পাকিস্তানকে মোকাবিলায় দেশীয় ড্রোন তৈরিতে বিপুল প্রণোদনা ভারতের
Published: 4th, July 2025 GMT
প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের চীন ও তুরস্কের সহায়তায় নির্মিত কর্মসূচির মোকাবেলায় ভারত বেসামরিক ও সামরিক ড্রোন নির্মাতাদের জন্য ২৩৪ মিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে ভারত। শুক্রবার রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় ইসলামাবাদকে দায়ী করে ৬-৭ মে রাতে নয়াদিল্লি পাকিস্তানে ধারাবাহিক বিমান হামলা চালায়। এ ঘটনায় দুই দেশ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতিতে রাজী হয় ভারত ও পাকিস্তান।
পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশ এরপর থেকে ড্রোন অস্ত্র প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই সরকারি এবং একজন শিল্প সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, নয়াদিল্লি তিন বছরের জন্য ২৩৪ মিলিয়ন ডলারের একটি কর্মসূচি চালু করবে যা ড্রোন, যন্ত্রাংশ, সফটওয়্যার, কাউন্টার-ড্রোন সিস্টেম এবং পরিষেবা তৈরি করবে। এই কর্মসূচির ব্যয় ২০২১ সালে নয়াদিল্লির চালু করা ১২০ কোটি রুপির ড্রোন উৎপাদন-সংযুক্ত প্রণোদনা প্রকল্পের চেয়ে বেশি।
ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় এই প্রণোদনা কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছে। এ ব্যাপারে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের জন্য ই-মেইলের জবাব দেয়নি।
রয়টার্স এর আগে জানিয়েছিল, ভারত স্থানীয় শিল্পে ব্যাপক বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে এবং আগামী ১২ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে মনুষ্যবিহীন বিমানবাহী যানবাহনে ৪৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে পারে।
অতীতে ভারত মূলত তার তৃতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী ইসরায়েলের কাছ থেকে সামরিক ড্রোন আমদানি করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের নতুন ড্রোন শিল্প সামরিক বাহিনীর জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের ড্রোন সরবরাহের প্রস্তাব বাড়িয়েছে। তবে মোটর, সেন্সর এবং ইমেজিং সিস্টেমের মতো কিছু উপাদানের জন্য চীনের উপর নির্ভরতা অব্যাহত রয়েছে ভারতের। এই প্রণোদনার মাধ্যমে ভারত ২০২৮ অর্থবছরের (এপ্রিল-মার্চ) শেষ নাগাদ (এপ্রিল-মার্চ) ড্রোনের অন্তত ৪০ শতাংশ মূল যন্ত্রাংশ দেশে তৈরি করার লক্ষ্য নিয়েছে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং গত সপ্তাহে বলেছিলেন, “(ভারত-পাকিস্তান) সংঘাতের সময় উভয় পক্ষই ড্রোন, যুদ্ধাস্ত্র এবং কামিকাজ ড্রোনের প্রচুর ব্যবহার ছিল। আমরা যে শিক্ষা পেয়েছি তা হল, একটি বৃহৎ, কার্যকর, সামরিক ড্রোন উৎপাদন বাস্তুতন্ত্র তৈরি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের দেশীয়করণ প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চীনকে মোকাবিলায় পরীক্ষার মুখে কোয়াডের ঐক্য
চীনের প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া নিয়ে গঠিত কোয়াড জোটের বৈঠক ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ওই বৈঠকে জোটভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নেন। বৈঠকে জোটের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদে চীনের বাড়তে থাকা শক্তি ও আধিপত্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এমন একসময় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে বড় শুল্ক আরোপ করেছেন। কার্যত বিষয়টি জোটের অংশীদারদেরও পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। রয়টার্স জানায়, জোটের কোনো সদস্যই ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক থেকে রেহাই পায়নি।
চীনকে মোকাবিলা প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কোয়াডের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উদ্যোগ চালুর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়। তবে বাণিজ্য ও অন্যান্য মতবিরোধের কারণে অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে সম্পর্কের টানাপোড়েন।
ওয়াশিংটনে বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সরবরাহ শৃঙ্খলের আকস্মিক সংকোচন ও ভবিষ্যতের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন চার দেশ। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, নির্দিষ্ট অমৌলিক পণ্য ও খনিজ প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তির জন্য বাজারবহির্ভূত নীতি ও অনুশীলনের ব্যবহার নিয়ে তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। আমরা বৈচিত্র্যময় ও নির্ভরযোগ্য বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছি। খনিজ ও অমৌলিক পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধনের জন্য যে কোনো একটি দেশের ওপর নির্ভরতা শিল্পগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। সেই সঙ্গে সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাতের মাধ্যমে আমাদের অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৈঠকটিকে ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ বলেছেন। আর স্বাগত জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সদস্যদের ‘গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার’ বলে অভিহিত করে বলেন, নির্দিষ্ট বিষয়ে ‘পদক্ষেপ গ্রহণের’ সময় এসেছে।
জাপান বৈঠকের আগেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত একটি বার্ষিক প্রতিরক্ষা বৈঠক স্থগিত করে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা ব্যয়ের চাপেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে টোকিও।
অন্যদিকে, ভারত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। গত এপ্রিলে কাশ্মীরের পর্যটকদের ওপর হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের সম্ভাব্য যুদ্ধ রুখতে ‘ট্রাম্প হস্তক্ষেপ করেছেন’– এ দাবিকে ভিত্তিহীন বলছে নয়াদিল্লি।
কোয়াডের চার দেশ চীনের আধিপত্য ঠেকাতে একমত হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্বজুড়ে শুল্ক আরোপ নীতিতে মিত্ররাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ব্যয়, এমনকি পারস্পরিক কূটনৈতিক টানাপোড়েনে কোয়াডের সম্মিলিত অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অস্ট্রেলিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা আচরণে উদ্বিগ্ন। দেশটিকে পারমাণবিক সাবমেরিন দিতে গঠিত আকুস প্রকল্প নিয়ে পেন্টাগনের তৃতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা এলব্রিজ কোলবি পুনর্বিবেচনা শুরু করায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে ক্যানবেরায়।
গত মঙ্গলবারের বৈঠক নিয়ে আশাবাদী ছিল যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, এ বৈঠক সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদার ও শক্তিশালী সরবরাহ চেইন গঠনে আমাদের অভিন্ন লক্ষ্যে অঙ্গীকারের প্রকাশ।
বৈঠকের পর রুবিও দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাপানের তাকেশি ইওয়াইয়া ও অস্ট্রেলিয়ার পেনি ওয়াংয়ের সঙ্গে। গত সোমবার নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে জয়শঙ্কর বলেন, কোনো সম্পর্কই সমস্যামুক্ত হয় না। কিন্তু মূল বিষয় হলো, সমস্যাগুলো কীভাবে সামাল দেওয়া যায় এবং সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নেওয়া যায়। তিনি বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, মহামারি প্রস্তুতি ও শিক্ষার মতো অনেক ইস্যু রয়েছে, যা আলোচনার দাবি রাখে।
এ বছরের শুরুর দিকে কোয়াড ঘোষণায় জানানো হয়েছিল, ভারতের আসন্ন কোয়াড সম্মেলনের আগে নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে পর্দার আড়ালে রাজনৈতিক টানাপোড়েন প্রকট হয়ে উঠছে। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সাবেক অস্ট্রেলীয় রাষ্ট্রদূত আর্থার সিনোদিনোস বলেন, ওয়াশিংটন এ বৈঠককে নিরাপত্তাকেন্দ্রিক বার্তা দেওয়ার মঞ্চ হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু বাণিজ্য ও আকুস নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বেগ এ বার্তাকে ছাপিয়ে যেতে পারে।
জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে গত ফেব্রুয়ারির শিগেরু ইশিবার সঙ্গে ট্রাম্পের শীর্ষ বৈঠকের পর থেকে গতি কমেছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) ভারতবিষয়ক গবেষক রিচার্ড রসো বলেন, ট্রাম্পের ভারতসম্পর্কিত কৌশল কিছুটা অগোছালো হলেও দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত স্বার্থ অপরিবর্তিত রয়েছে।