ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি গতকাল মঙ্গলবার জেদ্দায় সৌদি আরবের কার্যত নেতা (ডি ফ্যাক্টো) যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির দুই সপ্তাহের মাথায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।

আজ বুধবার ভোরে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে এই কথা জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বৈঠকে বলেন, তাঁরা আশা করেন, এই যুদ্ধবিরতি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখবে। তিনি কূটনৈতিক উপায়ে আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির পক্ষে রিয়াদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মাসে ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করায় রিয়াদকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আরাগচি। একই সঙ্গে তিনি সৌদি নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

গত মাসে ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলাকে ‘আগ্রাসন’ ও ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে মন্তব্য করেছিল সৌদি আরব। একই সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছিল দেশটি।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাকাই বলেন, আব্বাস আরাগচি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ ফয়সাল বিন ফারহান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী যুবরাজ খালেদ বিন সালমানের সঙ্গে ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’ করেছেন। আলোচনায় তাঁরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আঞ্চলিক উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেছেন।

ইসরায়েল গত ১৩ জুন ইরানের ওপর নজিরবিহীন বোমা হামলা শুরু করে। এতে সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা ছাড়াও আবাসিক এলাকাও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। হামলায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বেসামরিক মানুষ হতাহতের শিকার হন। এটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

তেহরানের তথ্যমতে, ইসরায়েলের হামলায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের বেশ কিছু উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীরাও রয়েছেন।

জবাবে ইরানও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিকে ইসরায়েলে হামলা চালায়। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ইরানের হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র গত এপ্রিল থেকে ইরানের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে আসছিল। কিন্তু ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ইরানে হামলা চালায়। এতে দেশটির কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা নিশানা করা হয়।

এর পর থেকে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার আলোচনা স্থগিত হয়ে আছে। তবে ২৪ জুন থেকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে নতুন করে পরমাণু আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরান ও সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই আঞ্চলিক সংঘাতে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে। এই দুই শক্তির মধ্যে বিরোধের প্রধান দুটি ক্ষেত্র সিরিয়া ও ইয়েমেন।

দুই দেশ ২০১৬ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় দেশ দুটি সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে।

তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা মোহাম্মদ বিন সালমানের একটি বিশেষ কূটনৈতিক সাফল্য। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি আঞ্চলিক কূটনীতিতে তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ ও সমঝোতামূলক অবস্থানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র পরর ষ ট র অবস থ ন য বর জ ক টন ত মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহী বোর্ডে মানবিকে ছেলেদের ভরাডুবি, জিপিএ-৫ পাওয়ায় মেয়েরা এগিয়ে

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় গতবারের চেয়ে পাসের হার কমেছে ২১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। সবচেয়ে ভরাডুবি হয়েছে মানবিক বিভাগের ছেলেদের। এবার বোর্ডে পাসের হার যেখানে ৫৯ দশমিক ৪০, সেখানে মানবিক বিভাগে ৪১ দশমিক ৫১ শতাংশ ছেলে পাস করেছেন।

পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুই ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছেন মেয়েরা। বোর্ডে এবার ৬৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ মেয়ে পাস করেছেন। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০ হাজার ১৩৭ জন শিক্ষার্থী, এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৫ হাজার ৬৮২ জন।

শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলছেন, বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা গত বছর বেশি বইবিমুখ ছিল। যে কারণে শুধু রাজশাহীতে নয়, সারা দেশের ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে। পাস ও জিপিএ-৫ পাওয়ার হার কমে গেছে।

২১ বছরে এইচএসসিতে সর্বনিম্ন পাস: শিক্ষায় ‘গলদ’ না অন্য কিছু

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৩ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ৭৭ হাজার ৭৪২ জন। গতবার পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ১৯৩ জন। পাস করেছিলেন ১ লাখ ১১ হাজার ৪৪৮ জন শিক্ষার্থী। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০ হাজার ১৩৭ জন শিক্ষার্থী। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৯০২ জন। এক বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও এবার বেড়েছে। এবার এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন ৩২ হাজার ৬৩৮ জন, যা গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ৩০৭ জন বেশি। এবার ১৭টি কলেজ থেকে কেউ পাস করেনি। গত বছর এমন কলেজের সংখ্যা ছিল ১।

মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর হক বলেন, মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের আইসিটি বিষয়টি বোঝা কঠিন। কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে তত কঠিন নয়। সাধারণভাবে ইংরেজিতে দুর্বলতা তো আছেই। এই দুটি কারণেই মানবিক বিভাগের ফলাফল খারাপ হতে পারে। একই কারণে ব্যবসায় শাখার পাসের হারও কম।

এইচএসসিতে গত বছরের চেয়ে পাসের হার কমেছে ১৯ শতাংশ

ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেশি পাওয়ার কারণ হিসেবে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কালাচাঁদ শীল মনে করেন, মেয়েরা ক্লাসে বেশি উপস্থিত থাকেন। মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে পড়াশোনায় বেশি মনোযোগী। এ কারণে ছেলেরা পরীক্ষার ফলাফলে পিছিয়ে পড়ছেন।

রাজশাহী সরকারি মডেল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতেখার মাহমুদ জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তাঁর কলেজের ৯৩ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী পাস করেছেন। তাঁর ধারণা, গ্রামের কলেজের শিক্ষার্থীদের কম পাসের হার বোর্ডে ছেলেদের পাসের হারের ওপর প্রভাব ফেলেছে। তাই গড় পাসের হার কমে গেছে।

গ্রামের কলেজে খোঁজ নিয়ে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। পুঠিয়া উপজেলার পঁচামাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের পাসের হার এবার ২৫ দশমিক ১৫। অধ্যক্ষ বিষ্ণুপদ সাহা বলেন, তাঁর জীবদ্দশায় এমন ফলাফল দেখেননি।

৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হারে এগিয়ে ঢাকা, পিছিয়ে কুমিল্লা

চারঘাটের ডাকরা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুর রউফ বলেন, গ্রামের শিক্ষার্থীরা যাঁরা এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন, তাঁদের প্রায় সবাই শহরের কলেজে চলে যান। দরিদ্র ও জিপিএ-৫ না পাওয়া শিক্ষার্থীরাই বেশি গ্রামের কলেজে ভর্তি থাকেন। এই শিক্ষার্থীদের নিয়ে এইচএসসিতে ভালো ফল করা চ্যালেঞ্জিং। তারপরও তাঁদের কলেজ থেকে ৫৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। তার মধ্যে বিজ্ঞান থেকে একজন ও মানবিক বিভাগ থেকে একজন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা বাইরে সময় কাটান বেশি। মেয়েরা তাঁদের চেয়ে বেশি সময় পড়ার টেবিলে থাকেন। যে কারণে মেয়েরা পরীক্ষায় ভালো করেছেন। আর ফলাফল বিপর্যয়ের যে ঘটনা, সেটা সারা দেশেই হয়েছে। বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা গত বছর বেশি বইবিমুখ ছিলেন। যে কারণে শুধু রাজশাহীতে নয়, সারা দেশের ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে। পাস ও জিপিএ-৫ পাওয়ার হার কমে গেছে।

সর্বোচ্চ পাসের হার কোন বোর্ডে, দেখুন ফলাফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ