একসময় টেলিভিশন নাটকে ব্যস্ততা থাকলেও বর্তমানে ওটিটিই যেন জাকিয়া বারী মমর অভিনয়ের নতুন ঠিকানা। তাঁর অভিনীত একাধিক ওয়েব সিরিজ প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে নাটকেও তিনি অভিনয় করেন, যদি গল্প ও চরিত্র যথাযথ হয়। গেল ঈদে মুক্তি পাওয়া তাঁর অভিনীত নাটক ‘স্কুল গেট’ ছিল এর বড় প্রমাণ।

সোহেল রাজ পরিচালিত নাটকটি ইউটিউবে দর্শকের আবেগ ছুঁয়ে গেছে, মন্তব্য ঘরে দেখা গেছে প্রশংসার ঢল। সেই প্রশংসার রেশ না কাটতেই এবার নতুন একটি কারণে শিরোনামে এলেন মম। এবার অভিনয়ের জন্য নয়, বরং চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩২টি চলচ্চিত্রকে প্রায় ১৩ কোটি টাকার সরকারি অনুদান দিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। গত ১ জুলাই এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর অনুদান বণ্টন নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে আসে মমর পদত্যাগের খবর।

অভিনেত্রী জানান, তিনি গত ২৫ মেই তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর ব্যক্তিগত ও পেশাগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। মম বলেন, ‘ক্ষমতার কাছে যেহেতু আমার কোনো ব্যক্তিগত চাওয়া ছিল না, তাই কাজ করার ইচ্ছা নিয়েই এসেছিলাম। সেই কাজ করার সুযোগটুকু পাইনি। তাই মনে হয়েছে, আমার জায়গায় কেউ এসে দায়িত্ব পালন করলে কমিটির জন্য ভালো হবে।’ তিনি আরও জানান, ১ জুলাই যে অনুদান তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বাছাই কিংবা চূড়ান্তকরণ কোনোটিতেই তিনি যুক্ত ছিলেন না।

মমর ভাষায়, ‘কাজ করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু নিয়মের জটিলতা, পুরোনো কাঠামোর বেড়াজাল, আর আমলাতান্ত্রিক ধীরগতি সব মিলিয়ে নতুন কিছু করার কোনো সম্ভাবনা দেখিনি। তাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। অভিযোগ করার কিছু নেই, এটি আমাদের সিস্টেমের জটিলতা। আমি শুধু ফিরে এসেছি নিজের জায়গায়।’ অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘আমি এসেছিলাম রাষ্ট্রের জন্য কাজ করতে। ক্ষমতার কাছে গেলে অনেকের মুখোশ বদলে যায়। আমি চাইনি আমার চেহারাটা বদলে যাক। তাই ফিরে এলাম। এটিই সত্যি।’ 

উল্লেখ্য, চলচ্চিত্রের উন্নয়নের আশায় এবং সংস্কারের স্বপ্ন নিয়ে মম শুটিং ব্যস্ততা ফেলে যোগ দিয়েছিলেন অনুদান কমিটিতে। জুলাই বিপ্লবে চলচ্চিত্র শিল্পীদের আন্দোলনে তিনি ছিলেন সামনের সারিতে। বাস্তবের কাঠিন্য আর প্রশাসনিক জটিলতায় হতাশ হয়ে দায়িত্ব ছেড়ে দেন তিনি।

একমাত্র মমই নন, এই কমিটি থেকে আরও দু’জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন–ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও নির্দেশক তিতাস জিয়া এবং নির্মাতা-সম্পাদক সামির আহমেদ। তারাও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন।

গত বছরের ৭ অক্টোবর সরকার ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি’ পুনর্গঠন করে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপদেষ্টা মো.

নাহিদ ইসলামকে সভাপতি করে গঠিত ১০ সদস্যের কমিটিতে অভিনেত্রী মম ছিলেন অন্যতম সদস্য।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ক য় ব র মম চলচ চ ত র পদত য গ ক জ কর অন দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ডেঙ্গুর ঢেউ আসছে আগস্টে, এখনই সতর্ক হোন

দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত এক শত্রু এডিস মশা। আর এডিস মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া এখন আমাদের জন্য এক কঠিন বাস্তবতা। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে প্রতিবছরই দেশে কমবেশি ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সাল ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী। ডেঙ্গু রোগ ও এডিস মশা সম্পর্কে দেশের সরকার ও মানুষ এখন অনেকটাই জানেন। রোগটি কীভাবে ছড়ায়, কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়—এসব তথ্যও আমাদের জানা। এমনকি সরকার, সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগ নানা উদ্যোগও নিয়েছে।

তবু প্রশ্ন থেকে যায়, সবকিছু জানার পরও আমরা কেন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছি বারবার? এ ব্যর্থতার পেছনে কোথায় ঘাটতি, কাদের দায় আর কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় এই ঘূর্ণিচক্র—এখন সময় এসেছে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, এ বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ১২ হাজার মানুষ।

সরকারি হিসাবমতে, এরই মধ্যে ৪৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০ নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। বাস্তবচিত্র আরও ভয়াবহ। কারণ, অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন বাসায় বা এমন হাসপাতালে, যেগুলোর রিপোর্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে যায় না। এসব পরিসংখ্যান আমাদের সামনে এক গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদি তা এখনই মোকাবিলা করা না যায়, তাহলে আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে দেশের অনেক জেলায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

ডেঙ্গু রোগ ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। বিশেষ করে Aedes aegypti ও Aedes albopictus প্রজাতির মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে। এডিস মশা সাধারণত সকালে ও বিকেলে বেশি কামড়ায়, তবে দিনে বা রাতে যেকোনো সময়ে এরা কামড়াতে পারে। এসব মশা জমে থাকা স্বচ্ছ বা অস্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে ও এদের জীবনচক্র সম্পন্ন করে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব নির্দেশক ‘ব্রেটো ইনডেক্স’ ২০-এর ওপরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী, কোনো এলাকায় যদি এই সূচক ২০ ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সেই এলাকায় ডেঙ্গুর মতো রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা অত্যন্ত বেশি।

বর্তমানে বরিশাল বিভাগ, বিশেষ করে বরগুনা ও বরিশাল জেলার অবস্থা অত্যন্ত ‘বিপজ্জনক’। আমাদের গবেষণা ফোরকাস্টিং মডেলের ভিত্তিতে বলা যায়, আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কক্সবাজার, গাজীপুর, পিরোজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চাঁদপুর ও মাদারীপুর জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক রূপ নিতে পারে। মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পাওয়া এ প্রবণতার ভয়াবহতা নির্দেশ করে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গু প্রবৃদ্ধি জ্যামিতিক হারে বাড়বে, যা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ যে হারে বেড়ে চলেছে, তা আর কেবল একটি মৌসুমি রোগ হিসেবে সীমাবদ্ধ নেই; বরং এটি একটি জটিল ও বহুমাত্রিক জনস্বাস্থ্য সংকটে রূপ নিয়েছে।

ডেঙ্গুর বিস্তারের পেছনে একাধিক পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত কারণ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও নাগরিক জীবনের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিবর্তন। দেশের শহরাঞ্চলে, বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের মতো এলাকায় অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজের কারণে তৈরি হচ্ছে মশার প্রজননের আদর্শ পরিবেশ।

নির্মাণাধীন ভবনে খোলা ড্রাম, বালতি, পানির ট্যাংক কিংবা পরিত্যক্ত ভবনে দিনের পর দিন জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সেখানে অনায়াসে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। বহুতল ভবনগুলোর বেজমেন্টে গাড়ি পার্কিং ও গাড়ি ধোয়ার জায়গায় সৃষ্টি হচ্ছে মশার আদর্শ প্রজননস্থল। কিছু কিছু এলাকায় পানির সংকট থাকার কারণে বৃষ্টি বা সাপ্লাইয়ের পানি ড্রাম, বালতি ও অন্যান্য পাত্রে ধরে রেখে নাগরিকেরা সৃষ্টি করছে মশার অনন্য বাসস্থান।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে লার্ভা ধ্বংস সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলেও দেশে অনেক এলাকায় নিয়মিত মনিটরিং বা লার্ভা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। জনবলের সংকট, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ও কার্যকর পরিকল্পনার অভাবে পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনগুলো এ কাজে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারছে না। এ কারণে অনেক এলাকায় নিভৃতে লার্ভা বেড়ে উঠছে এবং তা ডেঙ্গুর বিস্তারকে ত্বরান্বিত করছে।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় ডেঙ্গু সংক্রমণ খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে। একটি ভবনে একজন আক্রান্ত হলে অল্প সময়েই সেই রোগ আশপাশের অনেককে সংক্রমিত করে ফেলে। শহরের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের বোতল, ফুলের টব, ক্যান বা প্যাকেটজাত খাবারের খালি কৌটা—সবই মশার ডিম পাড়ার জন্য যথেষ্ট। নগরজীবনে প্যাকেট ও ক্যানজাত খাবারের ব্যবহার বাড়ায় এ ধরনের জিনিসপত্র যেখানে–সেখানে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, যা মশার বংশবিস্তারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে তৈরি হওয়া জলাবদ্ধতা ও উচ্চ আর্দ্রতা এডিস মশার জন্য অত্যন্ত উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে। মশা খুব অল্প পানিতেও ডিম পাড়ে ও মাত্র পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেই সেই ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা জন্মে যায়। এভাবে টানা বৃষ্টি ও অনিয়ন্ত্রিত পানি নিষ্কাশনের অভাব ডেঙ্গুর বিস্তারকে জ্যামিতিক হারে বাড়িয়ে তোলে। পরিকল্পনাহীন নগরায়ণ, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও অকার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে শহরের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা ছোট-বড় পাত্রে পানি জমে থাকে, যা সময়মতো ধ্বংস না করা হলে মশা নিয়ন্ত্রণের সব উদ্যোগ ব্যর্থ হতে বাধ্য।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে লার্ভা ধ্বংস সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলেও দেশে অনেক এলাকায় নিয়মিত মনিটরিং বা লার্ভা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। জনবলের সংকট, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ও কার্যকর পরিকল্পনার অভাবে পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনগুলো এ কাজে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারছে না। এ কারণে অনেক এলাকায় নিভৃতে লার্ভা বেড়ে উঠছে এবং তা ডেঙ্গুর বিস্তারকে ত্বরান্বিত করছে।

এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবও ডেঙ্গু মোকাবিলায় বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই জানেন না কোথায় মশা ডিম পাড়ে, কীভাবে লার্ভা ধ্বংস করতে হয় কিংবা এডিস মশা কখন কামড়ায়। কেউ কেউ জানলেও দায়িত্ববান আচরণ করেন না। বাড়ির ছাদ, বারান্দা বা আঙিনায় জমে থাকা পানির প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করেন না।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, জলবায়ু পরিবর্তন এখন এডিস মশার বিস্তারকে আরও ত্বরান্বিত করছে। অস্বাভাবিক বৃষ্টি, তাপমাত্রার ওঠানামা ও আর্দ্রতার তারতম্য এডিস মশার জীবচক্রে সহায়তা করছে এবং ভাইরাস সংক্রমণ আরও দ্রুত হচ্ছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে অল্প সময়ের বৃষ্টিতে যখন বিভিন্ন ছোট–বড় পাত্রে পানি জমে থাকে, তখন তা দ্রুত মশার প্রজননস্থলে রূপ নেয়। অতএব ডেঙ্গুর বর্তমান এই পরিস্থিতি শুধু একটি রোগ নয়, বরং এটি জলবায়ু, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের সম্মিলিত সংকট, যার সমাধান জরুরি। এ সংকট মোকাবিলায় ব্যাপক ও সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া সম্ভব নয়।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রয়োজন একটি বিজ্ঞানভিত্তিক, বাস্তবসম্মত ও সমন্বিত কৌশল। এটি কেবল ফগিং বা কীটনাশক ছিটানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না; বরং এডিস মশার প্রজননচক্র ধ্বংস করাই হতে হবে মূল লক্ষ্য।

এ জন্য প্রথমেই যেটি জরুরি তা হলো, মশার প্রজননস্থল শনাক্ত করে তা ধ্বংস করা। বাড়ির ছাদ, বেজমেন্ট, বারান্দা, আঙিনা, বাথরুম, রান্নাঘর কিংবা আশপাশে যেখানে পানি জমে থাকতে পারে, সেসব স্থান নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বাড়ির ছাদ বা আঙিনায় রাখা ফুলের টব, বালতি, কৌটা, পানির ড্রাম কিংবা পরিত্যক্ত পাত্রে বৃষ্টির পানি জমা হতে না দেওয়ার বিষয়ে নাগরিকদের দায়িত্বশীল হতে হবে। একই সঙ্গে খোলা জায়গায়, রাস্তার পাশে, নির্মাণাধীন ভবন ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চত্বরে যেন কোথাও পানি জমে না থাকে, তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

ডেঙ্গুর হটস্পটগুলো চিহ্নিত করে সেখানে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। যেসব বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে, সেই বাড়িকে কেন্দ্র করে অন্তত ২০০ মিটারের মধ্যে ফগিং, লার্ভিসাইড ছিটানো এবং লার্ভা সার্ভে চালানো আবশ্যক। কারণ, আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশে উড়ন্ত এডিস মশা বেঁচে থাকলে এরা সহজেই অন্যদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাতে পারে। সে ক্ষেত্রে শুধু আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিলেই চলবে না, তাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকাকেই মশামুক্ত রাখতে হবে।

এডিস মশা নির্মূলে রাসায়নিকের অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তাই পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ লার্ভিসাইড ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ড, মহল্লা বা ইউনিয়নে নিয়মিত লার্ভা পর্যবেক্ষণ, তথ্য বিশ্লেষণ ও ফলাফলভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় মশার ঘনত্ব, আবহাওয়া ও রোগীর তথ্য সমন্বিতভাবে বিশ্লেষণ করে আগাম পূর্বাভাস ও প্রস্তুতি গ্রহণ করাও একটি সময়োপযোগী কৌশল হতে পারে। প্রয়োজনে বাংলাদেশের স্বনামধন্য গবেষকদের এ কাজে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে কেবল সরকারের একক প্রচেষ্টায় সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। এ সমস্যার কার্যকর সমাধানে জনগণের সক্রিয় ও সচেতন অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। প্রত্যেক নাগরিককে নিজ নিজ পরিবার, পাড়া-মহল্লা এবং কর্মস্থলে মশার প্রজননস্থল শনাক্ত ও ধ্বংসে উদ্যোগী হতে হবে।

স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গুবিষয়ক সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন। পাশাপাশি, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, কীটতত্ত্ববিদ ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয় আরও জোরদার করতে হবে। কারণ, ডেঙ্গু কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নয়, এটি একটি জাতীয় সংকট, যার সমাধান একমাত্র সম্মিলিত ও সমন্বিত উদ্যোগের মধ্য দিয়েই সম্ভব।

অধ্যাপক কবিরুল বাশার কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ই–মেইল: [email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ