এই মাসের শুরুতে টেক্সাসে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ফ্ল্যাশ ফ্লাড বা আকস্মিক বন্যা গোটা আমেরিকাকে নাড়া দিয়ে গেছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণে গুয়াদালুপ নদীর পানি হঠাৎ অনেক বেড়ে গিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষের ঘরবাড়ি, গাড়ি, সেই সঙ্গে নদীতীরে শিক্ষা ও অবসরে আসা ক্যাম্পগুলো। এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে শতাধিক, যার মধ্যে ২৮ জন শিশু। এখনও অনেকে নিখোঁজ। 

এই শোকাবহ ঘটনার পেছনে শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়; অঞ্চলটির প্রতি দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বিনিয়োগের অভাবও সমান দায়ী। ২০১৫ সালে পাশের উইম্বারলি শহরে প্রাণঘাতী বন্যার পর কার কাউন্টির কর্মকর্তারা আধুনিক বন্যা সতর্কীকরণ ব্যবস্থার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালে মাত্র ১০ লাখ ডলারের প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এমনকি ৫০ হাজার ডলারের সমীক্ষাও হয়নি ‘অতিরিক্ত ব্যয়বহুল’ বলে।

ফলে জুলাই মাসের এই ভয়াবহ বন্যার সময় সাইরেন বাজেনি। অনেকের কাছে সময়মতো বার্তা পৌঁছায়নি। আবার কেউ কেউ বার্তাগুলো গুরুত্বই দেননি। মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল ছিল; বিদ্যুৎ ছিল না; অনেকে ঘুমাচ্ছিলেন। কেউ জেগেছেন ফেসবুকে অন্যদের স্ট্যাটাস দেখে; কেউ ঘুম থেকে উঠেছেন পানির শব্দে। এভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশে মৃত্যুর মিছিল দেখা গেছে।

প্রশ্ন হলো, যেখানে প্রযুক্তি, বাজেট ও অবকাঠামো আছে, সেখানেও যখন এমন বিপর্যয় ঘটে, তখন কি কেবল উন্নয়নই সব কিছু? আমরা ভুলে যাচ্ছি মানুষের অভিজ্ঞতা, অভিযোজন ক্ষমতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতিক্রিয়ায় লোকজ জ্ঞানের কথা। উন্নত প্রযুক্তি, বাজেট ও অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও এ বিপর্যয় প্রমাণ করে– দুর্যোগ মোকাবিলায় শুধু যন্ত্র নয়; দরকার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা।

প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সত্ত্বেও আমেরিকার টেক্সাস বন্যায় বিপর্যস্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশের দুর্যোগ-অভিজ্ঞ জনশক্তির প্রাসঙ্গিকতা। এখানেই বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বৈশ্বিক পরিসরে মূল্যায়নের দাবি রাখে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন কিংবা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে লড়াই করে বড় হওয়া বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ কেবল দুর্যোগে টিকে থাকার কৌশলই জানে না; দ্রুত সাড়াও দিতে পারে। আশ্রয় তৈরি, উদ্ধারকাজ, খাবার সরবরাহ বা সতর্কবার্তা ছড়িয়ে দিতে আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা এখন এক অনন্য ‘মানবিক প্রতিরোধ’ কাঠামো, যা বহু উন্নত দেশে অনুপস্থিত।

এ বাস্তবতা আমাদের সামনে একটি নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে– দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাভিত্তিক দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি। বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, দাবানলের মতো দুর্যোগ বাড়ছে। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা– সবাই আজ বিপর্যয়ের মুখে। সবখানেই কমিউনিটিভিত্তিক প্রস্তুতির অভাব প্রকট। অথচ বাংলাদেশের মানুষ বহুদিন ধরে সীমিত সম্পদে সেই প্রস্তুতির কাজটি করে আসছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই অভিজ্ঞতা কি আমরা শুধু নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখব, নাকি একে ‘বৈশ্বিক দরজা’ হিসেবে প্রস্তুত করব?

আমাদের কর্মক্ষম তরুণ অনেকেই উপযুক্ত কর্মসংস্থান পাচ্ছেন না। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন বন্যাপ্রবণ অঞ্চল থেকে যে বাস্তব অভিজ্ঞতা তারা অর্জন করেন, তা আন্তর্জাতিকভাবে মূল্যবান সম্পদে পরিণত হতে পারে। রাষ্ট্র, বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যদি ‘দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা ইউনিট’ গড়ে তোলা যায়, তাহলে বিশ্ববাজারে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। আমরা ফি বছর বন্যায় আক্রান্ত এলাকা থেকে তরুণদের বাছাই করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ মোকাবিলার ‘সেরা সৈনিক’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

এই সম্ভাবনা বাস্তবায়নে কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রথমত, জাতীয় পর্যায়ে দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা ইউনিটের অধীনে মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন ও দুর্যোগ অভিজ্ঞ জনগণকে চিহ্নিত করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, দুর্যোগবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে কর্মীরা বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারেন। চতুর্থত, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুর্যোগ অভিজ্ঞ জনশক্তি রপ্তানির জন্য আলাদা পাসপোর্ট, নিয়োগে সহায়তা, ভিসা সংগ্রহ ও সহযোগিতা কাঠামো তৈরি করতে হবে। পঞ্চমত, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘কমিউনিটিভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবিলা’ নিয়ে গবেষণা, ফেলোশিপ ও কোর্স চালু করতে হবে। ষষ্ঠত, উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে জ্ঞান স্থানান্তরে কূটনৈতিক ও উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যা বাংলাদেশের কমিউনিটি মডেলকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশিক্ষণ উপাদান হিসেবে ব্যবহারে সহায়ক হবে।

এ ধরনের কর্মসূচি থেকে তিনটি লাভ হবে– ১.

দেশের যুবশক্তির জন্য নতুন কর্মসংস্থানের দ্বার খুলবে। ২. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি টেকসই খাত গড়ে উঠবে। ৩. দক্ষিণের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মর্যাদা ও ভূমিকা বৈশ্বিকভাবে বাড়বে।

বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শুধু জাতীয় বিষয় নয়; আন্তঃরাষ্ট্রীয়, আন্তঃসামাজিক ও আন্তঃঅভিজ্ঞতার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বা অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের বন্যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়– প্রযুক্তি সক্ষমতা ও দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা এক নয়। এ প্রেক্ষাপটে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিন ধরে ও বংশপরম্পরায় অর্জিত অভিজ্ঞতা বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেতে পারে। এটাই হতে পারে নতুন কূটনীতি, নতুন অর্থনীতি এবং মানবিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত।

এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এখন শুধু শ্রম রপ্তানিকারক নয়; হতে পারে জ্ঞান ও মানবিক অভিজ্ঞতা রপ্তানির বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত উৎস। এ লক্ষ্যে বিষয়টিকে রাজনীতি বা প্রকল্পের সীমায় আটকে না রেখে ‘জাতীয় কৌশল’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আমাদের সংকট-সহনশীলতা, কমিউনিটি সক্ষমতা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সাড়া দেওয়ার অভিজ্ঞতাকে ‘রপ্তানিযোগ্য সক্ষমতা’ হিসেবে রূপান্তর অবশ্যই সম্ভব।

মোহাম্মদ গোলাম নবী: কলাম লেখক; প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, রাইট টার্ন

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ত ত ব যবস থ আম দ র ব শ বব ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

আমাদের দুর্যোগ অভিজ্ঞতা টেক্সাসে রপ্তানি করতে পারি?

এই মাসের শুরুতে টেক্সাসে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ফ্ল্যাশ ফ্লাড বা আকস্মিক বন্যা গোটা আমেরিকাকে নাড়া দিয়ে গেছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণে গুয়াদালুপ নদীর পানি হঠাৎ অনেক বেড়ে গিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষের ঘরবাড়ি, গাড়ি, সেই সঙ্গে নদীতীরে শিক্ষা ও অবসরে আসা ক্যাম্পগুলো। এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে শতাধিক, যার মধ্যে ২৮ জন শিশু। এখনও অনেকে নিখোঁজ। 

এই শোকাবহ ঘটনার পেছনে শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়; অঞ্চলটির প্রতি দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বিনিয়োগের অভাবও সমান দায়ী। ২০১৫ সালে পাশের উইম্বারলি শহরে প্রাণঘাতী বন্যার পর কার কাউন্টির কর্মকর্তারা আধুনিক বন্যা সতর্কীকরণ ব্যবস্থার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালে মাত্র ১০ লাখ ডলারের প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এমনকি ৫০ হাজার ডলারের সমীক্ষাও হয়নি ‘অতিরিক্ত ব্যয়বহুল’ বলে।

ফলে জুলাই মাসের এই ভয়াবহ বন্যার সময় সাইরেন বাজেনি। অনেকের কাছে সময়মতো বার্তা পৌঁছায়নি। আবার কেউ কেউ বার্তাগুলো গুরুত্বই দেননি। মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল ছিল; বিদ্যুৎ ছিল না; অনেকে ঘুমাচ্ছিলেন। কেউ জেগেছেন ফেসবুকে অন্যদের স্ট্যাটাস দেখে; কেউ ঘুম থেকে উঠেছেন পানির শব্দে। এভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশে মৃত্যুর মিছিল দেখা গেছে।

প্রশ্ন হলো, যেখানে প্রযুক্তি, বাজেট ও অবকাঠামো আছে, সেখানেও যখন এমন বিপর্যয় ঘটে, তখন কি কেবল উন্নয়নই সব কিছু? আমরা ভুলে যাচ্ছি মানুষের অভিজ্ঞতা, অভিযোজন ক্ষমতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতিক্রিয়ায় লোকজ জ্ঞানের কথা। উন্নত প্রযুক্তি, বাজেট ও অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও এ বিপর্যয় প্রমাণ করে– দুর্যোগ মোকাবিলায় শুধু যন্ত্র নয়; দরকার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা।

প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সত্ত্বেও আমেরিকার টেক্সাস বন্যায় বিপর্যস্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশের দুর্যোগ-অভিজ্ঞ জনশক্তির প্রাসঙ্গিকতা। এখানেই বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বৈশ্বিক পরিসরে মূল্যায়নের দাবি রাখে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন কিংবা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে লড়াই করে বড় হওয়া বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ কেবল দুর্যোগে টিকে থাকার কৌশলই জানে না; দ্রুত সাড়াও দিতে পারে। আশ্রয় তৈরি, উদ্ধারকাজ, খাবার সরবরাহ বা সতর্কবার্তা ছড়িয়ে দিতে আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা এখন এক অনন্য ‘মানবিক প্রতিরোধ’ কাঠামো, যা বহু উন্নত দেশে অনুপস্থিত।

এ বাস্তবতা আমাদের সামনে একটি নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে– দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাভিত্তিক দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি। বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, দাবানলের মতো দুর্যোগ বাড়ছে। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা– সবাই আজ বিপর্যয়ের মুখে। সবখানেই কমিউনিটিভিত্তিক প্রস্তুতির অভাব প্রকট। অথচ বাংলাদেশের মানুষ বহুদিন ধরে সীমিত সম্পদে সেই প্রস্তুতির কাজটি করে আসছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই অভিজ্ঞতা কি আমরা শুধু নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখব, নাকি একে ‘বৈশ্বিক দরজা’ হিসেবে প্রস্তুত করব?

আমাদের কর্মক্ষম তরুণ অনেকেই উপযুক্ত কর্মসংস্থান পাচ্ছেন না। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন বন্যাপ্রবণ অঞ্চল থেকে যে বাস্তব অভিজ্ঞতা তারা অর্জন করেন, তা আন্তর্জাতিকভাবে মূল্যবান সম্পদে পরিণত হতে পারে। রাষ্ট্র, বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যদি ‘দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা ইউনিট’ গড়ে তোলা যায়, তাহলে বিশ্ববাজারে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। আমরা ফি বছর বন্যায় আক্রান্ত এলাকা থেকে তরুণদের বাছাই করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ মোকাবিলার ‘সেরা সৈনিক’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

এই সম্ভাবনা বাস্তবায়নে কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রথমত, জাতীয় পর্যায়ে দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা ইউনিটের অধীনে মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন ও দুর্যোগ অভিজ্ঞ জনগণকে চিহ্নিত করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, দুর্যোগবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে কর্মীরা বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারেন। চতুর্থত, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুর্যোগ অভিজ্ঞ জনশক্তি রপ্তানির জন্য আলাদা পাসপোর্ট, নিয়োগে সহায়তা, ভিসা সংগ্রহ ও সহযোগিতা কাঠামো তৈরি করতে হবে। পঞ্চমত, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘কমিউনিটিভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবিলা’ নিয়ে গবেষণা, ফেলোশিপ ও কোর্স চালু করতে হবে। ষষ্ঠত, উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে জ্ঞান স্থানান্তরে কূটনৈতিক ও উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যা বাংলাদেশের কমিউনিটি মডেলকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশিক্ষণ উপাদান হিসেবে ব্যবহারে সহায়ক হবে।

এ ধরনের কর্মসূচি থেকে তিনটি লাভ হবে– ১. দেশের যুবশক্তির জন্য নতুন কর্মসংস্থানের দ্বার খুলবে। ২. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি টেকসই খাত গড়ে উঠবে। ৩. দক্ষিণের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মর্যাদা ও ভূমিকা বৈশ্বিকভাবে বাড়বে।

বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শুধু জাতীয় বিষয় নয়; আন্তঃরাষ্ট্রীয়, আন্তঃসামাজিক ও আন্তঃঅভিজ্ঞতার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বা অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের বন্যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়– প্রযুক্তি সক্ষমতা ও দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা এক নয়। এ প্রেক্ষাপটে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিন ধরে ও বংশপরম্পরায় অর্জিত অভিজ্ঞতা বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেতে পারে। এটাই হতে পারে নতুন কূটনীতি, নতুন অর্থনীতি এবং মানবিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত।

এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এখন শুধু শ্রম রপ্তানিকারক নয়; হতে পারে জ্ঞান ও মানবিক অভিজ্ঞতা রপ্তানির বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত উৎস। এ লক্ষ্যে বিষয়টিকে রাজনীতি বা প্রকল্পের সীমায় আটকে না রেখে ‘জাতীয় কৌশল’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আমাদের সংকট-সহনশীলতা, কমিউনিটি সক্ষমতা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সাড়া দেওয়ার অভিজ্ঞতাকে ‘রপ্তানিযোগ্য সক্ষমতা’ হিসেবে রূপান্তর অবশ্যই সম্ভব।

মোহাম্মদ গোলাম নবী: কলাম লেখক; প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, রাইট টার্ন

সম্পর্কিত নিবন্ধ