মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরীণ আরসিসি সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঢালাইয়ের মিশ্রণে নির্ধারিত অনুপাতের চেয়ে বেশি বালু দিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরু থেকে প্রকল্পের কাজে অনিয়ম করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শিডিউল অনুযায়ী সড়কে ঢালাইয়ে প্রতি মিশ্রণে এক বস্তা সিমেন্ট, চার টুকরি বালু, আট টুকরি খোয়া দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক বস্তা সিমেন্টের বিপরীতে আট টুকরি বালু দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করছে। এ ছাড়া বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই দেওয়ায় সড়কের অনেক জায়গায় ইটের খোয়া ভেসে উঠেছে। এতে সড়কটি টেকসই না হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, নিচু হওয়ায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সড়কটি তলিয়ে যায়। এতে স্থানীয়দের পাশাপাশি হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ভোগান্তি নিরসনে কুলাউড়া ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সহায়তায় গত তিন বছর ধরে প্রায় ২৫০ ফুট অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সড়কটি সংস্কারে সম্প্রতি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে সিলেটের শিবগঞ্জের মেসার্স রূপালী এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে দেখা যায়, সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন শিডিউল অনুযায়ী ঢালাইয়ের মিশ্রণ তৈরি করছে না। মিশ্রণে সিমেন্টের অনুপাতের চেয়ে বেশি বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া মিশ্রণে ব্যবহার করা ইটের খোয়া ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের মানের বিষয়ে ক্ষোভ জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা গাড়িচালক মোশাররফ হোসেন, রুবেল আহমদ, আহাদ মিয়া বলেন, সড়কটি সংস্কার কাজের শুরু থেকেই নিম্নমানের মালাপত্র দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সিমেন্ট কম ও বালুর পরিমাণ বেশি দিয়ে ঢালাই দিচ্ছে। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির মধ্যে ঢালাইয়ের কাজ করায় কংক্রিটের মিশ্রণ পাতলা হয়ে যাচ্ছে। পানিতে বালু-সিমেন্ট ধুয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় খোয়া ভেসে উঠেছে। এমনকি, রড বাঁধাই কাজও ঠিকমতো হচ্ছে না। তার দিয়ে রড না বেঁধে এমনিতে রড বিছিয়ে ঢালাই করা হচ্ছে। এতে ঢালাইয়ের স্থায়িত্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও প্রকৌশলীদের সঠিক তদারকির অভাবে ঠিকাদার ইচ্ছেমতো কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো.
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেন বলেন, কাজ শুরুর দিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামাফিক কাজ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের হস্তক্ষেপে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দু’জন প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে বর্তমানে কাজটি করা হচ্ছে। কাজে কোনো অনিয়ম থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মৌলভীবাজার স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুল হক বলেন, প্রকৌশলীদের তদারকির মাধ্যমে শিডিউল অনুযায়ী কাজটি বুঝে নেওয়া হচ্ছে। ঢালাইয়ের মিশ্রণের সময় নির্মাণ কাজে জড়িতরা উপকরণ কমবেশি করে থাকতে পারে। এ বিষয়ে তাদের প্রকৌশলীরা সতর্ক রয়েছেন। সার্বিকভাবে কাজ সঠিকভাবেই হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স র ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
যশোর-খুলনা মহাসড়ক যেন চাষের জমি
দেখলে মনে হবে চাষ দেওয়া কোনো জমি। এবড়োখেবড়ো কাদামাটির স্তূপ, তাতে বড় বড় গাড়ির চাকার দাগ। কোথাও গভীর গর্ত হয়ে জমে আছে পানি। যশোরের অভয়নগরে যশোর-খুলনা মহাসড়কের চিত্র এখন এমনই। এতে নওয়াপাড়া নদীবন্দরের কার্যক্রমেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর অভয়নগরের প্রেমবাগ থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত যশোর-খুলনা মহাসড়ক চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে সড়কটির প্রায় এক কিলোমিটার অংশ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। গর্তে জমা পানি, কাদামাটির কারণে রাস্তাটি চেনার উপায় নেই। এর মধ্য দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে থেমে থেমে চলছে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী বড় বড় ট্রাক। খানাখন্দে চাকা পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গত মঙ্গলবার পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক উল্টে পাশের খাদে পড়ে যায়।
নওয়াপাড়া নদীবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের বিভিন্ন পণ্য এ সড়ক দিয়ে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো হয়। দেশের চাহিদার ৬০ ভাগ আমদানীকৃত সার মোংলা থেকে নদীপথে নওয়াপাড়া নদীবন্দরে এনে খালাস করা হয়। সেই সার ট্রাকের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। বেহাল সড়কের কারণে নদীবন্দরে যেতে অনীহা দেখাচ্ছেন ট্রাকচালকরা। ফলে আমনের ভরা মৌসুমে সঠিক সময়ে সার কৃষকের কাছে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নওয়াপাড়া সার সিমেন্ট খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতা নুরে আলম পাটোয়ারী বলেন, সড়কটির কারণে নওয়াপাড়া মোকাম থেকে সারসহ পণ্য পরিবহনে চালকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে বন্দরের বার্জ কার্গো থেকে সারসহ বিভিন্ন পণ্য সঠিক সময়ে খালাস করা যাচ্ছে না। এতে অতিরিক্ত সময় লাগায় ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। ভুক্তভোগী উজ্জ্বল কুমার কুণ্ডু বলেন, বৃষ্টি হলেই সড়কটি কাদামাটিতে একাকার হয়ে যায়। সড়কের গর্তে পানি জমে। আর বৃষ্টি না হলে গাড়ির চাকার সঙ্গে ওড়ে ধুলা। মোটরসাইকেলচালকরা বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
যশোরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহজাদা ফিরোজ মোবাইল ফোনে জানান, ঠিকাদারদের ডাকা হয়েছিল, তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা এই সমস্যার সমাধান করব। ভারী বর্ষণের কারণে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আপাতত ইট ফেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।
মোংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে বেনাপোল স্থলবন্দর এবং নওয়াপাড়া নদীবন্দরের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এই মহাসড়ক। খুলনা থেকে ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহনের বাসও অভয়নগর হয়ে যাতায়াত করে। খুলনা থেকে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়ায় যাতায়াতের এটিই প্রধান সড়ক। এখন বাসগুলোকে মনিরামপুর, সাতক্ষীরা ঘুরে যেতে হয়।
বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে সড়কটির বিভিন্ন অংশে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ চলছে। ২ হাজার ৩৫২ মিটার কাজের মধ্যে ৭০২ মিটার পড়েছে যশোর মুরলী মোড়ে। বাকিটা নওয়াপাড়া থেকে প্রেমবাগ গেট পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে। কাজটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ কোটি ৬৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। কাজটি শুরু হয়েছে গত ২৩ মার্চ।
এর আগে ২০১৮ সালে দু’জন ঠিকাদার ৩২১ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের অভয়নগরের রাজঘাট থেকে যশোরের পালবাড়ি মোড় পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে। কাজটি ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। ওই সময় কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তিন বছরের মধ্যেই সড়কটির বিভিন্ন অংশ বেহাল হয়ে পড়ায় আবার সংস্কারকাজ করতে হচ্ছে।