গোবিপ্রবি সংস্কারের দাবিতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম শিক্ষার্থীদের
Published: 17th, June 2025 GMT
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গোবিপ্রবি) শিক্ষক, ক্লাস রুম ও ল্যাব সংকট নিরসনসসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
পরে তারা স্মারকলিপি ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে সাতদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সমানে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
আরো পড়ুন:
যবিপ্রবিতে ফিনটেক শিল্পের অগ্রগতি-বিষয়ক সম্মেলন
৯০ দশকের স্মৃতি জাগরণে বাকৃবি টিম উৎসবের ব্যতিক্রমী আয়োজন
এ সময় ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যমের ঠাই নাই’, ‘ভিসি বাংলো ভেতরে, শিক্ষার্থীরা কেন বাহিরে’, ‘এক দুই তিন, আর কত দিন’, ‘একাডেমিক ভবন কই, প্রশাসন জবাই চাই’, ‘ইউজিসি, ছিছিছি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা।
মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি উপাচার্যের কাছে প্রদান করেন। পরে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ আলী তোহা।
মোহাম্মাদ আলী তোহা বলেন, “বাংলাদেশ বর্তমানে অন্তবর্তী সরকারের অধীনে রয়েছে। যে সরকার বাংলাদেশের প্রত্যেকটা জায়গা সমান নজরে দেখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এই সময় যদি বিশ্ববিদ্যালয় এত অবহেলা বা বৈষম্যের শিকার হয়, তাহলে পরবর্তীতে অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে।”
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে হল, ক্লাসরুম ও শিক্ষক সংকট রয়েছে। নেই মেইন গেটও। এগুলো আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। এই মৌলিক অধিকারের জন্য বারবার কেন শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম ছেড়ে রাজপথে আসতে হবে? এতসব সমস্যার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাওয়া যায় না কেন? আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবিগুলো আমলে নিয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেবে।”
তিনি আরো বলেন, “এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট অত্যান্ত নিম্নমুখী হয়েছে। বিগত বছরের বাজেটগুলো কি কি খাতে খরচ হয়েছে, তা আমরা জানি না। এসব সংকট ও বাজেটের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য সাতদিন সময় দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবিগুলো পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাতদিনের আল্টিমেটাম দেওয়া হলো। এর মধ্যে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হলে কঠোর আন্দোলন যেতে বাধ্য হবে শিক্ষার্থীরা।”
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী দুর্জয় শুভ, বিএমবি বিভাগের শিক্ষার্থী মঈনুদ্দিন খান সিফাত, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নিঘাত রৌদ্র, ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নূপুর রায় দীপা, নওরীন নীরা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- অসমাপ্ত কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। ন্যূনতম ১০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, একাডেমিক-২ ও অনুষদ ভবনের সম্প্রসারণ করতে হবে; শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন সংকট নিরসনে পর্যাপ্ত হল নির্মাণ করতে হবে। টিএসসি, অডিটোরিয়াম, জিমনেশিয়াম তৈরির কাজ শুরু এবং ক্যাফেটেরিয়া, লাইব্রেরি, মেডিকেল সেন্টার উন্নয়নে অতিদ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। হল নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আবাসন ভাতা দিতে হবে এবং সমস্ত কাজের টেন্ডার সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-প্রত্যেক বিভাগে ন্যূনতম ২০ জন কর্মরত শিক্ষক, পর্যাপ্ত ল্যাব এবং অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ দিতে হবে এবং শিক্ষকদের জন্য উচ্চশিক্ষায় বিদেশ গমনের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে; শিক্ষার্থীদের সব তথ্য, ফলাফল, লেনদেন অনলাইন ভিত্তিক করতে হবে এবং ডিজিটাল লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে হবে; বিগত সময়ের দুর্নীতিবাজদের শাস্তির আওতায় আনতে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে এবং লুট হয়ে যাওয়া অর্থ ফেতর আনতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এছাড়া দ্রুত সময়ে সমাবর্তনের তারিখ, ছাত্র সংসদ ঘোষণা, রিজেন্ট বোর্ডে চারজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্তকরণ এবং ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তারা।
ঢাকা/বাদল/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পদক ষ প ন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতারণা করে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে ২ বছর কারাদণ্ড
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাইযোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে সরকার। মঙ্গলবার রাতে এ অধ্যাদেশের গেজেট জারি করা হয়। প্রতারণার মাধ্যমে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা নিলে এতে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা নেওয়া আর্থিক সহায়তার দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে অধ্যাদেশে। এর আগে গত ১৫ মে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
অধ্যাদেশের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য বা যে কোনো শ্রেণির আহত জুলাইযোদ্ধা না হওয়া সত্ত্বেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করে বা বিভ্রান্তিকর কাগজাদি দাখিল করে নিজেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য বা আহত জুলাইযোদ্ধা দাবি করে কোনো চিকিৎসা সুবিধা বা আর্থিক সহায়তা বা পুনর্বাসন সুবিধা দাবি করেন বা গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁকে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা জরিমানা বা নেওয়া সুবিধা বা আর্থিক সহায়তার দ্বিগুণ পরিমাণ জরিমানা দিতে হবে।’
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাইযোদ্ধাদের কল্যাণ, পুনর্বাসনসহ গণঅভ্যুত্থানের মর্ম ও আদর্শকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। যেহেতু সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় রয়েছে এবং রাষ্ট্রপতির কাছে এটি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে– আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে, তাই সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করলেন।’
পুনর্বাসনের বিষয়ে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে শহীদ হয়েছেন এমন ব্যক্তির পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য এবং আহত জুলাইযোদ্ধাদের অনুকূলে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা বা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক উপার্জনমুখী কাজের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সহজ শর্তে ঋণ বা এমন সুবিধাদি প্রদান এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা প্রদান।
এরই মধ্যে গঠন করা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ এ অধ্যাদেশের অধীনে আনা হয়েছে। জুলাই শহীদ ও আহতদের তালিকাও এই অধ্যাদেশের অধীনে প্রকাশ করা হয়েছে বলে ধরা হবে। অধ্যাদেশে আহতদের তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের যথাক্রমে ‘জুলাই শহীদ’ এবং ‘জুলাইযোদ্ধা’র স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।