বৈষম্যবিরোধী নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ, পদ স্থগিত
Published: 6th, July 2025 GMT
চট্টগ্রামে চাঁদা না পেয়ে ‘মব’ তৈরি করে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের শ্রমিক নেতা নওশেদ জামালকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈছাআ) মহানগর কমিটির সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে সংগঠনের ভেতরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হওয়ায় তার পদ স্থগিত করেছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি।
শনিবার (৫ জুলাই) রাতে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মঈনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর নোটিশে নিজাম উদ্দিনকে সংগঠনের নীতিমালা ও শৃঙ্খলা-পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
শনিবার চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ বরাবর রিয়াজুল জান্নাত নামে এক নারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। চাঁদা না দেয়ায় তার স্বামীকে মব সৃষ্টি করে পুলিশের কাছে তুলে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ওই নারী দাবি করেন, নিজাম উদ্দিন তার স্বামীর কাছে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছেন।
আরো পড়ুন:
‘শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তীর আঁকা পোস্টারে ফুটে উঠবে জুলাইয়ের অনিবার্যতা’
পুরনো সিস্টেম ও দখলদারিত্ব ফিরে আসার চেষ্টা চলছে: নাহিদ
নগরীর বাগমনিরাম দক্ষিণ এলাকার বাসিন্দা রিয়াজুল জান্নাত অভিযোগে বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয়ে নিজাম উদ্দিন আমার স্বামীর কাছ থেকে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেয়ায় তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়।”
গত বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) কোতোয়ালি থানা পুলিশ রিয়াজুল জান্নাতের স্বামী নওশেদ জামালকে গ্রেপ্তার করে।’’ তার স্বামী জামায়াত নেতা বলেও দাবি করেন রিয়াজুল জান্নাত।
এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রশিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনামের নির্দেশে নিজাম উদ্দিনের পদ স্থগিত করে এবং তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।
নোটিশে বলা হয়, “একজন দায়িত্বশীল সদস্য সচিব হিসেবে আপনার কর্মকাণ্ড সংগঠনের ভাবমূর্তি ও শৃঙ্খলার পরিপন্থি। কেন আপনাকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, সেই বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জমা দিতে হবে।”
এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘‘৫ আগস্টের আগে নওশেদ জামাল আওয়ামী লীগের শ্রমিক নেতা ছিলেন। তার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। প্রথমে ওই নারী ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির কথা বলেছিলেন। এখন দুই কোটি টাকা বলছেন। সিএমপি কমিশনারকে বলেছি, অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করতে। আমার বিরুদ্ধে এক পারসেন্ট সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেবেন। আমি স্বেচ্ছায় কারাগারে যাব। সত্যতা না পেলে ওই নারীর বিরুদ্ধে আমি মানহানিসহ দুটি মামলা দায়ের করব।’’
সংগঠনের দেয়া নোটিশ প্রসঙ্গে তিনি জানান, যথাসময়ে ব্যাখ্যা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠাবেন।
ঢাকা/রেজাউল/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণঅভ য ত থ ন স গঠন র কম ট র
এছাড়াও পড়ুন:
রাঙামাটির মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬৫০ শিক্ষকের পদ শূন্য, কারণ কী
রাঙামাটি সদর উপজেলার মাচ্ছ্যাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ রয়েছে ১২টি। তবে এর বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৭ জন। বাকি ৫টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে আছে। এতে বিদ্যালয়টিতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। মাচ্ছ্যাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ২৬৫ জন। ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিদ্যালয়টি থেকে পাস করেছে মাত্র ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী।
কেবল এই বিদ্যালয় নয়, রাঙামাটিতে সরকারি ও এমপিওভুক্ত প্রায় সব কটি বিদ্যালয়েই রয়েছে এমন শিক্ষকসংকট, যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটিতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১। এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১০৬টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ প্রায় ১ হাজার ৭০০। তবে এর মধ্যে ৬৫৭ পদে শিক্ষক নেই।
শিক্ষকসংকটের কারণে একজন শিক্ষককে ৪ থেকে ৫টি করে ক্লাস নিতে হয়। অনেক সময় পূর্বনির্ধারিত ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না।মো. তাজুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ শিক্ষক, রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়।মাচ্ছ্যাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবাস বসু চাকমা বলেন, ‘শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো ক্লাস নেওয়া যায় না। শিক্ষকসংকট নিরসনের জন্য আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে আসছি।’
জেলা সদরের রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. তাজুল ইসলাম জানান, তাঁদের বিদ্যালয়ে ৫৩ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত মাত্র ২৯ জন, ২৪টি পদ খালি রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ রয়েছে ১০টি, তবে মাত্র ২ জন কর্মরত। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ২টি পদ খালি পড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকসংকটের কারণে একজন শিক্ষককে ৪ থেকে ৫টি করে ক্লাস নিতে হয়। অনেক সময় পূর্বনির্ধারিত ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না।’
এসএসসি পরীক্ষায় রাঙামাটিতে ২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৭১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তবে ২০২৫ সালে পাসের হার ৫৫ দশমিক ৯৮ শতাংশে নেমে আসে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শূন্য ৬৫৭টি পদের মধ্যে ৫৫৪টি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বাকি শূন্য পদগুলো ১১টি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে।
শিক্ষকসংকট নিরসন ও শিক্ষার্থীদের আবাসনসংকট দূর করতে জেলা প্রশাসক সম্মেলনকে সামনে রেখে বেশ কিছু প্রস্তাব ও সুপারিশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর এসব প্রস্তাব পাঠানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে রাঙামাটি জেলার লংগদু, জুরাছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়গুলোয় ৫৩ জন সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা; বিভিন্ন উপজেলায় বিদ্যালয়গুলোয় শূন্য পদে জনবল পদায়ন ও শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা; বিদ্যালয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা।সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জুরাছড়ি ভুবনজয় সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ২০টি, রাঙামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ১৯টি, রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ২৪টি, রাজস্থলী তাইতংপাড়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ৮টি, কাউখালী পোড়াপাড়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ১টি, কাপ্তাই নাড়ানগিরি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ২০টি, নানিয়ারচর সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে ২টি, বাঘাইছড়ি কাচালং সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ২টি, বরকল সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে ১টি, লংগদু সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ৪টি, বিলাইছড়ি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ২টি পদ শূন্য রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হয়।
এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ের মধ্যে লংগদুতে ৯৭টি, কাউখালীতে ৮৬টি, বরকলে ৫৩টি, জুরাছড়িতে ১৩টি, বিলাইছড়িতে ৪টি, নানিয়ারচরে ৩১টি, কাপ্তাইয়ে ৭৮টি, বাঘাইছড়িতে ৬৯টি, রাজস্থলীতে ২৩টি, রাঙামাটি সদরে ১০০টি শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনআরটিসিএ) মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হয়।
রাঙামাটি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়। সম্প্রতি তোলা