বর্জ্য নানা ধরনের হতে পারে। উৎসও বিভিন্ন। শিল্পকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও মালিকরা শতভাগ তা মেনে চলছেন না। যেসব উৎসের বর্জ্যকে আমরা খুব বেশি গুরুত্ব দিই না, সেগুলো আমাদের জন্য কোনো অংশে কম ক্ষতিকর নয়। বাসাবাড়ি, মার্কেট, হাসপাতাল, গবাদি পশুর বর্জ্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে গবেষণায় দেখা যাচ্ছে। কারণ এসব উৎস থেকে প্রাপ্ত বর্জ্যের যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনা হচ্ছে না।
গৃহস্থালি বর্জ্য পচে সাধারণত ৭-১০ দিনের মধ্যে দুর্গন্ধ বের হয়। এতে ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ মিথেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইড থাকে। এ দুটিই গ্রিনহাউস গ্যাস নামে অভিহিত। প্রকৃতিতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের ঘনত্ব কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও মিথেন গ্যাস নিয়ে এখনও তেমন আলোচনা শোনা যায় না। অথচ গবেষকদের মতে, গত ২০ বছরে কার্বন ডাইঅক্সাইডের চেয়ে পরিবেশের ৮০ গুণ ক্ষতি করেছে মিথেন গ্যাস। প্রাকৃতিক গ্যাসেও এ মিথেন গ্যাস ৮৫ থেকে ৯৫ শতাংশ।
মিথেন রাসায়নিকভাবে কার্বন ও হাইড্রোজেন নিয়ে গঠিত। এটি অক্সিজেনের চেয়ে হালকা। তাই বদ্ধ স্থানে খুব সহজে অক্সিজেনকে সরিয়ে স্থান দখল করে নেয়। এটি প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান। মিথেনের দহনে কার্বন ডাইঅক্সাইড, পানি ছাড়াও প্রচুর তাপ উৎপন্ন হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও রান্নার কাজেও ব্যবহার হয়।
মিথেন গঠনে কার্বন থাকায় সহজে বোঝা যায় কয়লার খনি, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত শিল্পে এর উৎস জড়িত। গৃহস্থালির বর্জ্য, গোবর, ধান চাষেও মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। এক গবেষণায় প্রকাশ পায়, ঢাকায় বসবাসকারী প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি কেজি বা ১০ হাজার টন গৃহস্থালি বর্জ্য উৎপন্ন করে। তার মধ্যে দুই সিটি করপোরেশন মিলে আমিনবাজার ও মাতুয়াইলে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য ফেলা হয়। বাকি বর্জ্য রাস্তার আশপাশে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে থাকায় দুর্গন্ধ আর অস্বস্তিতে জনজীবন বিপন্নপ্রায়। সে হিসাবে সারাদেশে প্রায় ১৮ কোটি মানুষ থেকে প্রায় ৯ কোটি কেজি বা ৯০ হাজার টন বর্জ্য আসে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক খবরে জানা যায়, প্যারিসভিত্তিক কোম্পানি কেরোসসামের স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের ওপরে মিথেন গ্যাস নির্গমন আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশে ডোবা, জলাধার ভরাটের প্রতিযোগিতা চলছে। শহর বা নগরে কোনো কোনো জায়গা বালুর পরিবর্তে গৃহস্থালি বা শিল্পকারখানার বর্জ্য দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। এতে কয়েক বছর পর সেই ভরাটকৃত স্থানে তৈরি বিল্ডিংয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। মূলত বর্জ্য থেকে উৎপন্ন মিথেন গ্যাস জমা হলে এ ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনাও দেখা যায়। এ ছাড়া বদ্ধ রুমে বিস্ফোরণ, আগুনের ঘটনাও মিথেনের জন্য অনেকটা দায়ী।
বায়ুমণ্ডলকে কোনো দেশের সীমানায় সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব নয়। তাই একটি দেশের অত্যধিক মিথেন নিঃসরণ অন্য একটি দেশের ওপর খুব সহজে প্রভাব ফেলে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংস্থা আইপিসিসির কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
যেহেতু মিথেনের দহনে প্রস্তুতকৃত পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের ঘনত্ব কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপন্ন মিথেন সংগ্রহ করতে পারলে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচানো সম্ভব।
২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে অভীষ্ট ১৩-এ টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় জলবায়ুবিষয়ক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতাও মিথেন নিঃসরণ কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।
মো.
বেলায়েত হোসেন: তথ্য অফিসার, জেলা তথ্য অফিস, খাগড়াছড়ি
belayethussain42@gmail.com
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র বর জ য পদক ষ প উৎপন ন জলব য়
এছাড়াও পড়ুন:
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু
৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) শাখা ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ঢাকা ও ময়মনসিংহের পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে পৌঁছানোর লক্ষ্যে এ বিশেষ যাতায়াত সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে শাখা ছাত্রদলের কর্মী নাফিস ইকবাল পিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফেসবুক গ্রুপে এ তথ্য জানিয়ে পোস্ট দেন। একইসঙ্গে শাখা সভাপতি সাগর নাইম ও সাধারণ সম্পাদক সাজিদ ইসলাম দীপুও তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে পরীক্ষার্থীদের এ সুবিধা গ্রহণের আহ্বান জানান।
আরো পড়ুন:
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে মানববন্ধন
বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান অর্জন ও বিতরণের জায়গা: ইউজিসি চেয়ারম্যান
ছাত্রদল জানিয়েছে, ক্যাম্পাস থেকে দুটি বাস ছাড়বে। একটি ঢাকা রুটে এবং অপরটি ময়মনসিংহ রুটে যাবে। প্রতিটি বাসে ৫০ জন করে মোট ১০০ জন শিক্ষার্থী এই ফ্রি সার্ভিসের আওতায় যাতায়াত করতে পারবেন। এজন্য শিক্ষার্থীদের অবশ্যই আগাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গুগল ফর্মের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ এই সার্ভিসের সুবিধা নিতে পারবেন না।
শিক্ষার্থীদের জন্য এ উদ্যোগ ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থী পোস্ট দিয়ে ছাত্রদলের এ পদক্ষেপকে ‘শিক্ষার্থীবান্ধব ও সময়োপযোগী উদ্যোগ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
শাখা সভাপতি সাগর নাইম তার পোস্টে বলেন, “প্রতি বছর বিসিএসে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাফল্যের আলো ছড়িয়ে দেন। আমরা চাই এ সুনাম আরো দূরে ছড়িয়ে পড়ুক, আরো উজ্জ্বল হোক। এ ধারাবাহিক সাফল্যের পথে আপনাদের পাশে থাকতে, ভালোবাসা ও সম্মান জানাতে মাভাবিপ্রবি ছাত্রদল ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বিশেষ বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে।”
এ বিষয়ে শাখা সাধারণ সম্পাদক সাজিদ ইসলাম দীপু বলেন, “জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সবসময়ই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে থাকে। গত বিসিএসে আমাদের বড় ভাই বিসিএস প্রশাসনে প্রথম হয়েছেন। এটি শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, সারা দেশের জন্যই গর্বের বিষয়। সেই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আমরা এবার পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস চালু করেছি।”
তিনি বলেন, “বিশেষ করে অনেক নারী শিক্ষার্থী আছেন, যারা ক্যাম্পাস থেকে পরীক্ষাকেন্দ্র অনেক দূরে হওয়ায় অংশ নিতে পারেন না। আবার অনেকে যানবাহন না পেয়ে দেরিতে কেন্দ্রে পৌঁছান। আমরা চাইনি কেউ যেন যাতায়াত সমস্যার কারণে বিসিএস পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়েন। তাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ভাইয়ের সহায়তায় আমরা এ বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছি।”
ঢাকা/আবিদ/মেহেদী