বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম নগর শাখার সদস্যসচিবের পদ স্থগিত
Published: 5th, July 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম নগর শাখার সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিনের পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। স্থায়ীভাবে কেন বহিষ্কার করা হবে না, এর ব্যাখ্যা দিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে নিজাম উদ্দিনকে। তিন দিনের মধ্যে এর জবাব দিতে হবে তাঁকে।
চট্টগ্রামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ ওঠার পর নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, ‘আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, আপনি সংগঠনের নীতিমালা ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী কিছু কার্যকলাপে জড়িত হয়েছেন। একজন দায়িত্বশীল পদধারী সদস্যসচিব হিসেবে এই ধরনের কর্মকাণ্ড সংগঠনের ভাবমূর্তি ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং কোনোভাবেই তা গ্রহণযোগ্য নয়। এই প্রেক্ষাপটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাকে (নিজাম উদ্দিন) সংগঠনের সদস্যসচিব পদ থেকে সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলো।’
আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ দর্শানোর সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলে সংগঠন প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকবে বলে নোটিশে জানানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাশিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইমামের নির্দেশনা এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘চিঠি পেয়েছি। আমি তিন দিনের ভেতর আমার জবাব কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেব।’
এর আগে চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন এক নারী। চিঠিতে ওই নারী উল্লেখ করেন, দুই কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে তাঁর স্বামীকে মিথ্যা মামলায় পুলিশে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম নগরের সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন।
আজ শনিবার নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ বরাবর চিঠি দেন রিয়াজুল জান্নাত নামের ওই নারী। তিনি জামায়াতে ইসলামীর বাগমনিরাম দক্ষিণ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের সেক্রেটারি নওশেদ জামালের স্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার নওশেদ জামালকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। পুলিশ বলছে, নওশেদ জাতীয় শ্রমিক লীগ মেঘনা পেট্রোলিয়াম এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র সদস যসচ ব স গঠন র
এছাড়াও পড়ুন:
রাঙামাটির মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬৫০ শিক্ষকের পদ শূন্য, কারণ কী
রাঙামাটি সদর উপজেলার মাচ্ছ্যাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ রয়েছে ১২টি। তবে এর বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৭ জন। বাকি ৫টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে আছে। এতে বিদ্যালয়টিতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। মাচ্ছ্যাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ২৬৫ জন। ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিদ্যালয়টি থেকে পাস করেছে মাত্র ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী।
কেবল এই বিদ্যালয় নয়, রাঙামাটিতে সরকারি ও এমপিওভুক্ত প্রায় সব কটি বিদ্যালয়েই রয়েছে এমন শিক্ষকসংকট, যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটিতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১। এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১০৬টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ প্রায় ১ হাজার ৭০০। তবে এর মধ্যে ৬৫৭ পদে শিক্ষক নেই।
শিক্ষকসংকটের কারণে একজন শিক্ষককে ৪ থেকে ৫টি করে ক্লাস নিতে হয়। অনেক সময় পূর্বনির্ধারিত ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না।মো. তাজুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ শিক্ষক, রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়।মাচ্ছ্যাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবাস বসু চাকমা বলেন, ‘শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো ক্লাস নেওয়া যায় না। শিক্ষকসংকট নিরসনের জন্য আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে আসছি।’
জেলা সদরের রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. তাজুল ইসলাম জানান, তাঁদের বিদ্যালয়ে ৫৩ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত মাত্র ২৯ জন, ২৪টি পদ খালি রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ রয়েছে ১০টি, তবে মাত্র ২ জন কর্মরত। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ২টি পদ খালি পড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকসংকটের কারণে একজন শিক্ষককে ৪ থেকে ৫টি করে ক্লাস নিতে হয়। অনেক সময় পূর্বনির্ধারিত ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না।’
এসএসসি পরীক্ষায় রাঙামাটিতে ২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৭১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তবে ২০২৫ সালে পাসের হার ৫৫ দশমিক ৯৮ শতাংশে নেমে আসে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শূন্য ৬৫৭টি পদের মধ্যে ৫৫৪টি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বাকি শূন্য পদগুলো ১১টি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে।
শিক্ষকসংকট নিরসন ও শিক্ষার্থীদের আবাসনসংকট দূর করতে জেলা প্রশাসক সম্মেলনকে সামনে রেখে বেশ কিছু প্রস্তাব ও সুপারিশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর এসব প্রস্তাব পাঠানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে রাঙামাটি জেলার লংগদু, জুরাছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়গুলোয় ৫৩ জন সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা; বিভিন্ন উপজেলায় বিদ্যালয়গুলোয় শূন্য পদে জনবল পদায়ন ও শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা; বিদ্যালয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা।সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জুরাছড়ি ভুবনজয় সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ২০টি, রাঙামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ১৯টি, রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ২৪টি, রাজস্থলী তাইতংপাড়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ৮টি, কাউখালী পোড়াপাড়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ১টি, কাপ্তাই নাড়ানগিরি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ২০টি, নানিয়ারচর সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে ২টি, বাঘাইছড়ি কাচালং সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ২টি, বরকল সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে ১টি, লংগদু সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ৪টি, বিলাইছড়ি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ২টি পদ শূন্য রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হয়।
এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ের মধ্যে লংগদুতে ৯৭টি, কাউখালীতে ৮৬টি, বরকলে ৫৩টি, জুরাছড়িতে ১৩টি, বিলাইছড়িতে ৪টি, নানিয়ারচরে ৩১টি, কাপ্তাইয়ে ৭৮টি, বাঘাইছড়িতে ৬৯টি, রাজস্থলীতে ২৩টি, রাঙামাটি সদরে ১০০টি শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনআরটিসিএ) মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হয়।
রাঙামাটি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়। সম্প্রতি তোলা