কম্বোডিয়া ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি’ চায়, থাইল্যান্ড কী বলছে
Published: 26th, July 2025 GMT
প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের সঙ্গে চলা সীমান্ত সংঘাত নিরসনে ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি’ চায় কম্বোডিয়া। গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘে দেশটির দূত এ কথা জানান।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হওয়ার আগে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিকোরন্দেজ বালানকুরা এএফপিকে বলেন, শুক্রবার বিকেল নাগাদ সংঘাত অনেকটাই কমতে শুরু করেছে। ব্যাংকক আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সম্ভবত মালয়েশিয়ার সহায়তায় দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলা সংঘাত গতকাল দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছে। পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই পক্ষে রক্তও ঝরেছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংককের পক্ষ থেকে আলোচনা শুরুর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
দেশ দুটির মধ্যে সীমান্ত বিরোধ বেশ পুরোনো। গত বৃহস্পতিবার এ বিরোধ সংঘাতে রূপ নেয়। যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে কামানের গোলা, ট্যাংক ও পদাতিক সেনা ব্যবহার করে এদিন হামলার ঘটনা ঘটে।
এ সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল জরুরি বৈঠকে বসেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা।
বৈঠকে জাতিসংঘে কম্বোডিয়ার দূত চেয়া কেও বলেন, ‘কম্বোডিয়া অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে—নিঃশর্ত। আর আমাদের পক্ষ থেকে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানানো হচ্ছে।’
আরও পড়ুনকম্বোডিয়ার সঙ্গে সংঘাত যুদ্ধে রূপ নিতে পারে, সতর্ক করল থাইল্যান্ড১১ ঘণ্টা আগেসীমান্তে কম্বোডিয়ার অংশে গতকাল কামানের গোলার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। থাইল্যান্ডের হামলায় দেশটির সীমান্তবর্তী ওদ্দার মিনচে প্রদেশে ৭০ বছরের এক ব্যক্তি নিহত ও আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সীমান্ত এলাকা থেকে ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সংঘাত শুরুর পর এ পর্যন্ত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৪ বেসামরিক মানুষ। একজন সেনাসদস্য রয়েছেন। এ ছাড়া ৪৬ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ জন সেনাসদস্য।
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিকোরন্দেজ বালানকুরা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত আছি। যদি কম্বোডিয়া কূটনৈতিক উপায়ে, দ্বিপক্ষীয়ভাবে কিংবা মালয়েশিয়ার মাধ্যমে সংঘাত নিরসনে আলোচনায় বসতে চায়, তাহলে আমরাও আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছি।’
আরও পড়ুনথাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে আবার সংঘর্ষ, নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আজ২৫ জুলাই ২০২৫দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান মালয়েশিয়া। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া—দুই দেশই আসিয়ানের সদস্য।
এর আগে থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, তাহলে এটি যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এটি সংঘর্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে।
আরও পড়ুনএফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে কম্বোডিয়ায় হামলা চালাল থাইল্যান্ড২৪ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনথাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত কোন দিকে যাচ্ছে২৪ জুলাই ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কম ব ড য় র গতক ল আরও প সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
এককালের প্রেম যখন উপেক্ষিত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পুরনো বন্ধু কিম জং উনের সাথে সাম্প্রতিক এশিয়া সফরে হঠাৎ করেই আলোচনার আশা করেছিলেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এ ব্যাপারে কোনো সাড়া দেননি।
ট্রাম্প তার এশিয়া সফরের সময় কিমকে বারবার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছিলেন, তিনি বৈঠকের জন্য শতভাগ উন্মুক্ত। এমনকি ট্রাম্প কয়েক দশক ধরে মার্কিন নীতির বিপক্ষে গিয়ে স্বীকার করেছেন যে উত্তর কোরিয়া ‘এক ধরণের পারমাণবিক শক্তিধর।’
কিন্তু পিয়ংইয়ং আমন্ত্রণে চুপ ছিল। এর পরিবর্তে তারা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে এবং রাশিয়া ও বেলারুশে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়েছে, যাদের সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়া সেন্টারের একজন ভিজিটিং স্কলার সিওং-হিওন লি বলেন, “নিষ্ঠুর বাস্তবতা হল যে কিম জং উনের অংশগ্রহণের কোনো উৎসাহ ছিল না। ওয়াশিংটনের বিশ্বাস করা যে তিনি আসবেন, এটি একটি মৌলিক ভুল হিসাব ছিল।”
লি জানান, ট্রাম্পের বারবার প্রস্তাব উত্তর কোরিয়ার নেতার জন্য একটি ‘বিজয়’ হিসেবে দেখা যায়, যা তাকে এবং তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে বিশাল মাত্রার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদান করে।
তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিমকে একটি বিশাল, অপ্রাপ্ত ছাড় দিয়েছেন।”
২০১৯ সালে শেষবারের মতো ডিমিলিটারাইজড জোনের (ডিএমজেড) পানমুনজমে দেখা করেছিলেন ট্রাম্প ও কিম জং উন। ট্রাম্পের নেতৃত্বে পিয়ংইয়ংয়ের সাথে সেই বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়।
তারপর থেকে উত্তর কোরিয়া নিজেকে একটি‘অপরিবর্তনীয়’ পারমাণবিক রাষ্ট্র ঘোষণা করেছে এবং রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মস্কোকে সমর্থন করার জন্য সেনা পাঠিয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর সাবেক বিশ্লেষক সু কিম এএফপিকে বলেছেন, কিম এখন ‘বেশ স্বাচ্ছ্যন্দের জায়গায়’ আছেন।
তিনি বলেন, “রাশিয়ার সমর্থন সম্ভবত আজকাল উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত হাতকে শক্তিশালী এবং দৃঢ় করার সবচেয়ে নির্ধারক কারণগুলোর মধ্যে একটি। তিনিই (উন) সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধরে রেখেছেন, যার ফলে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানানো তার পক্ষে সহজ হয়ে যায়।”
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাড়ি ফিরে চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠকের সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি কিমের সাথে দেখা করার জন্য খুব ‘ব্যস্ত’ ছিলেন।
দৃশ্যটি ২০১৯ সালের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল, যখন ভিয়েতনামের হ্যানয়ে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার আলোচনা নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়েছিল - কিমকে কোনো চুক্তি ছাড়াই পিয়ংইয়ং ফিরে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ ট্রেন যাত্রা সহ্য করতে হয়েছিল।
অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক ভ্লাদিমির টিখোনভ এএফপিকে বলেছেন, “অভিজ্ঞতা পিয়ংইয়ংকে বেদনাদায়ক করে তুলেছে। তারা খুব তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে যেতে চায় না।”
তিনি জানান, পিয়ংইয়ং ট্রাম্পের কাছ থেকে আরো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করছে, যার মধ্যে রয়েছে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
ঢাকা/শাহেদ