প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপে জায়গা করে নেওয়ার পর দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। ইতিহাস গড়া এই মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে রোববার দিবাগত রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল অ্যাম্ফিথিয়েটারে সংবর্ধনার আয়োজন করে বাফুফে।

দলটি রাত ২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে নারী ফুটবল দলকে সরাসরি হাতিরঝিলে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ৩টা ১৫ মিনিটে তারা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে তাদের ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানান বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা।

সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দলের কোচ পিটার বাটলারও। আবেগঘন কণ্ঠে খেলোয়াড়দের প্রশংসায় ভাসান ইংলিশ এই কোচ। যদিও নিজের বক্তব্য দেন খুবই সংক্ষেপে। কারণ হিসেবে বলেন, ‘সকাল হতে বেশি দেরি নেই, আমি এত রাতে কথা বলতে অভ্যস্ত নই।’

বাটলার বলেন, ‘আমি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিব। বাফুফে সভাপতি, কিরণ আপা, কমিটির সবাই, খেলোয়াড় ও টিম স্টাফদের আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনাদের ছাড়া আমরা আজ এখানে থাকতে পারতাম না। বিশেষ করে সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞ, যারা এত রাতে এসেছেন।’

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাটলার আরও বলেন, ‘গত ৯ থেকে ১২ সপ্তাহ অনেক কঠিন সময় পার করেছি। গত বছর থেকে এই যাত্রা শুরু হয়েছিল। ওঠানামার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এই মেয়েরা সেই কঠিন সময় সামলে দিয়েছে। তাদের জন্যই আমরা আজ এখানে।’

উল্লেখ্য, বাছাইপর্বে বাংলাদেশ মিয়ানমার ও বাহরাইনকে হারিয়ে মূল পর্ব নিশ্চিত করে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেয় তুর্কমেনিস্তানকে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী

আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।

রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।

মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ