রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শতভাগ আবাসিকতা নিশ্চিতসহ ৫ দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের
Published: 9th, July 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শতভাগ আবাসিকতা নিশ্চিতকরণ, হল ডাইনিংয়ে ভর্তুকি চালু, রাকসু নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট’। আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি উত্থাপন করেন তাঁরা । একই সঙ্গে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সাত দিনব্যাপী গণস্বাক্ষর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর একটি শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যাশা থাকলেও এক বছর পার হতে চললেও শিক্ষার্থীদের মৌলিক সমস্যাগুলোর কোনো সমাধান হয়নি। শিক্ষার্থীরা উচ্চমূল্যে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে এবং মেস বা গণরুমে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য হচ্ছে, যা তাদের শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করছে।’
ফুয়াদ রাতুল আরও বলেন, ‘প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। এই ৫ দফা দাবি আদায়যোগ্য এবং শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই দাবিগুলোর পক্ষে জনমত গঠন এবং প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করতেই ৭ দিনব্যাপী গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্রসংগঠনকেও এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।’
পাঁচ দফা দাবির এক নম্বরে আছে নতুন হল নির্মাণ করে শতভাগ আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সিট বণ্টনের অবৈধ প্রক্রিয়া বাতিল করে অধ্যাদেশ অনুযায়ী বয়োজ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে স্বচ্ছতার সঙ্গে সিট প্রদান করতে হবে। প্রভোস্টের স্বাক্ষরের জন্য ধার্যকৃত ৫০ টাকার বিবিধ উন্নয়ন ফি বাতিল করতে হবে। ২ নম্বর দাবি হলো– বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে হল ডাইনিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে হবে। বর্তমান ক্যাটারিং ব্যবস্থা বন্ধ করে ভর্তুকি দিয়ে সব হলে পুষ্টিকর ও সুলভ মূল্যের খাবার চালু করতে হবে। তিন নম্বর দাবি– বধ্যভূমি থেকে হবিবুর রহমান হল পর্যন্ত এবং স্টেশন বাজার থেকে বিনোদপুর অভিমুখী দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবিলম্বে চলাচলের উপযোগী করে সংস্কার করতে হবে।
৪ নম্বর দাবি– বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ২৪ ঘণ্টা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান নিয়োগ, অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং উন্নতমানের ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আর ৫ নম্বর দাবি হলো ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে অবিলম্বে শিক্ষার্থী সংসদ (রাকসু) নির্বাচন দিতে হবে। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে সংঘটিত আগের বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনা, যেমন সাতটি হলে কোরআন পোড়ানো, শিক্ষকের বাসায় ককটেল হামলা এবং জোটের কর্মসূচিতে হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকার, ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) কোষাধ্যক্ষ কায়সার আহমেদ, বিপ্লবী ছাত্রযুব আন্দোলনের সংগঠক তারেক আশরাফ, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সদস্য আল আশরাফ রাফি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত করত
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই অভ্যুত্থান দমনের কৌশল ছিল ‘হেডশট’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিরাপত্তা বাহিনী ও রাষ্ট্র-সমর্থিত গোষ্ঠী দ্বারা বিক্ষোভকারীদের মাথা লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে গুলি (হেডশট) করা হয়েছিল। এই কৌশলের উদ্দেশ্য ছিল জনগণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে আন্দোলন দমন করা।
মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা প্ল্যাটফর্ম সপ্রানের (সকল প্রাণের নিরাপত্তা) এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে। বুধবার বিকেলে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনে ‘দ্য অ্যানাটমি অব হেডশট: স্টেট-স্পনসরড ভায়োলেন্স অ্যান্ড দ্য লিথাল সাপ্রেশন অব প্রোটেস্টারস ডিউরিং দ্য জুলাই আপরাইজিং’ শীর্ষক আলোচনা সভায় গবেষণা প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন সপ্রানের গবেষক জেবা সাজিদা সারাফ।
‘দে এইমড অ্যাট আওয়ার হেডস: অ্যানাটমি অব টার্গেটেড হেডশটস অ্যান্ড স্টেট-স্পনসরড ভায়োলেন্স ইন বাংলাদেশ’স ২০২৪ মাস আপরাইজিং’ শীর্ষক ওই প্রবন্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত ৫৪টি হেডশটের ঘটনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এসব ঘটনার ৩১টিই পুলিশের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে র্যাবের দ্বারা তিনটি, সেনাবাহিনীর দ্বারা একটি এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মীর দ্বারা আটটি হেডশটের ঘটনা ঘটেছে। বাকি ১১টি হেডশটের সঙ্গে কারা জড়িত, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে সেগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা আওয়ামী লীগের স্থানীয় সশস্ত্র কর্মীদের দ্বারা হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়।
এই হত্যাকাণ্ডগুলোর ৫১টিই ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে দুটি এবং রাজশাহী বিভাগে একটি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কথা গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশই সংঘটিত হয়েছে ১৯ জুলাই ও ৫ আগস্ট। প্রাণঘাতী অস্ত্রের পাশাপাশি ছররা গুলির মাধ্যমেও হেডশটের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়।
প্রবন্ধে বলা হয়েছে, মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়া ৫৪ জনের মধ্যে ১৬ জন ছিলেন পথচারী বা কৌতূহলী দর্শক। তাঁদের খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাগুলো ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর একটি পরিকল্পিত কৌশলের অংশ, যার উদ্দেশ্য ছিল জনগণের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করা।
প্রবন্ধে সপ্রানের পক্ষ থেকে মানবাধিকার কমিশনের ক্ষমতা ও স্বাধীনতা বাড়ানো, ঔপনিবেশিক পুলিশ আইন ও নিয়মাবলি বাতিল ও সংস্কার করা, প্রতিটি জেলায় ‘নাগরিক-পুলিশ জোট’ গঠনসহ ১১টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
পুলিশ নিয়ে ভাবতে হবে
সভায় বিগত সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনার চিত্র তুলে ধরেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে আক্ষরিক অর্থে কোনো পুলিশ ছিল না। কমিউনিটিগুলো সে সময় নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। ফলে পুলিশকে কোথায়, কখন, কোন ভূমিকায় রাখা দরকার, তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম বলেন, রাষ্ট্র মাথা লক্ষ্য করে গুলি করার মাধ্যমে শুধু ব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত করে না, বরং এর মাধ্যমে রাষ্ট্র ব্যক্তির চিন্তাচেতনা ও আদর্শকে খুন করতে চায়।
গত বছরের জুলাইয়ে সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সাদমান রিজওয়ান। তিনি বলেন, রাষ্ট্র তার জনগণকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে।
সভার শুরুতে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের একটি ভিডিও দেখানো হয়। আলোচনা সভায় জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মো. আতিকুর রহমানের ভাই মো. সোলাইমান তপু ও শহীদ সাজিদুর রহমানের ভাই সিরাজুল ইসলাম জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণা করেন।
সভায় আরও বক্তব্য দেন সপ্রানের গবেষণা পরিচালক মো. জারিফ রহমান, ডেইলি স্টারের সাংবাদিক জিনা তাসরিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সপ্রানের গবেষক নুসরাত জাহান।