রংপুরের বদরগঞ্জে মানিক বাহিনীর হামলায় দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যাওয়া শফিকুল ইসলামের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন নিহত ব্যক্তির স্বজন, এলাকাবাসী ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা। আজ শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে রংপুর-পার্বতীপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে বদরগঞ্জ উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেন।

৩ মাস ২০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে শফিকুল ইসলাম মারা যান। নিহত শফিকুলের বাড়ি বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ি গ্রামে। তিনি সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও বিএনপির সমর্থক এবং বিএনপির সাবেক নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকারের অনুসারী ছিলেন।

৫ এপ্রিল একটি দোকানঘর দখলকে কেন্দ্র করে বিএনপির সাবেক নেতা ও রংপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকারের অনুসারীদের ওপর শহিদুল হক ওরফে মানিক ও তাঁর ছেলে তানভীর আহম্মেদ ওরফে তমালের নেতৃত্বে থাকা ‘মানিক বাহিনী’ হামলা চালায় বলে অভিযোগ। শহিদুল হক বদরগঞ্জের কালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। ওই দিনের ঘটনায় লাভলু মিয়া নামের এক বিএনপি কর্মী মারা যান।

আজ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে শফিকুলের লাশ নেওয়া হয় বদরগঞ্জ শহীদ মিনারে। সেখানে লাভলু মিয়া ও শফিকুল ইসলাম হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন নিহত মানুষের স্বজন ও এলাকাবাসী। এতে বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি আবুজার গিফারি, পৌর যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সুমন সরদার, নিহত শফিকুলের বড় ভাই শফিয়ার রহমান, কন্যা মিম্মা আখতার, ছেলে মুরাদ হোসেনসহ স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

নিহত শফিকুলের মেয়ে মিম্মা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মানিক চেয়ারম্যান, তার ছেলে তমাল ও তাদের সঙ্গীরা দিন-দুপুরে কুপিয়ে আমার বাবাকে হত্যা করেছে। চার মাস তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিল। কী কষ্ট করছে। আজকে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এ দেশে আইনকানুন কী সব বিক্রি হয়ে গেছে নাকি। আজকে হত্যাকারীরা বাইরে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিসের জন্য? আমরা তাহলে সাধারণ মানুষ কী বিচার পাব না।’ শফিকুলের ছেলে মুরাদ হোসেন তাঁর বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানান।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন একই দিনে হত্যাকাণ্ডের শিকার লাভলু মিয়ার ছেলে রায়হান কবীর। তাঁর অভিযোগ, তাঁর বাবার হত্যার তিন মাস পার হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ থাকলেও তাঁর বাবার হত্যাকারী প্রধান আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। আসামিরা টাকার জোরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। পরে শফিকুলের লাশ তাঁর গ্রামে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দাফন করা হয়।

স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, বদরগঞ্জ শহরের শহীদ মিনার এলাকায় একটি দোকান ঘর নিয়ে মালিক ইশতিয়াক ও ভাড়াটিয়া জাহিদুল ইসলামের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে কয়েক দফা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ভাড়াটিয়া জাহিদুল তাঁর ওপর হামলা ও দোকানপাট লুটের অভিযোগ তুলে ৫ এপ্রিল মানববন্ধনের ডাক দেন। এর আগের দিন স্থানীয় সাবেক সংসদ মোহাম্মদ আলী সরকারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে বিদ্বেষমূলক পোস্ট দেন শহিদুল হকের ছেলে তানভীর আহমেদ। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

শফিকুলের ভাইয়ের অভিযোগ, এ ঘটনা জানতে ৫ এপ্রিল তাঁর ভাই শফিকুল ইসলাম বদরগঞ্জে আসেন। ওই দিন তাঁর ভাই শফিকুল ইসলাম ও মধুপুর বিএনপির সমাজকল্যাণ সম্পাদক লাভলু মিয়া দোকানে পান খাচ্ছিলেন। এ সময় মানিক বাহিনীর প্রধান শহিদুল হক, তাঁর ছেলে তানভীর আহম্মেদ, ফিরোজসহ অন্যরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শফিকুল ইসলাম ও লাভলু মিয়াকে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে এলোপাতাড়ি কোপান।

অভিযোগের বিষয়ে শহিদুল হকের মুঠোফোন কল করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে গত ২৮ মে বদরগঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে করে শহিদুল হক বলেন, তিনি ওই দিনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন। এ ঘটনার পেছনে একটি স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত।

দুটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম আতিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ৫ এপ্রিলের ঘটনার পর বদরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা ও অন্যটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়। আসামিরা সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। মামলা দুটি তদন্তাধীন। তাঁরা আসামিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স বদরগঞ জ র হত য হত য ক সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ