ঢাকায় বাস ঢুকতে দেন না যাত্রাবাড়ীর যুবদল নেতা
Published: 13th, July 2025 GMT
ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের বাস ঢাকায় ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরেই অভিযুক্ত মুশফিকুর রহমান ফাহিম এই রুটের বাস মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন। এখন এককালীন বিপুল অঙ্কের চাঁদা ও মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা চাইছেন বলে জানিয়েছেন পরিবহন নেতারা। গতকাল শনিবার সকালে শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলেন তারা। বিষয়টি জানতে পেরে মুশফিকুর রহমান ফাহিমকে বহিষ্কার করে প্রাথমিক সদস্য পদ স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আওতাধীন যাত্রাবাড়ী থানা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিম। তিনি ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট একই এলাকার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক হত্যা মামলার প্রধান আসামি। এ মামলায় কারাগারেও গেছেন। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী এলাকায় চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ পাওয়া যায়।
শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতি ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে জানান, ফাহিম দীর্ঘদিন ধরে শরীয়তপুর থেকে ঢাকামুখী বাস মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে আসছেন। তিনি কিছুদিন আগে ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের’ মালিকদের কাছে এককালীন ৫ কোটি টাকা ও মাসে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে নিজ মালিকানাধীন দুটি বাস শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসে যুক্ত করার শর্ত দেন।
পরিবহন মালিকরা চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় প্রতিশোধ হিসেবে ফাহিমের লোকজন যাত্রাবাড়ী এলাকায় শরীয়তপুর থেকে আসা বাসে একের পর এক হামলা করে ভাঙচুর করছে। তিন দিনে এই রুটের ২৫টি বাসে ভাঙচুর চালানো হয়। হামলায় অন্তত ১০ জন পরিবহন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন নেতারা। শনিবার সকালেও যাত্রাবাড়ী এলাকায় আরও দুটি বাসে হামলা হয়েছে। এতে জেলার পরিবহন খাতে জড়িত ব্যক্তিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, জেলার কোনো কোনো বাস বিকল্প পথে পোস্তগোলা সেতু, জুরাইন ও ধোলাইপাড় হয়ে ঢাকায় আসা চেষ্টা করলেও হামলা হচ্ছে। ফাহিমের লোকজন পোস্তগোলা পার হলেই এসব বাসে হামলা করছে। ফলে শরীয়তপুরের বাস ঢাকায় আসা অসম্ভব হয়ে গেছে। হামলার শিকার একটি বাসচালক সোহাগ মিয়া বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে শরীয়তপুর থেকে যাত্রী নিয়ে যাত্রাবাড়ী আসেন তিনি। যাত্রী নামিয়ে চৌরাস্তা মোড়ে পৌঁছালে হঠাৎ ১০-১২ জন মুখোশধারী হামলা চালায়। তারা বাসটি ভাঙচুর করে ও তাঁকে মারধর করে। এই সমস্যা থেকে মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপদে গাড়ি চালাইতে চাই।’
শরীয়তপুর বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদার বলেন, যাত্রাবাড়ী টার্মিনাল থেকে তাদের বাসগুলো চলাচল করার কথা। কিন্তু জায়গা না পাওয়ায় চৌরাস্তা মোড় থেকে বাস ছাড়তে হয়। বেশ কিছুদিন ধরে ওই এলাকার যুবদল নেতা ফাহিম মালিক সমিতির কাছে ৫ কোটি টাকা বা মাসে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘দাবি না মানায় আমাদের ওপর হামলা হচ্ছে, শ্রমিকরা মার খাচ্ছেন, বাস ভাঙচুর হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি– আমরা কোনো চাঁদা দিতে রাজি নই। আমরা চাই নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা ও আইনের শাসন। এ বিষয়ে প্রশাসন ও তাঁর দলীয় নেতারা ব্যবস্থা না নিলে শরীয়তপুরের জনগণকে নিয়ে পদ্মা সেতুতে ব্যারিকেড বসিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেব।’
যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, ‘আমাদের কিছু বাস ওরা শরীয়তপুরে ঢুকতে দেন না। তাদের সেই অপরাধ ঢাকতে আমাকে চাঁদাবাজ বানানো হয়েছে। আমি যদি চাঁদা দাবি ও গাড়ি ভাঙচুর করে থাকি, তাহলে প্রশাসন আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক তালুকদার জানান, দীর্ঘদিন ধরে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহন সুনামের সঙ্গে যাত্রীসেবা দিয়ে আসছে। ৫ আগস্টের পর থেকেই ফাহিম যাত্রাবাড়ী এলাকায় নানা পরিবহন মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন। শুরুতে তিনি প্রতি বাস থেকে ১০০-২০০ টাকা করে চাঁদা নিতেন। এখন এককালীন ৫ কোটি টাকা বা মাসে ১০ লাখ টাকা দাবি করছেন। অনেক পরিবহন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও একইভাবে চাঁদা আদায় করছেন। ফাহিমের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে র্যাব-পুলিশের কাছে ১৫-২০টি অভিযোগ জমা হয়েছে বলেও শুনেছেন।
যুবদল থেকে বহিষ্কার
এদিকে দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পর মুশফিকুর রহমান ফাহিমকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদল। শনিবার সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আওতাধীন যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিমকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ একই সঙ্গে ফাহিমের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও তারা আহ্বান জানিয়েছেন বিজ্ঞপ্তিতে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য বদল ন ত ব যবস থ পর বহন করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায়, অন্তর্বর্তী সরকার উদাসীন: জাতীয় পার্টি (রওশন)
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করে জাতীয় পার্টি (রওশন)। এ জন্য এখনই সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার পূর্ণ প্রয়োগ চেয়েছে দলটি।
এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা, নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, খুন, দখলবাজিসহ ধারাবাহিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবি করেছে জাতীয় পার্টি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান জাতীয় পার্টির (রওশন) মহাসচিব কাজী মো. মামুনুর রশিদ। আজ রোববার সকালে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়গুলো তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কাজী মো. মামুনুর রশিদ বলেন, সম্প্রতি পুরান ঢাকায় সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডসহ দেশব্যাপী অব্যাহত হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, খুন, দখলবাজিসহ ধারাবাহিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জাতি চরম আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তায় তটস্থ। মানুষ আজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কোথাও জানমালের নিরাপত্তা নেই। দেশ এক চরম পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
জাতীয় পার্টি মনে করে, দেশের বিরাজমান সংকট নিরসনে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার চরম সিদ্ধান্তহীনতা ও উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে।
দলের মহাসচিব বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, ছাত্র ও সাধারণ ছাত্র-জনতা তথা গোটা জাতির ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশি-বিদেশি শক্তি গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে অভিযোগ করেন মামুনুর রশিদ। একই সঙ্গে এসব অপশক্তি দেশের অর্থনীতির চাকা থামিয়ে দিতে এবং শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে আন্তর্জাতিক সুনাম অর্জনকারী দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর।
এই অপশক্তি কারা—এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, স্বাধীনতার পরও দেশি-বিদেশি চক্রান্তের কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৮১ সালে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে এই বিদেশি শক্তি বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছিল। এই চক্রান্তকারীরাই নব্বইয়ের তথাকথিত গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পল্লিবন্ধু এরশাদকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এখনো নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এদের চক্রান্তের কারণে দেশের পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপকে দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত বলে উল্লেখ করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব। একই সঙ্গে তিনি গত ১১ মাসে দেশে কোনো বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি বলে দাবি করেন।
তবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশে রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে বলে সাংবাদিকেরা উল্লেখ করলে মামুনুর রশিদ বলেন, এই তথ্য সঠিক নয়। এটা বিনিয়োগ নয়, প্রবাসী রেমিট্যান্স।
রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ এক নয়—এমন তথ্য উল্লেখ করলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ‘আমরাও খোঁজখবর নিয়েছি। ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এই ডেটা (তথ্য) যাচাই করে এই প্রশ্নের উত্তর দেব।’
সংবাদ সম্মেলনে দ্রুত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থা থেকে উদ্ধারে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ সময় কাজী মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘দেশবাসী আজ আপনার দিকেই তাকিয়ে আছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুর রহমান, খন্দকার মনিরুজ্জামান, সৈয়দ ওয়াহেদুল ইসলাম, হাফসা সুলতানা প্রমুখ।