নিখোঁজের ২০ ঘণ্টা পর পুকুর থেকে ভাসমান দুই কন্যাশিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় তাদের পরনে কোনো পোশাক ছিল না। পুকুরপাড়েও তা পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। জট খুলতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার ছনকান্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

লাশ দুটি পাওয়া যায় গতকাল বুধবার সকালে। তারা নিখোঁজ হয় গত মঙ্গলবার দুপুরে। শিশু দুটি হলো তিনানি ছনকান্দা (বেতালবাড়ী) গ্রামের সেলিম মিয়ার মেয়ে সকাল (৭) ও স্বপন মিয়ার মেয়ে স্বপ্না (৬)। দু’জনই ছিল স্থানীয় একটি নূরানী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। সেলিম রাজমিস্ত্রি ও স্বপন ইজিবাইক চালক।

পোশাক খুঁজে না পাওয়ায় স্থানীয়দের সন্দেহ, এটি নিছক পুকুরে ডুবে মৃত্যু নাও হতে পারে। কারণ একই এলাকায় প্রায় এক মাস আগে একজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে সমঝোতা করে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে এ দুই শিশুর বাড়ি দূরে। স্থানীয়দের ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের জন্য পুলিশ লাশ দুটি থানায় নিয়ে যায়। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ময়নাতদন্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সকালে নালিতাবাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আফসান আল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বিকেলে দুই শিশুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রীবরদী-বকশীগঞ্জ সড়কের পাশে ছনকান্দা মহল্লায় বটতলা মৃধাবাড়ী এলাকায় মোস্তফা মিয়ার একটি মৎস্য প্রকল্প রয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি পুকুর আছে। স্থানীয় শাখাওয়াত হোসেনের কাছ থেকে মোস্তফা ইজারা নিয়ে প্রকল্পটি চালান।

মৃত দুই শিশুর পরিবার জানায়, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে সকাল ও স্বপ্না বাড়ি থেকে বের হয়। শিশু সকালের মা গুচ্ছগ্রামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করেন। সেখানে তারা যাচ্ছিল। বটতলা বাজারের এক দোকানের সিসিটিভিতে দেখা যায়, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জামা-পায়জামা ও হিজাব পরা দুই শিশু বাজার পার হচ্ছে। এর পর থেকে তাদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

স্বপ্নার বাবা স্বপন মিয়া জানান, তারা ভেবেছেন, দুই বান্ধবী মিলে সকালের মায়ের কাছে গেছে। কিন্তু বিকেল হলেও সেখানে না যাওয়ায় চিন্তায় পড়ে যান। মঙ্গলবার রাতে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় তাদের খোঁজে মাইকিং করা হয়। গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন। এ কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ মেয়ের বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করেছে। এখনও তাদের পরনের জামাকাপড়ের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাহলে কি কেউ আমার বুকের ধনরে মাইরা ফেলছে?’
সকালের মামা সাগর মিয়ার ভাষ্য, ‘ভাগনি মায়ের কাছে যাচ্ছিল। পুকুরে কীভাবে গেল– বুঝতে পারছি না। তা ছাড়া দু’জনের কেউ সাঁতার জানত না। তারা পুকুরে যেত না।’

শ্রীবরদী উপজেলা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক সুলতান মাহবুব সুমন বলেন, ‘আজকের ঘটনাটি সন্দেহজনক। এর আগে এ মৎস্য খামারে উজ্জ্বল (৪০) নামে এক ব্যক্তি মারা যান। প্রজেক্টের চারপাশে বিদ্যুৎ লাইন ছিল। সেখানে বিদ্যুৎস্পর্শে তার মৃত্যু হয়। পরে টাকাপয়সা দিয়ে বিষয়টি সমঝোতা করা হয়।

তাতীহাটি ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, দুই শিশুর মরদেহ ভাসছে। পরে পুলিশে খবর দিই।’

মৎস্য প্রকল্পের মালিক মোস্তফা মিয়া বলেন, সকালে ঘটনা জেনেছি। ঘটনাস্থলে গেলে জানতে পারব, কী ঘটেছে।

তাতহাটি ইউনিয়ন বিট পুলিশের উপপরিদর্শক আজিজুল হক জানান, তারা গিয়ে পুকুর থেকে মরদেহ উদ্ধার করেন।

শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

আনোয়ার জাহিদ বলেন, মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। তাই অধিকতর তদন্ত চলছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হত দ ই শ র বরদ তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদপুরে জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা, হাসপাতাল বন্ধ

চাঁদপুর পৌর কবরস্থানে নবজাতক দাফনের সময় নড়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় শহরের তালতলা দি ইউনাইটেড হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ফারুক হোসেন গাজী (৪৫)। এই ঘটনায় আগামী দুই দিনের মধ্যে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন হাসপাতালটিতে নানা অবৈধ কার্যক্রম চলে আসছে। ওই নবজাতকের জন্মও হয় এই হাসপতালে। জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা করার ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নবজাতককে কবরস্থানে নিয়ে আসা ওয়ার্ড বয় ফারুক গাজীকে গ্রেপ্তার করে।

এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন পৌর কবর স্থানের কেয়ারটেকার মো. শাহজাহান মিয়াজী।

এদিকে দি ইউনাইটেড হাসপাতালে এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি বলেন, “হাসপাতালে এসে ব্যবস্থাপনায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মিলেনি। চিকিৎসক নেই, হাসপাতালের প্যাথলজি ও ওটির সঠিক পরিবেশ নেই। একই সাথে পোস্ট অপারেটিভ রোগীর জন্য কোন সুব্যবস্থা নেই এবং হাসপাতালের কাগজপত্রও নবায়ন নেই।”

তিনি আরো বলেন, “প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ওটি, প্যাথলজি ও সংশ্লিষ্ট কক্ষ সীলগালা করা হয়েছে। একই সাথে রোগীদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্য স্থানে সেবার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিযানে পরিচালিত কার্যক্রম সিভিল সার্জন বরাবর প্রদান করা হবে। সিভিল সার্জন হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”

এ ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসান ফয়সাল, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান। অভিযানে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ সহযোগিতা করেন।

অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত শেষে হাসপাতালের ড্রাগ সনদসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরীক্ষা করে দেখেন জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান।

ঢাকা/অমরেশ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ