ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকা শপিং ডটকমের কাছে পাওনা ৪০০ কোটি টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পণ্য সরবরাহকারী ভুক্তভোগী বিক্রেতা ও গ্রাহকেরা। একই সঙ্গে এ বিষয়ে বর্তমান সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলনে এ দাবি জানানো হয়। ‘ধামাকা শপিং ডটকমের ভুক্তভোগী, প্রতারিত ব্যবসায়ী ও ভোক্তাগণ’ ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে শতাধিক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও গ্রাহক উপস্থিত ছিলেন।

ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জাহিদুল ইসলাম সংবাদ সম্মলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, ধামাকা শপিং ডটকম শুরুতে ২০০ কোটি টাকার মূলধন নিয়ে ব্যবসা করার ঘোষণা দেয়। তাদের মাইক্রো ট্রেডসহ  অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে বলে জানায়। এ কারণে বিশ্বাস করে তাদের পণ্য সরবরাহ করতে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হন। পণ্য নিয়ে তাঁরা চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতেন। ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত লেনদেন ঠিক ছিল। পরে আরও কয়েক মাস পণ্য সরবরাহ করলেও তারা আর কোনো টাকা দেয়নি।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আনুমানিক ৫০ জন উদ্যোক্তা ও ৩ হাজার ভোক্তা প্রতিষ্ঠানটির কাছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাওনা আছে। টাকা পরিশোধে বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ী ও ভুক্তভোগীদের শতাধিক চেক দিলেও তা ডিজঅনার হয়। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। প্রতারণার মামলা করেছি, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। আমরা সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

পাওনা টাকা না পেয়ে দুর্বিষহ দিন কাটানোর কথা জানিয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা না পেয়ে আমরা অসহায় অবস্থায় আছি। অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই বড় ব্যবসা বন্ধ করে ছোট আকারে কোনো রকম টিকে আছে। প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে হাজার হাজার তরুণ নিঃস্ব হয়ে গেছে। তরুণ থেকে বৃদ্ধ হয়ে গেছি, কিন্তু টাকা উদ্ধার করতে পারিনি। প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। একই সঙ্গে আমাদের পাওনা টাকা ফেরত পেতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করছি।’

জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, টাকা না পেয়ে ধামাকা শপিং ডটকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কয়েক শ মামলা হয়েছে। চার বছর ধরে এ মামলা চলছে। মামলা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ধামাকা শপিংয়ের মালিকদের বাংলাদেশে যে সম্পদ আছে, তা দিয়ে অনায়াসে তাঁরা ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে পারেন, কিন্তু তাঁরা সেটি করছেন না। এ কারণে সরকারকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।

জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, টাকা ফেরত দিতে না পেরে চেয়ারম্যান মো.

মুজতবা আলী দাবি করছেন, তিনি ধামাকা শপিং ডটকমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। অথচ তিনি বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যান পরিচয়ে বৈঠক করেছেন। এ ছাড়া সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে প্রধান অতিথি করে ই-কমার্স নিয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠকে তিনি ধামাকা শপিং ডটকমের চেয়ারম্যান পরিচয়ে সভাপতিত্ব করেন। অথচ এখন তিনি ওই পরিচয় অস্বীকার করছেন।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উচ্চ আদালত আমাদের ন্যায্য পাওনা ফেরত পেতে ধামাকা শপিং ডটকমের চেয়ারম্যান মো. মুজতবা আলীর বিষয়ে উপযুক্ত রায় গ্রহণ করবেন, সেই আবেদন জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের পাওনা ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম ডি জসীম উদ্দিন চিশতীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

পাইকারি বিক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে আমাদের অনেকগুলো চেক দেওয়া হয়, কিন্তু চেকগুলো কাজ করেনি। পরে ধাপে ধাপে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও পাঁচ বছর ধরে তা পাইনি। আমরা অসহায় হয়ে গেছি।’

গ্রাহক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ধামাকা ই–কমার্সে আমি একটা বাইক অর্ডার দিয়েছিলাম। বাইক সরবরাহ করতে পারেনি। বিনিময়ে তারা একটা চেক দেয়। ওই চেকে টাকা তুলতে পারিনি। তারপর অনেক ঘোরাঘুরি করেছি। টাকা ফেরত পাইনি। হঠাৎ একদিন দেখি, তাদের অফিস বন্ধ করে দিয়েছে।’

আরও পড়ুনধামাকা শপিংয়ের চেয়ারম্যানকে ভাটারা থানায় সোপর্দ০৫ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনধামাকা শপিংয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের ৬২ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক করেছে সিআইডি২৬ জুন ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ হ দ ল ইসল ম ব যবস য় ডটকম র গ র হক আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আবাসন সংকটসহ ৫ দাবি রাবি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের খাদ্য ও আবাসনের সংকট নিরসনে পাঁচ দফা দাবি করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।

বুধবার (৯ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে বেলা ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি উত্থাপন করেন তারা।

গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের অভিযোগ, প্রশাসন হল ডাইনিং বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের খাদ্য নিরাপত্তার দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। এতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী মেসের উচ্চমূল্যের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছে। পাশাপাশি আবাসন সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ গণরুম বা বাইরের মেসে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে আবাসনের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা।

আরো পড়ুন:

নোয়াখালীর ৪ উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

ঢাবি ক্লাবে তালা মারার হুঁশিয়ারি শিক্ষার্থীদের

তাদের দাবি, গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষাবান্ধব প্রশাসনের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বরং পূর্বের সংকটগুলো এখনো বহাল রয়েছে।

দাবি বাস্তবায়নে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট আগামী সাত দিনব্যাপী গণস্বাক্ষর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এছাড়াও তারা পাঁচ দফা প্রধান দাবি উত্থাপান করেছে।

তাদের দাবিগুলো হলো- নতুন হল নির্মাণ ও শতভাগ আবাসিকতা নিশ্চিত করা; বৈধ সিট বণ্টন চালু ও গণরুম ব্যবস্থা কার্যকর করা; ডাইনিংয়ে ভর্তুকি দিয়ে মানসম্মত খাবার সরবরাহ, ক্যাম্পাস ও আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাসমূহ সংস্কার; মেডিকেল সেন্টারে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা চালু, প্রয়োজনীয় জনবল ও ওষুধ সরবরাহ; গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করে রাকসু নির্বাচন আয়োজন ও বিভিন্ন হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, “শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি শতভাগ আবাসনসহ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। কিন্তু এ বিপ্লবী প্রশাসন ভর্তুকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার বদলে ডাইনিং বন্ধ করিয়ে শিক্ষার্থীদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব অস্বীকার করছে।”

তিনি আরো বলেন, “সম্প্রতি বেশকিছু সংগঠন শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া নিয়ে কাজ করলেও তাদের কাজে রাকসু নির্বাচনের জনসংযোগের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল কিনা তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সে প্রশ্ন উঠেছে। নিরাপদ খাদ্য ও শিক্ষার পরিবেশবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিত করতে উপরিউক্ত পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্য সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আবাসন সংকটসহ ৫ দাবি রাবি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের
  • নিজেদের তৈরি রোবট নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে নবম শ্রেণির তিন ছাত্র
  • মোদি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ভারত বন্‌ধ্‌ চলছে
  • ‘চোখের পলকে ঘরটি নদীতে ভেঙে পড়ল, এক কাপড়ে বের হয়েছি’
  • অস্ত্র ঠেকিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন এমপি শিমুলের বেয়াই
  • পিস্তল ঠেকিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন সাবেক এমপি শিমুলের বেয়াই
  • এশিয়ার দেশগুলোয় ট্রাম্পের শুল্কনীতির কী প্রভাব পড়বে
  • ১৩ লাখ টন আমদানি, ফলন ভালো, তবু বাড়ছে চালের দাম
  • যেসব এলাকায় আজ ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না