সোনারগাঁয়ে পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য ফরম বিতরণ  উদ্বোধন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৪ জুলাই  শুক্রবার সাহাপুর সোনারগাঁ উপজেলা মূক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স  অডিটোরিয়ামে  সদস্য পদ নবায়ন ফরম বিতরণ করা  হয়।

সোনারগাঁ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক ফারুক আহমেদ এর সঞ্চালনায় ও পৌরসভা বিএনপির সভাপতি হাজী শাহজাহান মেম্বার এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোশাররফ হোসেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পৌর বিএনপির  সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর, সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান সেন্টু, পৌর ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ইসলাম প্রধান, হাজী শাহজালাল, বিএনপি নেতা বকুল মিয়া, জাহের উদ্দিন, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ-আহবায়ক আলন,  পৌরসভা ৯ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আলাউদ্দিন, পৌর যুবদলের যুগ্ম-আহবায়ক আল আমিন, বিএনপি নেতা রফিক, সজিব, পৌর যুবদল নেতা মাসুদ, জামান ও শহিদ মিয়া প্রমুখ।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ব এনপ ন র য়ণগঞ জ ব এনপ র স ন রগ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ডুরান্ড লাইনের দুদিকে ভূরাজনৈতিক ট্র্যাজেডিতে পাকিস্তান

রাজনীতি অনেক সময় বন্ধুত্ব ও শত্রুতার মেরুকরণ বিস্ময়করভাবে বদলে দেয়। ভূরাজনীতির বেলায়ও সে রকম ঘটে। তবে পাকিস্তানের শাসকদের জন্য আফগান তালেবান সরকারের আচরণ অনেকটাই ট্র্যাজেডির মতো। অচিন্তনীয় এক দুর্বিপাকও বলা যায় একে। কেন এমন হলো? পেছনে ফিরে তাকালে কী দেখি আমরা? এর ভবিষ্যৎ পরিণতি কী?

পাল্টাপাল্টি হামলা ডুরান্ড লাইনের দুই দিকে

গত কয়েক সপ্তাহ আফগানদের সঙ্গে পাকিস্তানের দুই দফা বড় আকারে সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত কাবুল ও কান্দাহারে পাকিস্তানের বোমাবর্ষণ থেকে। তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপির নেতা নুর ওয়ালি মেসুদকে হত্যা করতে তারা আফগানিস্তানে হামলা চালিয়েছিল।

এর প্রতিক্রিয়ায় আফগান তালেবান যোদ্ধারা পাকিস্তানের অনেকগুলো সীমান্তচৌকিতে হামলা করেন। ব্যাপক ক্ষতি হয় তাতে। আফগানদের দাবি, ৫৮ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করেছে তারা। পাকিস্তান ২০ জনের কথা স্বীকার করেছে।

সংখ্যা কমবেশি যা–ই হোক, আফগানদের এই হামলা পাকিস্তানের জন্য অবিশ্বাস্য এক অভিজ্ঞতা ছিল। তাদের সশস্ত্র বাহিনীর মান-ইজ্জত হুমকিতে ফেলে। পাল্টা হামলা চালিয়ে তারা আফগানদের ১৯টি সীমান্তচৌকি ভেঙে দেয়। এই পাল্টাপাল্টি হামলা থামাতে সৌদি আরব ও কাতারকে মধ্যস্থতা করতে হয়। কিন্তু উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় তাতে কমেনি।

এই ঘটনার সময় ও পটভূমি নজরে রাখার মতো। তালেবান ও পাকিস্তানের যোদ্ধারা যখন পরস্পরের সীমান্তে মৃতের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত, তখন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি দিল্লিতে ভারতের অতিথি হিসেবে জনসংযোগে ব্যস্ত। এরই কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র যে আফগানদের বাগরাম বিমানঘাঁটি চেয়ে বসেছে, সেটাও পাকিস্তান-আফগানিস্তান সংঘর্ষের একটা দূরবর্তী পটভূমি হিসেবে আছে।

মাওলানা মুত্তাকির সফর ভারতে তুমুল আগ্রহ তৈরি করেছে। এর পরপরই নয়াদিল্লি কাবুলে দূতাবাস নিয়ে ফেরার ঘোষণা দিল। ২০২১–এর আগস্ট-সেপ্টেম্বরে যে দেশ থেকে ভারতীয় কূটনীতিবিদদের প্রায় প্রাণভয়ে পালিয়ে আসতে হয়েছিল, সেখানে মুত্তাকি আবার তাঁদের হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছেন।

এটা ইসলামাবাদের ভয়াবহ এক কূটনৈতিক বিপর্যয় হিসেবে গণ্য হয়েছে। এর ভূরাজনৈতিক তাৎপর্যও বিপুল। অথচ মাঝবয়স থেকে মুত্তাকির পড়াশোনা ও বড় হওয়া শরণার্থী হিসেবে পাকিস্তানেই।

কোথা থেকে দুর্বিপাকের শুরু

প্রশ্ন উঠেছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে এত যে কূটনৈতিক ও সামরিক দূরত্ব বাড়ছে, তার গোড়ার কারণ কী? নিঃসন্দেহে উত্তর হলো, টিটিপি।

২০২১–এর আগস্টে তালেবান কাবুল দখল করে সরকার গঠন করামাত্র পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে (বর্তমানে খাইবার পাখতুনখাওয়া বা কেপি নামে পরিচিত) সেখানকার তালেবান সশস্ত্র যুদ্ধে নেমে পড়ে। পাকিস্তানে আগে থেকে বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতার আন্দোলন চলছে।

টিটিপি কেপিতে সক্রিয় হওয়ামাত্র দেশটির সশস্ত্র বাহিনী দুটি প্রদেশের বিশাল এলাকাজুড়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। কেবল ২০২৪ সালে কেপিতে পাকিস্তানের আড়াই হাজার সামরিক ও বেসামরিক মানুষ মারা গেছেন। এ বছর ক্ষয়ক্ষতি আরও বেশি। এখন সীমান্তেও জওয়ানদের হারাতে হচ্ছে পাকিস্তানকে।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, কাবুলে তালেবানদের ক্ষমতা দখলমাত্র পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে কবরস্থান খোঁড়ায় বেশি সময় ও শ্রম বাড়িয়ে দিতে হয়েছে। অথচ এই তালেবানকে একদা তারাই অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও ভাবাদর্শ দিয়ে গড়ে তুলেছিল।

যে অধ্যায়ের শুরু ১৯৭৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সেদিন আফগানিস্তানের ‘সাম্যবাদী’ সরকারকে রক্ষায় দেশটিতে সৈন্য পাঠায়। তাদের বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের এটা মনঃপুত ছিল না।

মস্কো-ওয়াশিংটনের সেই ঠান্ডা যুদ্ধে জড়ায় পাকিস্তানের জেনারেল জিয়াউল হক সরকার। অন্যভাবে বললে, এই যুদ্ধে জড়ানোর জন্যই তাঁকে ক্ষমতায় আনা হয়েছিল।

জিয়ার অধীনে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রক্সি’ বা ছদ্ম প্রতিনিধি হিসেবে আফগানিস্তানে রুশদের মোকাবিলায় সশস্ত্র দল গড়ার কাজে নামে। সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সেই যৌথ প্রকল্পেরই সর্বশেষ সংস্করণ ছিল তালেবান।

জিয়াউল হকের পর পাকিস্তানের অন্যান্য সরকারও এই প্রকল্প চালিয়ে গেছে। বিনিময়ে তারা চাহিদামতো অর্থ ও সামরিক সহায়তা পেয়েছে রিয়াদ ও ওয়াশিংটন থেকে।

জনগণকে ইসলামাবাদের শাসকেরা তাঁদের আফগান ভূমিকার পক্ষে যুক্তি হিসেবে বরাবর একটা কথাই বলেছেন, কাবুলে বন্ধুভাবাপন্ন সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে পাকিস্তানের ভূরাজনৈতিক বিপুল লাভ। সেই সরকারকে ব্যবহার করে আফগান ভূখণ্ড হয়ে মধ্য এশিয়ার পথে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সুবিধা বাড়ানো যাবে।

শেষমেশ ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট সেই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কেবল রুশদের নয়, পরবর্তীকালে ন্যাটো বাহিনীকেও তাড়ায় আফগান পশতু মুজাহিদরা। সবই হয় পাকিস্তানের কূটনৈতিক, সামরিক, ভাবাদর্শিক সহায়তায়। ভারতীয় কূটনীতিবিদদেরও আফগানিস্তান ছাড়তে হয় ওই সময়।

ইসলামাবাদে নীতিনির্ধারকেরা এ সময় বেশ উল্লসিত ছিলেন। কেবল বন্ধুভাবাপন্ন সরকার প্রতিষ্ঠাই নয়, কেবল আফগান মাটি থেকে ভারতীয়দের তাড়ানোই নয়, ১ হাজার ৬০০ মাইল দীর্ঘ ডুরান্ড লাইন নামের সীমান্তরেখা নিয়ে সব দুর্ভাবনা কেটে গেছে বলে মনে করেছিলেন তাঁরা।

এ রকম একটা দীর্ঘ সীমান্তে সামরিক পাহারার খরচপাতি কমে যাওয়া মানে ভারতের সঙ্গে সীমান্তে শক্তি বাড়ানোর সুযোগ। এত সব ইতিবাচক প্রাপ্তির সময় পাকিস্তানের শাসকেরা তাঁদের ৪২ বছরের পুরোনো আফগান প্রকল্পের গলদটা টের পাননি। সেই অধ্যায়ের শুরু ২০২১–এর শেষার্ধ্ব থেকে।

তালেবানদের নতুন কৌশলে চীন ও ইরানও দুর্ভাবনায়

২০২১ সালে হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার নেতৃত্বে কাবুলে তালেবানদের ইসলামি আমিরাত সরকারের নিয়ন্ত্রণ যত দৃঢ় হয়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাকিস্তানের একই আদর্শের শক্তিগুলো জোটবদ্ধ হয়ে সে দেশেও একই আদর্শের সরকার কায়েমে নামতে শুরু করে। এর ফল হয়েছে বহুমাত্রিক।

প্রথমত, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের অখণ্ডতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুটি শক্তিশালী গেরিলাযুদ্ধ সামলাতে হচ্ছে। বালুচদের সশস্ত্রতা পুরোনো হলেও বাহিনী হিসেবে পশতুদের টিটিপি অনেক শক্তিশালী। চার দশকের যুদ্ধে অভিজ্ঞ তারা।

তা ছাড়া আফগানিস্তানকে নিরাপদ পশ্চাদ্‌ভূমি হিসেবে ব্যবহার করতে পারছে। সেখানে আছে তাদের পুরোনো আফগান সহযোদ্ধারা। আছে একই আদর্শের সরকারও। আবার ৪১ বছর এই আদর্শবাদীদের নিজ ভূমিতে দায় ও দরদের সঙ্গে আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে পাকিস্তানেরই বিভিন্ন সংস্থা। ফলে নিজ দেশেও এর বীজ রোপিত হয়েছে তাদেরই অজান্তে।

তালেবান ভারতকে ব্যবহার করে কেবল যে পাকিস্তান ও চীনের জন্য উদ্বেগ বাড়াচ্ছে তা–ই নয়, ইরানের জন্যও কিছু মুশকিল আছে এতে। দক্ষিণ এশিয়ায় ইসরায়েল হলো ভারতের বিশেষ বন্ধু। এখন ভারতের কাবুল প্রবেশ পার্শ্ববর্তী ইরানের জন্য নিশ্চিতভাবে উদ্বেগের ব্যাপার। 

টিটিপি যে কেবল আফগান তালেবানদের মদদে পাকিস্তানে সশস্ত্র যুদ্ধ চালাচ্ছে, পাকিস্তানের এমন অভিযোগে সত্য চাপা দেওয়ার অপচেষ্টা রয়েছে যে পাকিস্তানের সমাজেই তালেবানের আদর্শের পক্ষে অনেক জনবল রয়েছে। কাবুলের সরকার ঠিক একই কথাই বারবার ইসলামাবাদকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

কিন্তু পাকিস্তানের বিবিধ চাপ সইতে না পেরে তারা এখন দুষ্ট কূটনীতির আশ্রয় নিয়েছে। মুত্তাকির ভারত সফর একটা দারুণ হিসাবি পদক্ষেপ ছিল তাদের জন্য। ভারতকে কাবুলে ফেরানোও একই রণনীতির অংশ। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা পাকিস্তানের পাশাপাশি ইরান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকেও শক্ত বার্তা দিল।

পাকিস্তান বহুকাল ধরে অভিযোগ করে আসছে, নয়াদিল্লি বালুচদের বিচ্ছিন্নবাদী কাজে সহায়তা দেয়। সেই হিসাবে ভারতের কাবুল যাওয়া বালুচ গেরিলাদের জন্য উৎসাহ পাওয়ার মতো একটা ঘটনা। কোয়েটা থেকে কাবুলে যোগাযোগ যতটা সহজ, নয়াদিল্লি থেকে ততটা নয়।

বালুচ-ভারত সম্ভাব্য ঘনিষ্ঠতা চীনের জন্যও মহাবিপদের হতে পারে। কারণ, বালুচদের এলাকায় রয়েছে তার বিপুল বিনিয়োগের বিশাল
করিডর। ইতিমধ্যে অনেক চীনা বালুচদের হাতে মারাও পড়েছেন। 

তালেবান ভারতকে ব্যবহার করে কেবল যে পাকিস্তান ও চীনের জন্য উদ্বেগ বাড়াচ্ছে তা–ই নয়, ইরানের জন্যও কিছু মুশকিল আছে এতে। দক্ষিণ এশিয়ায় ইসরায়েল হলো ভারতের বিশেষ বন্ধু। এখন ভারতের কাবুল প্রবেশ পার্শ্ববর্তী ইরানের জন্য নিশ্চিতভাবে উদ্বেগের ব্যাপার। 

মুত্তাকির ভারত অভিযান যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও বার্তাবহ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যখন বেশ খারাপ, তখনই আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী নয়াদিল্লি গেলেন। ট্রাম্পের বাগরাম বিমানঘাঁটি চাওয়ার একটা হালকা প্রত্যুত্তর এটা। এভাবেই আফগানরা একই সঙ্গে ইরান, পাকিস্তান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর–কষাকষিতে বেশ ভালো অবস্থানে আছে।

ভারতের জন্য মুহূর্তটা বেশি উপভোগ্য। পাকিস্তান নিরাপত্তা বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি করে চমক দেখিয়েছে বলে যাঁরা লিখেছেন, তাঁদের জন্য কাবুল-নয়াদিল্লির নৈকট্য নিঃসন্দেহে আরও বড় চমক। এটা যদি ভারত-তালেবান-টিটিপি-বালুচ নেটওয়ার্ক তৈরি করার পথে সামান্যও অবদান রাখে, সেটা পাকিস্তান ও চীনের জন্য বড় এক দুর্ভাবনার বিষয় হতে বাধ্য।

পাকিস্তানের অদূরদর্শিতার ফল

পাকিস্তানের সম্ভাব্য এই সংকট তার ১৯৭৯ সালে শুরু করা অদূরদর্শিতা ও আত্মঘাতী প্রকল্পেরই অনিবার্য ফল। আফগানদের পণ্য হিসেবে অস্ত্র ধরিয়ে না দিয়ে সেদিন যদি দেশটির সরকারকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিক রূপান্তরে সহায়তা দেওয়া হতো, তাহলে যে সমৃদ্ধ আফগানিস্তান তৈরি হতো, সেটা আজকের অবস্থা থেকে পাকিস্তানের জন্য অনেক নিরাপদ ও বন্ধুভাবাপন্ন হতো। সে রকম হলে আজ আর পাকিস্তানকে ধর্মীয় মোড়কে সীমান্তের দুই দিকে পশতু জাতীয়বাদ মোকাবিলা করতে হতো না।

কাবুলে জাতিবাদী বিবেচনার ঊর্ধ্বে থাকা যেকোনো গণতান্ত্রিক সরকার পাকিস্তানের জন্য আজকের কাবুল সরকারের চেয়ে বেশি উপকারী হতো। যেমনটি ঘটেছে রাশিয়ার বেলায় কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের দিক থেকে। শেষের এই তিন দেশে সাক্ষরতার হার এখন ৯৯ শতাংশ।  তিনটিই মুসলমানপ্রধান দেশ। চিকিৎসক, প্রকৌশলী কিছুর কমতি নেই এসব দেশে।

গণতন্ত্রের ঘাটতি এবং কর্তৃত্ববাদী শাসন থাকলেও এসব দেশ প্রতিবেশী রাশিয়ার জন্য কোনো দুর্ভাবনার কারণ হয়ে উঠছে না, বরং বন্ধুত্বপূর্ণ নিরাপদ পার্শ্বস্থল হয়ে আছে। আবার শিক্ষিত জনবল ও নিরাপত্তা থাকায় এসব দেশে বিদেশি বিনিয়োগও বাড়ছে।

মধ্য এশিয়ার এসব দেশের চেয়ে আফগানদের সমৃদ্ধির সুযোগ ছিল বেশি। অথচ এখন আফগানিস্তানে সাক্ষরতার হার ৩৭ শতাংশ। নারীদের বিদ্যাপীঠে যাওয়ার সুযোগ নেই। দু-তিন প্রজন্ম পর সেখানে উচ্চতর কারিগরি জনবলের ঘাটতির মধ্য দিয়ে যে সামাজিক সংকট তৈরি হবে, তার জন্য দোষের ভাগীদার আসলে ইসলামাবাদকেই হতে হবে। যুদ্ধের মধ্যে পড়ে লাখ লাখ আফগানকে পাকিস্তান ও ইরানে শরণার্থী হতে হয়েছিল। তাঁদের নিজ ভূমিতে ফিরে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে একাধিক প্রজন্ম চলে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবকে সঙ্গে নিয়ে আফগানিস্তানে প্রক্সি যুদ্ধে জড়িত হতে গিয়ে পাকিস্তানের শাসকেরা নিজেদেরও বহুমুখী সর্বনাশ করেছেন। ঘরে-বাইরে যুদ্ধ করতে নেমে তাঁরা মানবসম্পদে বিনিয়োগ বাড়াতে পারেননি। বাড়তি হিসেবে পেলেন দেশের একাধিক প্রদেশে বিপুল প্রতিপক্ষ সশস্ত্র যোদ্ধা। নিজেদের রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সেখানে একই কারণে অস্বাস্থ্যকর সামরিক আধিপত্যের পরম্পরা চলছে। গেরিলা সশস্ত্রতা বিনিয়োগকে কীভাবে ঝুঁকিতে ফেলে, তার বৈশ্বিক এক নজির এখন বেলুচিস্তানে চীনের অর্থনৈতিক করিডর।

অভ্যন্তরীণ ও বাইরের তালেবানদের সঙ্গে সীমান্ত অস্থিতিশীল হওয়ায় পুরো ডুরান্ড লাইন মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের স্বর্গভূমি হয়ে উঠতে শুরু করেছে আবার। দীর্ঘ মেয়াদে এটা পাকিস্তান, চীন ও মধ্য এশিয়ার জন্য বড় এক বিপদ তৈরি করতে যাচ্ছে।

বিপজ্জনক এই অবস্থা থেকে বাংলাদেশও খুব বেশি দূরে নেই। ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে এই মর্মে বিশ্বাসযোগ্য খবর বেরিয়েছে, টিটিপির হয়ে বাংলাদেশিরাও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়ছেন। ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্কে সুবাতাস বাংলাদেশিদের কাবুল হয়ে পেশোয়ার যাওয়া সহজ করতে পারে।

আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক

মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ