প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের সঙ্গে চলা সীমান্ত সংঘাত নিরসনে ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি’ চায় কম্বোডিয়া। গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘে দেশটির দূত এ কথা জানান।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হওয়ার আগে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিকোরন্দেজ বালানকুরা এএফপিকে বলেন, শুক্রবার বিকেল নাগাদ সংঘাত অনেকটাই কমতে শুরু করেছে। ব্যাংকক আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সম্ভবত মালয়েশিয়ার সহায়তায় দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলা সংঘাত গতকাল দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছে। পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই পক্ষে রক্তও ঝরেছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংককের পক্ষ থেকে আলোচনা শুরুর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

দেশ দুটির মধ্যে সীমান্ত বিরোধ বেশ পুরোনো। গত বৃহস্পতিবার এ বিরোধ সংঘাতে রূপ নেয়। যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে কামানের গোলা, ট্যাংক ও পদাতিক সেনা ব্যবহার করে এদিন হামলার ঘটনা ঘটে।

এ সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল জরুরি বৈঠকে বসেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা।

বৈঠকে জাতিসংঘে কম্বোডিয়ার দূত চেয়া কেও বলেন, ‘কম্বোডিয়া অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে—নিঃশর্ত। আর আমাদের পক্ষ থেকে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানানো হচ্ছে।’

আরও পড়ুনকম্বোডিয়ার সঙ্গে সংঘাত যুদ্ধে রূপ নিতে পারে, সতর্ক করল থাইল্যান্ড১১ ঘণ্টা আগে

সীমান্তে কম্বোডিয়ার অংশে গতকাল কামানের গোলার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। থাইল্যান্ডের হামলায় দেশটির সীমান্তবর্তী ওদ্দার মিনচে প্রদেশে ৭০ বছরের এক ব্যক্তি নিহত ও আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সীমান্ত এলাকা থেকে ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সংঘাত শুরুর পর এ পর্যন্ত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৪ বেসামরিক মানুষ। একজন সেনাসদস্য রয়েছেন। এ ছাড়া ৪৬ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ জন সেনাসদস্য।

থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিকোরন্দেজ বালানকুরা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত আছি। যদি কম্বোডিয়া কূটনৈতিক উপায়ে, দ্বিপক্ষীয়ভাবে কিংবা মালয়েশিয়ার মাধ্যমে সংঘাত নিরসনে আলোচনায় বসতে চায়, তাহলে আমরাও আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছি।’

আরও পড়ুনথাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে আবার সংঘর্ষ, নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আজ২৫ জুলাই ২০২৫

দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান মালয়েশিয়া। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া—দুই দেশই আসিয়ানের সদস্য।

এর আগে থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, তাহলে এটি যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এটি সংঘর্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে।

আরও পড়ুনএফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে কম্বোডিয়ায় হামলা চালাল থাইল্যান্ড২৪ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনথাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত কোন দিকে যাচ্ছে২৪ জুলাই ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কম ব ড য় র গতক ল আরও প সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত