মধ্যরাতের সংবর্ধনায় যা বললেন বাংলাদেশের কোচ
Published: 7th, July 2025 GMT
প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপে জায়গা করে নেওয়ার পর দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। ইতিহাস গড়া এই মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে রোববার দিবাগত রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল অ্যাম্ফিথিয়েটারে সংবর্ধনার আয়োজন করে বাফুফে।
দলটি রাত ২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে নারী ফুটবল দলকে সরাসরি হাতিরঝিলে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ৩টা ১৫ মিনিটে তারা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে তাদের ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানান বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা।
সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দলের কোচ পিটার বাটলারও। আবেগঘন কণ্ঠে খেলোয়াড়দের প্রশংসায় ভাসান ইংলিশ এই কোচ। যদিও নিজের বক্তব্য দেন খুবই সংক্ষেপে। কারণ হিসেবে বলেন, ‘সকাল হতে বেশি দেরি নেই, আমি এত রাতে কথা বলতে অভ্যস্ত নই।’
বাটলার বলেন, ‘আমি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিব। বাফুফে সভাপতি, কিরণ আপা, কমিটির সবাই, খেলোয়াড় ও টিম স্টাফদের আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনাদের ছাড়া আমরা আজ এখানে থাকতে পারতাম না। বিশেষ করে সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞ, যারা এত রাতে এসেছেন।’
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাটলার আরও বলেন, ‘গত ৯ থেকে ১২ সপ্তাহ অনেক কঠিন সময় পার করেছি। গত বছর থেকে এই যাত্রা শুরু হয়েছিল। ওঠানামার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এই মেয়েরা সেই কঠিন সময় সামলে দিয়েছে। তাদের জন্যই আমরা আজ এখানে।’
উল্লেখ্য, বাছাইপর্বে বাংলাদেশ মিয়ানমার ও বাহরাইনকে হারিয়ে মূল পর্ব নিশ্চিত করে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেয় তুর্কমেনিস্তানকে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কোন ভয়ে দলে দলে ইরান ছেড়ে যাচ্ছেন আফগান শরণার্থীরা
ইরানে আশ্রয় নেওয়া কয়েক লাখ আফগান শরণার্থী ও অভিবাসীকে দেশ ছাড়তে সময় বেঁধে দিয়েছিল তেহরান সরকার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইরান ছাড়তে ব্যর্থ হলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছিল। তেহরানের বেঁধে দেওয়া সেই সময় গতকাল রোববার শেষ হয়েছে।
গত মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের পর ইরানে জনমনে নিরাপত্তা নিয়ে দারুণ উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আর এমন এক অনিশ্চয়তার মধ্যেই আফগানদের ইরান ছেড়ে চলে যাওয়ার সরকারের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হলো।
২০২৩ সালে ইরান সরকার সে দেশে ‘অবৈধভাবে’ বসবাসরত বিদেশিদের দেশ থেকে বের করে দিতে অভিযান শুরু করে। এ বছরের মার্চে ইরানি সরকার নির্দেশ দেয়, আফগানিস্তানের যেসব নাগরিকের ইরানে থাকার বৈধতা নেই, তাঁরা যেন ৬ জুলাইয়ের মধ্যে স্বেচ্ছায় ইরান ছাড়েন, নইলে তাঁদের বিতাড়িত করা হবে।
সরকারের ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত সাত লাখের বেশি আফগান ইরান ছেড়েছেন। আরও লাখো মানুষ বিতাড়নের মুখে রয়েছেন। শুধু জুনেই ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি আফগান ইরান ছেড়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।
গত মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের পর ইরানে জনমনে নিরাপত্তা নিয়ে দারুণ উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আর এমন এক অনিশ্চয়তার মধ্যেই আফগানদের ইরান ছেড়ে চলে যাওয়ার সরকারের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হলো।তেহরানের একটি রেস্তোরাঁর মালিক বাতুল আকবরি আল–জাজিরাকে বলেন, তেহরানে বসবাসরত আফগানরা ‘আফগানবিরোধী মনোভাবের’ কারণে কষ্ট পাচ্ছেন। লোকজনকে এমন একটি বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যেটিকে তাঁরা চিরকাল নিজের বলে জেনেছেন। এটা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।
বাতুলের মা–বাবা আফগানিস্তান থেকে এসেছেন, কিন্তু তাঁর জন্ম ইরানে। এ রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী বলেন, ‘ইরানে জন্ম নেওয়ার ফলে আমাদের মনে হয়, আমাদের দুটি দেশ। আমাদের মা–বাবা আফগানিস্তান থেকে এসেছেন, কিন্তু আমরা এ দেশকেই আমাদের বাড়ি বলে জেনে এসেছি।’
মোহাম্মদ নাসিম মেজাহেরি একজন শিক্ষার্থী। তাঁর পরিবারকেও ইরান ছাড়তে হয়েছে। তিনি বলেন, বিতাড়নের এই প্রক্রিয়া বহু পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের সময় থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজারের বেশি আফগান ইরান ছাড়ছেন। যেখানে আগের হার ছিল দৈনিক গড়ে দুই হাজার।
লোকজনকে এমন একটি বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যেটিকে তাঁরা চিরকাল নিজের বলে জেনেছেন। এটা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।..বাতুল আকবরি, তেহরানের একটি রেস্তোরাঁর মালিকইরান থেকে এত ব্যাপক হারে আফগানদের দেশে ফেরত যাওয়া নিয়ে সতর্ক করেছে নানা মানবাধিকার সংগঠন। তাদের আশঙ্কা, এতে বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ আফগানিস্তান আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে।
ইরানে প্রায় ৪০ লাখ আফগান অভিবাসী ও শরণার্থী বসবাস করেন, যাঁদের অনেকেই দশকের পর দশক ধরে সেখানে বসবাস করে আসছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের সময় থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি আফগান ইরান ছাড়ছেন। যেখানে আগের হার ছিল দৈনিক গড়ে দুই হাজার।আশ্রয় নেওয়া আফগান শরণার্থীদের বিতাড়িত করা নিয়ে ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি গত মঙ্গলবার বলেন, ‘আমরা সব সময় ভালো আতিথেয়তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সবকিছুর আগে জাতীয় নিরাপত্তার। তাই স্বাভাবিকভাবেই যাঁরা অবৈধভাবে বসবাস করছেন, তাঁদের ফিরে যেতে হবে।’
আফগানিস্তানে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি আরাফাত জামাল ইরান-আফগান সীমান্ত পারাপারের একটি দৃশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তাঁরা বাসে করে আসছেন। কখনো কখনো একসঙ্গে পাঁচটি বাস আসছে, সেগুলোতে পরিবারসহ অনেক মানুষ থাকেন। বাস থেকে নামার পর তাঁরা সম্পূর্ণ হতবুদ্ধ, দিশাহারা, ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকেন।
আমরা সব সময় ভালো আতিথেয়তা প্রদানের চেষ্টা করেছি, কিন্তু সবকিছুর আগে জাতীয় নিরাপত্তার। তাই স্বাভাবিকভাবেই, যাঁরা অবৈধভাবে বসবাস করছেন, তাঁদের ফিরে যেতে হবে।....ফাতেমেহ মোহাজেরানি, ইরান সরকারের মুখপাত্রইসরায়েলের সঙ্গে সর্বশেষ সংঘাতের কারণে এই পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়েছে, কিন্তু এর শুরু হয়েছিল আগেই।
আরাফাত জামাল বলেন, ‘যুদ্ধের ফলে এই পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়েছে। তবে বলতেই হবে, এটা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা প্রবণতার একটি অংশ। আমরা অনেক দিন ধরে ইরান থেকে আফগান নাগরিকদের ফিরে আসতে দেখে আসছি। এর কিছু অংশ স্বেচ্ছায় ফিরে এলেও বড় একটি অংশকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
তেহরান থেকে আল–জাজিরার প্রতিবেদক রাসুল সেরদার বলেন, ইরানে অর্থনৈতিক সংকট, পণ্যের ঘাটতি ও সামাজিক সমস্যার জন্য আফগানদের ওপর দায় চাপানোর প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।আরও পড়ুনগুপ্তচর সন্দেহে বিপুলসংখ্যক আফগানকে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে ইরান০৩ জুলাই ২০২৫তেহরান থেকে আল–জাজিরার প্রতিবেদক রাসুল সেরদার বলেন, ইরানে অর্থনৈতিক সংকট, পণ্যের ঘাটতি ও সামাজিক সমস্যার জন্য আফগানদের ওপর দায় চাপানোর প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।
সেরদার বলেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাতের পর রাজনৈতিক বক্তব্য এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চালানো প্রচারের কারণে এসব অভিযোগ আরও বেড়েছে। ওই সব প্রচারে দাবি করা হচ্ছে, ইসরায়েল আফগান নাগরিকদের গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।