আনুপাতিক প্রতিনিধি নির্বাচন পদ্ধতি সংকট উত্তরণে গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব
Published: 25th, July 2025 GMT
আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি বা মিক্সড মেম্বার পিআর (এমএমপি) বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতারা বলেছেন, সংসদে প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আনুপাতিক প্রতিনিধি নির্বাচন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হবে। এই পদ্ধতিই বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে একটি গ্রহণযোগ্য ও উত্তম প্রস্তাব।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) দলের পুরানা পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন।
দলের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হকের সভাপতিত্বে, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীনের সঞ্চালনায় বৈঠকে বৈঠকে বক্তব্য রাখেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, মাওলানা আফজালুর রহমান, মাওলানা রেজাউল করীম জালালী, মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা কোরবান আলী কাসেমী প্রমুখ।
নেতারা বলেন, “বর্তমান নির্বাচনি ব্যবস্থায় জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে না। ফলে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জনগণের আস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কার্যকর সংসদ গঠনের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার এখন সময়ের দাবি।’’
বৈঠকে জাতিসংঘের নামে ঢাকায় একটি তথাকথিত মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, “এটি দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ভারসাম্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।’’
বৈঠকে মাইলস্টোন স্কুলে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে হতাহতের জন্য দোয়ার আয়োজন করা হয়।
তাছাড়া সজাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা হয় এবং সর্বসম্মতিক্রমে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।
এ সময় দলের যুগ্ম মহাসচিব-মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা আব্দুল আজীজ, মুফতী শরাফত হোসাইন, মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা জহিরুল ইসলাম, মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা শরীফ হোসাইন, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা জসিম উদ্দীন, মাওলানা হোসাইন আহমদ, মাওলানা মুহসিন উদ্দীন বেলালী, মাওলানা আব্দুল মুমিন, মাওলানা মামুনুর রশীদ, মাওলানা আমজাদ হুসাইন, মাওলানা মঈনুল ইসলাম খন্দকার, মুফতি আজিজুল হক, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমেনী, মাওলানা আনোয়ার হোসাইন রাজী, মাওলানা মুর্শিদুল আলম সিদ্দীক, মাওলানা রাকীবুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
খেলাফত মজলিস মালয়েশিয়া শাখা গঠন
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মালয়েশিয়া শাখা পুনর্গঠন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শুক্রবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে এক দাওয়াতি মজলিস অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ফয়সাল আহমদ।
জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, “মুসলমানরা জীবন-জীবিকার উদ্দেশ্যে পৃথিবীর যেখানে থাকুক না কেন, দ্বীন কায়েমের সংগ্রাম থেকে বিরত থাকার সুযোগ নেই। প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও উচিত, দেশের কল্যাণমুখী ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সচেতন ও সংগঠিত হওয়া।”
তিনি বলেন, “মালয়েশিয়ায় আমাদের অবস্থান এমন হওয়া উচিত, যাতে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পায় এবং প্রবাসীদের জন্য শ্রমবাজার আরও সম্প্রসারিত হয়।”
অনুষ্ঠান শেষে মাওলানা তাকী উল্লাহকে সভাপতি ও মাওলানা হাবিবুর রহমান কাউসারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মালয়েশিয়া শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির অন্যান্যরা হলেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইব্রাহিম খলিল, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ বাবলু ও মাওলানা মাসরুর, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাওলানা বদরুদ্দোজা,সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা জহিরুল ইসলাম, বাইতুলমাল সম্পাদক হাফেজ রাহাত, নির্বাহী সদস্যবৃন্দ হাফেজ এমদাদ, মোহাম্মদ রাসেল খান, মোহাম্মদ তানভীর, মোঃ ইমদাদ হোসেন প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল ইসল ম ত মজল স উল ল হ হ স ইন র জন য গঠন ক
এছাড়াও পড়ুন:
তাজউদ্দীন আহমদ দেশের স্বাধীনতার প্রধান পুরুষ
তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রধান পুরুষ ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট লেখক মঈদুল হাসান। তিনি বলেন, ‘তাঁর (তাজউদ্দীন) সম্পর্কে বলতে গেলে আমরা প্রায় কিছুই জানি না। ইতিহাস নিয়ে এত দিন যে মিথ তৈরি করা হয়েছিল, তা ভাঙতে হবে। বস্তুনিষ্ঠভাবে ইতিহাসকে পুনরুদ্ধার করতে হবে।’
আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আয়োজিত শিক্ষার্থীদের রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় মঈদুল হাসান এ কথা বলেন। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র সারা দেশে তাদের নিবন্ধিত বেসরকারি গ্রন্থাগারের পাঠক-শিক্ষার্থীদের জন্য রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
এই রচনার বিষয় ছিল ‘মুক্তিযুদ্ধের আড়ালের নায়ক: তাজউদ্দীন আহমদ’। এ প্রতিযোগিতায় ৩৬টি পাঠাগার অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের বয়সভিত্তিক ‘ক’ ও ‘খ‘ দুটি বিভাগে প্রতিযোগিতা হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে ৩১ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানে লেখক মঈদুল হাসান ছাড়াও অতিথি ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে লেখক শারমিন আহমদ, লেখক ও অধিকারকর্মী ফিরোজ আহমদ। সভাপতিত্ব করেন গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম। আলোচনা পর্বের শুরুতেই তাজউদ্দীন আহমদের জীবন ও কর্ম নিয়ে পুঁথিপাঠ, তাঁর ডায়েরি থেকে পাঠ ও গান নিয়ে তুষার চন্দনের পরিচালনায় একটি গীতি–আলেখ্য পরিবেশন করেন মিরপুরের আলোকবর্তিকা গ্রন্থালয়ের সদস্যরা।
তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ের দিনগুলোর দীর্ঘ স্মৃতিচারণা করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক মঈদুল হাসান। তিনি বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ যখন যেভাবে যেসব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেসব বিস্তারিত তথ্য অনুসন্ধান করে তুলে আনতে হবে। এত দিন অনেক কথা বলা যেত না। এখনো সেই সময়ের অনেকে জীবিত আছেন। তাঁরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারবেন। এখন তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে এই গবেষণা করতে হবে।
মঈদুল হাসান বলেন, ১৯৭৪ সালে তিনি যখন লন্ডনে জনতা ব্যাংকে কাজ করতেন তখন তাজউদ্দীন আহমদ তাঁকে নিউইয়র্ক সফরের সময় সেখানে ডেকেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী (শেখ মুজিবুর রহমান) এমন একধরনের শাসনব্যবস্থা করতে চাচ্ছেন, যা দেশের মানুষ গ্রহণ করবে বলে মনে হয় না। তাঁর (তাজউদ্দীন) কাছে দুটি প্রস্তাব এসেছে, সহকারী রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী এমন কোনো পদ গ্রহণ করা অথবা পদত্যাগ করা। তিনি (তাজউদ্দীন) বলেছিলেন, ওই ধরনের পরিবর্তনের উদ্যোগের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগ নেই। তাঁর প্রথম কাজ হবে পদত্যাগ করা।
এরপর তাজউদ্দীন আহমদের জীবনে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল উল্লেখ করে মঈদুল হাসান বলেন, তাঁকে (তাজউদ্দীন) মেরে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছিল। শেখ ফজলুল হক মণি এর নেপথ্যে থাকতে পারেন বলে তাঁকে (মঈদুল হাসান) জানানো হয়েছিল।
ন্যাপ নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য এবং আরও একজন লন্ডনে এসে তাঁকে (মঈদুল হাসান) বলেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদকে দেশ থেকে বের করে কোনো নিরাপদ দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে। তিনি সাধ্যমতো সে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি। মঈদুল হাসান বলেন, ১৯৭১ সালে ফজলুল হক মণি আরও একবার তাজউদ্দীন আহমদকে হত্যার চক্রান্ত করেছিলেন।
মঈদুল হাসান বলেন, ১৯৭৪–এর আগস্টের শেষ দিকে তিনি ঢাকায় এলে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান তখন বলেছিলেন, দেশ একটা দুর্যোগের মধ্য পড়তে যাচ্ছে। সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ আছে। তার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। পরে মঈদুল হাসান অনেক ভেবেছেন, জিয়াউর রহমান কেন তাঁকে এটা বলেছিলেন? এসব কথা আগে বলার মতো পরিবেশ ছিল না বলে তিনি উল্লেখ করেন। এমন আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ অজানা তথ্য রয়েছে। গবেষকদের তিনি আবেগতাড়িত না হয়ে সত্য অনুসন্ধানের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে শারমিন আহমদ শিক্ষার্থীদের কাছে তাঁর বাবার স্মৃতিচারণা করেন। বলেন, বাবাকে তিনি খুব কম সময়ই কাছে পেয়েছেন। তিনি খুবই দয়ালু ছিলেন। সহজ–সরল ও সাশ্রয়ী জীবন যাপন করতেন। জামাকাপড় কাচাসহ নিজের কাজ নিজে করতেন। স্বার্থপরতাকে প্রশ্রয় দেননি। আত্মমর্যাদাবোধ ছিল প্রচণ্ড। যখন রাষ্ট্রনায়ক হয়েছেন তখন চরিত্রের এ বৈশিষ্ট্যগুলো তাঁর কাজে প্রতিফলিত হয়েছে।
শারমিন আহমদ আরও বলেন, তাঁর বাবা বলতেন, জনগণের নেতা হতে হলে সবকিছু দিয়েই নেতা হতে হয়। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তাঁর খুবই স্পষ্ট বক্তব্য ছিল। তিনি অনেকবার বলেছেন, ‘এই যুদ্ধ হচ্ছে আমাদের নিজেদের যুদ্ধ। ভারত আমাদের সহায়তা দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হবে সমমর্যাদার ভিত্তিতে।’ তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন, আলোর মতো মানুষ।
সভাপতির বক্তব্যে আফসানা বেগম বলেন, ইতিহাসের অনেক অজানা ঘটনা ও তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ের মুখ থেকে তাঁর সম্পর্কে জানতে পারা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই আনন্দের বিষয়। ভবিষ্যতে তারা ইতিহাস জানতে আরও আগ্রহী হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রচনা প্রতিযোগিতার বিচারকমণ্ডলীর সদস্য লেখক সোহান রিজওয়ান। স্বাগত বক্তব্য দেন গ্রন্থকেন্দ্রের উপপরিচালক ফরিদ উদ্দিন সরকার। সঞ্চালনা করেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইনামুল হক।