প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা। গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে।

গত সোমবার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিক্রিয়ায় পরদিন মঙ্গলবার উত্তরায় বিক্ষোভ, দুই উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করে রাখা, সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভের পর রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন প্রধান উপদেষ্টা।

মঙ্গলবার রাতেই চারটি দলের আটজন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। দলগুলো হলো বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। পরদিন বুধবার ১৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের ১৩ জন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। আর গতকাল আরও ১২টি দল-জোটের ১২ নেতার সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা। এই বৈঠকের পর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ১১ জন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বৈঠকে শাপলা চত্বরের হত‍্যাকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা এবং এ ঘটনার যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়। হেফাজত ইসলামের সমাবেশে হামলার বিষয়ে জাতিসংঘের মাধ্যমে অনুসন্ধান করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে।

এ ছাড়া ফ‍্যাসিবাদী শাসনামলে হেফাজতের নেতা-কর্মী ও আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা খলিল আহমদ কোরাইশী, মাওলানা সাজেদুর রহমান, মুফতি জসিম উদ্দিন, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, মুফতি বশির উল্লাহ এবং মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারী।

বৈঠকে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম ব

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করার পর আবারও আলোচনায় যোগ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।

আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার ২০তম দিনে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে যেন আর কখনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ জন্ম নিতে না পারে, সে লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেই প্রস্তাব ছিল, কেউ যেন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারেন, সেটি গৃহীত হয়েছে। আমরা আরও প্রস্তাব দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি স্বাধীন সার্চ কমিটি গঠন করা হোক, যেখানে সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধি থাকবে, সেটিও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরাই প্রস্তাব করেছি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে পরবর্তী সময়ে সংসদ কোনো সংশোধনী আনলে, তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আগে গণভোটে যেতে হবে। এটি গৃহীত হওয়া মানে, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।’

তবে এসব অগ্রগতির মধ্যেও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি যেমন সংসদের কাছে, তেমনি জনগণের কাছেও রয়েছে। কিন্তু যদি কর্তৃত্ব না থাকে, কেবল দায়িত্ব আর জবাবদিহি থাকে, তাহলে তা কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়।’

সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের হাত–পা বাঁধা হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নির্বাহী বিভাগকে শক্তিশালী হতে হবে, দুর্বল নয়।’

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গঠনমূলক লক্ষ্য নিয়ে সংলাপে অংশ নিচ্ছে। তবে যেখানে মৌলিক দ্বিমত রয়েছে, সেখানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা বা মতপার্থক্য প্রকাশ করাও গণতন্ত্রের ভাষা।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, এমন দাবি কেউ করেননি। দ্বিমত থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, আর সেগুলোর মধ্য দিয়েই তো গণতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে কাউকে ঐকমত্যে বাধ্য করা উচিত। ঐকমত্যের অর্থই হচ্ছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা। বিএনপি অংশ না নিলে কীভাবে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।’

বক্তব্য শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংলাপের পরবর্তী পর্যায়ে বিএনপি অংশ নেবে এবং ইতিবাচক আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকবে।

আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের বৈঠক: ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠায় হুড়োহুড়ি করে বের হলেন সবাই৫৪ মিনিট আগেবিএনপির ওয়াকআউট

কমিশনের প্রস্তাবিত সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান আলোচনায় অংশ নেয়নি বিএনপি। বেলা সাড়ে ১১টার পর বিষয়টি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, তাঁরা আলোচনায় অংশ নেবেন না।

পরে আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে, তারা আলোচনায় থাকবে না। একটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ না নিলে আলোচনা করা যাবে না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।

আজ আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।

আরও পড়ুনজাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বিএনপির ওয়াক আউট, পরে যোগদান২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
  • জুলাই সনদের খসড়ায় ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের চিত্র নেই: ইসলামী আন্দোলন
  • কক্সবাজারের সোনাদিয়া উপকূলে ভেসে এল অজ্ঞাতনামার লাশ, এখনো নিখোঁজ অরিত্র
  • তাজউদ্দীন আহমদ দেশের স্বাধীনতার প্রধান পুরুষ
  • মানবাধিকার মিশন নিয়ে উদ্বেগ, আলোচনা ছাড়া সিদ্ধান্ত ন্যায়সংগত হয়নি: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন
  • দিনলিপির দর্পণে তাজউদ্দীন আহমদ
  • সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫% আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়নের প্রস্তাব বিএনপির
  • পিয়াইন নদীতে ভেসে উঠল নিখোঁজ পর্যটকের লাশ
  • দুর্নীতির অভিযোগে কেনাকাটা আটকে দিয়েছিলেন নাহিদ, তোড়জোড় ফয়েজ আহমদের