়ে নিয়েছি। যদি না সরাতাম এখন আমার ঘর থাকত নদীতে।’
আকোটেরচর ইউনিয়ন খোকারাম সরকারের ডাঙ্গী গ্রামের গুচ্ছগ্রামের নুর ইসলাম বলেন, এখান থেকে প্রতি বছর অবৈধভাবে বালু তোলা হয়। বালু তোলেন যারা, তারা প্রভাবশালী–তাই কেউ প্রতিবাদ করতে পারতেন না। প্রতিবাদ করলে তাদের হুমকি দেওয়া হতো। এখন নদীভাঙনে তার খেসারত দিচ্ছেন এলাকাবাসী। 
ঢেউখালি ইউনিয়নের শয়তানখালি ঘাট এলাকার বাসিন্দা কাজী নজরুল। তিনি জানান, পদ্মায় কয়েক সপ্তাহ ধরে পানি বাড়ছে। পানি বাড়ার ফলে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। যতদ্রুত সম্ভব ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তাঁর। 
আকোটেরচর ইউনিয়নের কলাবাগান এলাকার কৃষক ইসমাইল মুন্সি বলেন, প্রতি বছর নদীর তীর কেটে নিচ্ছেন কিছু লোক। এখনও নদীর তীর কেটে নেওয়া হচ্ছে। এই মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। এতে নদীভাঙনের মুখে রয়েছে অনেক বসতবাড়ি।
রিনা বেগম নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক বাসিন্দা বলেন, ‘কে করে দেবে আমাদের ঘরবাড়ি? সরকার একটি ঘর দিয়েছে সেখানে থাকি। নদী যেভাবে ভাঙছে হয়তো বেশিদিন থাকতে পারব না। ঘর চলে যাবে নদীতে। কীভাবে থাকব, বুঝতে পারছি না।’
গত দুই সপ্তাহে পদ্মা নদীর ভাঙনে চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চারটি পরিবারের বাড়ি বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান মৃধা। তিনি বলেন, ৩ হাজার বিঘা বাদামের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পাউবোর কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এখনও পদক্ষেপ নেননি তারা।
আকোটেরচর ইউপি চেয়ারম্যান আসলাম বেপারী বলেন, শুধু এ বছর নয়, প্রতি বছরই নদী ভাঙছে। চরাঞ্চলের মানুষের জন্য নদীভাঙন নিত্যদিনের সঙ্গী। তিনি পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আশা করছেন দ্রুত তারা ভাঙনরোধে ব্যবস্থা  নেবেন।
গত ২০ দিনে যে স্থানগুলো ভেঙেছে সেখানে নদীর গভীরতা অনেক বেশি। তাই জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তাদের একটি দল ভাঙনরোধে কাজ করছে। তারা একটি রিপোর্ট তৈরি করবেন। এরপর ভাঙনরোধে টেকসই স্থায়ী প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উচ্চমহলে পাঠানো হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ