দেশে পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, গোয়েন্দা ও প্রশাসনিক কিছু দুর্বলতা রয়েছে। এসব দুর্বলতা চিহ্নিত করতে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। সরকারের উচিত প্রশাসনকে আরও কঠোর করা এবং নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রাখা, যাতে যেকোনো ঘটনা ঘটার আগেই সঠিক তথ্য পাওয়া যায়।

মঙ্গলবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’

জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দেন কিউর। অর্থাৎ প্রতিরোধই শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা। সেই কারণে সরকারের উচিত প্রিভেনশনকে (প্রতিরোধকে) আরও শক্তিশালী করা। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, উপদেষ্টা পরিষদসহ সকলে মিলে কঠোর মনোভাব নিয়ে কাজ করবে। তিনি আমাদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।’

ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্র দমনে মাঠে কর্মসূচি থাকবে জানিয়ে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আগামীকাল (আজ বুধবার) ছাত্রদের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেওয়া হবে। রাজনৈতিক দলগুলো পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজন হলে মাঠে কর্মসূচি দেবে। সেই অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করছি।’

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে সোমবার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনায় জাতির হৃদয় বিদীর্ণ হয়েছে এবং সেখানে নিহত শিশুদের পরিবারে যথাযথ সহযোগিতা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং আহতদের পূর্ণ চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত আরও আগে ঘোষণা করার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামী। সে বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার কথা জানিয়ে তাহের বলেন, সেটাকে সামনে রেখে কোনো কোনো দুষ্টচক্র পরিবেশ ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছে।

আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে এবং সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে নতুন সরকার নির্বাচিত হলে তা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক হবে। আমরা সরকারকে পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেব, ইনশা আল্লাহ।’

কোনো কোনো মহল থেকে সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন বিলম্ব করার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমরা মনে করি, এমন ষড়যন্ত্র হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সংস্কারগুলো মেনে নিয়ে তাঁরা যড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে পারেন।’

‘পরাজিত শক্তি পুনর্বাসিত হতে চাইলে ব্যবস্থা’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের আগে মঙ্গলবার বিকেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৭তম দিনের আলোচনায় যোগ দেয় জামায়াতে ইসলামী। আলোচনা শেষে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, শোকবহ পরিস্থিতিকে পুঁজি করে সকালে মাইলস্টোন কলেজের সামনে বিশৃঙ্খলা হয়েছে। আবার সচিবালয়ের সামনেও বিশৃঙ্খলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে পুঁজি করে যদি পরাজিত ও বিতাড়িত শক্তি ফিরে আসতে চায়, তাহলে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যাঁরা শহীদ হয়েছেন, আমরা তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। সরকারের কাছে আহতদের সুচিকিৎসার দাবি করছি। যাঁরা আহত হয়েছেন, নিহত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের দাবি থাকবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। পুরো জাতি তাঁদের সঙ্গে আছে।’

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় দলীয় প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী না করার বিষয়ে মত দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এই বিষয়ে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশে এখন সংস্কার হচ্ছে। সেভাবে দলগুলোও যেন গণতান্ত্রিক হয়, সেই চেষ্টাও আমাদের করতে হবে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্ধারণের বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সরকার, বিরোধী দল এবং তৃতীয় পক্ষের দেওয়া নামের সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে সার্চ কমিটি প্রধান উপদেষ্টার নাম নির্বাচন করবে। তবে যদি ঐকমত্য না হয়, তাহলে কোনো পক্ষ যেন সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচন নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো না গেলে ত্রয়োদশ সংশোধনীতে ফিরে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে দলটি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত সহয গ ত সরক র র ঐকমত য ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার প্রত্যাশা

আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই জুলাই সনদকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২১তম দিনের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন।

আলী রীয়াজ বলেছেন, আজসহ হাতে আছে মাত্র তিন দিন। এ সময়ের মধ্যে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করে আমরা জুলাই সনদের খসড়া চূড়ান্ত করতে চাই।

আজ আলোচনার সূচিতে ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের প্রস্তাব, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগ-সংক্রান্ত বিধান।

আলী রীয়াজ বলেছেন, ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের প্রাথমিক খসড়া পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল (বুধবার) পর্যন্ত তাদের মতামতের জন্য অপেক্ষা করা হবে।

তিনি বলেছেন, যেসব বিষয়ে ইতোমধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলো একত্র করে এবং দলগুলোর মন্তব্য যুক্ত করে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই আমরা একটি গ্রহণযোগ্য সনদের কাঠামো উপস্থাপন করতে পারব বলে আশা করছি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে নতুন প্রস্তাব আসছে
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি জানিয়েছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো নিয়ে বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে নতুন নতুন প্রস্তাব এসেছে। গতকাল থেকে এ ইস্যুতে আলোচনা জোরালো হয়েছে। কয়েকটি দলের নতুন মতামত ও সুপারিশ এসেছে। সেগুলো সমন্বয় করে সম্মিলিত প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে।

আলী রীয়াজ বলেন, আমরা চাই, প্রত্যেকটি দলের অবস্থান বিবেচনায় রেখে একটি ভারসাম্যপূর্ণ রূপরেখা হাজির করতে। কারণ, বাস্তবতা হলো— সব দলেরই নিজস্ব অবস্থান রয়েছে। সেগুলো সমন্বয় করেই আগাতে হবে।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং ড. আইয়ুব মিয়া।

আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।

ঢাকা/এএএম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘জুলাই সনদের’ দাবিতে শাহবাগে অবরোধ, যানজট
  • ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ না করলে এনসিবি তা করবে: আখতার হোসেন
  • কক্সবাজারে ৩৫ পুলিশ সদস্যের পোশাকে থাকবে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’
  • খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি
  • প্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে
  • ২৯ জুলাই-৮ আগস্ট ‘ফ্যাসিবাদী শক্তির’ নৈরাজ্যের আশঙ্কায় এসবির সতর্কতা
  • ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার প্রত্যাশা
  • ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট সময়কালে ফ্যাসিবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এসবির প্রতিবেদন
  • নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু, দেড় লাখ পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে
  • মাদারীপুরে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু