আজ ২০ জুন, বিশ্ব শরণার্থী দিবস। বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী শিবির এখন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নৃশংস নির্যাতন ও গণহত্যা থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে থেকেই বাংলাদেশে অবস্থান করছিল প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। সবমিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৩টি ক্যাম্প ও ভাসানচর মিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
রোহিঙ্গা সংকট এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক ইস্যু। রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও স্বাধীন চলাচলের নিশ্চয়তা নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চায়। তবে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নানা অজুহাত এবং রাখাইনে বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির দখল ও সহিংসতার কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
গত বছরের নভেম্বর থেকে রাখাইনে নতুন করে শুরু হওয়া সামরিক ও বিদ্রোহী সংঘর্ষে আরও প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী, রাখাইন এখনো প্রত্যাবাসনের জন্য নিরাপদ নয়।
প্রত্যাবাসন নিয়ে যা বলছে রোহিঙ্গারা:
উখিয়ার শফিউল্লাহ কাটা ১৬ নম্বর ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ সৈয়দ বলেন, ‘‘নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি, তবুও নিজের জন্মভূমিকে ভুলতে পারি না। সুযোগ পেলে এখনই মিয়ানমার ফিরে যেতে চাই। সেটিই আমাদের দেশ।’’
থাইংখালী ১৯ নম্বর ক্যাম্পের হেড মাঝি শামসুল আলম বলেন, ‘‘কয়েক বছর ধরে প্রত্যাবাসন নিয়ে নানা আলোচনা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। দুই দেশের প্রতিনিধি দল বৈঠক করেও কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। আমরা দীর্ঘদিন অন্য দেশে থাকতে চাই না। নাগরিকত্বসহ আমাদের দাবিগুলো মানলে আমরা স্বদেশে ফিরতে প্রস্তুত।’’
কুতুপালং ১ নম্বর ক্যাম্পের (ওয়েস্ট) উপনেতা হামিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর আমাদের জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। এত বড় রোহিঙ্গা কমিউনিটি আদৌ নিজেদের অধিকার আদায় করে ফিরতে পারবে কিনা জানি না। তবে আমরা খুব শিগগিরই জন্মভূমিতে ফিরতে চাই।’’
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস-এর সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘‘আমাদেরকে জুলুম-অত্যাচার করে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। এখন আমরা আমাদের মাতৃভূমিতে ফিরতে চাই। প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করছে। তবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রাখাইনে সেফ জোন না থাকলে সেখানে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।’’
বাড়ছে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা, হুমকির মুখে স্থানীয়রা :
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩০ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। ফলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ও প্রয়োজনীয়তা ক্রমেই বাড়ছে। তাদের ঊর্ধ্বমুখী জন্মহার কক্সবাজারের আর্থসামাজিক ও পরিবেশগত ভারসাম্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এছাড়াও, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, সংঘর্ষ ও গোলাগুলির কারণে স্থানীয় জনগণ আতঙ্কিত। তারা জানায়, রোহিঙ্গারা এখন তাদের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া ও টেকনাফে নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বসতির জন্য জমি ব্যবহার হওয়ায় কৃষি উৎপাদন কমে গেছে, ফলে স্থানীয়রাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
পুনর্বাসন প্রসঙ্গে কর্মকর্তাদের মত :
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের প্রত্যাশা, দ্রুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হোক। রোহিঙ্গারাও নিজ দেশে ফিরতে চায়। বিশ্ব শরণার্থী দিবসে রোহিঙ্গা শিশুদের রচনা প্রতিযোগিতায় একজন লিখেছে ‘আমরা আমাদের সুইট হোমে ফিরতে চাই।’ এতে বোঝা যায়, তারাও নিজেদের মাতৃভূমিতে ফিরতে চায়। এ বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’’
বাংলাদেশ সরকার বারবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। তবে বহু আলোচনা-চেষ্টা সত্ত্বেও এখনো একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরতে পারেননি।
২০২৩ সালের ১৫ মার্চ মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মংডু আঞ্চলিক পরিচালক অং মাইউয়ের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসে। সাত দিনব্যাপী ওই সফরে তারা ১৪৭টি পরিবারের প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গার পরিচয় যাচাই-বাছাই করে ২২ মার্চ বাংলাদেশ ত্যাগ করে। পরে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় থেকে জানানো হয়, ওই দল ১ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই করেছে। পাইলট প্রকল্পের আওতায় তাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ওই মাসেই প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
পরবর্তীতে একই বছরের ৫ মে বাংলাদেশে অবস্থানরত ২০ জন রোহিঙ্গাসহ ২৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাখাইনের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের উপযোগী কিনা দেখতে মংডু সফর করে। ওইদিন তারা টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি দিয়ে স্পিডবোটে রাখাইনে যায়।
২০২৪ সালের ১২ মে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.
তবে বাস্তবে এখনো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগোয়নি। মিয়ানমারের রাজনৈতিক জটিলতা, সামরিক সরকারের অনিচ্ছা এবং আরাকান আর্মির সংঘাত সেই প্রত্যাশাকে বাধাগ্রস্ত করছে। রোহিঙ্গারা জানায়, তারা আর অপেক্ষা করতে চায় না। নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে স্বদেশে ফিরে যেতে চায় রোহিঙ্গারা। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
ঢাকা/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পরর ষ ট র শরণ র থ আম দ র র খ ইন
এছাড়াও পড়ুন:
চীনের জে-৩৫ যুদ্ধবিমান পাকিস্তান কেনায় উদ্বিগ্ন ভারত
২০২৪ সালের নভেম্বরে চীন তাদের ৫ম প্রজন্মের দ্বিতীয় স্টিলথ ফাইটার জে-৩৫ উন্মোচন করে। বহুমুখী অভিযানের জন্য দুই ইঞ্জিন, একক আসনের সুপারসনিক যুদ্ধবিমনিা জে-৩৫-এ রয়েছে ইলেকট্রনিকভাবে স্ক্যান করা অ্যারে, একটি ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল টার্গেটিং সিস্টেম এবং ইনফ্রারেড সার্চ-অ্যান্ড-ট্র্যাক।
চীন সরকারের মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ এর তুলনায় জে-৩৫ কে বর্ণনা করেছে - আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ধ্বংস করার শ্রেষ্ঠ যুদ্ধবিমান।
ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তান চীনের কাছ থেকে ৪০টি জে-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনবে। এর প্রথম চালন চলতি বছরের শেষের দিকে হাতে পাবে পাকিস্তান। আর এই বিষয়টি ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে এনডিটিভি অনলাইন।
চায়না ডেইলি জানিয়েছে, জে-৩৫ অন্যান্য অস্ত্র ব্যবস্থার সাথে ‘লক্ষ্যবস্তু শেয়ার করে নিতে’ পারে। যেমন-ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং লক্ষ্যবস্তুগুলোকে ধ্বংস করার জন্য অন্যান্য অস্ত্রকে নির্দেশ করার জন্য তার রাডার ব্যবহার করতে পারে। তবে এখানে বড় বৈশিষ্ট্য হল স্টিলথ ক্ষমতা।
জে-৩৫ এর রাডার ক্রস-সেকশন শূন্য দশমিক ০০১ বর্গমিটার বলে জানা গেছে, যা এফ-৩৫ এর সাথে তুলনীয়। এই সক্ষমতা ভারতের সাথে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের নতুন যুদ্ধবিমান সনাক্ত করা খুব কঠিন করে তুলবে। এর অর্থ সীমান্তের কাছে আসার সাথে সাথে ভারত যুদ্ধবিমানগুলো শনাক্ত করতে আরো বেশি সময় নেবে।
সাবেক ফাইটার পাইলট গ্রুপ ক্যাপ্টেন অজয় আহলাওয়াত (অবসরপ্রাপ্ত) এনডিটিভিকে বলেন, “এটি উদ্বেগজনক খবর। পাকিস্তানি রঙের জে-৩৫ এর যেকোনো সংস্করণ আমাদের পক্ষে উদ্বেগ তৈরি করবে।”
ঢাকা/শাহেদ