বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে উচ্চারিত স্লোগান ও কটূক্তির কড়া জবাব দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির, চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, ‘একটি দলের নেতারা আমাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করেছে, অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেছে, এগুলো কোনো রাজনৈতিক শিষ্টাচার হতে পারে না।’

আজ শুক্রবার বিকেলে ইসলামী যুব আন্দোলনের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চরমোনাই পীর এ কথা বলেন। তিনি বলেন, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে বললে যদি গালাগাল করে, তাহলে তাদের চরিত্র যে কতটা নোংরা হয়ে গেছে, সহজেই অনুমেয়।

জুলাই চেতনার বাস্তবায়ন, গণহত্যার বিচার, শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন এবং বৈষম্যহীন, ইনসাফভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র গড়ার দাবিতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর ফটকে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে অন্য নেতারাও বিএনপির সমালোচনা করেন। এ সময় কর্মীরা ‘বিএনপির কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘চাঁদাবাজদের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

অন্যান্য যুব সংগঠনের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের যুব সংগঠনের তুলনা দিতে গিয়ে সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘অন্যান্য রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠন, তাদের কথাগুলো তামাম দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল হয়ে থাকবে। চরমোনাই পীর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরকে যেখানে পাবে, সেখানে সাইজ করার অর্থ্যাৎ মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। তোমাদের মাধ্যমে জাতি ভালো কী আশা করতে পারে? এখনই তো তোমরা সন্ত্রাসী কায়দায় বক্তব্য রাখছ।’

৯ জুলাই পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে বিএনপির সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়া হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে লক্ষ্য করেও বিভিন্ন স্লোগান বা বক্তব্য দেওয়া হয়। এর পাল্টা জবাব হিসেবে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও চরমোনাই পীরকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন বক্তব্য ও স্লোগান দেন। দুই পক্ষের অনেক বক্তব্য ও স্লোগানই ছিল শিষ্টাচারবহির্ভূত।

আজ শুক্রবার ইসলামী যুব আন্দোলনের সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের আমির বিএনপির নাম উচ্চারণ না করে এ–জাতীয় বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘তারা বলে, পীর সাহেব চরমোনাই মিথ্যা বলে, নেশা খায়। নাউজুবিল্লাহ, ধিক্কার জানাই। পীর সাহেব চরমোনাই নেশাখোর নয়, তোদের বক্তব্যই প্রমাণ করেছে, নেশাখোর তোরা।’

চরমোনাই পীর বলেন, ‘আমাদের বলা হয় মূর্খ। আমি তো দস্তখত করতে জানি, পড়তে পারি, পড়াতেও পারি। তাহলে মূর্খ হলাম কীভাবে? আসলে যারা এ বক্তব্য রেখেছে, তারাই হলো জ্ঞানপাপী, তারাই হলো প্রকৃত মূর্খ।’

কোনো সুস্থ মানুষ একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতা সম্পর্কে এমন বক্তব্য দিতে পারেন না  উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলনের আমির রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘আসুন আমরা ক্ষমতাপ্রেমী না হয়ে দেশপ্রেমী হই। একে অপরের প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি না করি।’

প্রশাসনকে সব দলের বিষয়ে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়ে সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘অমুক দল বড়, অমুক ক্ষমতায় যাবে, এই চিন্তা আপনারা করবেন না। সবার ব্যাপারে আপনারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করুন।’ তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে যা যা করা দরকার, সেভাবে দায়িত্বপালনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনূস আহমদ বলেন, ইসলামী আন্দোলন দেশের মানুষের কল্যাণে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চেয়েছে। কিন্তু সেটি অনেকের পছন্দ হচ্ছে না। কারণ, তারা একনায়কতন্ত্র চায়।

ইসলামি শক্তির ঐক্যের কারণে যে দলের শাসনক্ষমতায় যাওয়ার পথ কঠিন হয়ে গেছে, তারাই ইসলামী আন্দোলনের বিপক্ষে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘মানুষ ভয় পেয়ে তোমাদের চুপচাপ মেনে নেবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আওয়ামী লীগ তোমাদের চেয়ে বড় শক্তি ছিল। কিন্তু তারা বাচ্চা ছেলেদের ধাওয়া খেয়ে দেশ থেকে পালিয়েছে।’

৫ আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে যদি দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী খুন হন, তারা কীভাবে নিরাপদ দেশ গড়ে তুলবে—এমন প্রশ্ন রেখে গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘তাদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তাদের টপ টু বটম দুর্নীতিবাজ। তাই দুই-চার হাজার চাঁদাবাজকে বহিষ্কার করে ওই দল কোনো দিন সংশোধন হবে না।’

ইসলামী যুব আন্দোলনের সভাপতি আতিকুর রহমান মুজাহিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহবুবুর রহমান ও সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী; সহকারী মহাসচিব কে এম আতিকুর রহমান, মাওলানা আহমাদ আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ।

আরও পড়ুনবিএনপি বনাম জামায়াত-চরমোনাই-এনসিপি: ‘বাগ্‌যুদ্ধ’ কোথায় গিয়ে থামবে১২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চরম ন ই প র ব এনপ র র রহম ন র আম র ইসল ম স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

গাজীপুরে বকেয়া বেতন ও কারখানা চালুর দাবিতে ঢাকায় শ্রমিকদের ‘ভুখা মিছিল’

গাজীপুরে বন্ধ হয়ে যাওয়া উইনটেক্স গ্লোভস কারখানা পুনরায় চালু ও শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে আন্দোলনের ১৭তম দিনে রাজধানীতে ভুখা মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শ্রমিকেরা।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি পল্টন, প্রেসক্লাব, বিজয়নগর হয়ে পুনরায় শ্রম ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন আন্দোলনরত শ্রমিকেরা।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. রুহুল আমিন বলেন, ১৫ জুন বেআইনিভাবে কারখানা বন্ধ করা হয়। পরদিন ১৬ জুন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ডিআইজি, জেলা প্রশাসক এবং পরে শ্রম উপদেষ্টা ও শ্রমসচিবকে দুইবার লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়ে প্রতিকার চাওয়া হয়। আজ (বুধবার) ১৭তম দিন যাবৎ শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান আন্দোলনের পর অদ্যাবধি তাঁরা কোনো উদ্যোগ নেননি, এমনকি শ্রমিকদের সাথে কথাও বলেননি, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

কাজী মো. রুহুল আমিন আরও বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে শ্রমিকদের সুসম্পর্কের পরিবর্তে মুখোমুখি দাঁড়ানো কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।

সমাবেশে অন্য বক্তারা বলেন, অতীতের সরকারগুলোর মতো বর্তমান সরকার যদি মালিক পুষে শ্রমিক মারার পথ অনুসরণ করে, তাহলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উইনটেক্স গ্লোভস শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক মো. তুহিন এবং সঞ্চালনা করেন শ্রমিকনেতা জালাল হাওলাদার। আরও বক্তব্য দেন শ্রমিকনেতা মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল, সেকেন্দার হায়াত, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ