রাজধানীর ৫৯ শতাংশ ভবনে এডিস মশার লার্ভা
Published: 18th, June 2025 GMT
রাজধানী ঢাকার ৫৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বহুতল ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। গত বছর মে মাসে প্রকাশিত জরিপে এই হার ছিল ৪২ শতাংশ। এক বছরে বহুতল ভবনে এডিস মশার লার্ভা বেড়েছে ১৬ শতাংশ।
বুধবার বিকেলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে আইইডিসিআরের অডিটোরিয়ামে ডেঙ্গু রোগের বাহকের কীটতাত্বিক জরিপে (২০২৪-২০২৫) এই তথ্য উঠে এসেছে। আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা.
তিনি বলেন, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ৪১ ও ৩১টি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব নির্দিষ্ট সূচকের চেয়ে বেশি যা ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ১৩টি ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
ঝিনাইদাহ, মাগুরায় এডিস মশার ঘনত্ব বেশি
ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ঢাকার বাইরে ঝিনাইদহ, মাগুরা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি বেশি।
জিনাইদহ শহর এলাকায় এডিসের জরিপের তথ্য অনুসারে ২৭০টা বাড়ি পরিদর্শন করে ৫৪টি এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ঝিনাইদহে ব্রুটো ইনডেক্স ৬০ পাওয়া গেছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পিরোজপুর ও মাগুরায় ১০০ শতাংশ ভেক্টর এডিস অ্যালবোপেক্টাস। প্লাস্টিক ড্রাম, প্লাটিক বাস্কেট, দইয়ের খালি পাত্রে লার্ভার উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘ফান্ড একদম জিরোতে’, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনায় টাকার অভাবের কথা বললেন স্বাস্থ্যের পরিচালক
অর্থের অভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা (ডেথ রিভিউ) করতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গেল বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ১২৪ রোগীর তথ্য সংগ্রহ করা হলেও অর্থের অভাবে এসব মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করতে পারেনি সংস্থাটি। আজ বুধবার রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআর অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক সভায় এ কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং দেশের আরও ৮টি জেলায় ডেঙ্গু রোগের বাহকের কীটতাত্ত্বিক জরিপের ফলাফল তুলে ধরতে সভাটির আয়োজন করে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। সভায় গেল বছরের নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত পরিচালিত জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং আইইডিসিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান বলেন, ‘আমি আসার পর ডেথ রিভিউ শুরু করেছিলাম। গত বছর যাঁরা মারা গেছেন, তার মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ১২৪টা রোগীর ফাইল নিয়ে একটা কমিটি করেছিলাম। কমিটি করে আমরা অনেকগুলো মিটিং করে মোটামুটি একটা স্ট্রাকচার দাঁড় করিয়েছিলাম যে কী কী কারণে মৃত্যু হচ্ছে, তো আর আমি আগাইতে পারি নাই। কারণ বুঝতে পারছেন, আমাকে যদি ৮-১০ জন লোকের একটা মিটিং করতে হয়, সেটা নিজের পকেট থেকে দিয়ে খুব বেশি কন্টিনিউ করা যায় না।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) আরও বলেন, প্রতিটি হাসপাতালের নিজস্ব কমিটি ডেথ রিভিউ করে। তিন বছর ধরে ডেথ রিভিউ হচ্ছে না। তবে মৃত রোগীদের মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী হাসপাতালগুলোতে ডেথ রিভিউ হচ্ছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এর জন্য আলাদা কমিটি করা দরকার বলেও জানান তিনি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং দেশের আরও ৮টি জেলায় ডেঙ্গু রোগের বাহকের কীটতাত্ত্বিক জরিপ সম্পন্ন করে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন ছাড়াও জরিপের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন এবং কুষ্টিয়া, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ ও মাগুরা পৌরসভা এলাকায়।
মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। যদি এর পরিমাণ ২০ বা এর বেশি হয়, তবে সেখানে ঘনত্ব আশঙ্কাজনক বলে বিবেচনা করা হয়।
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ছয়টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভা ২০–এর বেশি ছিল। এর মধ্যে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ; ২, ৮ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ১৩ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ।
পাশাপাশি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ৩১ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ; ৩, ৪৬ ও ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ৪ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম; মার্চে বরিশাল এবং বাকি এলাকাগুলোতে জরিপ পরিচালিত হয়েছে মে মাসে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পরিচালিত জরিপে সবচেয়ে বেশি এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে ফুলের টব ও ট্রেতে জমে থাকা পানিতে। জরিপে পাওয়া মোট লার্ভার ২৭ শতাংশই বসবাস করে এসব পানিতে। এ ছাড়া ২২ শতাংশ সিমেন্ট নির্মিত পানির ট্যাংকে, ২০ শতাংশ ফ্লোরে জমে থাকা পানিতে, ১৩ শতাংশ প্লাস্টিকের ড্রামে, ১১ শতাংশ লোহার পাইপে, ১০ শতাংশ প্লাস্টিকের পাত্রে এডিসের লার্ভা পেয়েছেন গবেষকেরা।
জেলা পর্যায়ে পাওয়া ফলাফলে সবচেয়ে বেশি মশার লার্ভা পাওয়া গেছে ঝিনাইদহ পৌরসভা এলাকায়। ২৭০টি বাসাবাড়ির ১৬২টিতেই লার্ভার উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকেরা। এরপর মাগুরায় ৫৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, পিরোজপুরে ২০ শতাংশ এবং পটুয়াখালীতে ১৯ দশমিক ২৬ শতাংশ এলাকায় মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। বাকি এলাকাগুলোতে মশার লার্ভা পাওয়া গেলেও তা তুলনামূলক কম।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে বহুতল ভবনে এবং বাকি এলাকাগুলোর একক বাসভবনের সব কটিতেই ৬০ শতাংশের বেশি মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গবেষণার জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত এলাকাগুলোর ৩ হাজার ১৪৭টি বাসা বা বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কীটতাত্ত্বিক দল। এর মধ্যে মোট ৪৬৩টি বাসা বা বাড়িতে ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে ডেঙ্গু পজিটিভ ৪৬৩টি বাসা বা বাড়ির মধ্যে ৫৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বহুতল (১২৬টি), নির্মাণাধীন ১৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ (৪২টি), একক স্থান ৯ দশমিক ৮ শতাংশ (২১টি), সেমি পাকা ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ (১৯টি) এবং খালি প্লট ২ দশমিক ৮ শতাংশ (৬টি) বলে উঠে এসেছে জরিপের ফলাফলে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রধান বাহক এডিস অ্যাজিপ্টাই মশা এবং ঢাকার বাইরে এডিস অ্যালবোপিক্টাস নামক মশা এটি বেশি বহন করে।
সভায় জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন। সংকট সমাধানে জরিপের সুপারিশ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বহুতল ও নির্মাণাধীন বাড়ির সমস্যা সমাধানের জন্য, রিহ্যাব ও ফ্ল্যাটমালিকদের সমিতির মাধ্যমে কাজ করা দরকার। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলোতে বছরব্যাপী মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ, যুবগোষ্ঠী ও অন্য অংশীদারদের নিয়ে দেশব্যাপী পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করার মতো কাজগুলো আমাদের করতে হবে।’
সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. আবু জাফর বলেন, ‘এ সমস্যার সমাধান করা একটি সমন্বিত কাজ। বিশেষ করে স্থানীয় সরকার, সিটি করপোরেশন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। গণসচেতনতা অনেক বেশি দরকার। বরগুনায় হঠাৎ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে—এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুহার আমাদের দেশে।’