এ. কে. আজাদের বাড়িতে মিছিল নিয়ে চড়াও হওয়ার ঘটনায় গণসংহতি আন্দোলনের ক্ষোভ
Published: 5th, July 2025 GMT
হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদের ফরিদপুরের বাড়িতে মিছিল নিয়ে স্থানীয় বিএনপির একাংশের চড়াও এবং দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে গণসংহতি আন্দোলন। দলটি বলছে, ‘মব’ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিশাল ব্যর্থতা।
শুক্রবার গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক যৌথ বিবৃতিতে মুরাদনগর, লালমনিরহাট, ফরিদপুরসহ সারাদেশে মব সৃষ্টি করে নিপীড়ন ও সন্ত্রাস অত্যাচার চালিয়ে-- ধর্ষণ, শিক্ষকের পদোন্নতির পরীক্ষা ঠেকানো এবং থানা ঘেরাও করে অভিযুক্তকে বের করে নিয়ে যাওয়া, আওয়ামী দোসর বলে বাড়ি ঘেরাওয়ের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী দেশকে অরাজকতায় পৌঁছে দিতে চায়? তা না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন দেশে ঠিকঠাক কাজ করতে পারছে না! কেন দেশে একটার পর একটা মব সৃষ্টি করে অপরাধ সংগঠিত হতে পারছে? একটা অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করা—এমনকি সেটা অভিযুক্ত বা অপরাধীর ক্ষেত্রে হলেও।’
তারা বলেন, ‘‘গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম অর্জন হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী স্পিরিট ও আইনের শাসন কায়েম করার শাসনব্যবস্থার দিকে যাত্রা শুরু করা। সেখানে উপদেষ্টারা ‘যদি মবকে ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে না পারেন’ কিংবা ’আওয়ামী লীগ এবং ’৫৩ বছরের অতীত টেনে’ মবকে জাস্টিফাই করতে চান তাহলে তিনি বাংলাদেশের সকল মানুষের উপদেষ্টা নন।’
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে মব তৈরির হোতা সেই পক্ষগুলো সন্ত্রাসী, গণঅভ্যুত্থানবিরোধী, জাতীয় ঐক্য ধ্বংসকারী যারাই হোন না কেন—তাদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মব মব জ স ট স
এছাড়াও পড়ুন:
এবার দুর্গাপূজায় বড় অঘটন হয়নি, তবে সরকারের পদক্ষেপে আয়োজকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়
এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসাহ–উদ্দীপনায় উদ্যাপিত হলেও কোনো কোনো প্রতিমার অবয়বে অশুভশক্তির প্রকাশে শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি বা অসচেতনতাকে কেন্দ্র করে সরকারের আইনি পদক্ষেপ পূজার আয়োজক ও প্রতিমাশিল্পীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক তৈরি করেছিল বলে জানিয়েছে পূজা উদ্যাপন পরিষদ।
আজ সোমবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। উপস্থিত ছিলেন পূজা উদ্যাপন পরিষদের সহসভাপতি অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সহসভাপতি গোপাল চন্দ্র দেবনাথ প্রমুখ।
সারা দেশে এবার অত্যন্ত সুন্দরভাবে পূজা উদ্যাপিত হয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনের বাসুদেব ধর বলেন, এই উৎসব আয়োজনে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা অত্যন্ত আন্তরিকতা নিয়ে তাঁদের পাশে ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোরও সক্রিয় সহযোগিতা তাঁরা পেয়েছেন। এই মাটির হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে যে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি পথ দেখিয়েছে, এবারের উৎসব তারই ধারা বহন করতে পেরেছে।
দুর্গোৎসব শুরু হওয়ার আগে অন্তত ১৪টি জেলায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে জানিয়ে বাসুদেব ধর বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের কারণে কয়েকটি স্থানে দুর্বৃত্তরা ধরাও পড়ে। পূজার পাঁচ দিন দেশের কোথাও বড় মাত্রায় অঘটনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পূজার পরও সে রকম কোনো খবর আসেনি। সরকারের কঠোর অবস্থান, বিশেষ করে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সক্রিয় ও সতর্ক ভূমিকা এই ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
পূজা ‘সুন্দরভাবে’ হলেও কোনো কোনো প্রতিমার অবয়বে অশুভশক্তির প্রকাশে শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি বা অসচেতনতাকে কেন্দ্র করে সরকারের পদক্ষেপে পূজার আয়োজক ও প্রতিমাশিল্পীদের মধ্যে উদ্বেগ ও শঙ্কা তৈরি হয়েছিল বলে জানান বাসুদেব।
‘প্রতিমায় যে অবয়ব প্রকাশের কথা বলা হচ্ছে, তা নতুন বা হঠাৎ এ বছরই হয়েছে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। অতীতে অনেক প্রতিমায় তা শিল্পী বা অয়োজকেরা নানাভাবে প্রকাশ করেছেন। এবার কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি না।বাসুদেব ধর, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতিবাসুদেব ধর বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্ন হওয়ার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ৫ অক্টোবর “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত” হানার অজুহাতে শিল্পী, পূজারি ও আয়োজকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা ঘোষণার পর কিছু পদক্ষেপের কথা জানা যাচ্ছে। থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের ও সরকারি তদন্তের কথা বলা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের পর পূজার আয়োজক ও প্রতিমাশিল্পীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে যেকোনো পূজা-পার্বণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’
সরকার বিষয়টি নজরে আনার পর সম্ভাব্য অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি এড়াতে পূজা উদ্যাপন পরিষদ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিল জানিয়ে বাসুদেব বলেন, ‘সরকার, সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি একযোগে সমস্যাটির সমাধান করে। এতে পূজার উৎসবে ভাটা পড়েনি। অথচ পূজা শেষ হওয়ার পর বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্নধারায় প্রবাহিত করার চেষ্টা হচ্ছে, যা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উৎসাহিত করতে পারে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নানাভাবে হয়রানি ও নিপীড়নের মুখে পড়তে পারে। অন্যদিকে একসঙ্গে কাজ করার যে নজিরবিহীন ধারাটি তৈরি হয়েছে, তা–ও গতি হারাতে পারে।’এ প্রসঙ্গে পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি আরও বলেন, প্রতিমায় যে অবয়ব প্রকাশের কথা বলা হচ্ছে, তা নতুন বা হঠাৎ এ বছরই হয়েছে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। অতীতে অনেক প্রতিমায় তা শিল্পী বা অয়োজকেরা নানাভাবে প্রকাশ করেছেন। এবার কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন না।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ‘অস্বীকারের রাজনীতি’ দেখে আসার কথা জানিয়ে বাসুদেব ধর বলেন, ‘দুঃখজনক হচ্ছে, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। বাস্তবতা এড়িয়ে সমস্যা-সংকটের অবসান হবে না। পরিসংখ্যান অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই ৫৪ বছরে হিন্দু সংখ্যালঘু জনসংখ্যা ১৮ থেকে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে।’
আরও পড়ুনএবার সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫ মণ্ডপ-মন্দিরে দুর্গাপূজা হবে২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫