যে ৫ কারণে বিটিএস নিয়ে সংশয়ে ভক্তরা
Published: 17th, June 2025 GMT
বিশ্বজুড়ে কে-পপ জগতে একসময় বিটিএসের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। বিশেষ করে কোভিড মহামারির সময় ‘পারমিশন টু ড্যান্স’ গানটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে কোটি মানুষের আশার আলো হয়ে উঠেছিল। এখনো তাদের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি; ৮ জুন প্রকাশিত হিসাবে, স্পটিফাইয়ে বিটিএসের মাসিক নতুন শ্রোতার সংখ্যা বেড়েছে ৫১ হাজার ১৭৬। তবে এ অর্জনে কিছুটা ধূসর রেখা টেনে দিয়েছে নতুন প্রজন্মের গ্রুপগুলোর উত্থান। বিশ্বমঞ্চে ঝড় তুলছে সেভেনটিন, স্ট্রে কিডস, নিউজিনস, লে সেরাফিম, আইভ, জিরোবেজওয়ান, বয়নেক্সটডোর, বেবিমন্সটার, আইলিট, রাইজ। একই সঙ্গে বিটিএস–ভক্তদের মধ্যেও এখন বিভাজন তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুনএক দশকে ১৩ শিল্পী যেভাবে বদলে দিয়েছেন কে-পপের সংজ্ঞা১২ জুন ২০২৫রাজনৈতিক মতাদর্শ, সদস্যদের নিয়ে আলাদা মাতামাতি ও এজেন্সি নিয়ে অসন্তোষ—এসব নিয়ে ‘আর্মি’-দের মধ্যেই একধরনের দ্বন্দ্ব চলছে। গত সপ্তাহেই সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে এক দিনের ব্যবধানে বাড়ি ফিরেছেন চার বিটিএস তারকা আরএম, ভি, জিমিন ও জাংকুক। সুগা বাদে বাকিরাও ফিরছেন। তবে বিটিএস ফিরলেও নতুন বাস্তাবতায় ভক্তদের মধ্যে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা আগের মতো থাকবে কি?
দীর্ঘ বিরতি
দীর্ঘ সাময়িক বিরতি অনেক সময় পুরোনো ভক্তদের আগ্রহ কমিয়ে দেয়। বিটিএসের ক্ষেত্রে অনেক পুরোনো ভক্ত অপেক্ষায় ছিলেন ঠিকই, তবে অনেকেই এই ফাঁকে নতুন কে-পপ গ্রুপের ভক্ত বনে গেছেন। ২০২৪ সালজুড়েই নতুন প্রজন্মের হাতে ছিল কে-পপ জগতের আধিপত্য। তারা কেবল নিজস্ব ধারা তৈরি করেনি, কে-পপের পরিধিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিভক্ত ভক্তকুল
বিটিএসের মূল প্রতিষ্ঠান হাইব করপোরেশনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ এখন নিয়মিত ঘটনা। বিশেষ করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে শিল্পী ও এজেন্সির অবস্থান নিয়ে ভক্তদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করেছে। হাইব যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী স্কুটার ব্রাউনের কারণে অনেক ভক্ত হাইব ও এর শিল্পীদের বর্জনের আহ্বান জানান। কেউ কেউ তো বলেই ফেলেছেন, বিটিএস যদি হাইব থেকে আলাদা না হয়, তবে তাঁরা আর সমর্থন করবেন না।
দল বনাম ব্যক্তি
বিটিএস–ভক্তদের মধ্যে বরাবরই ‘ওটি৭’, অর্থাৎ সাত সদস্যকে একসঙ্গে ভালোবাসার চর্চা ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একে একে একক অ্যালবাম প্রকাশ করেন জংকুক, আরএম, জিমিন, জে-হোপ, সুগা, জিনরা। একদিকে এগুলো গ্রুপের সামগ্রিক শক্তিকে প্রমাণ করেছে, অন্যদিকে কিছু ভক্ত এখন নির্দিষ্ট সদস্যের প্রতিই বেশি আগ্রহী, যা ব্যান্ডের ইমেজে প্রভাব ফেলেছে।
অ্যালবাম বিক্রি ও সেভেনটিনের উত্থান
২০২৪ সালে মার্কিন অনলাইন গণমাধ্যম দ্য হলিউড রিপোর্টার ঘোষণা করে, সেভেনটিনই বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় কে-পপ গ্রুপ। এশিয়া সফরের ২৪ শো থেকে তারা আয় করেছে ৯৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার। চলতি বছর বাজারে আসা তাদের ‘হ্যাপি বার্থডে’ অ্যালবামটি প্রথম দিনেই বিক্রি হয় ২২ লাখ কপির বেশি! যদিও এই সময়টায় বিটিএস ছিল না, তবে সেভেনটিনের এই সাফল্য তাদের সঙ্গে সরাসরি তুলনায় এসেছে বারবার। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তারা টেলর সুইফট, ড্রেক, দ্য উইকেন্ডের মতো তারকাদেরও পেছনে ফেলেছে।
নিউজিনস সংকট ও হাইব–বিতর্ক
হাইবের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এডোর ও তাদের সাবেক প্রধান নির্বাহী মিন হি জিনের দ্বন্দ্ব কে-পপ দুনিয়ায় বড় ধরনের ধাক্কা দেয়। এই দ্বন্দ্বে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিউজিনস, অনেকেই যাদের ‘নারী বিটিএস’ ভাবতেন। ২০২২ সালে অভিষেকের পর ব্র্যান্ডটির যেভাবে দ্রুত উত্থান হয়, তেমনি দ্রুত সংকটে পড়ে এখন কার্যত বিরতিতে চলে গেছে। ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। বিটিএস–ভক্তদের একাংশ নিউজিনসের পাশে দাঁড়ালেও অন্যরা হাইবের প্রতি অনুগত থেকে গেছেন।
বিটিএস এখনো বিশ্বসংগীতে প্রভাবশালী নাম। তবে সময়ের পরিবর্তনে ভক্তদের মধ্যে টানাপোড়েন বেড়েছে। নতুন শিল্পীর আগমন, রাজনৈতিক মতাদর্শ, একক ক্যারিয়ারে মনোযোগ—সব মিলিয়ে ‘আর্মি’রা এখন আর আগের মতো নেই। এত কিছুর পরও বিটিএসের গল্প যে এখনো শেষ হয়ে যায়নি, তাদেরই সেটা আবার প্রমাণ করতে হবে।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৮ দাবিতে সিলেট বিভাগে রেল অবরোধ
সিলেট-আখাউড়া রেলপথে টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা, রেলপথ সংস্কার, দুটি নতুন ট্রেন চালু করাসহ আট দাবিতে পূর্বঘোষিত রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে সিলেট বিভাগের সব রেলস্টেশনে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। অবরোধের কারণে ট্রেন যাত্রা বিলম্ব হয়। বিশেষ করে, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া রেলস্টেশনে অবরোধকারীরা রেললাইনে অবস্থান করায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল, শমশেরনগর, ভানুগাছ স্টেশনে দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির পাশাপাশি সাধারণ মানুষও একাত্মতা প্রকাশ করে লাল পতাকাসহ স্টেশনগুলোতে অবস্থান নেন।
আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক আতিকুর রহমান এক বিবৃতিতে সাধারণ জনগণকে ১ নভেম্বর ট্রেন ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন আগেই।
তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সিলেট অঞ্চলের রেলপথের বেহাল অবস্থা দূর করতে এবং যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে ৪ মাস ধরে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর কুলাউড়ায় অবস্থান ধর্মঘট চলাকালে আন্দোলনকারীরা ট্রেন আটকালে রেলওয়ের ঢাকা অঞ্চলের ডিআরএম ১৫ দিনের মধ্যে আলোচনার আশ্বাস দেন।
এর পর ১০ অক্টোবর কুলাউড়া জংশন স্টেশনের ভিআইপি ওয়েটিং রুমে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন রেলওয়ের ঢাকা অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মো. মহিউদ্দিন আরিফ। তবে, বৈঠকে আশ্বাসে সন্তুষ্ট না হয়ে আন্দোলনকারীরা ৩১ অক্টোবরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে ১ নভেম্বর অবরোধের ঘোষণা দেন।
আন্দোলনকারীদের ৮ দাবি
সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-কক্সবাজার রুটে দুটি স্পেশাল ট্রেন চালু করা। আখাউড়া-সিলেট রেলপথ সংস্কার ও ডাবল লাইন বাস্তবায়ন। আখাউড়া-সিলেট সেকশনে অন্তত একটি লোকাল ট্রেন চালু করা। আখাউড়া-সিলেট সেকশনের সব বন্ধ স্টেশন পুনরায় চালু করা। কুলাউড়া জংশন স্টেশনে আসন বরাদ্দ বৃদ্ধি করা। কালনী ও পারাবত ট্রেনের যাত্রাবিরতি প্রত্যাহার করা। শিডিউল বিপর্যয় রোধে ত্রুটিমুক্ত ইঞ্জিন ব্যবহার ও যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা।আন্দো
লনকারীরা বলছেন, রেল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সিলেটবাসী প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দাবি বাস্তবায়ন না হলে তারা আরো কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন।
কুলাউড়া রেল স্টেশনে অবরোধ কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাছ খান, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আবেদ রাজা প্রমুখ।
এদিকে, অবরোধ চললেও সকাল সাড়ে ৮টার পর সিলেট থেকে আসা ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস কুলাউড়া স্টেশন ছেড়ে চলে গেছে।দুপুর ১২টা ৩০ মি
নিটে কুলাউড়া স্টেশন মাস্টার রোমান আহমদ জানিয়েছেন, রেলপথ অবরোধের কারণে দুটি ট্রেনের যাত্রা বিলম্ব হচ্ছে।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেছেন, আট দফা দাবিতে অবরোধ চললেও এর প্রভাব সিলেট রেলস্টেশনে পড়েনি। সকালের কালনী ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। আবার চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা ট্রেন দেরিতে স্টেশনে আসায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে গেছে। ১২টার জয়ন্তিকা ট্রেন একটু দেরিতে ছেড়ে যায়।
ঢাকা/আজিজ/রফিক