আগের তিন নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় ১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সী ভোটারদের জন্য পৃথক ভোটার তালিকা ও বুথ স্থাপনের প্রস্তাব সংবিধানসম্মত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এমন নজির বিশ্বের কোথাও নেই। পাশাপাশি এর ফলে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

গত বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের বরাত দিয়ে তাঁর প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সী ভোটারদের জন্য পৃথক তালিকা ও বুথ কীভাবে নিশ্চিত করা যায়– তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। যারা প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, যাতে প্রথম ভোটে ভালো স্মৃতি হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের কোনো দেশেই তরুণ ভোটারদের জন্য ভোটকেন্দ্রে বাড়তি সুবিধা রাখা হয় না। বয়স্ক, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য কিছু সুবিধা রাখা হয়।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, বিশেষ কোনো গোষ্ঠী বা শ্রেণির জন্য পৃথক বুথের অনেক নেতিবাচক দিক রয়েছে। যে কারণে সংবিধানের সপ্তম ভাগে নির্বাচনসংক্রান্ত অনুচ্ছেদে (১২১) বলা আছে, ‘সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রত্যেক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকার একটি করে ভোটার তালিকা থাকবে এবং ধর্ম, জাত, বর্ণ ও নারী-পুরুষভেদে ভোটারদের বিন্যস্ত করে কোনো বিশেষ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা যাবে না।’

ভোট গ্রহণ কাজে অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা জানান, সংবিধানের এই নির্দেশনার অনেকগুলো যৌক্তিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পরে যদি তিনি চিহ্নিত করতে পারেন যে, বিশেষ কোনো ধর্ম, বর্ণ বা পেশার মানুষ তাকে ভোট দিয়েছেন অথবা দেননি তাহলে তিনি সবার ওপর সমান আচরণ করবেন না। এতে নির্বাচনের মূল্য উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।     

ইসি সচিবালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ভোট গ্রহণের সুবিধার্থে কেন্দ্রভিত্তিক নারী ও পুরুষ ভোটারদের পৃথক তালিকা করা হয়। কিন্তু এটাকে নির্বাচনী এলাকার জন্য একটি ভোটার তালিকা হিসেবেই গণ্য করা হয়ে থাকে। তিনি আরও জানান, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণের জন্য ১০ জুলাইয়ের মধ্যে মাঠ পর্যায় থেকে ইসি সচিবালয়ের তালিকা পাঠানোর নির্দেশনা ছিল। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যেই তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সাধারণত তিন থেকে পাঁচ হাজার ভোটারের জন্য একটি কেন্দ্র এবং ৪০০ থেকে ৬০০ ভোটারের জন্য একটি বুথ তৈরি করা হয়। ব্যালট পেপারে প্রতি মিনিটে গড়ে একটি করে ভোট গ্রহণ করা হবে– এমন হিসাব ধরে ৮ ঘণ্টায় ৪৮০ মিনিটে প্রায় ৫০০ ভোট নেওয়া সম্ভব বলে ওই কর্মকর্তা জানান। তিনি বলেন, বয়স্ক ভোটার এবং অন্তঃসত্ত্বাদের ভোটের লাইনে আগে দেওয়ার একটি নির্দেশনা থাকে। এর বাইরে বিশেষ কোনো বয়সের ভোটারদের জন্য পৃথক বুথ তৈরির বাস্তবতা নেই।
   
নির্বাচন-সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্বের কোনো দেশে প্রথম ভোটার বা ৩৩ বছর বয়স পর্যন্ত ভোটারদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা রাখার তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশসহ অনেক দেশে নারীদের জন্য পৃথক লাইনের ব্যবস্থা রাখা হয়। নারীরা যাতে ভোট দিতে আগ্রহী হন, সে জন্য বিশেষ প্রচারণা চালানো হয়। উন্নত দেশে বয়স্কদের জন্য বিশেষ প্রবেশপথ, স্বেচ্ছাসেবী, হুইলচেয়ার, ভোটকেন্দ্রে র‍্যাম্প, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল ব্যালট, বড় আকারের ব্যালট পেপার, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ সুবিধা এমনকি বাড়িতে গিয়ে ভোট গ্রহণেরও ব্যবস্থা আছে। পোস্টাল ভোটদান এবং অনলাইনে ভোটদানের ব্যবস্থাও আছে কিছু দেশে। দূতাবাসে কর্মরত বা প্রবাসী নাগরিকদের জন্য ভোটের বিশেষ ব্যবস্থা আছে। ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশে প্রক্সি ভোটের ব্যবস্থা আছে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভোটের প্রধান বিষয় হলো ভোটকেন্দ্র যেন শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর হয় এবং ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী, বয়স্ক বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য কিছু বাড়তি সুবিধা রাখা প্রয়োজন। কিন্তু বয়স ধরে বিশেষ ব্যবস্থা বাস্তবসম্মত নয়। নির্বাচন কমিশন সংস্কার প্রস্তাবেও এ রকম কিছু তারা বলেননি।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলিম বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে জন্ম নেওয়া দেশগুলোতে অনলাইনে ভোট দেওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসীরা অনলাইনে ভোট দিতে পারেন। ফ্রান্সে মনোনীত ব্যক্তিকে দিয়ে প্রক্সি ভোট দেওয়ার বিধান আছে। বয়স্ক, প্রতিবন্ধীদের জন্য অনেক জায়গায় অনেক সুবিধা আছে। কিন্তু ১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সী ভোটারদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা কখনও শুনিনি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘এটা শুনে অবাক হয়েছি। বিষয়টি রহস্যজনক। বিশেষ উদ্দেশ্যে এটা করা হতে পারে। এটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডেরও (সবার জন্য সমান সুযোগ) অন্তরায়। এটা সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। একজন শোষকের ভোটেরও যে মূল্য, শোষিতের ভোটেরও একই মূল্য। ধনী বা শ্রমিকের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। 

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্‌দীন মালিক বলেন, ‘এ ধরনের কথা আমি জীবনেও শুনিনি। নিয়ম হলো, যারা বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে পড়েছে তাদের জন্য সুবিধা দেওয়া। এ রকম উদ্ভট চিন্তাভাবনা দুনিয়ার কোথাও নেই। এভাবে করলে অনেক প্রশ্ন আসবে– কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এটা করা হচ্ছে কিনা।’

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সমকালকে বলেন, ‘বিগত নির্বাচনগুলোতে যুবকরা ভোট দিতে পারেনি। এ কারণে হয়তো তাদের উৎসাহিত করতে এটা করা হতে পারে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ র জন য ব শ ষ ত দ র জন য ভ টক ন দ র ভ ট গ রহণ কর মকর ত ব যবস থ বয়স ক

এছাড়াও পড়ুন:

খেলাপি ঋণে বাংলাদেশ এশিয়ায় কেন শীর্ষে

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে মন্দ বা খেলাপি ঋণ অনেক দিনের বিরাট সমস্যা। শুরুতে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় এ ব্যাধি বিদ্যমান হলেও পরবর্তী সময়ে বৃহৎ ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকেও ছড়িয়ে পড়ে। এটি, তথা ঋণখেলাপির সংস্কৃতি ধীরে ধীরে এক মহিরুহ আকার ধারণ করেছে।

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাতের লুকানো খেলাপি ঋণ বের হয়ে আসছে। আবার অনেক আওয়ামী লীগ নেতা ও তাঁদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের ঋণও খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। তাতে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ এক বছরের ব্যবধানে মোট ঋণের ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের এক-চতুর্থাংশের বেশি এখন খেলাপি।

 সম্প্রতি প্রকাশিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণের দিক থেকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের শীর্ষে উঠে আসার বিষয়টি সামনে এসেছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর আর্থিক বিভিন্ন সূচকের অবস্থা নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। অবশ্য খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে ২০২৩ সালের তথ্য। তাতেই বাংলাদেশ শীর্ষে। এটি যে ২০২৫ সালে অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা আমরা জানি।

আগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কায়দায় বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হতো। অন্যদিকে সহজে ঋণ পুনঃ তফসিল ও পুনর্গঠন করার কারণেও খেলাপি ঋণ কম ছিল। এখন ঋণমানে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করা শুরু হয়েছে। আবার ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা ও আওয়ামী রাজনীতি–সমর্থিত ব্যক্তিদের ব্যবসা খারাপ হয়ে পড়ায় খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

খেলাপি ঋণ এভাবে বাড়তে থাকলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে, সন্দেহ নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে উদ্যোগ নিতে হবে। যাঁরা ভালো ব্যবসায়ী, তাঁরা যেন আবার ব্যবসা শুরু করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করতে হবে। সেটি নিয়ে সরকার কাজও করছে।

 এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। ২০২৩ সাল শেষে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে প্রতিবছরই বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের হার বেড়েছে। ২০২১ সালে এই হার ছিল ৮ শতাংশ, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৭ শতাংশে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মতো ২০২১ সাল থেকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে নেপাল ও শ্রীলঙ্কার।

দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলোর খেলাপি ঋণ কমেছে। যেমন ভুটানের খেলাপি ঋণের হার ২০২০ সালে ছিল ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০২২ সালে কমে হয়েছে ৩ শতাংশ। ভারতের খেলাপি ঋণের হার ২০২০ সালে ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে কমে হয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। মালদ্বীপের খেলাপি ঋণ এই সময়ে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। একই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম খেলাপি ঋণ তাইওয়ান ও কোরিয়ার। দেশ দুটির খেলাপি ঋণের হার যথাক্রমে শূন্য দশমিক ১ ও শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০২৪ সাল শেষে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। ২০২৫ সালের জুন শেষে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকায়, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের চার ভাগের এক ভাগের বেশি খেলাপি হয়ে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বলতে শুনেছি, গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। আগেই বলেছি, ঋণখেলাপি হওয়ার নিয়ম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কারণেও দেশে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। যেসব ঋণ নবায়ন করা হয়, তার অনেকগুলো আদায় হচ্ছে না। অনিয়মের কারণে অনেক ঋণকে খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যা সামনে আরও বাড়তে পারে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এর পর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন, বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নানা অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নিয়ে যাচ্ছেন, যার একটা বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।

সূত্রগুলো বলছে, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ও বহুল সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ব্যাংকগুলোর ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেড়েছে। এই পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই কাজ বাস্তবায়ন করতে এরই মধ্যে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্তও হয়ে গেছে। পাশাপাশি সরকারি খাতের জনতা ও রূপালী এবং বেসরকারি খাতের ইউসিবি, আইএফআইসি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ট্রাস্ট ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেড়েছে।

পত্রিকা সূত্রে জানা গেছে, খেলাপি হয়ে পড়া প্রায় ১ হাজার ২৫০ প্রতিষ্ঠান বিশেষ ব্যবস্থার অধীন ঋণ পুনর্গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠানের ঋণ নিয়মিত করার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন একটি বিস্তৃত নীতিমালা তৈরি করে ব্যাংকগুলোকে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দিতে চাইছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জানা গেছে, এই নীতিমালায় নির্দিষ্ট অর্থ জমা দিয়ে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হবে। তবে ঋণ পরিশোধে যতটা সময় অবকাশ পাবে, ওই সময়ে সুদ পরিশোধ করতে হবে। এর ফলে খেলাপি ঋণ কমে আসবে বলে আশা করছেন অনেকে। তবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী না করলে কিংবা ব্যবসা পরিচালনায় মনোযোগী না হলে তার উল্টোটাও ঘটতে পারে। সুযোগের অসৎ ব্যবহারের উদাহরণ বাংলাদেশে অনেক।

সামগ্রিক ঋণখেলাপির সংস্কৃতি থেকে মুক্তি পেতে গেলে আমাদের দুষ্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতি তথা স্বজনতোষী পুঁজিবাদ থেকে যেমন বেরিয়ে আসতে হবে, তেমনি ঋণ সম্প্রসারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। কমাতে হবে পরিচালকদের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ।

মামুন রশীদ ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক

মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ