৩৯ প্রভাবশালীর দখলে থাকা সরকারি জায়গা উদ্ধারে চট্টগ্রামে পাউবো’র অভিযান
Published: 13th, July 2025 GMT
চট্টগ্রামে ৩৯ প্রভাবশালীর দখলে থাকা ৩২০ কোটি টাকা মূল্যের ৩২ একর সরকারি জায়গা উদ্ধারে ১৬ বছর পর অবশেষে কঠোর অভিযানে নেমেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নগরের উত্তর হালিশহর থেকে উত্তর কাট্টলী পর্যন্ত তিনদিনব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উত্তর কাট্টলী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। সাগরিকাস্থ সাগর উপকূলঘেঁষা বেড়িবাঁধ ও বন্দর লিংক সড়কের পাশে মিনি স্টেডিয়াম এলাকায় আজ উচ্ছেদ অভিযান চলবে।
অভিযানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। তারা হলেন, জেলা প্রশাসনের কাট্টলী সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার হুছাইন মুহাম্মদ, পতেঙ্গা সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার ফারিস্তা করিম ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো.
২ জুন সমকালের শেষের পাতায় ‘৩২০ কোটি টাকার জমি ৩৯ প্রভাবশালীর দখলে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তারপর পানিসম্পদ উপদেষ্টার নির্দেশে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। যদিও তা ঠেকাতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদবির করেও উচ্ছেদ ঠেকাতে পারেননি প্রভাবশালীরা।
পাউবো চট্টগ্রাম বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকা এসব জমি উচ্ছেদে রোববার থেকে অভিযান শুরু করেছি। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার যৌথ সমন্বয়ে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবেন। স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে দখলদারদের হাত থেকে দুখলমুক্ত জমিতে পিলার ও কাটাতার দিয়ে সংরক্ষণ করে বনায়ন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই উচ্ছেদ ঠেকাতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সরকার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
সরকারি জায়গা যাদের দখলে
অবৈধ দখলদারদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি দিদারুল আলমের দখলে থাকা ৭ একর জায়গাজুড়ে কাভার্ডভ্যান ও স্কেভেটার ইয়ার্ড রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক প্যানেল মেয়র নিছার উদ্দিন আহম্মেদ মঞ্জুর দখলে রয়েছে পাউবো’র আড়াই একর জায়গা। আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জু দশমিক ৪২ একর জায়গা বছরে ১৫ লাখ টাকায় মুনছুর মিস্ত্রি কাছে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, দশমিক ৩৮ একরের আরেকটি জায়গা আরিফুর রহমান রুবেলের কাছে ১৮ লাখ টাকায়, দশমিক ৫৪ একরের আরেকটি জায়গা আব্দুল মমিনের কাছে ২৪ লাখ টাকায় ভাড়া এবং নিজে দশমিক ৮৫ একর জায়গা দখল করে রেখেছেন। একইভাবে চসিকের সাবেক কাউন্সিলর আবুল হাসেম দশমিক ০১৬২ একর জায়গা ট্রলি ডিপো ভাড়া দিয়ে বছরে ১৮ লাখ টাকা আদায় করছেন।
এভাবে ৩৯ প্রভাবশালী ‘ভূমিখেকোর’ পেটে চলে গেছে চট্টগ্রামের হালিশহর, পাহাড়তলী এলাকার পাউবো’র ৩২০ কোটি টাকার ৩২ একর জমি। ১৯৭২ সালে শহর রক্ষা বাঁধের জন্য জায়গাগুলো অধিগ্রহণ করেছিল পাউবো। গত ১৬ বছর ধরে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, স্কেভেটর ডিপো, ডেইরি ফার্ম, গাড়ির গ্যারেজ ভাড়া দিয়ে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পকেটে হাতিয়ে নিচ্ছেন ভূমিখেকোরা।
পাউবো চট্টগ্রাম বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ জানান, শহর রক্ষা বাঁধ করতে সত্তরের দশকে ২৬৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিছু অংশ বাঁধ কাম সড়ক হলেও অধিকাংশ জায়গা জমি শ্রেণিতে রয়ে গেছে। সেই জমিতে ৩৯টি দখলদার কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ডসহ নানা স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দখল দখলদ র সরক র দশম ক র দখল
এছাড়াও পড়ুন:
ভোলার ঐতিহ্যবাহী বাংলা স্কুল পুকুর ভরাট করে বানানো হচ্ছে বহুতল ভবন
ভোলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দুই শতাধিক বছরের পুরোনো বাংলা স্কুলের পুকুর দখল ও ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০ বছর ধরে সচেতন নাগরিক সমাজ পুকুর ও এর তীর দখলমুক্ত করার আন্দোলন করলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন।
গত বছরের ৫ আগস্টের পরেও পুকুরের তীর ভরাট করে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, এটি সম্পূর্ণ বেআইনি।
এই পুকুরের পানি শহরের মানুষ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে। অগ্নিকাণ্ডের সময় এখানকার পানি দিয়েই আগুন নেভানো হয়। কিন্তু পুকুরটি এখন প্রভাবশালী দখলদারদের কবলে। নিয়মিত দখল ও ভরাটের হুমকিতে জলাশয়টি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। স্থানীয় লোকজনের মতে, এটি শুধু একটি জলাশয় নয়, ভোলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক, যা এখন ধ্বংসের মুখে।
ভোলা শহরের মাঝখানে অবস্থিত শ্যামাচরণ মুখোপাধ্যায়ের পুকুরটি স্থানীয়ভাবে ‘বাংলা স্কুল পুকুর’ নামেই পরিচিত। একসময় এটি ছিল শহরের সবচেয়ে বড় ও গভীর জলাশয়। দুই পাশে পাকা ঘাট, পরিষ্কার পানি, সকাল-বিকেলে সাঁতার—সব মিলিয়ে পুকুরটি ছিল শহরের প্রাণকেন্দ্র। এখন সেই চিত্র বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পুকুরের চারপাশে বহুতল ভবন, দোকানপাট ও অফিস গড়ে উঠেছে। কেউ ইজারা নিয়ে, কেউ প্রভাব খাটিয়ে দখল করে পুকুর দূষিত করছে।
ভোলা পৌর ভূমি কার্যালয়ের নথি অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে চরজংলা মৌজার ১৬৪ নম্বর খতিয়ানের ছয়টি দাগে ১ একর ৩৫ শতাংশ জমি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ‘ক’ তালিকাভুক্ত হয়। এর মধ্যে একটি দাগে পুকুরের জমি ছিল ৯৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং দুটি দাগে তীরে আরও ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ জমি। পুকুর ও তীর মিলে মোট আয়তন ছিল ১ একর ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। বর্তমানে তা কমে প্রায় ৭০ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জমি দখল বা ভরাট হয়ে গেছে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের সময় প্রথম আমেনা প্লাজা নির্মাণের মাধ্যমে দখল শুরু হয়। পরে এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ভবনের কিছু অংশ ভাঙা হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম পাঁচ বছরে দক্ষিণ ও পশ্চিম তীর দখল করে একাধিক বহুতল ভবন তোলা হয়। সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার একাধিকবার সীমানা নির্ধারণ করে লাল পতাকা পুঁতলেও অদৃশ্য কারণে সেই সীমানা অতিক্রম করে ভবন উঠে গেছে। সচেতন সমাজের কিছু অংশ দখলদারদের সঙ্গে সমঝোতায় গেলে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে।
এই পুকুরের পানি শহরের মানুষ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে। অগ্নিকাণ্ডের সময় এখানকার পানি দিয়েই আগুন নেভানো হয়। কিন্তু পুকুরটি এখন প্রভাবশালী দখলদারদের কবলে