নিজের উদ্যোগে ধনী হচ্ছেন নারীরা, বেশিরভাগ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের
Published: 1st, July 2025 GMT
বিশ্বজুড়ে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সময়টা এখন সবচেয়ে অনুকূল, অন্তত পরিসংখ্যান তা-ই বলছে। অনেক নারী এখন নিজের উদ্যোগে ধনী হচ্ছেন। তাঁরা এখন আর কেবল স্বামী বা বাবার সম্পদের উত্তরাধিকার হয়ে ধনী হচ্ছেন না।
গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ মনিটরের (জিইএম) তথ্য অনুযায়ী, এখন বিশ্বজুড়ে ৬৫৮ মিলিয়ন বা ৬৫ কোটি ৮০ লাখ নারী উদ্যোক্তা ও কোম্পানি মালিক আছেন। যদিও পুরুষ উদ্যোক্তার সংখ্যা এখনো বেশি—৭৭২ মিলিয়ন বা ৭৭ কোটি ২০ লাখ। এ ক্ষেত্রে নারীরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন। আশার কথা হলো, নারী উদ্যোক্তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই তাঁদের পথচলার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছেন—এবং পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশিসংখ্যক নতুন উদ্যোগে হাত দিয়েছেন তাঁরা। খবর ফোর্বস ম্যাগাজিনের
নিজ উদ্যোগে শতকোটিপতি হওয়া শীর্ষ ৫০ জন নারীর তালিকা করেছে ফোর্বস ম্যাগাজিন। এই নারীদের প্রায় অর্ধেক—২৪ জনই—এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের। এরপর আছে উত্তর আমেরিকা, সেখান থেকে আছেন ২০ জন আর ইউরোপের ৬ জন।
দেশভিত্তিক হিসাবে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ১৮ জন; কানাডা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাজ্যের দুজন করে এবং অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, ইতালি, রাশিয়া ও ভিয়েতনামের একজন করে।
জিইএমের নারীবিষয়ক প্রতিবেদনের লেখক অ্যামান্ডা এলাম বলছেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে ঘাটতি হ্রাসে নারী উদ্যোক্তারা সবচেয়ে কার্যকর নীতিগত সমাধান নিয়ে আসছেন। নারীরা এমন সব ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যেসব উদ্যোগ বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলার কাজ করছে; এমন পরিবেশেই বড় কোম্পানিগুলো কাজ করতে চায়।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে ঘাটতি হ্রাসে নারী উদ্যোক্তারা সবচেয়ে কার্যকর নীতিগত সমাধান নিয়ে আসছেন।এই অগ্রযাত্রাকে স্বীকৃতি জানাতে প্রথমবারের মতো ফোর্বস প্রকাশ করেছে ‘বিশ্বের ৫০ জন সবচেয়ে স্ব-উদ্যোগী ধনী নারীর তালিকা’। তালিকায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা কেউ কোলাজেনের ব্যবসা করেন, কেউ কয়লার খনিতে, কেউ আবার প্রযুক্তি বা ফ্যাশন জগতে নিজেদের ভাগ্য গড়েছেন। ১৩টি দেশ ও ৪টি মহাদেশ থেকে তাঁরা এই তালিকায় উঠে এসেছেন, যদিও এই তালিকায় এখনো আফ্রিকা বা দক্ষিণ আমেরিকার নারী নেই।
সব মিলিয়ে এই ৫০ জন নারীর সম্মিলিত সম্পদ ২৭৬ বিলিয়ন বা ২৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার—গড় হিসাবে প্রায় ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৫৫০ কোটি ডলার করে।
তালিকার শীর্ষে আছেন সুইজারল্যান্ডের জাহাজ ব্যবসায়ী রাফায়েলা অ্যাপনটে-ডায়ামান্ট। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৩৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৮৮০ কোটি ডলার। স্বামী জিয়ানলুইজি অ্যাপনটের সঙ্গে মিলে তিনি গড়ে তুলেছেন মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানি (এমএসসি)—বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিপিং কোম্পানি। মাত্র ২ লাখ ডলারের ঋণ নিয়ে শুরু হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠান।
দ্বিতীয় স্থানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডায়ান হেনড্রিক্স—যিনি ছাদ ও বাড়ির বাইরের নির্মাণসামগ্রীর অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবিসি সাপ্লাইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ২২ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২৩০ কোটি ডলার। তালিকায় থাকা মার্কিন নারীদের মধ্যে আছেন অপরাহ উইনফ্রে, শেরিল স্যান্ডবার্গ প্রমুখ।
এ তালিকায় স্থান পেতে হলে হলে কমপক্ষে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ২১০ কোটি ডলারের সম্পদ থাকতে হয়। সেই হিসাবে গুইন শটওয়েল সেলিব্রিটি কিম কার্ডাশিয়ান কিংবা টেইলর সুইফট এখনো সেই মানদণ্ড অর্জন করতে পারেননি।
এ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো চীনেরও ১৮ জন নারী আছেন। শীর্ষে আছেন ঝোং হুইজুয়ান, তিনি একসময় রসায়নের শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি হানশ ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানি এখন ফুসফুস ক্যানসার, সংক্রমণ ও অটোইমিউন রোগের ওষুধ তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বার্ষিক আয় প্রায় ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ১৭০ কোটি ডলার।
চীনে নারী উদ্যোক্তারা অনেক আগে থেকেই অগ্রণী। ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার অধ্যাপক মিং জার চেন লিখেছেন, চীনা সংস্কৃতিতে নারী বরাবরই ক্ষমতার জায়গায় থেকেছেন। এমনকি চীনা ভাষায় ‘স্ত্রী’ আর ‘সমান’ শব্দ দুটি সমার্থক—‘চি’।
প্রযুক্তিতে নারীদের দাপট
তালিকার ৫০ জন নারীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ পুঞ্জীভূত আছে প্রযুক্তি খাতে—১৪ জন নারী এই খাতে সফলতা পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শীর্ষে ঝোউ কুনফেই; তাঁর প্রতিষ্ঠান লেন্স টেকনোলজি এখন অ্যাপল, স্যামসাং ও টেসলার মতো কোম্পানির জন্য টাচস্ক্রিন সরবরাহ করে। একসময় তিনি ছিলেন সাধারণ শ্রমিক। এখন তাঁর কোম্পানির বার্ষিক আয় ৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৯৫০ কোটি ডলার।
সবচেয়ে কম বয়সী উদ্যোক্তা হলেন অস্ট্রেলিয়ার মেলানি পারকিনস (৩৮)। ২০১৩ সালে তিনি ক্যানভা নামের ডিজাইন সফটওয়্যার কোম্পানি শুরু করেন। দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ রাশিয়ার তাতিয়ানা কিম (৪৯), একসময় ইংরেজি পড়াতেন, এখন দেশটির সবচেয়ে বড় অনলাইন খুচরা প্রতিষ্ঠান ওয়ারইল্ডবেরিস পরিচালনা করেন।
ফোর্বস–এর সংবাদে বলা হয়েছে, নারীরা এগিয়েছে ঠিক; কিন্তু বাস্তবতা হলো, নারী ও পুরুষ ধনীদের মধ্যে ব্যবধান এখনো অনেক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ফ র বস জন ন র দশম ক সবচ য় ৫০ জন
এছাড়াও পড়ুন:
শিল্পী সমিতিতে থাকার ইচ্ছা মরে গেছে: ওমর সানী
ঢাকাই চলচ্চিত্রের একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ওমর সানী। যিনি একসময় পর্দায় এলেই দর্শকদের হৃদয়ে আলোড়ন তুলতেন, সেই তিনি আজ অনেকটা নীরব, আড়ালে। অভিনয়ে এখন আর আগের মতো নিয়মিত নন, তবে এখনো অপেক্ষা করেন একটি ভালো গল্প, একটি ভালো সিনেমার জন্য।
“আমাদের দেশে এখন ৫৫ পেরোলেই আমরা হয়ে যাই বয়স্ক। অথচ পাশের দেশে এই বয়সে অনেকে ক্যারিয়ার শুরু করেন,”—বলতে বলতে কণ্ঠে যেন ভেসে আসে আক্ষেপের সুর।
ওমর সানী বলেন, “আমি এখনো সিনেমা ছাড়িনি। কাজের অফার আসে, কিন্তু গল্পে মন ভরে না বলেই নিজেই না করে দেই।”
আরেকটু খোলাসা করে তিনি বলেন, “শিল্পী সমিতিতে আমি এখন এক মরা মানুষ। থাকলে সবাই জিজ্ঞেস করে নির্বাচন করব কি না। না থাকলে কেউ কিছু বলবে না। তাই, মিশাকে বলেছি, আমার মেম্বারশিপটা বাদ দিতে। আমার এখন আর ইচ্ছাও নেই, সেই ইচ্ছাটা যেন মরে গেছে।”
ওমর সানীর কথায় ঘনীভূত হয় অভিমান। তিনি বলেন,“নব্বইয়ের দশকে এ ক্যাটাগরির শিল্পী ছিল ১০০ জনের বেশি। এখন আছে হাতেগোনা কয়েকজন। যারা আছে, তারা থেকেও নেই। এখন অনেকেই ভাইরাল হতে সমিতির পেছনে ছুটছে। টার্গেট—চেয়ার, তারপর সেটাকে নানা কাজে ব্যবহার করা। এই খারাপ রাজনীতি শিল্পী সমিতিকে ধ্বংস করেছে।”
ওমর সানীর নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি হয়েছে ‘গরিবের রানী’সহ কয়েকটি চলচ্চিত্র। পর্দার বাইরে থেকেও তিনি ছিলেন সিনেমার ভেতরে। ছেলেকে পাঠিয়েছেন চলচ্চিত্র ও প্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনা করতে। আশা করেছিলেন, হয়ত ছেলে একদিন হাল ধরবে পারিবারিক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের।
কিন্তু বাস্তবতা আবারও অন্যকিছু বলে দেয়। তিনি বলেন, “সেদিন এফডিসিতে নির্বাচনের সময় শাকিব খানের ওপর হামলা হলো। আমার ছেলে তখন আমার সঙ্গেই ছিল। ভয়ে কাঁপছিল। বলছিল, বাবা, আমার কপাল ভালো না। আমি আর সিনেমায় কাজ করতে পারব না। চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করেও সে মুখ ফিরিয়ে নিল।”
ওমর সানী সর্বশেষ ‘ডেড বডি’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। বর্তমানে নানারকম ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
ঢাকা/রাহাত/রফিক