বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের
Published: 22nd, July 2025 GMT
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে কমিটি গঠনের ৪৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে বলা হয়েছে।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার রুলসহ কয়েকটি নির্দেশ দেন। অপর নির্দেশনায় এই দুর্ঘটনায় আহতদের দেশে-বিদেশে সরকারি ব্যয়ে যথাযথ ও পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে রক্তের গ্রুপ ও অভিভাবকের ফোন নম্বরসহ সব শিক্ষার্থীর জন্য পরিচয়পত্র নিশ্চিতে দ্রুত উদ্যোগ নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়াই প্রতি মাসে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আদেশের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাত দিনের মধ্যে কারিগরি অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির কাজ হবে ওই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি ত্রুটিপূর্ণ বিমান চিহ্নিত করা, যাতে করে তদন্তের পর প্রশিক্ষণ বিমানসহ ত্রুটিপূর্ণ বিমান উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করা যায়।
উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩১ জন নিহত ও ১৬৫ জন আহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
ওই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো.
আদালতে রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, আইনজীবী কায়সার কামাল, গাজী কামরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সিদ্দিক উল্যাহ মিয়া প্রমুখ শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও তানিম খান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির শুনানিতে ছিলেন।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী মো. আনিসুর রহমান রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, সাত দিনের মধ্যে কমিটি গঠন করে পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির তদন্তের পর রাজধানী ঢাকাসহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ত্রুটিপূর্ণ বিমান ও প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন কেন নিষিদ্ধ করা হবে না, সে বিষয়ে রুল হয়েছে। গতকালের এই ঘটনায় নিহত প্রত্যেককে পাঁচ কোটি টাকা করে এবং আহত প্রত্যেককে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র রহম ন আইনজ ব ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
বিহারের ভোটার তালিকা নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট: ‘মৃত’ নন জীবিত এমন ১৫ জনকে হাজির করলে ব্যবস্থা
বিহারে খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ চিহ্নিত ১৫ জন জীবিতকে হাজির করাতে পারলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ব্যবস্থা নেবেন। বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে মামলাকারীদের আইনজীবীদের এ আশ্বাস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি সূর্য কান্ত ও জয়মাল্য বাগচী এ আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া দেওয়া হলে তাঁরা অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
আবেদনকারীদের উদ্দেশে দুই বিচারপতি বলেছেন, প্রক্রিয়ায় অনিয়ম বা ত্রুটি পাওয়া গেলে অবশ্যই তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।
মামলাকারীদের আবেদন মেনে সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য খসড়া ভোটার তালিকা পেশ করার ওপর স্থগিতাদেশ দেননি। তবে ইসিকে তাঁরা বলেছেন, তাদের কাজ গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া নয়। তাদের দেখা উচিত যাতে গণহারে ভোটারদের তালিকাভুক্ত করা যায়।
এসআইআর–প্রক্রিয়া অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংশোধনের পর খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে ১ আগস্ট। সে লক্ষ্যেই ইসি এগিয়ে চলেছে। ইসি সূত্রে খবর, নিবিড় সংশোধনপ্রক্রিয়ার পর প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে ৬৫ লাখেরও বেশি নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২২ জন ‘মৃত’, ৩৬ লাখ ‘নিখোঁজ’। এ ছাড়া বেশ কয়েক লাখ ভোটারের নাম বিভিন্ন এলাকার তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ একই ভোটার অন্তত দুই জায়গায় নথিভুক্ত। আগের তালিকা অনুযায়ী বিহারে মোট ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৮৯ লাখ। ইসির দাবি, এই তালিকায় বহু ভোটার ভুয়া। তাদের বাদ দিতেই এই নিবিড় সংশোধন।
যে প্রক্রিয়ায় এই খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে, মামলাকারীদের আপত্তি তা নিয়েই। তাঁদের অভিযোগ, ইসি যেভাবে নাগরিকত্বের যাচাই করছে, সে জন্য যেসব নথি পেশ করতে বলা হচ্ছে, তা বহু ক্ষেত্রে সম্ভবপর নয়। তেমন করা তাদের কাজও নয়। সেই কাজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তাঁদের অভিযোগ, এভাবে বহু দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের ভোটাধিকার ইসি কেড়ে নিচ্ছে।
গত সোমবার ও মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। মঙ্গলবারের শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে আশ্বস্ত করে বিচারপতিরা বলেন, কমিশনের ত্রুটি–বিচ্যুতি দেখলে তাঁরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন। ভোটার প্রমাণে আধার কার্ড ও ভোটার কার্ডকে নথি হিসেবে গ্রাহ্য করার সুপারিশ বিচারপতিরা জোরের সঙ্গে করেছেন। এই দুই নথি জাল করা সহজ বলে ইসির দাবি নস্যাৎ করে বিচারপতিরা বলেছেন, যে ১১টি নথির ওপর নির্ভর করে তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেগুলোর প্রতিটিই জাল করা সম্ভব। কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে বিচারপতিরা বলেন, খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ অথচ আসলে জীবিত, এমন ১৫ জনকে আপনারা হাজির করুন। আমরা ব্যবস্থা নেব।
আগামী ১২ ও ১৩ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে ৮ আগস্টের মধ্যে মামলাকারীদের বক্তব্য লিখিতভাবে আদালতে পেশ করতে হবে।