পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অপচেষ্টা চলছে: জামায়াত
Published: 23rd, July 2025 GMT
দেশে পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, গোয়েন্দা ও প্রশাসনিক কিছু দুর্বলতা রয়েছে। এসব দুর্বলতা চিহ্নিত করতে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। সরকারের উচিত প্রশাসনকে আরও কঠোর করা এবং নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রাখা, যাতে যেকোনো ঘটনা ঘটার আগেই সঠিক তথ্য পাওয়া যায়।
মঙ্গলবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দেন কিউর। অর্থাৎ প্রতিরোধই শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা। সেই কারণে সরকারের উচিত প্রিভেনশনকে (প্রতিরোধকে) আরও শক্তিশালী করা। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, উপদেষ্টা পরিষদসহ সকলে মিলে কঠোর মনোভাব নিয়ে কাজ করবে। তিনি আমাদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।’
ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্র দমনে মাঠে কর্মসূচি থাকবে জানিয়ে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আগামীকাল (আজ বুধবার) ছাত্রদের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেওয়া হবে। রাজনৈতিক দলগুলো পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজন হলে মাঠে কর্মসূচি দেবে। সেই অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করছি।’
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে সোমবার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনায় জাতির হৃদয় বিদীর্ণ হয়েছে এবং সেখানে নিহত শিশুদের পরিবারে যথাযথ সহযোগিতা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং আহতদের পূর্ণ চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত আরও আগে ঘোষণা করার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামী। সে বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার কথা জানিয়ে তাহের বলেন, সেটাকে সামনে রেখে কোনো কোনো দুষ্টচক্র পরিবেশ ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছে।
আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে এবং সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে নতুন সরকার নির্বাচিত হলে তা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক হবে। আমরা সরকারকে পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেব, ইনশা আল্লাহ।’
কোনো কোনো মহল থেকে সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন বিলম্ব করার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমরা মনে করি, এমন ষড়যন্ত্র হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সংস্কারগুলো মেনে নিয়ে তাঁরা যড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে পারেন।’
‘পরাজিত শক্তি পুনর্বাসিত হতে চাইলে ব্যবস্থা’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের আগে মঙ্গলবার বিকেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৭তম দিনের আলোচনায় যোগ দেয় জামায়াতে ইসলামী। আলোচনা শেষে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, শোকবহ পরিস্থিতিকে পুঁজি করে সকালে মাইলস্টোন কলেজের সামনে বিশৃঙ্খলা হয়েছে। আবার সচিবালয়ের সামনেও বিশৃঙ্খলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে পুঁজি করে যদি পরাজিত ও বিতাড়িত শক্তি ফিরে আসতে চায়, তাহলে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যাঁরা শহীদ হয়েছেন, আমরা তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। সরকারের কাছে আহতদের সুচিকিৎসার দাবি করছি। যাঁরা আহত হয়েছেন, নিহত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের দাবি থাকবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। পুরো জাতি তাঁদের সঙ্গে আছে।’
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় দলীয় প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী না করার বিষয়ে মত দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এই বিষয়ে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশে এখন সংস্কার হচ্ছে। সেভাবে দলগুলোও যেন গণতান্ত্রিক হয়, সেই চেষ্টাও আমাদের করতে হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্ধারণের বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সরকার, বিরোধী দল এবং তৃতীয় পক্ষের দেওয়া নামের সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে সার্চ কমিটি প্রধান উপদেষ্টার নাম নির্বাচন করবে। তবে যদি ঐকমত্য না হয়, তাহলে কোনো পক্ষ যেন সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচন নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো না গেলে ত্রয়োদশ সংশোধনীতে ফিরে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে দলটি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত সহয গ ত সরক র র ঐকমত য ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সে বিষয়ে সরকার অনড় থাকবে। এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) অধ্যাদেশের খসড়ায় আবার পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।
সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে এল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সদ্য অনুমোদন দেওয়া নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন আরপিওর (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া আবারও সংশোধন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জোটগতভাবে নির্বাচন করলে নিজের দলের প্রতীকে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকছে না। অর্থাৎ কোনো প্রার্থী চাইলে নিজ দলের প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারবেন, অথবা জোটের কোনো দলের প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারবেন।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করেছিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কোনো দল জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নিজেদের প্রতীকে অংশ নিতে হবে।
এরপর ওই বিধান নিয়ে আপত্তি জানায় বিএনপি ও ছোট দলগুলো। ছোট দলগুলো এ নিয়ে নিজেদের আপত্তি ও উৎকণ্ঠার কথা কয়েকজন উপদেষ্টাকে জানায়। একপর্যায়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের আপত্তি জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রধান উপদেষ্টার আগ্রহ এবং নির্দেশনায় আরপিওতে সর্বশেষ পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে।
সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে এল।